আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগার ফাইজা নিশি যে ভাবে ভার্চুয়াল জীবন থেকে আমার পার্সোনাল জীবনে এল এবং তারপর...

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! আমার ফেসবুক একাউন্টে সাধারনত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে না । আর আমার একাউন্টটা এমন ভাবে কাস্টমাইজ করা যে, যেকেউ চাইলেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবে না । রিকোয়েস্ট পাঠানোর জন্য অবশ্যই তার আর আমার একজন জন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড থাকা লাগবে । তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট খুব একটা আসে না । কিন্তু আজ ফেসবুক ওপেন করে দেখলাম একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে ।

সেনডারের নাম ফাইজা রহমান নিশি । মেয়ে ? খানিকটা অবাক হলাম । একজন অপরিচিত মানুষ আমার কাছে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে তাও আবার কোন মেয়ে ! সবার উপরে কথা হল মেয়েটার নাম নিশি ! যারা আমার লেখা পড়েন তারা সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে নিশি নামটার উপর আমার একটা দুর্বলতা আছে । আর সেই নিশি নামের কেউ আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে , মনের ভিতর খানিকটা আকুপাকু তো করবেই । মেয়েটা যেহেতু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে তারমানে অবশ্য একজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আছে ।

সত্যি তাই । মিউচুয়াল ফ্রেন্ডে ক্লিক করে দেখলাম রাশান শাহরিয়ান নিপুন । সামু ব্লগে এই ব্লগারই কেবল আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে আছে । মেয়েটা নিপুনের ফ্রেন্ড । তারমানে এক্সসেপ্ট করা যায় ! কি জানি ! নিপুনের কাছে একবার জিজ্ঞেস করে নেই ।

ফোন দিলাম নিপুনকে । -ভাই ভাল আছেন ? -আছি । -তুমি কেমন আছো মিয়া ? -এইতো আছি । -ভাল কথা তোমাকে যে জন্য ফোন দিছি , ফাইজা নিশিকে চিনো ? -ফাইজা নিশি ? নিপুন কি যেন একটু ভাবল -হ্যা ভাই চিনিতো ? কেন বলুন তো ? -না এমনি । নিপুন বলল -ভাই, নিশি আপু কিন্তু আপনার লেখার খুব বড় একজন ফ্যান ।

আপনি যে নিশি আপুরে নিয়া লিখেন এইটা সে খুব পছন্দ করে । - ও আচ্ছা । আচ্ছা মানুষ হিসাবে কেমন ? -ভাইয়া সরাসরি তো কথা হয়নি তবে ভার্চুয়ালী প্রায়ই যোগাযোগ হয় । আমার কাছে তো ভালই মনে হয় । কেন ভাই ? -না এমনি ।

-না ভাই এমনি তো না । নিশ্চই কিছু একটা আছে । বলেন বলেন জলদি বলেন । -আরে মিয়া কিছু না রে । বলার মত কিছু হলে আমি বলব ।

আচ্ছা সামুতে কি ওনার একাউন্ট আছে ? -হুম আছে । ফাইজা নিশি নামেই । আমি ফোন রেখে নিশির রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করলাম । সামুতেও নিশির প্রোফাইলে গেলাম । তারপর একটু অবাক হতেই হল ।

একটা লেখা আমাকে নিয়ে । যদিও আমার নাম নিয়ে লেখা না তবে লেখা পড়ে মনে হল আমাকে নিয়েই লেখা হয়েছে । আশ্চার্য এই ফাইজা নিশি আমার ব্লগে নিয়মিত এসেছে অথচ আমি লক্ষ্যই করি নি । ভাবতে খানিকটা অবাক লাগছে যে আমার লেখার ফ্যান কেউ হতে পারে ! তাও আবার কোন মেয়ে । -থ্যাঙ্ক ইউ ।

দেখলাম মেয়েটা অন লাইনে চলে এসেছে । -কিসের জন্য ? -এই যে আমার রিকোয়েস্ট গ্রহন করলেন । -এ আর এমন কি ? -আপনি জানেন না আমি আপনার লেখা কত পছন্দ করি ! -সত্যি নাকি ? -হুম ! সত্যি । নিজের কাছে একটু ভাল লাগল । একটা মেয়ে আমার লেখা পছন্দ করছে এটা তো ভাল লাগার মতই বিষয় ।

