বান্ধবী যে কেউ হতে পারে কিন্তু জীবনসঙ্গী সবাই হয় না; হতে পারে না। সবাইকে করাও যায় না। জীবনসঙ্গী হতে হলে তাকে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়; হবেও। এক কথায়, যাকে আপনি জীবনসঙ্গী করবেন, তার ভেতর আপনি সুখ খুঁজে পাচ্ছেন কিনা সেটিই আসলে বিবেচ্য বিষয়। তাকে দেখার জন্য আপনি উদগ্রিব থাকেন কিনা।
তার পাঠানো এসএমএস আপনাকে নাড়া নেয় কিনা। তার মিসকল আপনার মনকে দোলা দেয় কিনা। না দেখলে মন খারাপ করে কিনা। তার জন্য গোধূলিবেলার রক্তিম রেখার মতো আপনার হৃদয়েও রক্তক্ষরণ শুরু হয় কিনা। আপনার মনের ভেতর বৈশাখী ঝড় উঠে কিনা।
তাকে না দেখলে দেখার জন্য আপনার মন আকুলি বিকুলি করে কিনা। দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে কিনা। দেখার ক্ষুধা বাড়ে কিনা। তাকে কাছে পেতে মন চায় কিনা। সে চোখের আড়াল হলে তার জন্য চিন্তা করেন কিনা।
তার জন্য আপনার সুপ্ত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে কিনা। তার সাথে আরো গভীরে মিশে যেতে ইচ্ছে করে কিনা। তার রক্ত-মাংশে, অস্থি-মজ্জায় মিশে যেতে মন চায় কিনা। জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে উপরোক্ত পয়েন্টগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বান্ধবী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা আবশ্যকীয় নয়।
অধিকাংশ মানুষই বান্ধবীর সিঁড়ি বেয়েই জীবনসঙ্গীর ঘরে গিয়ে পৌঁছে। অর্থাৎ জীবনসঙ্গী প্রথমে বান্ধবীরূপে আমাদের সামনে আসে; হাজির হয় গুটিগুটি পায়ে। তারপর ধীরেধীরে সে এক সময় সাপের মতো খোলস পাল্টায়। জীবনসঙ্গী রূপে রূপ ধারণ করে। তাই বলে সকল বান্ধবী যে জীবনসঙ্গী রূপে রূপ ধারণ করে, সাপের মতো খোলস বদলায় এমন তো কোনো কথা নয়।
তবে একথা সত্য যে অনেক বান্ধবীই জীবনসঙ্গী রূপে রূপ লাভ করে। অনেকে আবার সারাজীবন বান্ধবীই থেকে যায়।
জীবনসঙ্গী বাছাই করতে আপনি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে পারেন, যাকে জীবনসঙ্গী করবেন তাকে আপনার কেমন লাগে? যদি ভাল লাগে তাহলে আপনি এগিয়ে যেতে পারেন। তা না হলে আপনি তাকে পছন্দ না করলেও মানে আপনি তাকে ভাল না বাসলেও আপনাকে যদি সে পছন্দ করে তাহলে আপনার দায়িত্ব হবে তাকে বুঝিয়ে বলা। কষ্ট না দিয়ে কৌশলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া।
সময়ের বাস্তবতা তুলে ধরা। কেননা তা না হলে এরজন্য ভবিষ্যতে আপনি কষ্ট পেতে পারেন। আপনি যাকে জীবনসঙ্গী করবেন প্রথমে তাকে দেখে নেবেন, তাকে আপনার কাছে ভাল লাগে কিনা? কেননা যাকে ভাল লাগে এক পলকেই ভাল লাগে। তার সবকিছুই ভাল লাগে। তার চোখ! তার দেহের প্রতিটি ভাঁজ, তার হাঁটাচলা, কথাবলা, হাসি-ঠাট্টা, রাগ- অভিমান, শরীরের মিষ্টি গন্ধ! এসব যদি আপনার কাছে ভাল লাগে তাহলে তাকে জীবনসঙ্গী করা যায়।
ব্যস তাহলে আপনি নিশ্চিন্ত মনে এগিয়ে যেতে পারেন। একজন জীবনসঙ্গী থেকে আপনি আর কি চান?
