আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যযুগে বাগদাদ...পর্ব ২

জ্ঞান বিজ্ঞানে বাগদাদের অগ্রসরতা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বাগদাদের অবস্থা ঃ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ণের ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অংশের চাইতে বাগদাদ কোন ভাবেই পিছিয়ে ছিল না। ৮ম থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যে সর্বদিক দিয়ে বাগদাদ পৃথিবীর সবথেকে উন্নত শহরের মর্যাদা লাভ করে। ইতিহাস প্রমাণ করে বাগদাদ রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, আইন তত্ত্ব,গণিত, ভূ-বিজ্ঞান, দর্শণ, ইতিহাস,সমাজ-বিজ্ঞান, সমর বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছিল। শুধু তাই নয়, প্রযুক্তি ও সাংষ্কৃতির ক্ষেত্রে বাগদাদ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে তন্মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে, প্রযুক্তি উন্নয়নে, স্থাপত্য শিল্পে, হস্তলিখন শিল্প, চিত্রশিল্পে, গ্রন্থাগার সংগঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান স্মরণ করা যেতে পারে(বাগদাদসহ ইসলামী ভূখন্ডের অন্যান্য অংশের বড় বড় লাইব্রেরীতে যখন ৬ লক্ষাধীক পর্যন্ত মূল্যবান কিতাব সংরক্ষিত থাকত ,তখন ইউরোপের প্রসিদ্ধ লাইব্রেরীগুলোর কিতাবের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজারের বেশী ছিলনা। )।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর ৬ হাজারেও বেশী শিক্ষার্থী বাগদাদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসত। বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য,মুসলিমদের কৃষ্টি সাং®কৃতি শেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু কষ্ট স্বীকার করে বাগদাদে আসত। অমুসলিম বিশ্বের রাজপুত্রদের স্বপ্নের নগরী ছিল বাগদাদ। এখানকার প্রত্যেকটি রাস্তা ছিল পাকা এবং রাস্তায় রাতে বাতির ব্যবস্থা ছিল। এ সময় লন্ডন,প্যারিসে ধুলা,কাদা,অপরিচ্ছন্নতা,মূর্খতা,অসভ্যতা,ব্যপক সামাজিক অপরাধ ইত্যাদীর জন্য জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ।

খলিফারা শিক্ষা বিস্তারের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন দিনার ব্যয় করত অকাতরে। শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। তখন জ্ঞানার্জনের প্রধান ভাষা ছিল আরবী। ইহুদী,খ্রিষ্টান,মুশরিক,মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই এ ভাষাতে শিক্ষা গ্রহন করত। খলিফা মনসুরের আদেশেই বিদেশী ভাষার সাহিত্যি ও বৈজ্ঞানিক গ্রন্থসমূহের প্রথম আরবীতে অনুবাদ হয়েছিল।

খলিফা মনসুরের আদেশে উঁচুদরের পন্ডিতগণ ভারতীয় উপকথা (হিতোপদেশ), জ্যোতির্বিদ্যার উপর ভারতীয় গ্রন্থ, ক্লডিয়াস টলেমির টি আল ম্যাজেস্ট ইউক্লিডের গ্রন্থসমূহ এবং বহু প্রাচীন গ্রীক, বাইজান্টাইন, পারসিক ও সিরীয় গ্রস্থ আরবীতে অনুবাদ করেছিলেন। ঐতিহাসিক মাসুদি বলেন যে এই অনুদিত গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হতে না হতেই অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে সেগুলো পঠিত হয়েছিল(স্পানিশ অনুবাদকগণ ৮৭টি বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ আরবী থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন, এভাবে আরও অনেক বিষয়ের উপর লিখিত মৌলিক কিতাবের অনুবাদ হয় এবং তা ইউরোপকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ধাবিত করতে থাকে)। মনসুরের উত্তরাধিকারীগণও কেবল বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিদ্বান ও জ্ঞানীদের অনুরাগী পৃষ্ঠপোষকই ছিলেন না, তারা নিজেরাও অত্যন্ত পরিশ্রম সহকারে জ্ঞানের প্রত্যেকটি শাখার অনুশীলন করতেন। তাদের অধীনে আরবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, অন্য কথায় বিশাল সাম্রাজ্যের সম্মিলিত জাতি সমূহ, যা নিয়ে খিলাফত গঠিত ছিল তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বিশ্ময়কর দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হয়েছিল। কলা ও বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা ঃ কলা ও বিজ্ঞানের কর্ষণে খিলাফত রাষ্ট্রের প্রত্যেক শহর অন্য শহরকে অতিক্রম করার চেষ্টা করত।

মহান শিক্ষাগুরুর নীতি অনুসারে জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যে দেশ পর্যটন ছিল একটি পবিত্র কর্তব্য। বিশ্বের প্রত্যেক জায়গা থেকে শিক্ষার্থী ও গবেষক আরব্য পন্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের বাণী শ্রাবণ করার জন্য কর্ডোভা,আলেকজান্দ্রিয়া,কুফা,কায়রো, বাগদাদ,সেভিল প্রভৃতি এলাকার পৃথিবী বিখ্যাত বিদ্যাপীঠে ভিড় জমাতেন। এমনকি খ্রিষ্টানগণ ইউরোপের সুদূর প্রত্যন্ত সীমা থেকে মুসলমানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার জন্য আসতেন। যে সব মণীষী পরবর্তী জীবনে সুবিখ্যাত হয়েছিলেন তারাও মুসলমান শিক্ষকদের নিকট থেকে পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। আল মুয়িজ লি দিন ইল্লাহের শাসনাধীনে কায়রোর অভ্যূত্থান আব্বাসীয় ও ফাতেমীয় বংশের খলিফাদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্টপোষকতার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব যোগ করেছিল।

