আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিডিয়ার মস্তিষ্ক

সুস্থ সংস্কৃতির অনন্ত পথের যাত্রী

‘মিডিয়া’ দর্শকদের কাছে ’যা কিছুই’ পৌছে দেয়, সেই ’যা কিছুর’ পেছনের মূল ব্যক্তিটি একজন লেখক। মিডিয়া বলতে এখানে ইলেকট্রোনিক্স মিডিয়া বা চ্যানেলের কথা বলা হচ্ছে। একজন লেখক মিডিয়ার জন্য যা লেখেন তার নাম Script| Script-এর ওপর ভিত্তি করেই মিডিয়াতে শব্দ ও ছবি প্রচার হয়। হতে পারে তা চলচ্চিত্র, নাটক, সঙ্গীত, সংবাদ, প্রতিবেদন, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, টক শো বা অন্য যেকোন প্রকার অনুষ্ঠান। মনে রাখা দরকার, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মিডিয়া ও ব্যক্তি মালিকানাধীন মিডিয়ার পার্থক্য অনেক।

তার মধ্যে একটি গুরুত্বপুর্ণ পার্থক্য হলো- সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার লেখক প্রযোজকরা দর্শকের সঙ্গে তাদের সৃষ্টির মাধ্যমে মুখোমুখি হলেও তার পেছনে মূল টেনশনটা কাজ করে না। যেমন, বিজ্ঞাপন নির্ভর মাধ্যম বলে বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য সস্তা ও চটুঁল অনুষ্ঠান নির্মাণে অনেকে ঝুঁকে পড়ে- তাতে দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া যায়, কিন্তু দর্শকের হ্রদয়প্রবৃত্তির খাতে সুস্থ-সংস্কৃতির সুবাতাস বইয়ে দেয়া যায়না। মিডিয়াটির আয়, উন্নতি এবং চাকরি সংক্রান্ত দুশ্চিন্তাও তাদের থাকেনা। আর সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ বলতে তারা সরকারের জনবিরূদ্ধ দায়িত্ব পালন এবং সত্য গোপনে বেশি আজ্ঞাবাহী থাকে। ব্যক্তি মালিকানাধীন মিডিয়ার লেখক প্রযোজকদেরও মালিকের আজ্ঞাবহ গোলাম হয়ে থাকতে হয়, নইলে চাকরি থাকেনা।

তবে এক্ষেত্রে দর্শকের সঙ্গে প্রতিমূহুর্তে লেখক প্রযোজকদের যে প্রত্যক্ষ্ ও পরোক্ষ মুখোমুখি হওয়া- তাতে যে ‘লেনদেন’ থাকে তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। হৃদয় মথিত না হলে দর্শক কথা বলেনা। দর্শকের কথা বলার ওপর বিজ্ঞাপন দাতাদের আগ্রহ নির্ভর করে। বিজ্ঞাপন দাতা বেঁকে বসলে কুপথ অবলম্বন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা। অনেকের চাকরিও চলে যায়।

অতএব প্রতি মূহুর্তে লেখক ও প্রযোজককে অনুষ্ঠান উন্নয়নের চিন্তাভাবনা, চেষ্টা, পরিশ্রম থাকতেই হয়। এই মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যের ব্যাপারটিকে সামনে রেখে ব্যক্তি মালিকানাধীন মিডিয়ার কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে মিডিয়ার মস্তিস্ককে নিয়ে, নতুবা মিডিয়া ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। অন্যদিকে মিডিয়াটি অর্থের প্রয়োজনে সমাজ বিরোধী এবং দেশবিরোধী চক্রের ক্রীড়ানকে পরিণত হতে পারে। নিত্যনতুন পরিকল্পনা, অনুষ্ঠান, বক্তব্য এবং উপস্থাপনা নিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে হাজির হওয়া দরকার। মিডিয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবাদ চালু আছে, তা হলো, ‘ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দি বেস্ট ইমপ্রেশন’- যে কোন মিডিয়ায় এই তত্বকথাটি এক এক রূপে ব্যবহৃত হয়।

অর্থ্যাৎ যে শ্রেণীগোষ্ঠির জন্য মিডিয়াটি- সেই শ্রেণীগোষ্ঠির মনস্তাত্বিকতার মান অনুযায়ী সেই মিডিয়াটি সম্মৃদ্ধ করা হয়। তাতে সেই শ্রেণীগোষ্ঠির কাছে মিডিয়াটির একটি স্থায়ী ইমেজ তৈরি হয়। ইমেজ তৈরি হবার পর ধীরে ধীরে মিডিয়টি অন্যান্য উপকরণ এবং উপাদান সন্নিবেশিত করতে থাকে। এতে করে মিডিয়াটির ভোক্তাবৃন্দ ‘পছন্দ নয়’ এমন কোন বিষয়ও সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকে। এমন কি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিষয়গুলির বিরোধীতা না করে তার পক্ষে যুক্তি খুঁজতে থাকে।

