আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিডিয়ার জন্মকথা ও গতকালের ঘটনা

শান্তির জন্য সংগ্রামী গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যে ঘটনা ঘটেছে এতে আমি মোটেও অবাক বা হতবাক হইনি। তাই সারাদিন এই বিষয়ে কোথাও কিছু লিখিনি। কারন, বিভিন্ন মিডিয়া(পত্রিকা/টিভি/বেতার) হাউসে যারা কাজ করেন, তারা আমাদেরই সমাজের অবিচ্ছিন্ন অংশ। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে যেরকম অন্যায় ও অনিয়ম চলছে মিডিয়া জগতেও এরকম ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলা ভাষায় এবং বঙ্গদেশে প্রথম সংবাদপত্র ও তারপরের সংবাদপত্রঃ শ্রীযুক্ত গঙ্গাকিশোর ভট্টাচারযের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে ১৮১৬ সালে বাঙ্গালা গেজেট নামে প্রথম বাংলা ভাষায় পত্রিকা ছাপা ও প্রকাশিত হয়েছিল।

১৮১৮ সালের এপ্রিলে শ্রীরামপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশনারীরা দিগদরশন নামে মাসিক পত্র(পত্রিকা নয়) বের করেন। এই মিশনই জ়ে সি মারশম্যানের সম্পাদনায় ১৮১৮ সালে ২৩ মে সমাচার দরপন নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন। ১৮২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে এটি ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮২৯ সালের ১১ জুলাই থেকে বাংলা ও ইংরেজি এই দুই ভাষাতেই প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৮২১ সালে ৪ ডিসেম্ভর থেকে রাজা রামমোহন রায় নিজেকে আড়াল করে প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক সম্বাদ কৌমুদী নামক পত্রিকা।

১৮৩০ থেকে এটি দ্বি-সাপ্তাহিকে পরিনত হয়ছি এবং সে যুগে বাংলার শিক্ষিত সমাজে আলোড়ন জাগিয়েছিল। শ্রী ভবানী চরন বন্দোপাধ্যায় সম্পাদিত হয়ে সমাচার চন্দ্রিকা নামে ১৮২২ সালের ৫ মারচ একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৮২৩ এর নভেম্বরে সম্বাদ তিমির নাশক নামে সাপ্তাহিকটি সমাজের তিমির নাশ করতে প্রকশিত হয়েছিল। এরপরেই আসে ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের সম্পাদনায় বাংলা ভাষায় প্রথম দৈনিক পত্রিকা সংবাদ প্রভাকর। কাছাকাছি সময়েই অক্ষয় কুমার দত্ত সম্পাদনা করে বের করেন তত্ববোধিনী পত্রিকা।

১৮২৯ সালের ৯মে তারিখে কলকাতার বঙ্গদুত প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় বঙ্গদুত নামে একটি পত্রিকা। এটি বাংলা, ইংরেজি, ফারসী ও নাগরী ভাষায় প্রকাশিত হয়। রামগোপাল ঘোষ প্রকাশ করেন বেঙ্গল স্পেক্টেটর, হরিশ চন্দ্র বের করেন হিন্দু পেট্রিয়ট। ১৮৬৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী মহাত্মা শিশির কুমার ঘোষের সম্পাদনায় প্রকাশ শুরু হয় অম্রিত বাজার পত্রিকা। দীন বন্ধু মিত্র প্রকাশ করেন নীল দরপন।

উনশ শতকের বাংলায় যে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছিল সেটার মুলে ছিল এই পত্রিকাগুলি। এবং বিংশ শতকের গোড়া থেকে যে স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেধে উঠেছিল সেটার মুল ভুমিকায়ও এইসব পত্রিকাগুলোই অবদান রখেছিল। পুর্বপাকিস্তান বা বাংলাদেশে পত্রিকার জন্মকথাঃ ১৯৪৭ সালের আগে কোন দৈনিক পত্রিকাই ছিলনা। (এবং অন্যান্য কি কি পত্রিকা ছিল সে বিষয়ে অজানা থাকায় লিখতে পারছিনা। ) পাকিস্তান লাভের পরে প্রথম রাজনৈতিক দল ও সেইসব দলের নেতারাই তাদের কথা এবং পাশাপাশি মানুষের কথা জনগনের দোড়গোড়ায় পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যেই সাপ্তাহিক ও দৈনিক দুভাবেই পত্রিকার প্রচলন শুরু করেন।