আটলান্টিক মহাসাগর থেকে পূর্বদিকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত এমন কি প্রশান্ত মহাসাগর থেকে দূরবর্তী অঞ্চলসমূহে মুসলমানদের তত্ত্বাবধানে ও অনুপ্রেরণায় দর্শন ও শিক্ষার বাণী অনুরণিত হয়েছিল। এই যুগে খ্রীষ্টান বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবস্থা কি ছিল ? কনস্ট্যানটাইন ও তাঁর গোঁড়া উত্তরাধিকারীদের শাসনামলে এসকেলিপিউন চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল; আদিম পৌত্তলিক সম্রাটদের উদারতার ফলে যেসব পাঠাগার প্রতিষ্টিত হয়েছিল তা ছিন্নভিন্ন বা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল; “শিক্ষাকে ম্যাজিক হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছিল বা রাজদ্রোহিতা বলে গণ্য করা হয়েছিল” দর্শন ও বিজ্ঞান সম্পূর্ণরুপে নির্মূল করা হয়েছিল। “অজ্ঞানতা ধর্মনিষ্ঠার জননী” এই যাজকীয় নীতিবাক্যের মধ্যে মানবীয় শিক্ষার প্রতি যাজকতন্ত্রের ঘৃণা গ্রেগলি রোম থেকে সব বৈজ্ঞানিক পঠন-পাঠনকে নির্বাসিত করে ও আগাস্তাস সিজার প্রতিষ্টিত প্যালেস্টাইন পাঠাগার ভস্মীভূত করে এই জ্ঞানবিরোধী নীতিকে কার্যকর করেছিলেন। তিনি গ্রীস ও রোমের প্রাচীন লেখকদের রচনা পাঠ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি পৌরাণিক খ্রীষ্টধর্মের প্রবর্তণ ও পুতকরণ করেছিলেন যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইউরোপের প্রভাবশালী ধর্মমত হিসেবে চলেছিল সাধকদের স্মৃতিচিহ্ন ও ধ্বংসাবশেষ পূজা ছিল এর অর্ন্তভূক্ত।

গোঁড়া খ্রীষ্টধর্ম সাহিত্য ও বিজ্ঞানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। যখন স্বাধীনতা চিন্তা মানবমনের অগ্রগতি রোধ করার জন্য তৈরী প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়েছিল একমাত্র তখনি তারা নিজেদের মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল। আব্দুল্লাহ আল্ মামুন সঠিকভাবেই আরবদের অগাসতাস বলে অভিহিত। “তিনি এ বিষয়ে অজ্ঞ ছিলেন না যে, তারা আল্লাহর মনোনীত তাঁর শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে কল্যাণকামী দাস, যাদের জীবন তাদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের প্রতি নিবেদিত আর জ্ঞানের অন্বেষণকারী মহান শিক্ষকেরা জগতের প্রকৃত জ্যোতিষ্ক। ” মামুনের উত্তরাধিকারী যুবরাজগণ তার কর্মধারা অব্যাহত রেখেছিলেন।

তাঁর এবং তাঁর উত্তরাধিকারী শাসনামলে বাগাদাদের পঠন-পাঠনের প্রধান বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক ধারা ছিল প্রকৃতপক্ষে প্রবল বৈজ্ঞানিক মানসিকতা, আর এই বিশিষ্টতা তার সমুদ্বয় সাফল্যের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। যে অবরোহ পদ্ধতিকে আধুনিক ইউরোপের উদ্ভাবন ও একমাত্র একচেটিয়া অধিকার বলে বিবেচিত হত তা মুসলমান পন্ডিতেরা নিখুঁতভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। “জ্ঞাত বিষয় থেকে অজ্ঞাত বিষয়ে উত্তরনের মধ্যদিয়ে বাগদাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কার্য থেকে কারণে উন্নীত হওয়ার জন্য ঘটনাবলীর যথাযথ পরিক্ষা-নিরিক্ষা করেছিল এবং কেবল অভিজ্ঞতা প্রদর্শিত বিষয়েই গ্রহণ করেছিল; মুসলিম শিক্ষাবিদেরা এই ধরনের মূল নীতিসমূহ শিক্ষা দিয়েছিলেন। ” “নবম শতকের আরবগণ সেই উর্বর পদ্ধতির অধিকারী হয়েছিলেন যে পদ্ধতি বহু পরে আধুনিক চিন্তাবিদদের হাতে তাদের সুন্দরতম আবিস্কারসমূহের হাতিয়ার হয়েছিল। ” রসায়নে বাগদাদ ঃ আরবদের পূর্বে রসায়ন বিদ্যা বিজ্ঞান হিসাবে পরিচিত ছিলো না; উপায় উপকরণের কারণ হিসাবে এ চর্চা পরিচালিত হতো।

রসায়নকে বিজ্ঞান হিসাবে মুসলমান সাধকরাই প্রতিষ্ঠিত করেন। হাম-বোল্ট উল্লেখ করেছেনঃ “আধুনিক রসায়ন শাস্ত্র মুসলমানদের উদ্ভাবন এবং এই বিষয়ে তাহাদের কৃতিত্ব অতুলনীয়রুপে চিত্তাকর্ষক। ” মূলতঃ প্রাচীন রসায়নের অসারতা প্রমাণ করে, শিল্প রসায়নের প্রচলিত (ওহফঁংঃৎরধষ ঈযবসরংঃৎু) দৌড়কে থামিয়ে দিয়ে তত্ত্বীয় রসায়ন তাদের হাতেই জন্মলাভ করে। ঝরৎ ঋফঁধৎফ ঞযড়ৎঢ়ব তাঁর ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঈযবসরংঃৎু গ্রন্থে উল্লেক করেছেনঃ ঊীঢ়বৎরসবহঃধষ অষপযবসু ধং ফরংঃরহমঁরংযবফ ভৎড়স ওহফঁংঃৎরধষ ঈযবসরংঃু সধু ধং ধষৎবধফু ংঃধঃবফ, নবংরফব ঃড় যধাব ড়ৎরমরহধঃবফ রিঃয ঃযব অৎধযনরধহং. ঐতিহাসিক রেজা-ই করীম এ প্রসঙ্গে লিখেনঃ “জ্যোতির্বিদ্যা, অংকশাস্ত্র এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের পরেই আরবদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রসায়ন শাস্ত্রে। বিজ্ঞান অধ্যায়নের ক্ষেত্রে গ্রীকদের মতো অস্পষ্ট অনুমান ও কল্পনার উপর নির্ভরশীল না হয়ে আরবগনই প্রথম হতে নিরীক্ষণ পদ্ধতির (বীঢ়বৎরসবহঃ) প্রবর্তন করেন।