যেমন একজন ষ্টার খেলোয়াড় খেলায় একদম ভালো না খেললেও তার বিরূদ্ধে তার ভক্তরা কিছুতো বলেই না বরং একটা বাজে ‘শটকেও’ ভালো ‘শট্’ হিসাবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে। যেমন একটি পত্রিকা প্রথমে যদি নিন্মশ্রেণীর পাঠকের জন্য সস্তা রচনা সন্নিবেশিত হয়ে প্রকাশিত হয়, তবে পরবর্তিতে সে পত্রিকাতে তত্ব এবং তথ্য সম্মৃদ্ধ রচনা প্রকাশ করলেও তা উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণীর কাছে মর্যাদা তো পায়ইনা- বরং তার নিজস্ব পাঠকের কাছেও পত্রিকাটি জনপ্রিয়তা হারায়। আবার যেমন- একজন চলচ্চিত্র, নাটক বা যে কোন অনুষ্ঠান পরিচালক প্রথমেই এমন একটি বিষয় উপস্থাপনা করলেন যে প্রথম চোটেই সর্বজন স্বীকৃত এবং জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়ে গেল- ব্যাস এরপর তিনি যতই সস্তা কিছু পরিচালনা করুন না কেন তার প্রথম ইমেজটাই অক্ষুন্ন থেকে যায়। একজন অভিনেতার ব্যাপারেও একই কথা সত্য হিসাবে প্রমাণিত। নায়ক, ভিলেন বা কমেডিয়ান যেই হোক প্রথম ইমেজই তার সারা জীবনের ইমেজ হয়ে দাঁড়ায়।

কবি, সাহিত্যিক বা অন্যান্য লেখকের বেলায়ও একই ব্যাপার। প্রথম তৈরিকৃত ইমেজ থেকে বের হয়ে বহুমুখী ইমেজ অর্থ্যাৎ বিচিত্রমুখী প্রতিভার ইমেজ তৈরি করা বড়ই কঠিন কাজ। সবাই তা পারে না। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের লেখনী শক্তি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো বিদ্রোহী কবির ইমেজ থেকে তিনি মুক্ত হতে পারতেন। এখন প্রশ্ন আসে একটা ইলেকট্রোনিক্স মিডিয়ার ক্ষেত্রে একটা সার্বজনীন ইমেজ তেরি করতে কতদিন লাগে, অথবা কি ধরণের অনুষ্ঠান প্রয়োজন! সমাজের কোন শ্রেণীকে টার্গেট করে অনুষ্ঠান নির্মিত হবে! প্রথমে আসা যাক সময় প্রসঙ্গে- ইলেকট্রোনিক্স মিডিয়ার জন্য সময়টা কি প্রথম দিন! অথবা একমাস! যেহেতু দর্শক একটি মাত্র চ্যানেলের দিকে তাকিয়ে থাকে না, সেহেতু দর্শকের দৃষ্টি কাড়তে হলে কমপে ছয়টিমাস সময় প্রয়োজন।

সুগভীর চিন্তা, বিশ্লেষণ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে দর্শক জরীপের মাধ্যমে ছয়টি মাস ধরে এমন সব আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হতে হবে যে দর্শকের কাছে তার একটি স্থায়ী ইমেজ যেন তৈরি হয়ে যায়। মনে রাখা দরকার, যে মিডিয়া সাধারণ নিন্ম, নিন্ম শিক্ষিত এবং মধ্যম শ্রেণীর শিক্ষিতদের মন জয় করার জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করে সে মিডিয়াটির জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে বেড়ে গেলেও হঠাৎ করেই তার পতন হয়ে যায়। কারণ সাধারণ নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করা যেমন সহজ- জনপ্রিয়তা হারানো আরো সহজ। তারা সহজে যা গ্রহণ করে সহজে তা বর্জনও করে। বিশেষ করে তারা যখন অনুধাবন করে যে তাদের পছন্দনীয় সংস্কৃতিকে উচ্চ মধ্য এবং উচ্চ শিক্ষিতরা গ্রহণ করছে না।

