সন্ধ্যার আঁধার নামলেই কিছুক্ষণ পর পর শোনা যায় আকাশ ফাটানো গুলির মত শব্দ। রাতভর পালা করে জেগে দিতে হয় পাহারা। রাস্তাঘাট থেকে মানুষেরা ফিরে যায় ঘরে, শক্ত করে এঁটে দেয় দরজার খিল-কপাট। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও বুকের মধ্যে পুনঃ পুনঃ বয়ে যায়
হিমশীতল আতঙ্কের হাওয়া! নিভে যায় কেরোসিনের বাতি, সোলারের আলোও কেমন যেন নেতিয়ে আসে। আতঙ্কের রেশ থেকে যায়।
বাজারের দোকানপাট, রান্নাঘরের হেসেল, পুকুর কিংবা নদ-নদীর ঘাটেও চলে আলোচনা- বাঘ কি এসেছিল কাল রাতে? কোন গ্রামে এসেছে? কার-কি ক্ষতি করেছে? আবার কোন মানুষ ধরেনি তো? সুন্দরবন হতে প্রায় প্রতিরাতেই বাঘ পেরিয়ে আসছে লোকালয়ে, আর অমাবশ্যার গোনে বাঘের সাথে যুক্ত হচ্ছে সুন্দরবনের ডাকাতেরা। একদিকে প্রতিনিয়ত নদী ভাঙন এবং অপরদিকে বাঘ আর ডাকাতের আতঙ্কে নির্ঘুম দিনযাপন করছে সুন্দরবন কোলের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
লোকালয়ে এত বাঘ কেন?
গ্রামবাসীদের মতে, যে বাঘগুলো লোকালয়ে আসছে এগুলো সুন্দরবনের বাঘ নয় (?), কারণ সুন্দরবনের বাঘের আকার-আকৃতি ও আচরণের সাথে এই বাঘের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়না। সুন্দরবনের বাঘ সাধারণত কাউকে ধরতে হলে ওৎ পেতে থেকে তারপর শিকার ধরে এবং স্রোতের মধ্যেও নদী পার হয় সোজাসুজি। কিন্ত এই বাঘ বিড়ালের মতো ধাবড়ে-দৌড়ে শিকার করে।
এছাড়াও সুন্দরবনের বাঘের মাথাটির তুলনা শরীর হয়ে থাকে চিকনারনা; ফলে যেকোন ছোট ঝোপ-জঙ্গলের আড়ালে সহজেই নিজের লম্বা দেহ সে লুকিয়ে রেখে সন্তর্পণে শিকারে বসতে পারে। কিন্ত সম্প্রতি লোকালয়ে আসা বাঘগুলোর মাথা ও শরীর সমান বড় সাইজের এবং নদী পার হওয়ার সময় বিড়াল বা কুকুরের মতো এলোমেলো যাওয়ার গতি।
গ্রামবাসীদের ধারনা , এগুলো সুন্দরবনের বাঘ নয়, বাইরের বাঘ এনে সুন্দরবনে ছাড়া হয়েছে। এই প্রশ্ন এখন এলাকায় সমালোচিত হচ্ছে। তাদের মতে, গত প্রায় বছর খানেক ধরে এলাকায় ‘টাইগার টিম’ নামে কিছু বিদেশী ও দেশী লোক বন বিভাগের সাথে কাজ করছে।
তারা সুন্দরবনের নদ-নদীতে অবস্থানও করছে। তারাই হয়তো বা দেশের বাইরের বাঘ এনে সুন্দরবনে ছেড়েছে। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, সুন্দরবনে খাদ্য সংকটের কারণে বাঘের আচরণ হয়তো পরিবর্তন হতে পারে! এছাড়া, দুর্যোগ আইলার জলোচ্ছাসে বাঘ সুন্দরবনের বাইরের উঁচু অংশে চলে আসতে পারে কিংবা শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গভীর সুন্দরবনে বাঘ থাকতে না পারায় হয়তো বাইরের দিকে চলে আসছে।
খাদ্য সংকটের পাশাপাশি প্রাণভয়েও অনেক বাঘ গভীর সুন্দরবন হতে বাইরের অংশে চলে আসতে পারে বলে ধারণা করছে অনেকে,কারন চোরা শিকারি।
অন্যান্য বছরের চেয়ে গত এক বছরে সবচেয়ে বাঘ লোকালয়ে আক্রমণ করেছে।
এই সময়ে সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামাঞ্চলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের এবং ৭ জন মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে (সূত্র : দৈনিক সময়ের খবর, ১৬ জানুয়ারী,২০১২, প্রথম পৃষ্ঠা)। এছাড়া, মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য ছাগল ও গরুর।
তাহলে কি সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য বাঘ এখন রুখে দাড়িয়েছে?
প্রায়শ আহত-নিহত হচ্ছে মানুষ। মধু সংগ্রহ, কাঁকড়াসহ মাছ ধরা, কাঠ সংগ্রহ করতে মালে (সুন্দরবন) পা রাখলেই আর রক্ষে নেই। আইলার পর হতে বাঘের চাপ বেড়ে গেছে।
বনের নিচের দিক (সমূদ্রের দিকে) হতে গভীর জঙ্গলের বাঘ উঁচুপাশে চলে এসেছে। লোকালয়ের পাশে এসে বাঘের খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে, এরপর মানুষ যদি আবার তাদের খাবারে ভাগ বসায়- তাহলে আর বাঘেরা কী করবে!
জীব বৈচিত্র ও বাস্তু সংস্থান বিনষ্ট ,চোরা শিকার ,গাছ চুরি ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এর মাধ্যমে সুন্দরবন কে ধ্বংস করার দায় আমরা কেউই এড়াতে পারব না ।
কেউ যখন সুন্দরবন এর পাশে দাঁড়াবে না ,মহান পালনকর্তা আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার জীবজন্তু দিয়েই তার সৃষ্ঠিজগত কে রক্ষা করবেন ।
সুন্দরবন এলাকায় থাকা কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় এই ব্লগ টা লিখা হয়েসে। বিশেষ করে বন্ধু কপিল কে ধন্যবাদ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।