আর এভাবেই এখনকার ছাত্র, তরুন, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী প্রায় সকল বয়সের সকল মানুষের নিকট প্রয়োজনীয়ভাবেই পত্রিকা/টিভি জীবনের অংশ হয়ে গেছে। জন্মের শুরুতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা করেছিল এখন কতটুকু সেটা আছে? এই প্রশ্ন এখন খুবই প্রাসঙ্গিক। পাঠক আসুন জেনে নেই কে কোন মিডিয়ার মালিক। এই বিষয়টি জানা থাকলে হিসেব মেলানো সহজ হবে। পাকিস্তান আমল থেকেই কোন মিডিয়া কে/কারা স্থাপন করেছেঃ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার পরেও অনেকদিন কোন দৈনিক ছিলনা।

১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ জন্ম নেওয়ার পরে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদের ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সম্পাদক বানিয়ে আওয়ামী লীগের মুখপত্র হিসেবে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক জন্ম নেয়। ১৯৫২ সালের দিকে এটি দৈনিকে পরিনত হয় এবং আরও পরে ব্যক্তিমালিকানায় চলে যায় এবং এখন এটি ব্যবসায়িকভাবেই চালু রয়েছে। জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে দৈনিক সংগ্রাম জন্ম নেয়। মাওলানা আকরাম খা'র মালিকানাধীন এবং মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীলদের মুখপত্র হিসেবে দৈনিক আজাদ জন্ম নেয়। হামিদুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন দৈনিক পাকিস্তান ও অভজারভার মুসলিম লীগের হলেও পরে আইয়ুব খানের কনভেনশন মুসলিম লীগের পক্ষে চলে যায়।

দৈনিক ইনকিলাব ঠিক কে, কোন উদ্দেশ্য জন্ম দিয়েছিলেন এখন বলতে পারছিনা, তবে গোড়াপন্থী ইসলামী জাতীয়তাবাদীদের পত্রিকা এটি। আজকের দৈনিক সংবাদ স্থাপন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন তার মুখপত্র হিসেবে, যদিও পরে এটি কমিউনিস্ট দলের মুখপত্র হিসেবে তারা কিনে নেয়। এরকমভাবে পাকিস্তান আমলে দৈনিক বাংলার বাণী, পুর্বদেশ, পুর্বকোন ইত্যাদি দৈনিক ও বিভিন্ন সাপ্তাহিক চালু হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বধীন হওয়ার পরেও অনেকদিন এইসব পত্রিকার অনেকগুলোই মাঠে ছিল বহাল তবিয়তে। তারপরে কোনটা কোনটা বন্ধ হয়েছে আবার পাশাপাশি অনেক নতুন পত্রিকাও এসেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে দৈনিক গনকন্ঠ আওয়ামী লীগ স্থাপন করলেও পরে জাসদের মুখপত্র হয়ে যায়। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হেনা'র দৈনিক জনপদ সহ বেশ ক'টি পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে এই সময় পরযন্ত পত্রিকাগুলো যার যার রাজনৈতিক দলের নীতি ও আদরশ এবং দেশের কথা তাদের নিজেদের দলের মেনিফেস্টো অনুযায়ী প্রচার করেছে। এসবের মধ্যে মোটাদাগে বেশ কয়েকটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপক্ষে রাজনৈতিক দলের এবং দলের মাধ্যমে স্বাধীনতার কাজেই ব্যবহার হয়েছে। অবশ্য ভিন্ন রাজনৈতিক চেতনাও কিছু পত্রিকাধারন করেছে।

সেটা স্বাধীন বাংলাদেশে অন্যায় হলেও তাদের দলের কাছে নিশ্চয়ই গ্রহনযোগ্য ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে তারপরেও কয়েকটি পত্রিকার ভুমিকা অত্যান্ত সাহসী এবং অনন্য। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবাদ পত্রঃ স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে মানুষের হাতে বৈধ ও অবৈধ টাকার পরিমান বেড়েছে আর তাই ব্যবসা হিসেবে পত্রিকা খোলা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পুর্বতন পত্রিকাগুলোর অনেকগুলোই চালু ছিল পাশাপাশি এসেছে নতুন নতুন খবরের কাগজ। চীনাপন্থী রাজনীতির অনুসারী এনায়েত উল্লাহ খান মিন্টু স্থাপন করেন হলি ডে এবং কিছুকাল আগে তিনিই স্থাপন করেন ডেইলি নিউ এজ যা এখন নুরুল কবির সম্পাদনা করেন।