সূক্ষè পর্যবেক্ষণ (ড়নংবৎাধঃরড়হ) এবং সত্য উদঘাটনের প্রবল ইচ্ছা আরবদিগকে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করত। রসায়নের ইংরেজী প্রতি শব্দ কেমিষ্ট্রী (ঈযবসরংঃৎু); শব্দটি যে আরবী ‘আল-কিমিয়া’ থেকে উদ্ভূত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ষষ্ঠ ও সস্পম শতাব্দী থেকে আল কিমিয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। খালেদ বিন ইয়াজিদ ঃ হযরত আলীর তৈরী রসায়নিক পরিকল্পনার উত্তরাধিকার বহন করেন হযরত মুয়াবিয়ার পৌত্র খালেদ বিন ইয়াজিদ। উমাইয়া যুগের বিরল বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম গ্রীক বৈজ্ঞানিক গ্রন্থসমূহের অনেকগুলো আরবীতে অনুবাদ করেন।

ঐতিহাসিক ফিহরিস্তের মতে, ইসলামের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম অন্য ভাষা থেকে আরবীতে গ্রন্থ অনুবাদ করেন। এ দৃষ্টিতে তাঁকে আরব প্রাকৃতিক বিজ্ঞান আলোচনার প্রবর্তক বলা যেতে পারে। তিনি চারটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন বলে ইবনে নাদিম ফিহরিস্তে উল্লেক করেছেন। সেগুলো হলো ‘ কিতাবূল হারারাত’ ‘সাহিফাতিল কবীর’ ‘সাহিফাতিস্ সগীর’ এবং ‘ওয়াসিয়াতিহি ইলা ইবনিহি ফিস্ সান আ’। রসায়ন বিজ্ঞানের জনক- আবু আবদুল্লাহ জাবির ইবনে হাইয়ান ঃ এম আকবর আলী লিখেছেন ঃ ‘জাবির ইবনে হাইয়ানকে বলা চলে পৃথিবীর সর্বপ্রথম রসায়ন বৈজ্ঞানিক।

তাঁর পূর্বে যে রসায়নের চর্চা হয়নি তা নয়, কিন্তু সে চর্চার মধ্যে ঠিক বর্তমানে চর্চা বলতে সাধারণতঃ যে ধীরস্থির নিয়মানুগতিক সুবোধ্য ধারার কথা মনে হয় তেমন কোনো নিয়মানুগতিক ধারার অস্তিত্বই ছিলো না। রসায়ন ছিলো তখন যাদু বিদ্যার অন্যতম প্রতীক। সাধারণ সমাজ একে দেখতো ভয়ের চোখে, বিদ্বান সমাজ একে বিজ্ঞান হিসাবে আমলই দিতেন না। রসায়নের যখন এমনি অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সেই সময়েই জাবিরের আবির্ভাব। এই সময়ে তিনি যে কঠোর অধ্যাবসায় ও পরিশ্রমের ফলে রসায়নকে তার অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ভার করে দর্শন অংক ও চিকিৎসা শাস্ত্রের সমতুল্য পরিপূর্ণ বিজ্ঞান হিসেবে উন্নতি করতে পেরেছিলেন, তার জন্যেই বিজ্ঞান জগত তাঁর কাছে চীর কৃতজ্ঞ।

আবু আবদুল্লাহ জাবির ইবনে হাইয়ান আল কুসী আরব বংশোদ্ভূত, কুফা ভিন্নমতে তূসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বৈজ্ঞানিক অনুশীলন শুরু হয় আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদের (৭৮৬-৮০৯ খৃ.) খিলাফত কালে। কুফায় তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলেছিলো। ঐতিহাসিক ফিহরিস্তের মতে, তার রসায়নাগারও এখানে স্থাপিত হয় এবং তার মৃত্যুর একশত বছর পরে কুফার প্রান্তে অবস্থিত দামাস্কাস গেটের নিকট নতুন রাস্তা তৈরী করতে কতোগুলো ঘর ভেঙ্গে ফেলার সময় ২০০ পাউন্ড ওজনের একটি সোনার তাল ও একটি খল পাওয়া যায়। অবশ্য হিট্টি এ ঘটনার সময় তার মৃত্যুর দুইশ বছর অতিবাহিত হয়েছিলো উল্লেখ করেছেন।

৭৭৬ বা ৮১৩ খৃ. দিকে তার মৃত্যু হয়েছিল। জাবির বিন হাইয়ানের জীবনী আলোচকদের মধ্যে চতুর্দশ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ রসায়নবিদ আল জিলদাকীর (মৃ. ১৩৬০ খৃ.) রচিত ‘কিতাবুল বুরহান ফি আসরাবে আলমুল মিজান”এ সবচেয়ে বিজ্ঞান সম্মত আলোচনা করা হয়েছে। জাবিরের সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মত জীবনী আলোচক ঐড়ষসুধফ এর মতে ঃ আজদ বংশীয় জাবির কুফায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি রসায়ন শাস্ত্র শিক্ষার পর ইমাম জাফর সাদিকের নিকট গমন করেন এবং কার্য চালান। বারমাকী মন্ত্রী জাফরের সহায়তায় তিনি খলিফা হারুনুর রশীদের অনুগ্রহভাজন হন।

তিনি খলিফার জন্য কিতাবুল জুহুর (ঞযব নড়ড়শ ড়ভ ইষড়ংংড়স) বা কিতাবুল নুহাস (ঞযব নড়ড়শ ড়ভ ঈড়ঢ়ঢ়বৎ) প্রণয়ন করেন। তারই উদ্যোগ দ্বিতীয়বারের জন্য গ্রীক গ্রন্থাবলী কনষ্টান্টিনোপল থেকে আনীত হয়। তিনি ৯০ বছরের ও অধিককাল জীবিত ছিলেন। ” জাবিরের পিতা ছিলেন খ্যাতনামা চিকিৎসক। সেই সূত্রে চিকিৎসা বিষয়েও তার আগ্রহ ছিলো।