এইভাবে সাধারণের পছন্দনীয় বহু সাংস্কৃতিক উপাদান পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু উচ্চ মধ্য এবং উচ্চ শিক্ষিতদের সংস্কৃতি লুপ্ত হয় না, তা বরং পরিবর্তিত হয়। উচ্চ মধ্য শ্রেণী এবং উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণী একটা জিনিস বুঝেশুনে গ্রহণ করে এবং সাধারণত যা গ্রহণ করে তা সহজে ত্যাগ করে না। আর উচ্চ মধ্য এবং উচ্চ শিক্ষিতরা যা গ্রহণ করে সাধারণ জনগণ ধীরে ধীরে এক সময় তা গ্রহণ করেই। কারণ সাধারণ জনগণ উচ্চ মধ্য এবং উচ্চ শিক্ষিতদেরকে অনুসরণ করে, অন্যদিকে উচ্চ মধ্য বা উচ্চ শিক্ষিতরা কখনো সাধারণ এবং নিম্ন শিক্ষিতদের সংস্কৃতিকে অনুসরণ বা গ্রহণ করে না।

অতএব, একটি ইলেকট্রোনিক্স মিডিয়ার দীর্ঘস্থায়ী ইমেজ সৃষ্টি এবং তার উদ্দেশ্য ও লক্ষকে সফল করতে হলে সর্বাগ্রে সত্যিকার চিন্তাশীল, দায়িত্বসচেতন, মেধাবী ও সৃজনশীল লেখক সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। কোন প্রযোজকের যদি Script লেখার প্রতিভা ও যোগ্যতা থাকে তবে তা তার জন্য প্লাস পয়েন্ট। যেকোন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান বা অর্থলগ্নিকারীর কাছে তিনি খুব চাহিদাসম্পন্ন হবেন নি:সন্দেহে। কিন্তু প্রযোজককে যে Script রচনা জানতে হবে বা Script রচনা করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। তবে অবশ্যই তাকে শুটিং Script করতে হয়।

কারণ মূল Script-টাকে তিনি দর্শকের সামনে যে ভাবে উপস্থাপন করতে চান সেই ভাবে তাকে শুটিং Script করতে হয়। তবে Script writer যদি শুটিং Script করে দেন এবং তা যদি প্রযোজকের মনমতো হয় তবে ভিন্ন কথা। প্রযোজক Script রচনা করতে পারুক অথবা না পারুক তাকে ক্যামেরার শট্, শটের অর্থ এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে জানতেই হবে আর সার্বক্ষণিক অনুশীলন ও চিন্তাভাবনা করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিভিন্ন প্রকার শট্, শটের অর্থ, ফ্রেমিং, কম্পোজিশন, শুটিং জোন, ক্যামেরা এ্যঙ্গেল, লাইটিং, বিভিন্ন প্রকার ফেসিয়াল ও বাইলোজিক্যাল এক্সপ্রেশান এবং কণ্ঠস্বরের এক্সপ্রেশান ও তার অর্থ বুঝার মত জ্ঞান, Script-এর ব্রেক-ডাউন করা, বাজেট করা, কাস্টিং পদ্ধতি, রঙের ব্যবহার, পোশাক সংক্রান্ত জ্ঞান ছাড়াও আবহ সঙ্গীত (সঙ্গীতের রাগ সম্পর্কে আইডিয়া) সম্পাদনা জ্ঞান- অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে মূল ব্যক্তিকে নিজের চাহিদা বুঝানো এবং কাজটি Script অনুযায়ী বুঝে নেবার মেধা, যোগ্যতা ও বুঝশক্তি থাকতেই হবে। একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ Script writer তার লেখা Script-এ উক্ত ব্যাপারগুলো সবই লিখে দেন।

এমনকি উৎকৃষ্ট Script-এ কোন শটের Duration কত সেকেন্ড বা কত মিনিট হবে তাও লেখা থাকে। কোন অভিজ্ঞ প্রযোজক কখনো Script ব্যতীত একটি অনুষ্ঠানের বাজেট বা কাস্টিংও করেন না। অবশ্য ক্যামেরার সামনে যারা থাকবেন তাদের ওপর ভিত্তি করে Script রচনা করা ভিন্ন কথা। অর্থাৎ শিল্পির স্ক্রিনিং ইমেজকে সামনে রেখে চরিত্র এবং চরিত্রের স্টাইল সৃষ্টি করা। বুদ্ধিমান এবং অভিজ্ঞ অর্থলগ্নিকারীরা Script ছাড়া কখনোই টাকা ঢালেন না।