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যাকে আপনি জীবনসঙ্গী করতে যাচ্ছেন সে আপনার প্রতি বিশ্বস্ত কিনা। শ্রদ্ধাশীল কিনা। যতœশীল কিনা। আপনার সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে রাজি কিনা তাও আপনাকে গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।
কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা কেনো কাজ করতে গিয়ে কোনো মেয়ের সাথে যদি আপনার উঠাবসা হতেই পারে। তাই বলে তাকে যে জীবনসঙ্গী বানাতে হবে এমন কেনো কথা নয়। যদি তাই হয় তাহলে দাম্পত্য জীবনের শুরুতে কিছুটা সময় ভাল গেলেও এক সময় যখন কথাটা প্রকাশিত হয়ে যাবে তখন আপনার জীবনসঙ্গীটি কষ্ট পাবে। কোনো মানুষের মনে কষ্ট দেয়া মারাতœক অপরাধ। সৃষ্টিকর্তা একাজে অখুশী হবেন।
তাহলে আপনাকে সারাজীবন পস্তাতে হতে পারে। আর আপনি যদি হন কোনো লেখক কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি তাহলে আপনাকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার ব্যাপারে অনেক বেশি বুঝাপড়া করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। আপনার এমন কাউকেই জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা উচিত হবে, যে আপনার কাজের প্রতি যতœশীল ও শ্রদ্ধাশীল।
আপনাকে যে প্রাণভরে ভালবাসবে। আপনাকে নিয়ে যে গর্ব করতে ভালবাসবে। এ প্রসঙ্গে প্রয়াত হূমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের কথা স্বরণ করা যেতে পরে। শাওন বলেছে, ‘আমি এমন একজন ব্যক্তির স্ত্রী যে, ঘুম থেকে জেগে দেখে তার স্বামী লিখছে। স্বামীর লেখা দেখতে দেখতেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠি।
এটা আমার পরম সৌভাগ্য। ’ গত ১২ এপ্রিল ম্যাজিক লন্ঠনের আড্ডায় দেশের অন্যতম প্রধানতম কবি বেলাল চৌধুরী বলেছেন, ‘আমার বইভাগ্য ও বউভাগ্য দু’টোই কেন জানি কখনো হয় নাই। আমি বিয়ে করার পর তিন সন্তানকে ফেলে আমার স্ত্রী চলে যায়। আমি অনেক মানুষের বই দেখে দিয়েছি কিন্তু আমার বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। ’
কামহীন সম্পর্ক দিয়ে বন্ধুত্ব বা বান্ধবী হতে পারে কিন্তু কামহীন সম্পর্ক দিয়ে জীবনসঙ্গী হতে পারে না।
দেশের প্রধানতম কবি, নাট্যকার সব্যসাচী সৈয়দ সামসূল হক এর এক লেখায় পড়েছিলাম, কাম থেকে তৈরী হয় ভাললাগা, ভাললাগা থেকে সৃষ্টি হয় ভালবাসা আর ভালবাসা থেকেই হয় জীবনসঙ্গী। চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে তাকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার মধ্য দিয়ে। তখন সে শুধু দুই ঘন্টার বান্ধবীই নয় হয় সারা জীবনের জীবনসঙ্গী। তাই বান্ধবী এবং জীবনসঙ্গী কখনো এক করে দেখা ঠিক না; দেখা উচিতও হবেনা। দু’টোই সম্পূর্ণ রকম আলাদা জিনিস।
স্ব-মহিমায় ভাস্বর। আপন আলোয় উজ্জ্বল। তবে অনেক বান্ধবীকেই বন্ধু বা বান্ধবীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। এ কথা ঠিক যে, বান্ধবী শুধুমাত্র বান্ধবীই কিন্তু জীবনসঙ্গী শুধুমাত্র জীবনসঙ্গী নয়। জীবনসঙ্গী একাধারে বান্ধবী, সহযোগী, স্ত্রীও বটে।
বান্ধবী উৎসাহ দেয় আর জীবনসঙ্গী দেয় নির্ভরতা। বান্ধবী দেয় বটবৃক্ষের ছায়া জীবনসঙ্গী দেয় নিরাপদ আশ্রয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।