এমনকি পিতার মতো চিকিৎসা ব্যবসা দিয়ে তিনি কার্যক্রম শুরু করেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি যে বহুমুখী বিদ্যার অধিকারী ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চিকিৎসা, ইউক্লিডও আল মাজেষ্টের ভাষ্য, দর্শন, যুদ্ধবিদ্যা, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা ও কবিতা বিষয়ে তিনি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তিনি গ্রীক ভাষাতেই সংশ্লিষ্ট লেখার সাথে পরিচিত হন। ইবনে নাদীমের মতে জাবির বিন হাইয়ান দু’হাজারের বেশী গ্রন্থ রচনা করেন।

অতিশয়োক্তি মনে হলেও এতে আশ্চার্যের কিছু নেই। তার প্রাপ্ত গ্রন্থগুলোর অনেকগুলোর গড় পৃষ্টা ৮/১০ এর মতো এমনকি অনেকগুলোর পৃষ্টা মাত্র ২টি। জাবিরের গ্রন্থসমূহের বিষয় ও সংখ্যা মোটামুটি নিুরুপ ঃ রসায়ন বিষয়ে রচনা -২৬৭টি ,কিতাবূত তাকদীর ধরনের গ্রন্থ -৩০০টি,দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ-৩০০টি,যুদ্ধাস্ত্র সম্বন্ধীয় গ্রন্থ -৩০০টি,চিকিৎসা সম্বন্ধীয় গ্রন্ত-৫০০টি,দার্শনিক যুক্তিখন্ডক বিষয়ক-৫০০টি,জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যামিতি ও অন্যান্য- ৫টি। রসায়ন বিষয়ক রচনা জাবির বিন হাইয়ানকে চির অমর করে রেখেছে (তিনি সর্বপ্রথম পার্ফিউম আবিষ্কার করেন)। এ বিষয়ে কয়েকটি শ্রেষ্ঠতম রচনা হলো ‘কিতাবুর রহমত; ‘কিতাবুত তাজমী’ এবং জিবাক্ উশ-শরকী।

বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়ামে রক্ষিত তার কিছু রসায়ন গ্রন্থের নাম হলোঃ কিতাবুর রহমত, কিতাবুর রাহা, কিতাবুর আবদাল। ইউরোপ,আমেরিকার দেশগুলিতে অতি উচ্চতর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরকে তার কিতাবের পাঠ শেখানো হয়। ইবনে আব্দুল মালিক আল কাছি ঃ একটি মাত্র গ্রন্থ লিখে রসায়ন বিজ্ঞানে নিজের নাম যুক্ত করে নিয়েছেন একাদশ শতাব্দীর আবুল হাকিম মোহাম্মদ ইবনে আবদুল মালেক আল খারেজমী আল কাছি। তিনি বাগদাদে থাকতেন এবং ১০৩৪ খৃ. তার পৃষ্ঠপোষক আবুল হাসান ইবনে আবদুল্লাহর জন্য ‘আইওয়ানুস সানাহ’ ঊংংবহপব ড়ভ ঃযব অৎঃ ধহফ অরফ ড়ভ ড়িৎশবৎ' নামে এই গ্রন্থটি রচনা করেন। এর একটি অসমাপ্ত আরবী পান্ডুলিপী রামপুরের নওয়াব লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়।

১৯০৫ সালে ডঃ স্টেপলটন এ পান্ডুলিপীটি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি হায়দ্রাবাদের নিজামিয়া লাইব্রেরীতে ফার্সীতে রচিত উক্ত গ্রন্থের একটি অনুবাদও পান। রসায়নে ‘আইনুস সানাহ’ গ্রন্থটি খুবই মূল্যবান সংযোজন। বড় ধরনের আলোচনা এখানে সম্ভব নয় শুধুমাত্র এর আলোচিত অধ্যায়গুলোর উল্লেখ করা হচ্ছে; গ্রন্থটি ৭ পরিচ্ছেদে বিভক্ত, প্রথম পরিচ্ছেদে তাদের গুণ এবং তাদের শ্রেণী ও রুহ নফস নিয়ে আলোচনা দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে তাদের গুণ এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, তৃতীয় পরিচ্ছেদে কি পরিমাণ ও অনুপাতে জিনিস এতে ব্যবহার করতে হবে, চতুর্থ পরিচ্ছেদে যে সকল বস্তু সাদা এবং যে সকল জিনিস লাল এর উপযোগী তাদের মধ্যকার পার্থক্য পঞ্চম পরিচ্ছেদে-এতে যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় এবং এর জন্য যে সমস্ত যন্ত্রপাতির দরকার তার বর্ণনা, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে কোন জিনিস অপ্রাপ্তব্য হলে তার পরিবর্তে অন্য কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে কিনা সে সম্পর্কে এবং সপ্তম পরিচ্ছেদে যারা রসায়ন চর্চা করে লাভবান হয়েছে। রসায়নের প্রত্যেক প্রয়োজনীয় শাখার সরল ও সহজ পন্থা এতে সংক্ষিপ্ত ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৈজ্ঞানিক ইবনে সীনাও অনেকগুলো রসায়ন নিয়ে আলোকপাত করেছেন রসায়নকে প্রণালীবদ্ধ করায় তার সহযোগীতা স্মরনীয়। রামপুর লাইব্রেরীতে প্রাপ্ত ত্রয়োদশ শতাব্দীর রাসায়নিক সংগ্রহ গ্রন্থে ইবনে সীনার গ্রন্থ বলে একটি গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে। এতে অন্যান্য বিষয় ছাড়াও ১২ টি রাসায়নিক প্রক্রিয়া বিবরণ দেয়া হয়েছে। ১. এ বিজ্ঞানে ব্যবহৃত একটি প্রক্রিয়া (ঝড়ফরঁস ঐুফৎধঃব- এর সলিউশন),(২)গাদ্ আর রাগওয়াহ তৈরী প্রক্রিয়া (ঈধষপরঁস চড়ষুংঁষঢ়যরফব- এর সলিউশন),(৩)লাল এর জন্য পারদ ঘনীভূত (ঈড়ধমঁষধঃব করার প্রক্রিয়া),(৪)লাল তৈরী করতে যে ঘনীভূত পারদ ব্যবহৃত হয় তারই তাৎক্ষনিক চালানোর পন্থা। (৫)সোনা বা তামার ভস্মীভূতকরণ (ঈধষপরহধঃরড়হ),(৬)ভিটওল ও অন্যান্য লবণ দ্রবণ।