এসবের ধারাবাহিকতায় এরশাদ সাহেব জন্ম দিয়েছেন তার দলের মুখপত্র হিসেবে দৈনিক জনতা, বিএনপি জন্ম দিয়েছে দৈনিক দিনকাল, ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা লে.ক.(অব) কাজী শাহেদ আহমেদ স্থাপন করেছিলেন অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাহীন নেতা ও ব্যবসায়ী সাবের হোসেন চৌধুরী জন্ম দিয়েছেন দৈনিক ভোরের কাগজ, অনেকটাই আওয়ামী লীগের গরানার ব্যবসায়ী আতিক উল্লাহ খান মাসুদ স্থাপন করেছেন দৈনিক জনকন্ঠ, ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান স্থাপন করেছিলেন অধুনালুপ্ত দৈনিক মুক্তকন্ঠ, এখনও চলছে ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি চ্যানেল, ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান স্থাপন করেন দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার, শফিক রেহমান যায়যায়দিন সাপ্তাহিক দৈনিকে পরিনত করলেও বিক্রি করে দেন বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সাঈদ হোসেন চৌধুরীর নিকট, আগাগোড়াই রহস্যজনক ব্যক্তি নাইমুল ইসলাম খান জন্ম দেন দৈনিক আমাদের সময় সহ আরো কয়েকটি দৈনিক, কতিপয় ব্যবসায়ীসহ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীরা স্থাপন করেন দৈনিক মানবজমিন, টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের একুশে টিভি(ইটিভি), কতিপয় ব্যবসায়ীসহ ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজের চ্যানেল আই, কতিপয় ব্যবসায়ীসহ বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার বাংলা ভিশন, পোশাকশিল্প ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান প্রথমে শুধু এটিএন, পরে স্থাপন করেন এটিএন নিউজ এবং চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে ক্রয় করেন বিজয় টিভি, বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী মোসাদ্দেক আলী ফালু স্থাপন করেন এনটিভি ও আরটিভি, ব্যবসায়ী এ কে আজাদ স্থাপন করেন দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল ২৪, জামায়াত নেতা ও ব্যবসায়ী মীর কাসেম আলী স্থাপন করেন দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং টিভি চ্যানেল দিগন্ত টিভি, ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুল জন্ম দেন দৈনিক যুগান্তর, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন জন্ম দেন চ্যানেল ওয়ান, আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী ব্রি জ়ে সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম ও মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং ব্যবসায়ী এনায়েতুর রহমান বাপ্পী ও সালাউদ্দিন আহমেদ মিলে স্থাপন করেন চ্যানেল ৯, স্কয়ার গ্রুপের উত্তরাধিকারী তপন চৌধুরীর মাছরাঙ্গা টেলিভিশন, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক ব্যবসায়ী আহমেদ আকবর সোবহান শাহ আলম জন্ম দেন দৈনিক কালেরকন্ঠ ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান এবং বাংলানিউজ অনলাইন, সাংবাদিক খলিলী সাহেব শুরু করেন ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রথম সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজ অনলাইন, জামায়াতী ফিনান্সে ফরিদ সাহেব স্থাপন অনলাইন বারতা২৪ডটনেট, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু জন্ম দেন চ্যানেল একাত্তর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক বিএনপি নেতা এবং এখন নিজেই একটি দলনেতা ড ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী জন্ম দেন দৈনিক দেশবাংলা, র‍্যাংস গ্রুপের মালিকের দৈনিক সকালের খবর, ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম দস্তগীর (বীর প্রতীক) স্থাপন করেন জ়িটিভি, আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী সাবের হোসেন চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান নুর এবং আলী যাকের সমন্বয়ে স্থাপন করেন দেশটিভি, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলামের ভাই অভিনেতা মোরশেদুল ইসলাম স্থাপন করেন সময় টিভি, ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদারের একটা টিভি চ্যানেল মোহনা, আমি জানিনা কোন ব্যবসায়ী স্থাপন করেছে মাইটিভি, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, বনিক বারতা, আজকালের খবর, ভোরের ডাক এবং নাম মনে নেই এমন অনেক। এগুলোর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা। রয়েছে অগনিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা। উপরন্তু খন প্রায় প্রতিটি দৈনিকেরই রয়েছে অনলাইন সংস্থা। পাশাপাশি রয়েছে অনেক সাহিত্য পত্রিকা।