তা সে যত নামকরা প্রযোজকই হোন না কেন। একটা গানের শুটিং করতে গেলে ’ডিউব শিট’ বা গানের শুটিং Script ছাড়া তারা অর্থ বিনিয়োগ করবেন না। তবে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ বিনিয়োগকে সামনে রেখে Script রচনার কাজও হয়ে থাকে। Script-এর মূল হচ্ছে বিষয়বস্তু। বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করেই কোন্ ধরণের বা কি প্রকারের Script রচিত হবে তা নির্ভর করে।

জমির আকৃতির ওপর ভিত্তি করে যেমন বিল্ডিং-এর Style তৈরি হয় তেমনি বিষয়বস্তুর আঙ্গিকের ওপরই Script-এর Style নির্ভর করে। স্ক্রীপ্ট রচনার আগেই বিষয়বস্তু নির্ধরণ করা হয়। বিষয়বস্তু যিনি চিন্তা করে দাঁড় করান তিনি লেখক নাও হতে পারেন। কিন্তু Script Writer-কে বিষয়বস্তুটির ধারাবাহিকতা বিন্যাস করে সাহিত্যবোধ, মিডিয়াবোধ, বিশ্লেষণী শক্তি, চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিকতা এবং দর্শকের মনস্তাত্ত্বিকতার চাহিদা পূরণের মাধ্যমে Script রচনা করতে হবে। কোন্ শ্রেণীর দর্শকের জন্য Script রচনা হচ্ছে সে বিষয়ে লেখকের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

Script রচনা ব্যাকরণ মাফিক না হলে সে অনুষ্ঠান অন্তর্লোককে ভাবিত করে না। বিষয়বস্তু সরবরাহ করেন সাধারণত পেশাদার লেখকরা। তবে যারা নিরেট উপন্যাস-সাহিত্য, নাট্য-সাহিত্য, গল্প-সাহিত্য রচনা করেন অথবা সাংবাদিক বা কলাম লেখক, প্রবন্ধ রচয়িতা- এঁরা কিন্তু মিডিয়া লেখক নন। বরং মিডিয়া লেখকরা অর্থাৎ Script Writer-রা উক্ত লেখকদের রচনা থেকে মিডিয়া উপযোগী রচনা বাছাই করে স্ক্রীপ্ট রচনা করে থাকেন। যদিও বহু পূর্ব থেকে দেশ-বিদেশের অনেক সাহিত্যিক, নাট্যকার বা সাংবাদিক মিডিয়া লেখকের যোগ্যতা অর্জন করে মিডিয়াতে ’অনুষ্ঠান-মেকারের’ মত জটিল, পরিশ্রমলব্ধ অথচ সৃজনশীল ও মহৎ সব কাজ করে যাচ্ছেন।

তাদের পরিশ্রম-স্পৃহা এবং মেধার কারণে বহু মিডিয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর মূল লেখক ও Script Writer যদি একই ব্যক্তি হন তবে তিনি অর্থলগ্নিকারীর কাছে নি:সন্দেহে একজন সম্মানিত ও মূল্যবান ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত হবেন। অবশ্য অভিজ্ঞ Script Writer জানেন কোন্ বিষয়বস্তু কিভাবে মিডিয়া উপযোগী করে তুলতে হয়। সব ধরণের Script একই প্রযোজক আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন, এ ধারণাটা ভুল। যিনি হাস্য কৌতুকের অনুষ্ঠান প্রযোজনায় সফল তার পক্ষে সিরিয়াস বা ট্রাজেডী Script প্রযোজনা আকর্ষণীয় বা হৃদয়গ্রাহী করা কষ্টসাধ্য।

যিনি পারিবারিক, সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং ট্রিটমেন্টের Script প্রযোজনা করতে অভ্যস্ত, তিনি শহুরে অপরাধ সংক্রান্ত Script প্রযোজনা করতে হিমশিম খাবেন। সব মেজাজের Script যথাযথভাবে Screening করার যোগ্যতা অর্থাৎ বিচিত্রমুখী প্রতিভার অধিকারী খুব কম প্রযোজকই হয়ে থাকেন। তবে অনুশীলন, অধ্যয়ন, পরিশ্রম এবং সার্বক্ষণিক চিন্তাভাবনা করলে আয়ত্ত করা অসম্ভব কিছু নয়। মিডিয়ার সকল ক্ষেত্রে একই ব্যাপার দেখা যায়, যেমন- একজন ক্যামেরাম্যান হয়তো অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ইনডোরে লাইটিং করে শুটিং করতে পারেন, কিন্তু তিনি হয়তো আউটডোরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নাও করতে পারেন। আবার আউটডোরে যিনি দ্রুততার সাথে সুন্দর ফটোগ্রাফি করেন- তিনি হয়তো ইনডোরে সে রকম সফল নাও হতে পারেন।