(৭)গন্ধক থেকে আরক বের করা। (৮)দ্রবণ পদ্ধতি। (৯)আরক এর দক্ষতা সহকারে ব্যবহার। (১০)গাদের ব্যবহার বা শাসা গন্ধক তৈরী করার প্রক্রিয়া। (১১)ঘনীভূত করার (ঈড়ধমঁষধঃরড়হ) পদ্ধতি এবং (১২)কাজ কিভাবে সম্পন্ন হয় তার বর্ণনা ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাগদাদ ঃ আল কুরআন কোন বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ নয়। মানব জীবনের জন্য এটি একটি ঐশী কিতাব। তবে এতে রয়েছে বিজ্ঞান নির্দেশক অনেক আয়াত। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কুরআনের যেখানেই কোন বৈজ্ঞানিক তথ্যের উল্লেখ রয়েছে সেখানেই বুদ্ধিমান লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্যানুসন্ধান নিদের্শক এসব আয়াত গবেষণা করে বিংশ শতাব্দীর অনেক পাশ্চাত্য পন্ডিত বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়ছেন।

তারা বলতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যযুগে মুসলমানরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছিল তার মূলে ছিল কুরআনের বৈজ্ঞানিক তথ্যানুসন্ধান নিদের্শক বাণীসমূহ। ডঃ হার্ট হার্সফেল্ড তাঁর ঘবি জবংবধৎপযবং রহ ঃড় ঃযব ঈড়সঢ়ড়ংরঃড়হ ধহফ ঊীবমংরং ড়ভ ঃযব ছঁৎধহ গ্রন্থে বলেছেন, আমরা যখন দেখি কুরআন সকল বিজ্ঞানের উৎস্যমূল, তখন আমাদের বিস্ময়ের অন্ত থাকে না। গ্রন্থটিতে যেসব ইহ ও পরকালের সাথে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়, মানব জীবন, কারবার ও বাণিজ্যের বিষয়সমূহ প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত হয়েছে তাতে এই পবিত্র গ্রন্থটির উপর গবেষণা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কুরআন চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চায়ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। যেমন- সূরা নাহলে মধুকে ঔষধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

হুনায়েন ইবনে ইসহাক (৮০৯-৭৭ খৃ.) পাশ্চাত্য জগতে ঔড়যধহহরঃরঁং ঙহধহ এর ঐঁহধরহঁং নামে পরিচিত। তিনি খলিফার নিযুক্ত শ্রেষ্ঠ অনুবাদক বিজ্ঞানী ছিলেন। তিঁনি ইরাকের হিরা অঞ্চলে জন্ম গ্রহণ করেন। গ্যালেন সহ অনেক প্রাক রোমান বিজ্ঞানী তার মাধ্যমে আরবে পরিচিত হন। এ.গ. ডরপশবহং বলেন ঞযব সড়ংঃ ভধসড়ঁং ড়ভ ঃযব ঃৎধহংষধঃড়ৎং ড়ভ ঃযরং ঢ়বৎরড়ফ ধিং ঐঁহধুহ রনহ ওংযধয় (৮০৯-৭৭) যরসংবষভ ধ ঢ়যুংরপরধহ রিঃয ধ ংঃড়হম ধঃঃধপযসবহঃ ঃড় এধষবহ"গ্যালেন ছাড়াও তিনি এরিষ্টটল , প্লোটো, ইউক্লিড, হিপোক্রেটস, আরিবাসিয়ন এর গ্রন্থ সমূহ অনুবাদ করেন।

অনুবাদ ছাড়াও তিনি শতাধিক মৌলিক গ্রন্থও রচনা করেন। তার পুত্র ইসহাক বিল হুনায়েন, খলীফা আল মুতামিদের সভাসদ ছিলেন, তাছাড়া অনুবাদক ও গ্রন্থকার হিসাবে তার খ্যাতি প্রসারিত ছিল। তার চিকিৎসা গ্রন্থগুলোর মধ্যে আদাবিয়াতুল মুফারেদাত, কুন্নশুল খাফফা, তরীখুল আতিব্বা অন্যতম। তিনি ৯১০ খ্রি. বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন। হাসান ইবনে নুহ ১০ম শতাব্দীর শেষদিকে অন্যতম চিকিৎসাবিদ ছিলেন।

তবে তার খ্যাতি তিনি ইবনে সীনার শিক্ষক ছিলেন । জিবাল প্রদেশের কুম নামক স্থানে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১০ম ও একাদশ শতকের সন্ধিকরণে বাগদাদে চিকিৎসক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। তার গ্রন্থাবলীর মধ্যে কিতাবু গানা ওয়া মানা ৩ খন্ডে বিভক্ত এবং সব চাইতে বিখ্যাত। অন্যান্য গ্রন্থ হলো মাকালাতু ফিত্তীব মুসতালাহাতেত তীব এবং কিতাবু এলালিল এলাল। আবুু মনসুর মুয়াফাক, আরব চিকিৎসা বিজ্ঞানে দুটো কারনে বিশিষ্ট।

একটি হলো তিনি প্রাদেশিক ভাষা ফার্সীতে চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন, অন্যটি চিকিৎসা শাস্ত্রের সাথে রসায়ন সংযোগ সাধন করেছেন। সামানীয় নৃপতি মনসুর ইবনে নূহের (৯৬১-৯৭৬ খৃ.) রাজত্বকালে হিরাতে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে গুটি কতেক মনীষী রসায়নকে যোগ করেছেন তিনি তন্মেধ্যে অন্যতম। তিনি সোডিয়াম কার্বনেট এবং পটাশিয়াম কার্বনেট কার্যকারিতা পার্থক্য সন্বন্ধে যেমন লিখেছেন তেমনি তামা ও সীসা প্রর্ভতি যৌগিক পদার্থের বিষক্রিয়ার পার্থক্য সম্বন্ধেও আলোচনা করেছেন। এছাড়া কলিচুনের (য়ঁরপশ খরহব) লোমনাশক গুণ চষধংঃবৎ ড়ভ ঢ়ধৎরং তৈরী করতে ও সার্জারীতে এর ব্যবহার সম্পর্কে, ঈঁঢ়ৎরপ ঙীরফব ও ংরষরপরপ ধপরফ প্রর্ভতির ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।