-আচ্ছা আপনার কি সত্যি গার্লফ্রেন্ড আছে ? কি রে ভাই এটা আবার কি রকম কথা হল ? তবুও কিছু বললাম না । -কেন আমার লেখা পড়ে মনে হয় নি ? -না মানে আপনি যেমন কল্পনার কথা দিয়ে গল্প লেখেন হয়তো আপনার টিয়াপাখিও আপনার কল্পনার একটা অংশ । -না এমন কোন সম্ভবনা নাই । আমার টিয়াপাখি একদম বাস্তব । -আচ্ছা আপনার টিয়া পাখির নাম কি নিশি ? -না ।

কেন ? -তাহলে আপনার সব গল্পের নায়িকার নাম নিশি কেন ? -খুব বড় কোন কারন নাই । এমনি নামটা আমার পছন্দ বলতে পারেন । -আমার নামও কিন্তু নিশি । -তা তো দেখতেই পাচ্ছি । -আচ্ছা আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড দেখশাম মাত্র ৩২ জন ।

এতো অল্প কেন ? -কারন আমি সাধারনত অপরিচিত কাউকে এড করি না । -আমাকে করলেন যে । -ঐ যে বললাম সাধারনত । -সত্যি করে বলেন , আমার নাম নিশি বলে আমার রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করলেন ? আমি হাসির ইমো দেই । -বলতে বলতে পারেন ।

এভাবেই ফাইজা নিশির সাথে কথা চলতে থাকে । আস্তে আস্তে কথার পরিমান বাড়তে থাকে । কিন্তু একদিনএকটা অঘটন ঘটে গেল । রাতে নিশির সাথে বসে চ্যাট করছিলাম । মোবাইলটা সাইলেন্ড ছিল ।

এদিকে টিয়াপাখি কল দিয়েছে আমি টের পাই নি । যখন ফেসবুক অফ করে মোবাইল হাতে নিলাম আমার মাথায় হাত । টিয়াপাখি ২২ বার কল দিয়েছে । রাত অনেক হয়েছিল । কল দেওয়ার উপায় ছিল না ।

আর কল দিলে খুব ঝারি খওয়ার সম্ভাবনা আছে । আমি একটা মেসেজ পাঠলাম সরি লিখে । দেখি সঙ্গে সঙ্গেই টিয়াপাখি ফোন দিল । একবার ভাবলাম ফোনটা না ধরি কিন্তু না ধরে উপায় ও তো নাই । টিয়াপখি অনেক কথা শোনালো ।

বলল আমি নাকি তাকে আর আগের মত সময় দেই না । আরো কত অভিযোগ । সত্যি তাই । নিশির সাথে যোগাযোগ হবার পর থেকে টিয়াকে যে একটু ইগনোর করাই হচ্ছে । কিন্তু এটা ঠিক হচ্ছে না ।

মোটেও ঠিক হচ্ছে না । নাহ !! এই কাজ আর করবো না । আর যাই হোক টিয়াপাখিকে কিছুতেই কষ্ট দেওয়া যাবে না । নিশির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিলাম । ফেসবুক অপেন করলেও অফলাইনে থাকা শুরু করলাম ।

একদিন দুপুর বেলা আননোন নাম্বার থেকে একটা কল এল আমার নাম্বারে । -কে বলছেন ? -আমি ... একটা মেয়ের কন্ঠ । -আমি নিশি । আপনার নাম্বারটা আপনার ফেসবুক থেকে পেয়েছি । আামর সব কন্ট্যাক ফেসবুকে দেওয়া আছে ।

বললাম -বলুন ! -আপনি কি আমাকে এভোয়েড করছেন ? -কেন বলুনতো ? এমন কথা কেন বলছেন ? আসলে আমিতো সত্যিই চাচ্ছিলাম নিশিকে এভোয়েদ করতে । ওর সাথে বেশি যোগাযোগ রাখতে গেলেই টিয়াপাখিকে অবহেলা করা হয়ে যাবে । আর যাই কিছু ঘটে যাক টিয়াপাখিকে কষ্ট দেওয়া যাবে না কিছুতেই । -দেখুন আমি আসলে আমার ভার্চুয়াল লাইফটা আমার পার্সোনাল লাইফ থেকে আলাদা রাখতে চাই । -আমাকে তাহলে ইগনোরই করতে চাচ্ছেন ? আমি পরক্ষ্য ভাবে এই প্রশ্নটার উত্তর দিয়েছি তার পরেও যদি মেয়েটা না বোঝে ! আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিশি বলল -আচ্ছা আমার সাথে কি আপনি একটু দেখা করবেন প্লিজ ! -দেখুন আমি কিন্তু আপনাকে বলেছি যে আমি আমার ভার্চুয়াল লাইফ আর পার্সোনাল লাইফ আলাদা রাখতে চাই ।