আরও টিভি ও পত্রিকার নাম এখন মনে পড়ছেনা। কেউ লিখলে এডিট করে যোগ করে দিবো। পাঠক এবার নিশ্চয়ই আমার উপর খুব ক্ষেপেছেন। কারন এত এত মিডিয়ার নাম ও মালিকের কথা পড়ে বিরক্তি লাগারই কথা। তবে আপনারাই এইসব ব্যক্তিদের নাম পড়ে এবং তাদের মালিকানাধীন পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের আদিকথা পড়ে ভেবে দেখুন কারা এসবের মালিক এবং কোন উদ্দেশ্য এসব জন্ম দেওয়া হয়েছে।

কারা কত টাকা ট্যাক্স দেয় বা সমাজে উনাদের অবস্থান আপনারাই মুল্যায়ন করুন। তবে গোপন খবর হলো, এসব মিডিয়ার সবক'টিতেই রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যৌথ মালিকানা। যখন যেদল ক্ষমতায় থাকে তখন শুধু সেই দলের ব্যক্তিই প্রকাশ্যে আসেন। এখানে প্রাঙ্গিকভাবেই উল্লেখ করতে হয় যে, আজকাল অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই সাংবাদিকতা পড়ানো হয়। তারপরেও দেখা যাচ্ছে এই অঙ্গনের পতনের আভাস।

বোধকরি সমাজের অন্যান্য অঙ্গের মতোই এখানেও একই অবস্থা বিরাজমান। উপরন্তু জেলা ও উপজেলায় সাংবাদিকতা বলতে আমরা চারন সংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন, শামসুর রহমান, হুমায়ুন কবির বালু প্রমুখের নাম উদাহরন হিসেবে লিখলেও বাস্তবতা হলো উনারা শুধুই ব্যতিক্রম। আর ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরন হতে পারেনা। এটি এজন্যই বলছি যে, যার জেলা ও উপজেলার সাংবাদিকদের খোখবর রাখেন তারা সহজেই বুঝবেন বিষয়টি। কেননা, সেখানে পেশাদার সাংবাদিকতো দুরের কথা ন্যুনতম সংবাদিকতা প্রায় নেই বললেই চলে।

অবশ্য ইদানিং কিছু লেখাপড়া জানা মানুষ মফস্বলে সংবাদিকতা শুরু করেছে, যদিও সেটা হাতে গোনা। বরং মফস্বলের সাংবাদিকরা বরাবরই ব্যস্ত থাকে থানা/জেলায় তদবির বা অন্য ব্যবসায় বানিজ্যে। সেখানে এই ধারা অনেক আগে থেকেই চালু থাকলেও এখন এই ধারা ঢাকা শহরেও ব্যপক বিস্তার লাভ করেছে। এই বিষয়গুলোও কিন্তু সমাজের অপরাপর অন্যান্য বিষয়ের মতোই সবখানে এবং সকলের মধ্যেই। সাংবাদিকতা উদ্ভব হয়েছিল আদর্শগতভাবে ক্ষমতাবানের দুর্নীতির মুখোশ উপড়ানোর জন্য ।

আমার অনেকদিন থেকেই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে যে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে এত এত কথা লেখা হয়, ছাপা হয় কিন্তু ফলাফল কিছুই হয়না। তাহলে কী খবর প্রকাশ নিতান্তই স্যাটায়ার বিনোদন? তারপর আজ আমি নিজে নিজেই উত্তর খুজে পেয়েছি, আসলে ধনীক শ্রেনীর ব্যক্তি ধনসম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থাপিত সংবাদ হাউজের খবরে কার কিছুই হবেনা। কারন জন্মের উদ্দেশ্যটাই যে খারাপ! লাভের মধ্যে এই যে, সেইসব মিডিয়া হাউজে আমাদের আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশি কিছু মানুষ সস্তা শ্রমের বিনিময়ে দিনগুজার করছে। এরচেয়ে বেশিকিছু প্রত্যাশা আপনারা করলেও আমি করিনা। এক্ষেত্রে যোগ করা যায়, শুধু সাংবাদিক বা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বিপদ যখন নিজেদের উপরে এসে পড়েছে তখনই আমাদের হুশ হয়েছে... এভাবে নিজের উপর বিপদ না পড়লে আমাদের হুশ কখনোই হয়নি।

