আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিডার্স ডাইজেস্ট, কফি পান, অত:পর...

........................... আমরা বাঙ্গালীরা ছাপার অক্ষর খুব বেশী বিশ্বাস করি। আমাদের সাংবাদিক ও রিপোর্টাররা এই ব্যাপারটা খুব ভাল করে জানেন। তাই বেহেড মাতালের মত গাঁজা-খুরি যা খুশি তাঁরা লিখে বেড়ান আর আমরা হাঁ করে সে সব গিলে নেই। অবস্থা এমনি যে, কোন একটা দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি নিউজে বিভিন্ন রকম দেখানো হয়। সেদিন বিখ্যাত সাংবাদিক জয় ই মামুনের একটা ছবি দেখলাম, ডান হাতে তিনি এক আধুনিকা তরুণীকে পেঁচিয়ে ধরে রেখেছেন, আর বাঁ হাতে ধরা গ্লাসটিতে যে বস্তু রয়েছে, চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় সেটা নেশার বস্তু ছাড়া আর কিছু নয়।

এইসব মদ-গাঁজা-নারী দ্বারা ডারা পরিবেষ্টিত, তাদের কাছ থেকে আমরা ভাল কিছু কিভাবে আশা করতে পারি? যাই হোক, এই লেখাটি দেশীয় কোন পত্র-পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল নিয়ে নয়, বিখ্যাত পত্রিকা 'রিডার্স ডাইজেস্ট' নিয়ে। রিডার্স ডাইজেস্ট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুধুই একটি পত্রিকা হতে পারে, কিন্তু বাঙ্গালীর কাছে এটি উঁচু স্ট্যাটাসের সমার্থক। আমাদের সমাজের একটু স্বচ্ছল আর শিক্ষিত শ্রেনীর লোকেরা এই পত্রিকার অন্ধ ভক্ত। কে কতটুকু পড়েন জানি না, তবে বুক শেলফে পত্রিকাটি সাজিয়ে রেখে নিজেকে জাহির করতে অনেকেই খুব পছন্দ করেন। আমিও পত্রিকাটি পড়ি, তবে তা শুধুমাত্র খবর জানার জন্য।

এটুকু জানি যে এটি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত পত্রিকা, তাই মাঝে মাঝে পড়ে দেখি এতে এমন কি আছে। দুঃখের ব্যাপার, পত্রিকাটির 'হিউমার' সেকশান ছাড়া আর কিছুই কখনো আমার মনঃপুত হয়নি। মূল প্রসঙ্গে আসি। আমার এক নিকট আত্মীয় রিডার্স ডাইজেস্টের অন্ধ ভক্ত আর এতে যা লেখা থাকে তাই চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করেন। কিছুদিন আগের কথা, হঠাৎ তিনি জানালেন, রিডার্স ডাইজেস্টে একটা ফিচার ছাপা হয়েছে কফি পানের উপকারীতা সম্পর্কে।

তাতে আরো অনেক উপকারীতার সাথে এও লেখা আছে যে কফি খেলে বাউয়েল ক্লিয়ার হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, আর এটা দেখেই তিনি ব্যাপারটায় খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমি তাঁকে বললাম, ডাক্তার হিসেবে যতটুকু জানি কফি তাঁর কোষ্ঠকাঠিন্য আরো বাড়িয়ে দেবে, আর যেহেতু হেমরয়েড বা পাইল্‌স্‌ নামক একটি দুরারোগ্য ব্যাধি তাঁর রয়েছে, কফি নিয়মিত পান করা তাঁর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শুনে তিনি এমন দৃষ্টিতে তাকালেন যেন, 'এই না হলে বাংলাদেশের ডাক্তার! ঘোড়ার ডিমটা শিখেছ তোমরা ডাক্তারি পড়ে। ' মুখে বললেন, 'এই ফিচারটা একজন বিখ্যাত ডাক্তার লিখেছেন, অনেক গবেষনার পর। ' আমি তাঁর ব্যাপারে সমব্যাথী ছিলাম বিধায় বোঝানোর চেষ্টা করলাম, 'দেখুন, ওটা হয়ত শীতপ্রধান দেশের জন্য সত্যি হতে পারে, কিন্তু গরমকালে বাংলাদেশে ব্যাপারটায় হীতে বিপরীত হতে পারে।

' তিনি নাক সিঁটকানোর মত ভঙ্গি করে চলে গেলেন, আর সেদিন থেকেই কফি থেরাপী শুরু করলেন। আগে তিনি দিনে ৩-৪ কাপ চা খেতেন, এখন তার স্থান দখল করে নিল কফি। অফিসে তিনি কফির সরঞ্জাম কিনে নিলেন, আর পি.এ. কে বললেন মাঝে মাঝেই তাঁকে ব্ল্যাক কফি দেয়ার জন্য। শুরু হল রিডার্স ডাইজেস্টের খেলা। এক সপ্তাহ পর হঠাৎ সাত-সকালে খবর এল তিনি আমাকে যোগাযোগ করতে বলেছেন।