তবে এ ক্ষেত্রেও উভয় স্থানে কাজ করার যোগ্যতা এবং দক্ষতা একজন ক্যামেরাম্যান অত্যন্ত পরিশ্রমের সাথে চর্চা করে আয়ত্বে নিয়ে আসেন। সংবাদ প্রযোজনার ক্ষেত্রে একই ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। রাজনৈতিক সংবাদ, ক্রাইম রিপোর্ট, যুদ্ধেক্ষেত্রের রিপোর্ট, খেলাধুলা, সংস্কৃতিক প্রতিবেদন, বিতর্ক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বিতর্ক, বিষয়ভিত্তিক বিতর্ক- মোট কথা সকল প্রকার অনুষ্ঠান প্রযোজনার ক্ষেত্রে মেধা ও প্রতিভার বিভিন্নতা আছে। আর সকল ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখা সম্ভব। মনে রাখা দরকার, আগ্রহ থেকে আকর্ষণের সৃষ্টি হয়, আকর্ষণ থেকে ভালবাসার সৃষ্টি।

আর ভালবাসাই কর্মস্পৃহা এবং দক্ষতা সৃষ্টি করে। ভালবাসাই সৃষ্টি করে দৃঢ় মনোবল, সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি, মনস্তত্ব বুঝার শক্তি, সাহিত্যবোধ, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, শব্দের ভাষা, সঙ্গীতের ভাষা, সুরের ভাষা, ফটোগ্রাফির ভাষা ইত্যাদি মিডিয়াভিত্তিক বিষয়গুলি এবং সঙ্গে সঙ্গে পরিশ্রম করার যোগ্যতা, ধৈর্য ও সহ্যশক্তি। ভালবাসাই এগিয়ে দেয় নিরন্তর চর্চার দিকে। বাড়ে সৃজনশক্তি। ফলে একজন লেখক দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং সফল হন।

এগুলো শুধু মিডিয়ার বেলায় নয়, পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রে কাজকে সর্বত্তোম করার শক্তি যোগায় সর্বত্তোম নিখুঁত ভালবাসা। এ ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের মূলধারার দিকে আমরা দৃষ্টি দিতে পারি। পৃথিবীর সকল দেশের চলচ্চিত্রে একটি ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়, তা হলো প্রচন্ড ভালবাসা, আকর্ষণ এবং আন্তরিক টানের কারণে চলচ্চিত্রের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি কলাকুশলী ঘর পালিয়ে বা সবকিছু ত্যাগ করে এবং সমস্ত বাঁধা ভেঙে চলে আসেন আর প্রচন্ড পরিশ্রম করে কাজ শেখেন ও সফল হন। প্রতিভার নিজস্ব একটা শক্তি আছে, সেই শক্তিই প্রতিভাধরদের বাঁধ ভাঙা জোয়ার হতে শেখায়। যারা অসফল বা ব্যর্থ হন, মনে রাখতে হবে তাদের অত আকর্ষণ ও ভালবাসা ছিল না, তারা কিছুই ত্যাগ করেন নি।

তাই দেখা যায়, যেসব মিডিয়া প্রযোজক (চলচ্চিত্রে পরিচালক) চলচ্চিত্রের মূলধারার সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাটাগরির চলচ্চিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তাঁরা মিডিয়ায় প্রযোজনার ক্ষেত্রে শুধু যে সফল হয়েছেন তা নয়, এক একজন এক একটি ইনস্টিটিউশন হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। এ উদাহরণ ভুরিভুরি আছে, শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশে। একমাত্র কারণ হলো- ’চলচ্চিত্র সকল সংস্কৃতির জননী। ’ প্রযোজক যে কোন অনুষ্ঠান প্রযোজনা করুন না কেন তার সবটাই লেখকের চিন্তাপ্রসূত। লেখা বাহুল্য যে প্রযোজক নিজেই লেখক সত্ত্বার অধিকারী হতে পারেন।

তবে ক্রমে ক্রমে বহুবিধ অনুষ্ঠান প্রযোজনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে নিত্যনতুন চিন্তাধারা আয়ত্ত্ব করার সময় সুযোগ তার জন্য কমই হয়। তাই তিনি পেশাদার লেখকের শরণাপন্ন হন। অতএব নির্দ্বিধায় বলা যায়, মিডিয়ার জন্য প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হলো মিডিয়া উপযোগী সৃজনশীল লেখক। আদর্শবান ও নীতিবান প্রযোজক যেন দায়ে পড়ে চরিত্রহীন দালাল প্রকৃতির লেখকদের পিছনে না ছোটেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।