-প্লিজ একটা বার । আর কোনদিন বলবো না । তারপর নিশি এমন ভাবে রিকোয়েস্ট করতে লাগলো যে রাজি না হয়ে পারলাম না । জানি না এই ফাইজা নিশি আবার কি জটিলতা সৃষ্টি করবে ! এখন দেখতেছি আমার গল্পে নিশি নামটা ব্যবহার করাই ভুল হয়েছে । ঐ নাম না নিলে তো আর এতো ঝামেলা হত না ।

-অপু ? একটা মেয়ের ডাকে ফিরে চাইলাম । দাড়িয়ে ছিলাম ধানমন্ডির জাহাজ বাড়ির সামনে । নিশি এখানেই আসতে বলেছিল । -জি । আপনি ....? মেয়েটা হাসল ।

বেশ সুন্দর হাসি ! -আমিই আপনার সেই অভাগা ফ্যান । -অভাগা কেন বলছেন ? -অভাগা বলব না ? যে মানুষটা তার পছন্দের মানুষটার সাথে দেখা করতে পারে না মন চাইলেই কথা বলতে পারে না তার থেকে বড় অভাগা কি আর আছে এই জগতে ? কথা বার্তার লাইন অন্য দিকে চলে যাচ্ছে । আমি বললাম -আমার লেখা এতো কেন পছন্দ করেন ? আমি কিন্তু সিরিয়াসলি কিছু লিখি না । কেবল টাইম পাস করার জন্য লিখি । এটা কে এতো গুরুত্ব দেবার কিছু নাই ।

নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -আপনি জানেন না আপনার ঐ গল্প গুলো আমার জীবনে কি পরিমান ইফেক্ট ফেলেছে । প্রথম যেদিন আপনার গল্প পড়লাম কিছু বুঝতে পারি নি । কিন্তু আমার ভিতর কিছু একটা হয়ে গেছিল বুঝতে পারছিলাম । -কি রকম ? -মানে আমি বোঝাতে পারবো না । কিন্তু আমি ঐ গল্পের কথা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না ।

নিজেকে কেবল ঐ গল্পের নিশিই মনে হচ্ছিল । তারপর থেকে ... নিশি কথা শেষ করলো না । আর আমিও কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । আমার গল্প পড়ে কেউ এমন প্রভাবিত হয়ে যাবে আমি বুঝতে পারিনি । নিশি আবার বলল -জানেন আপনি যখন অন্য কারো নাম ব্যবহার করে গল্প লিখতেন খুব রাগ হত আমার ! মনে হত কেন আপনি অন্য কাউকে নিয়ে গল্প লিখবেন ? আপনি কেবল আমাকে নিয়ে গল্প লিখবেন ! আমি একটু চমকালাম নিশির কথা শুনে ।

কি বলে রে এই মেয়ে ! নাহ এই মেয়ের কথা বার্তা খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না । -দেখুন আপনি খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন । ও গুলো কেবল গল্প । নিশি আমার দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকাল । বলল -আপনার জন্য গল্প হতে পারে কিন্তু ... নিশির কাছে আমি আর বেশিক্ষন থাকলাম না ।

এই মেয়ের কাছ থেকে যত দুরে থাকা যায় তত আমার জন্য ভাল । বাসায় প্রথম যে কাজটা করলাভ তা হল মোবাইলেই সিমটা বদলে ফেললাম । তারপর ফেবু একাউন্ট থেকে নিশিকে ব্লক করলাম । সামু নিক থেকেও ফাইজা নিশিকে ব্লক করে দিলাম । এমন ফ্যান আমার দরকার নাই ।

এরা কেবল বিপদেই ফেলতে পারে । আর পারে জটিলতা সৃষ্টি করতে । বিঃদ্রঃ অনেকে ইতি মধ্যে সার্চ বক্সে ফাইজা নিশি নাম লিখে সার্চ করা শুরু করে দিয়েছেন । কিন্তু কি পেলেন সেই ব্লগার কে?? আমাকে জানাবেন প্লিজ । যারা আমার লেখা নিয়মিত পড়েন তারা মনে করেছেন আমি হয়তো এইটা বানিয়ে বানিয়ে লিখেছি ।

সচরাচর আমি যা করি আরকি । যদি এমন টা ভেবে থাকেন তাহলে আপনাদের বলতে চাই আপনারা ঠিকই ভেবেছেন । এটা একটা গল্পই । ব্লগার ফাইজা নিশির কোন অস্তিত্ব নাই । এটা একটা গল্প ।

গল্পে নিপুনের নামটা ব্যবহার করেছি আশা করি সে রাগ করবে না । সবাই ভাল থাকবেন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.