ইবনে সীনা প্রমুখ প্রখ্যাত বিজ্ঞানীদের মাতৃভাষায় ফার্সী হওয়া সত্ত্বেও তারা আরবীতেই গ্রন্থাদী প্রণয়ন করেছেন। এক্ষেত্রে প্রথম ব্যতিক্রম এই আবু মনসুর মুয়াফাক। মাতৃভাষা চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রচারের এই বিজ্ঞানি ৯৭৫ খৃ. দিকে কিতাবুল অবনিয়া আন হাকায়েকুল আদবিয়া নামে ফার্মাকোলজী বিষয়ে একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এর মালমসলা সংগ্রহে তিনি পারস্য ও ভারত বর্ষের বহু জায়গা ভ্রবণ করেন। ফার্সী ভাষায় এটি সর্ব প্রথম গদ্যগ্রন্থ।

৫৮৫টি প্রতিষেধক, তার মধ্যে ৪৬৬টি উদ্ভিদ, ৫৪টি ধাতব ও ৪৪টি জান্তব ঔষধের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। তার গ্রন্থটি ১০৫৬ খৃ. কবি আসাদী কপি করেন। ইউরোপের লাইব্রেরীতে যে পুরাতন পান্ডুলিপি পাওয়া গেছে তা আসাদীরই অনুলিপিকৃত। চৎড়ভ ঋ.জ. ঝবষরমসধহ ভিয়েনা থেকে সংগ্রহ করে প্রথমে ল্যাটিন ও পরে ১৮৫৯ খৃঃ ফার্সী ভাষায় পান্ডুলিপি সংস্কার করে প্রকাশ করেন। ১৮৯৩ সালে আব্দুল খালেক আকন্দ, পল হর্ণ, অধ্যাপক রবার্ট, অধ্যাপক পলি যৌথভাবে ঐধষষব থেকে গ্রন্থটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ করেন, যার নাম (উরব ঢ়যধৎসধশড় ষড়মরংপযবংং ঈৎঁহফংধঃমবফবং অনঁ গধহংঁৎ.) চক্ষু চিকিৎসক ঃ ঈযহধসঁংধষর নামে পাশ্চাত্যে পরিচিত ইরাকের চিকিৎসা বিজ্ঞানী আবুল কাশেম আম্মার বিন আলী মত্তসুলী খলিফা আল হাকিমের (৯৯৬-১০২০) সময়ে খ্যাতি লাভ করেন।

চক্ষু চিকিৎসা বিশেষ করে চোখের ছানি অপারেশনে তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। চক্ষু চিকিৎসার ব্যাপারে তাকে মুসলিম জগতের সর্ব প্রথম মৌলিক চিকিৎসাবিদ বলা হয়। সারটনের মতে, ঞযব সড়ংঃ ড়ৎরমরহধষ ড়ভ গঁংষরস ড়পপঁষরংঃ, চোখ অপারেশনে তার দক্ষতা আলী ইবনে ঈসা সমসাময়িক কালে আর্বিভূত না হলে খুবই খ্যাতি লাভ করতো তবুও আম্মার বিন আলীর দান মৌলিক। এগুলোর বক্তব্য সেটাই প্রমাণ করে অসসধৎ নরহ অষর রহ সড়ংঃ ঁহঁংঁধষষু ড়াবৎংযধফড়বিফ নু যরং পড়হঃবসঢ়ড়ৎধৎু, ঃযব সড়ৎব ভধসড়ঁং নঁঃ ষবংং ড়ৎরমরহধষ অষর ওনহ ওংধ. কিতাবুল মনতাখাব ফি এলাজিল আইন আম্মারের চোখের রোগ চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের বিশিষ্ট রচনা । চোখের ছানি অপারেশনের তিনি শোষণ করে নরম ছানি তুলে ফেলার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।

তিনি একটি ফাপা সূচ ঝবষবৎড়ঃরপ এ ঢুকিয়ে দিয়ে শোষণ করে লেন্স তুলে নিতেন। এতে ঈযসধনবৎ- এ কোন ছিদ্র করার দরকার হতো না এবং জলীয় পদার্থ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। বলা বাহুল্য, ১৯ শতকে ইউরোপে এ প্রথাই পূণরাবিস্কৃত হয়(নিজেদের নামে চালিয়ে দেয়)। এলগুড বলেছেন ঃ ঊঁৎড়ঢ়ব ৎবফরংপড়াবৎবফ ঃযব ঢ়ৎরহপরঢ়ষব রহ ঃযব হরহবঃববহঃয পবহঃঁৎু: আম্মার চোখের অহধঃড়সু, চধঃযড়ষড়মু এর চোখের ৬ প্রকার ছানি ও পীড়া নিয়ে মৌলিক চিন্তা উপহার দিয়েছেন। ঘধঃযধহ-যয়-গরধঃর ১৩ শতকে শেষদিকে হিব্র“তে এলাজিল আইন অনুবাদ করেন।

জার্মান ও ল্যাটিন ভাষায়ও অনেক অনুবাদ বের হয়। তার অন্য চিকিৎসা গ্রন্থটি হল মুনতাখাব ফি এলমিন আইন ওয়া আলালেহা ওয়ালদাওলাতেহা বিল আদরিয়াতিল হাদীদ। ইবনুল হাইসাম প্রখ্যাত মুসলিম পদার্থবিদ ও গণিতবিদ ইবনুল হাইসাম চক্ষু চিকিৎসার ব্যাপারে এক যুগপৎ অবদান রেখেছেন। চযুংরপং ও সধঃযবসধঃরপং সম্বন্ধে তাত্ত্বিক জ্ঞানকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কিভাবে ব্যবহার করা যায় , তিনি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। চোখের এনাটমী পরীক্ষা করে তিনি ঝপষবৎড়রফ, পড়ৎহবধ, ঈযড়ৎড়রফ, ওৎরং প্রভৃতির পার্থক্য সুষ্টুভাবে নির্ধারণ করেছেন।

