একজন সাধারন বাংলাদেশীর ব্লগ
অনেকদিন ধরেই কানাঘুষা চলছিল, গুগল নাকি অ্যাপল আইপ্যাড ও অ্যামাজন কিন্ডল এর সাথে টক্কর দিতে নিজেই ট্যাবলেট বানাবে। এবছরের গুগলের আই/ও মিটিং এ সেই গুজবটাই বাস্তবে প্রমানিত হল। গুগলের ট্যাবলেট এর নামঃ নেক্সাস ৭, কারন এর ডিসপ্লে যে ৭ ইঞ্চি। আর গুগলের জন্য এই ট্যাবলেট এর হার্ডওয়ার বানিয়েছে তাইওয়ান এর ইলেক্ট্রনিক্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাসুস।
তবে এন্ড্রয়েড ট্যাবলেট তো বাজারে অনেক আছে, এটা নিয়ে এত হই চই কেন? কারন হল এটার দাম।
এই ট্যাবলেটটার দাম হবে মাত্র ২০০ ইউ এস ডলার, অর্থাৎ ১৬ হাজার টাকা! অনেকেই হয়ত জানেন এই দামেই অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার নামের এন্ড্রয়েড ট্যাবলেট অলরেডি বাজারে আছে। তবে সেটার হার্ডওয়ার এটার তুলনায় নিতান্তই খেলনার মত! নিচে পরতে থাকুন, তাহলেই টের পাবেন কেন এই কথা বললাম।
এক নজরে কিছু দুর্দান্ত ফিচারঃ
এন্ড্রয়েড ৪.১ জেলী বীন
এন্ড্রয়েড এর নতুন ভার্সন, এন্ড্রয়েড ৪.১ জেলী বীন থাকবে এটায়। এটাই পৃথিবীর প্রথম ডিভাইস যেটায় গুগলের লেটেস্ট ওএস সবার আগে চালাতে পারবেন! আমি নিজে আমার ফোনে এন্ড্রয়েড ৪.০ আইস ক্রিম স্যান্ডউইচ চালাই, যেটা পারফর্মেন্স, ইন্টারফেস এর দিক দিয়ে অলরেডি অনেক অনেক এগিয়ে গেছে আগের এন্ড্রয়েড গুলোর থেকে। গুগল একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে জার নাম প্রজেক্ট বাটার, কারন গুগলের দাবি এর মাধ্যমে তাদের লেটেস্ট এই ওএস এর ইন্টারফেস চলবে মাখনের মত স্মুথ, আর তাই এই নাম তাই ৪.১ যে আরো ফাস্ট হবে এতে কোনই সন্দেহ নাই!
কোয়াড কোর প্রসেসর
এতদিন আমরা দেখেছি শুধু পিসি তেই কোয়াড কোর প্রসেসর থাকে, কিন্তু এই ট্যাবলেট এও তাই আছে! ১.৩ গীগাহার্জ এনভিডিয়া টেগরা প্রসেসর পাবেন তাও এত কম দামে! আর হ্যাঁ, এটাই বিশ্বের প্রথম ৭ইঞ্চি কোয়াড কোর ট্যাবলেট।
এর আগেও কিছু কোয়াড কোর ট্যাবলেট বাজারে এসেছে কিন্তু সেসবের দাম ২০০ ডলার এর চেয়ে ঢের বেশি।
১২ কোর গ্রাফিক্স কার্ড
জি জনাব, ঠিকই পড়েছেন। এটায় গেমিং এর জন্য ১২ কোর বিশিষ্ট এনভিডিয়া জিপিইউ আছে। তাই এতে আপনি ফুল থ্রিডি গেমিং এর স্বাদ পাবেন। আর এন্ড্রয়েড মার্কেট ছাড়াও টেগরা জোন নামে একটি স্পেশাল অ্যাপ স্টোর আছে, যেখানে শুধু টেগরা প্রসেসর যুক্ত ডিভাইস এ যেসব গেইম চলে তাই পাওয়া যায়।
৭ ইঞ্চি এইচ ডি ডিসপ্লে
৭ইঞ্চি স্ক্রিনে পাবেন 1280 x 800 পিক্সেল এর রেজোলিউশান। প্রতি ইঞ্চিতে ২১৬ পিক্সেল থাকায় ঝকঝকে ও ক্লিয়ার ছবির নিশ্চয়তা পাবেন। আর এটার ডিসপ্লে স্ক্রিনে ব্যবহার করা হয়েছে গরিলা গ্লাস, যা অনেক শক্ত ও মজবুত এবং স্ক্র্যাচ প্রুফ।
আরো অনেক ফিচারঃ
যে ফিচারগুলো ইম্পরট্যান্ট লেগেছেঃ
৮ অথবা ১৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ
১জিবি র্যাম
ফ্রন্ট ক্যামেরা
ওয়াই-ফাই + ব্লু-টুথ
১০ ঘণ্টার ব্যাটারি টাইম
মাইক্রো ইউএসবি
ওজন মাত্র ৩৪০ গ্রাম
যা আরও ভাল হতে পারত
পার্সোনালি আমার যা ভাল লাগেনি তা হল এটায় এক্সটারনাল স্টোরেজ এর জন্য এসডি কার্ড লাগানোর বাবস্থা নেই। পিছনেও ক্যামেরা নেই।
তারপর সিম ইউস করে নেট চালানোও যাবে না। শুধু ওয়াই-ফাই এর উপরেই নির্ভর করতে হবে।
তবে যাই হক, এরকম কিছু ছোটখাটো দোষ বাদে আমার কাছে ট্যাবলেট টা দারুন লেগেছে। এত পাওয়ারফুল হার্ডওয়ার এত কম দামে, যা কিনা প্রায় অবিশ্বাস্য! সবচেয়ে কমদামি এন্ড্রয়েড ট্যাবলেট হিসেবে পরিচিত কিন্ডল ফায়ারে মাত্র ১গিগা হার্জ এর প্রসেসর আছে এবং ওটার ইন্টারফেস এই অনেক ল্যাগ হয়। গেমিং তো বাদ ই দিলাম।
আর প্রিমিয়াম ট্যাবলেট এর মধ্যে আছে আইপ্যাড, ওটার সাথে তুলনায় যাবোনা কারন ওই জিনসটার দাম এর তিন গুন। তবে বেঞ্চমার্ক এ কিন্তু নেক্সাস ৭ প্রায় কাছাকাছি আইপ্যাড এর। দুইটা যদিও দুই মার্কেট এর জন্য বানানো। আর প্রিমিয়াম এন্ড্রয়েড ট্যাবলেট যেমন স্যামসাং এর গ্যালাক্সি ট্যাব, ওগুলোর দামও আকাশ ছোঁওয়া। তাই আপাতত এই দামে, পারফর্মেন্স বিচারে এটা এক অদ্বিতীয় ট্যাবলেট।
পশ্চিমা দেশগুলোয় অলরেডি প্রি অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। জুলাই এর শেষে এর দিকে ডেলিভারি শুরু হবে।
পুনশ্চঃ বহুদিন যাবত আমার ৬০০ মেগা হার্জ এর স্লো এন্ড্রয়েড ফোন চালাতে চালাতে আমি ক্লান্ত। কোন হেভি গেম, অ্যাপ চলেই না আর তাই সবসময়ই একটা ট্যাবলেট এর শখ ছিল। কিন্তু উচ্চ মুল্লের কারনে এতদিন ভুলেও কেনার কথা ভাবিনি।
তবে এবার বোধহয় কিনেই ফেলব একটা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।