এটা চরম সত্য। আমি শুধু বলতে চাই, অবৈধ টাকায় স্থাপিত এবং তাদের টাকার পাহাদার এইসব মিডিয়া দিয়ে আর যাই হোক জনগনের কোন লাভই হবেনা। অবশেষে গতকালের প্রেস ক্লাবের সামনের ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার কিছু লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। এসব পড়েও একধরনের মুল্যায়ন করা যাবে যে, কে কী ধরনের সংবাদ ছেপেছে। দৈনিক প্রথম আলো Click This Link দৈনিক সকালের খবর http://sokalerkhabor.co.cc/ Click This Link page_id= 45 Click This Link page_id= 45 , বংলাদেশ প্রতিদিন Click This Link , কালের কন্ঠ Click This Link Click This Link , দৈনিক ডেসটিনি Click This Link , আমাদের সময় Click This Link Click This Link , ইনকিলাব http://www.dailyinqilab.com/ , যায়যায়দিন Click This Link , মানবজমিন Click This Link , জনকন্ঠ Click This Link , সংবাদ Click This Link , দৈনিক সমকাল http://www.shamokal.com/ , অনলাইন বিডিনিউজ২৪ Click This Link Click This Link Click This Link Click This Link , অনলাইন বারতা২৪ডটনেট Click This Link Click This Link , বাংলানিউজ Click This Link আরো লিঙ্ক কেউ দিলে যোগ করে দিবো।

আমার এখানে নেট খুব সমস্যা করছে তাই এনালগ পদ্ধতিতেই লিঙ্কগুলো উঠিয়ে দিলাম। যেকথা শুরুতে বলেছিলাম যে, পত্রিকা জন্মের আদিকথা, কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে শুরু করেছিলেন এবং সেটা এখন কতটুকু আছে, স্বাধীন বাংলাদশে কারা পত্রিকা খুলেছে এবং তারা কী উদ্দেশ্যে পত্রিকার মতো সরাসরি অলাভজনক ব্যবসা কেনো করতে এসেছে, পত্রিকা/টিভির আড়ালের উদ্দেশ্য কী, জনগন টাকা দিয়ে কিনে এসব কেনো পড়ছে, এতে জনগনের বা দেশের কী লাভ/লোকসান হচ্ছে, সমাজ গঠনে এইসব মিডিয়া কী এবং কিভাবে ভুমিকা রাখছে মোদ্দাকথা আজ সময় এসেছে এসবের ভালো-মন্দ নিয়ে প্শ্ন উত্থাপন করার এবং উত্তর পাওয়ার। আশাকরি সকলেই এসব বিষয়ে আপনাদের মতামত, আলোচনা, সমালোচনা এবং ফলাফল নিরুপনে যৌক্তিকভাবেই প্রায়োগিক ভুমিকা রাখবেন। আমি ব্যক্তিগত সমালোচনায় সবসময়ই মনে করি যে, আজকে যারা মিডিয়ায় সাংবাদিক বা অন্যভাবে জড়িত তারা আমাদের সমাজের শিক্ষিত শ্রেনীর ব্যক্তিগন। আর উনারাসহ সকল শিক্ষিতদেরকে যুগ যুগ ধরেই এদেশের সাধারন মানুষ ভয় পেয়ে আসছে।

কেননা, এই শিক্ষিতরাই জানে কিভাবে লুটপাট করতে হয় এবং এরাই লুটপাটকে শিল্পে পরিনত করেছে। কাজেই এই শিক্ষিত শ্রেনির একটি ক্ষুদ্র অংশ এবং অপরাপর শিক্ষিতদের মুখপত্র এই মিডিয়া'র সমালোচনা করার খুব বেশি কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা। বি দ্রঃ আমার লেখায় তথ্যের অসঙ্গতি থাকা অস্বাভাবিক নয়, তাই সংশোধনের জন্য সহযোগিতার পাশাপাশি আলোচনাও প্রত্যাশা করছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।