তিনি চোখের ৎবঃরহধ, ড়ঢ়ঃরপ হবৎাব এর কাজ, চোখের দুই রসের জলীয় (ধয়ঁবড়ঁং) এবং স্বচ্ছ (ঠরষৎবড়ঁং) কাজ প্রভৃতি নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। বর্তমানের 'খবহং' ইংরেজী শব্দটি ইবনুল হাইসামের আরবীতে ব্যবহৃত আদাসা শব্দ থেকে উদ্ভুত হয়েছে। আদাসা অর্থ মসুরের ডাল। চোখের লেন্স, মসুরের ডালের মত নরাড়হাবী ল্যাটিন অনুবাদকরা এই আদাসাকে তাই খবহঃরপঁষঁস বলে অনুবাদ করেন। এই শব্ধটি আজ ষবহং নামের পরিচিত হচ্ছে।

ইবনুল হাইছামের তাত্ত্বিক মতবাদ প্রযুক্তির মাধ্যম চশমা আবিস্কারের সাহায্য করে বলে তিনি চশমা আবিস্কারের আদি পুরুষ। ঐতিহাসিক হিট্টির বক্তব্য, ওহ পবৎঃধরহ বীঢ়বৎরসবহঃং যব ধঢ়ঢ়ৎড়ধপযবং ঃযব ঃযবড়ৎবঃরপধষ ফরংপড়াবৎু ড়ভ সধমহরভুরহম মষধংংবং যিরপয ধিং ধপঃঁধষষু সধফব রহ ওঃধষু ঃযৎবব পবহঃঁৎরবং ষধঃবৎ. বাগদাদের ইব্রাহীম বিন বিলমিজ (জন্ম ১০৭৩ খ্রি.) আজুদী হাসপাতালের চিকিৎসক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি গ্রীক ও আরবী চিকিৎসা গ্রন্থের অনেকগুলো ভাষ্য রচনা করেছিলেন। তিনিই প্রথম মহনবীর (সাঃ) চিকিৎসা বিষয়ক হাদীসগুলো নিয়ে একটি ভাষ্য তৈরী করেন। এছাড়া চযধৎসধপড়ঢ়রধ বিষয়ে একটি গ্রন্থ তার আছে।

সমসাময়িক আরো কয়েকজন চিকিৎসক হলেন আলী মালকা, হিবাতুল্লাহ আল ইসপাহানী (মৃ. ১১৪৫ খ্রি.) ইসমাইল আল জুরজানী (মৃ. ১১৩৫-৩৬ খ্রি.) আল গাফিকী, ইবনে রুশদ, ফকরুদ্দীন রাজী প্রমূখ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শরীরবিদ্যা (চযুংরড়ষড়মু) এনাটমী, সার্জারী অস্ত্র চিকিৎসায় মুসলিম চিন্তধারার নতুনত্ব আধুনিক সর্বশ্রেষ্ঠ অগ্রগতি সাধন করেছেন চক্ষু চিকিৎসায়। এ বিষয়ে তাদের মৌলিক অবদান স্বীকৃত হয়েছে। ড. এলগুড বলেন, 'এষধঁপড়সধ ঁহফবৎ ঃযব হধসব যবধফধপযব ড়ভ ঢ়ঁঢ়রষ' ধিং ভরৎংঃ ফবংপৎরনবফ নু ধহ অৎধন, ঢ়যষুবঃবহঁষধব ধহফ ঃযব 'ংঃরহম ড়ভ ঢ়বধৎষং' াবংরপষবং ড়হ ধ নধষধহপযবফ বুব-নধষষ ধঢ়ঢ়বধৎ ভড়ৎ ঃযব ভরৎংঃ ঃরসব রহ অৎধন ষরঃবৎধঃঁৎব.। রসায়নের ফার্মাসীর উদ্ভাবন করেছিলেন এবং আজ যে সব প্রতিষ্ঠানকে “চিকিৎসালয়” বলা হয় তার প্রথম প্রতিষ্ঠাতা তারাই।

তারা প্রত্যেক শহরে জনসাধারণের জন্য হাসপাতাল নির্মান করেন হাসপাতাল “দারুশ্ শিফা” (আরোগ্য নিকেতন), “মারিস্তান” (বিমারিস্তানের সংক্ষেপরুপ) রোগীর আবাসগৃহ নামে অভিহিত হত। তারা রাষ্ট্রীয় খরচে হাসপাতাল চালাতেন। আল্ বুকাসিস শুধু একজন চিকিৎসকই ছিলেন না, তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর শল্যচিকিৎসকও ছিলেন। তিনি তার নিজস্ব ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগে সর্বাপেক্ষা জটিল অস্ত্রোপচার করতেন, স্ত্রী লোকদের ওপর অস্ত্রোপচার ব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন যে, সঙ্কোচের বিষয়টি বিবেচিত হত এবং যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদেরকে সংগ্রহ করা হত। গ্রীকরা শারীরবিদ্যা সম্পর্কে স্থূল জ্ঞান রাখতেন; ওষুধ প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কেও তাদের জ্ঞান ছিল অত্যন্ত সীমিত।

মুসলমানেরা শারীরবিদ্যা ও ভেষজবিজ্ঞানকে যথার্থ বিজ্ঞানে পরিণত করেছিলেন। খিলাফত রাষ্ট্রের বিশাল বি¯তৃতির জন্য বিশ্বের সর্বত্র গবেষণা ও অনুসন্ধান চালানো সম্ভব হয়েছিল; ফলে অসংখ্য ও মহামুল্য সংযোজনের মাধ্যমে তারা তৎকালীন ভেষজবিজ্ঞানকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করেন। ডায়োসকোরাইভ যে অবস্থায় উদ্ভিদবিজ্ঞানকে রেখে গিয়েছিলেন তারা তাকে বহু উচ্চে উন্নীত করেন এবং গ্রীকদের ঔষধিবিজ্ঞানকে দু’হাজার গাছ গাছড়ার সংযোজনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তোলেন। শিক্ষার্থীর শিক্ষনের জন্য কর্ডোভা ,বাগদাদ, কায়রো ও ফেজে বিজ্ঞানে সুশিক্ষিত ও সুপন্ডিত ব্যক্তিরা নিয়মিত ভাষণ দিতেন। ঔষুধ শিল্প ঃ ইতিহাসে ওষুধ তৈরীর জন্য প্রথম দিকে আলাদা কোন বিশেষজ্ঞ শ্রেণীর সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না।