ফোন দিলাম। অপর প্রন্তে তাঁর গলা থেকে রীতিমত আর্তনাদ বেরিয়ে এল। কাঁপা গলায় বললেন, গত ৩-৪ দিন যাবৎ তিনি প্রচন্ড কোষ্ঠকাঠিন্যে ভূগছেন, ২ দিন হল তাঁর স্টুলের সাথে রক্ত যাচ্ছে। হালকা ব্যাথাও হচ্ছে বাথরুমের সময়। শেষে অবশ্য বললেন যে তিনি ৫ দিন আগে কয়েক পিস কাঁঠাল খেয়েছিলেন, সেটার রি-একশান হতে পারে।

আমার পেট ফেঁটে হাসি আসছিল, তবুও যথাসম্ভব গম্ভীর গলায় তাঁর সাথে একমত পোষন করে বল্‌লাম, 'আমি ঔষধের নাম এস.এম.এস. করে পাঠিয়ে দিচ্ছি, খাওয়া শুরু করে দিন। আর কফিটা আপাততঃ না হয় কয়েকটা দিন বন্ধ থাকুক। ' তিনি বিড়বিড় করে বল্‌লেন, 'অবশ্যই, অবশ্যই'। এইটুকু বলতে চাই, রিডার্স ডাইজেস্ট আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ন ইনফরমেশান দেয়, অনেক পরামর্শও দেয়, তবে সবকিছু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস না করাই উচিৎ। বিশেষত রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ক কিছু পড়লেও একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরেই সেই বিষয়ে অগ্রসর হওয়া মঙ্গলজনক হবে।

এখন আসুন আমরা হেমরয়েড সম্পর্কে কিছু জেনে নিই। হেমরয়েড বা পাইল্‌স্‌ পায়ুপথের একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। দুরারোগ্য এই কারণে যে এটা থেকে পূর্ণ পরিত্রান পাওয়া প্রায় অসম্ভব, চিকিৎসার লক্ষ্য হচ্ছে এটিকে নিয়ন্ত্রনে রাখা। পায়ুপথের ভেতরে এনাল কলাম্ন নামক কিছু আঙ্গুলের মত স্ট্রাকচার থাকে, এইসব কলাম্নের ভেতরে থাকে এক ধরণের রক্তনালী। বিভিন্ন কারণে পায়ুপথের উপর চাপ পড়লে বা শারীরিক সমস্যার দরুণ রক্তনালীগুলোর দেয়াল যখন প্রসারিত হয়, তখন এই কলামগুলো নীচের দিকে নেমে আসে।

তখন একে হেমরয়েড বলা হয়। এর নেমে আসার লেভেল এবং রক্তপাতের উপর ভিত্তি করে হেমরয়েডকে বিভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়। কারণ: হেমরয়েডে মূলতঃ একটি বংশগত রোগ। বংশ পরম্পরাক্রমে অনেকেই নিয়ন্ত্রিত জীবন ধারণের পরেও ওই রোগে আক্রান্ত হন। এটি কোন জীবাণুঘটিত রোগ নয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই এই রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, বিশেষ কিছু খাবার যেমন গরুর মাংস, আত্যাধিক চর্বিযুক্ত খাবার ইত্যাদি এই রোগকে বাড়ায়। এছাড়া যারা ওজন বহন করেন, হেভি এক্সারসাইজ করেন, তারাও এই রোগে অধিক আক্রান্ত হন। পায়ুপথে সহবাসের কারণেও এই রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে। এছাড়া রাতের ঘুমটাও ঠিক রাখতে হবে।

লক্ষণ: পায়ুপথে সবসময় ব্যাথা, মলত্যাগের পর পানি নিতে গিয়ে হাতে আঙ্গুলের মত কিছু অনুভব করা, মলের সাথে রক্ত যাওয়া (মনে রাখতে হবে পায়ুপথের আরো অনেক রোগেই মলের সাথে রক্ত যেতে পারে, তাই রক্ত গেলেই হেমরয়েড নয়। তবে মলের সাথে টাটকা রক্ত গেলে এবং তা যদি চিকন ধারায় জোরে নির্গত হতে দেখা যায়, তবে হেমরয়েড হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। ) ইত্যাদি দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। চিকিৎসা: ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে নিজে নিজে কোন ঔষধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে যেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্যই এই রোগ বাড়ার মূল কারণ, তাই মল নরম রাখার জন্য প্রচুর আঁশযুক্ত শাক-সবজি, ইসুবগুলের ভূষি এসব খাওয়া যেতে পারে।

সাথে প্রচুর পানি খেতে হবে। চা, কফি, সিগারেট এগুলো এই রোগ বাড়ায়, তাই রোগ দেখা দিলে এইগুলো পরিহার করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। চর্বিযুক্ত সকল খাবার যথাসম্ভব কম খাবেন। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমান। এইসবের মাধ্যমেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।

না এলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন: হেমরয়েড রোগটি সার্জারী বিষয়ের আওতাভুক্ত, তাই সার্জারী বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াই ভাল। মনে রাখবেন, সার্জারী বিশেষজ্ঞ মানেই কেটে কুটে ফেলার ডাক্তার নয়। সার্জারী বিষয়েও ঔষধের মাধ্যমে ভাল হয় এমন অনেক রোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ না পেলে একজন এম.বি.বি.এস. ডাক্তারের শরণাপন্নও হতে পারেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনিই যথেষ্ট। তাই খুব বড় কোন ডাক্তারের পেছনে মাসের পর মাস না ঘুরে নিকটবর্তী জনের কাছেই দ্রুত যান। আজকের মত লেখাটি শেষ করছি। ধন্যবাদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.