আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই। আফজাল করিমের মাথা ঝিম ঝিম করছে। উনি এখনও শব্দটা মাথা থেকে দূর করতে পারছেন না। আফজাল করিম দু হাতে মাথা চেপে ধরলেন।
মাথার ভেতর শব্দটা বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মাথার ভেতর একটা অদ্ভুত স্রোত বয়ে যাচ্ছে তার। দু চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে।
তাহলে কি তিনি মারা যাচ্ছেন। মৃত্যু এইভাবে তাকে গ্রাস করবে।
এত অসহায় ভাবে তিনি মারা যাবেন। তিনি তার ছেলে মেয়ের কথা মনে করার চেষ্টা করলেন। না তার ছেলে মেয়ের মুখ তিনি কল্পনা করতে পারছেন না। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল অসংখ্য টাকার ছবি।
আফজাল করিম, নামকরা সরকারি কর্মকর্তা।
ঘুষ নেয়াকে তিনি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বাংলা সাহিত্যে যেমন রবীন্দ্রনাথের অবদান, ঘুষ নেয়াতে তেমনি আফজাল করিমের অবদান। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা চাকুরীতে যোগদানের পূর্বে বোতলে করে তার পায়ের ধুলো নিয়ে যান।
চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই তিনি শৈল্পিক ভাবে ঘুষ নেয়া পছন্দ করেন।
তার প্রয়াত শ্বশুর হীরাকে কাচ ভেবে ভুল করেন নি।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই ছেলে একদিন নাম করবে।
তাই তিনি তার মেয়ের জন্য এমন পাত্র হাত ছাড়া করলেন না। তার ভাবনা যে ঠিক তিনি তা জীবদ্দশাতেই দেখে যান।
আফজাল করিম ক্ষীণ স্বরে তার বেয়ারাকে ডাকলেন। কিন্তু তার সেই স্বর বেয়ারা অব্ধি পৌছালনা।
আফজাল করিম সংজ্ঞা হারালেন। জীবনে তিনি শুধুমাত্র বিবেক হারিয়েছেন, আর কিছুই হারান নি, এই রকম সাফল্যময় একজন মানুষ আজ আরেকটি জিনিস হারালেন। সেটি হল, তার সংজ্ঞা।
সংজ্ঞা হারানোর পর আফজাল সাহেব অন্য একটা ভুবনে চলে গেলেন। একটা শান্ত স্নিগ্ধ জায়গায়।
চারদিক নিস্থব্ধ, এরকম একটি জায়গাকেই মনে হয় তপোবন বলা হয়। তিনি ধীরে ধীরে আগাচ্ছেন। একটু ভয় ভয় লাগলেও, তার হৃদয় স্নিগ্ধতায় ভরে গেছে। তার সেই কথাটা মনে পড়ল। তার নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক ভাল লাগা কাজ করছে।
"আফজাল করিম" একটা শান্ত স্নিগ্ধ কণ্ঠস্বর তাকে ডাকল।
তিনি পেছনে ফিরে থাকালেন।
"গৌতম বুদ্ধ" আপনি?
হ্যা,আমি।
"আপনি আমার মত একজন পাপী মানুষের সাথে দেখা করলেন। "
"ভালো যারা তারা এমনিই ভাল।
আমার কাজ হচ্ছে তোমাদের সঠিক পথ দেখান। "
"আপনাকে দেখেই আমি সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছি। আপনি আমাকে একটু স্পর্শ করুন তাহলেই হবে। "
গৌতম বুদ্ধ, আফজাল করিমের মাথায় হাত রাখলেন। "
আফজাল করিমের চেতনা ফিরে এল।
তিনি দেখলেন তার বেয়ারা নির্মল তার গায়ে হাত দিয়ে ভয়ার্ত চোখে তার দিখে তাকিয়ে আছে।
আফজাল করিমের হঠাৎ মনে হল, প্রতিটা মানুষই তো নিষ্পাপ হয়ে জন্মায়। এই যে নির্মল তার মাঝেও আছে একজন মহাপুরুষ। তাই তো দেখা যায় সবচেয়ে পাপিষ্ঠ মানুষটিও কোন এক সময় অন্যের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসে। নিজে মারা যাবে যেনেও ছোট্ট শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য চলন্ত ট্রাকের সামনে ঝাঁপিয়ে পরে।
আফজাল করিম রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। তার কেন জানি ভালো কয়েকটা কাজ করতে ইচ্ছে করছে।
ঠিক সকালে শোনা কথাটার মত নিজেকে ভাবতে ইচ্ছে করছে।
"তুমিও একজন মহামানব হতে পারতে। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।