৯ম শতকে মুসলিম শাসনামলের প্রথম দিক থেকে চিকিৎসক ও ওষুধ প্রস্ততকারীদের পার্থক্য গড়ে উঠতে থাকে। ক্রমে ওষুধের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সেগুলো তৈরীর সুকৌশলী কায়দা কানুনও তৈরী হতে থাকে। এ সময় অনেকেই এব্যাপারে বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাদেরকে বর্তমানের ড্রাগিষ্ট শ্রেণীর লোক বলা যেতে পারে। বস্তুত ৯ম শতক থেকেই চিকিৎসক ও ওষুধ তৈরীকারী এই দু প্রকৃতির বৈজ্ঞানিক শ্রেণী গড়ে ওঠে।

তবে শিল্প হিসেবে এটি ইতিহাসে স্থান করে নেয় আরো অনেক পরে এবং বাগদাদেই সর্বপ্রথম ওষুধের দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের বড় বড় সব শহরে ওষুধের দোকান চালু হয়ে যায়। অবশ্য পাড়াগায়ে এ ব্যবস্থা তখনও পর্যন্ত চালূ হয়নি। ওষুধের দোকানকে বলা হতো ‘আলআত্তার এবং ফারসীতে ‘দারফুরুশ। চিকিৎসকদের মতই ওষুধ বিক্রেতাদেরও তখন মুহতাসিবের (ইন্সপেক্টর জেনারেল) তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হতো।

‘মুহতাসিব’ লক্ষ্য রাখতেন যেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই শুধু ওষুধ তৈরী ও বিক্রি করে। মুহতাসিব তাদের আল্লাহর শাস্তির কথা, কেয়ামতের কথা, পরলোকের কথা এবং সঙ্গে সঙ্গে পার্থিব শাস্তির কথাও মনে করিয়ে দিতেন। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও ওষুধের মান ঠিক করা নিয়েও বেশ ঝামেলা হতো। এজন্য সবুর বিন সহল প্রথম সরকারীভাবে চযধৎসধপড়ঢ়রধ প্রবর্তন করেন। অতঃপর আরও মার্জিত ও আধুনিক পদ্ধতিতে ইবনুল বারান এবং ইবনুল তিলমিজের চযধৎসধপড়ঢ়রধ প্রকাশিত হয়।

ইতিহাসে প্রথম পরিক্ষক ঃ সিনান ইবনে সাবেত ইবনে কোররা হলেন মেডিকেল সাইন্সের প্রথম পরিক্ষক। ৯১৩ সালে খলিফা মুকতাদির সর্বপ্রথম চিকিৎসকদের উপযুক্ততা সম্বন্ধে সরকারীভাবে পরিক্ষা নেয়ার জন্য তাকে পরিক্ষক হিসেবে নিয়োগদান করেন। খলিফা জানতে পারেন একজন বেসরকারী চিকিৎসকের ভুলের জন্য এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি তখন মুহতাসিব ইবরাহীম মুহাম্মদ ইবনে আবি বাতিহাকে আদেশ দেন, এরপর যেন কেউ সিনান ইবনে সাবেত ইবনে কোররার সনদ ছাড়া চিকিৎসা করতে না পারে। যারা আগে থেকে চিকিৎসা পেশায় রয়েছে, তাদেরকেও সিনান পরিক্ষা করবেন।

খলিফা নিজের হাতে এই মর্মে আদেশ লিখে সিনানকে পরিক্ষক নিযুক্ত করেন। অতঃপর সিনান চিকিৎসকদের পরিক্ষা নিয়ে সনদ দানের ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয় চিকিৎসকের কে কোন শাখায় পেশাগতভাবে উপযুক্ত তাও ঠিক করে দিতেন সিনান। কিফতীর মতে, সিনান প্রথম বছরই বাগদাদে ৮৬০ জন চিকিৎসককে এই সনদপত্র দেন। সিনানের ইন্তেকালের পর তার পুত্র ইবরাহীম বাগদাদের প্রধান চিকিৎসক নিযুক্ত হন।

তবে তিনি নিজে প্রধান পরিক্ষক না হয়ে বসরার আবু সাইদ ইয়ামীনকে বাগদাদের বেসরকারী চিকিৎসকদের পরিক্ষা নিয়ে সনদ দিতে বললেন। ইয়ামীন ৬মাস পরিক্ষা চালিয়ে ৭০০জনকে সনদ দেন। অতঃপর বাগদাদের মত খিভাতেও পরিক্ষা সংসদ গঠিত হয়। খারেজম শাহ তার অন্যতম প্রধান চিকিৎসক ইবনুল আম্মারকে পরিক্ষা চালানোর একটি বিধিবদ্ধ নিয়ম কানুন বানাতে বলেন এবং সে নিয়ম অনুসারেই পরিক্ষা নিয়ে চিকিৎসকদের সনদ দেয় হতো। খলিফা মুসতাজিদের সময় প্রধান চিকিৎসক ও পরিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনুত তিলমিজ।

বাগদাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ক্ষমতা দেয়া ছিল প্রধান চিকিৎসক ও মুহতাসিব তথা ইন্সপেক্টর জেনারেলের উপর। মুসলিম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা (এখানে শুধু বাগদাদের হাসপাতালের বর্ণনা লক্ষ্যনীয়) মুসলমানরা কেবল চিকিৎসা গবেষণা, উদ্ভাবন এবং এ বিষয়ে গ্রন্থ রচনায় ব্যাপৃত থাকেননি; এসময় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে নির্মিত হয়েছিল অসংখ্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র। উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান এর সময়কালের পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হতে থাকে। অনেক ভ্রাম্যমান হাসপাতাল ছিল। মূলতঃ ইসলামের এসব ভ্রাম্যমান হাসপাতালই পরবর্তীকালে মুল হাসপাতাল স্থাপনের সুতিকাগার ছিল।

এ ধারায় খলীফা আব্দুল মালিক সর্বপ্রথম বিপুল অর্থ ব্যয় করে অত্যন্ত ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।