সাপ-লুডু খেলছি বিধাতার সঙ্গে
সব সময় লিখতে হয় না। মাঝে মাঝে শুধু পড়লেও চলে। মনে করুন আজ আমাদের পড়ার দিন। পাঠক চলুন, আজ শুধুই পড়ি। গত কয়েকদিন বিবেক-মানবিকতা আর সীমান্তের দ্বন্ধে যেসব লেখাগুলো বের হয়ে এসেছে মানুষের মুখে, পত্রিকায়, ফেসবুকে, ব্লগসহ বিভিন্ন বিকল্প গণমাধ্যমে; তা পড়ে নিই।
খিজির মাহমুদ, শিক্ষার্থী
নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের কোন ধর্ম নেই, কোন জাতিয়তা নেই। তারা মানুষ, এটাই তাদের পরিচয়। এবং একদিন আমরাও একই ভাবে আরেকটি দেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম, সে কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। আজকে নিজেদের দেশ হয়েছে, আমরা বাপের বেটা আবদুল্লাহ হয়ে গেছি। আমাদের আর কারো প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই।
সীমান্ত অবিলম্বে খুলে দেয়া হোক, মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়া হোক। নাহলে এই মানুষগুলোর কান্না, জাতি হিসেবে আমাদের অপরাধী করে রাখবে সারাজীবন। সবার আগে আমরা মানুষ, মানুষ যদি মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, সেটা মানুষ হিসেবেই আমাদের লজ্জা।
সুপ্রীতি ধর, সংবাদকর্মী
..আমরা এই ইস্যুতে সরকারকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। বলছি যে, সরকার এতো কঠোর না হলেও পারতো, মানবিক হওয়া প্রয়োজন ছিল।
আমাদের যাদেরই জীবনে একাত্তরের বিশাল স্মৃতি আছে, তাই সামনে চলে এসেছে এই ৪১ বছর পর। এটাও ঠিক আছে। এটাও আবেগ। একেও খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই।
...কিন্তু কথা অন্য জায়গায়।
গত কয়েকদিন ধরে আমাদের এই আবেগের পাশাপাশি যে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে বাংলাদেশ সরকারের সাথে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যে একটা চাপ তৈরি করা হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এখানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য, এটা সবচেয়ে বেশি ভাবনার বিষয়। বলা যায়, আতংকের বিষয়। এই চাপটা কেন হচ্ছে? আসুন, একবার গভীরভাবে ভাবি আমরা।
তপতী বর্মন, শিক্ষার্থী
অনেকেই বিষয়টি ধর্মের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। দয়া করে এমন করবেন না।
গৌতম বুদ্ধের বাণী যারা নিতে পারেনি সেটা তাদের সমস্যা, সে কারণে আপনারা বৌদ্ধ ধর্মকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলবেন না। আপনার এই বক্তব্য হয়তো বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বসবাস করা বৌদ্ধদের প্রতি অন্য ধর্মের মানুষের সহিংসতা উসকে দিতে পারে। আমরা হয়তো সা¤প্রদায়িক সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারি।
শরীফুল হাসান, সংবাদকর্মী
আমার যতো সমস্যাই হোক, বিপদে পড়া মানুষকে আমি কখেনাই ফিরিয়ে দেবো না। একইভাবে অসহায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘোর বিরোধী আমি।
সারাপৃথিবী যখন শুনবে, অসহায় মানুষগুলোকে আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি তখন আমাদের সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা হবে। এই মুহুর্তে তাদের আশ্রয় দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথবীকে বলেত পারেন, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি, এবার তোমরা কিছু করো..
তোমরা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ চেনো, রোহিঙ্গা-আরাকান-মিয়ানমার চেনো, রাষ্ট্র-চুক্তি-আইন সবই চেনো..খালি চেনো না মানুষ..তাই ধিক তোমাদের..আমি কিছুই চিনি না চিনতে চাই না..আমি কেবল জানি তারা মানুষ..
ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ এটা করতে বাধ্য নয়। মিয়ানমার সরকার সেখানে আমাদের দূতাবাসকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠনকে জামায়াতে ইসলামী মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র কর্মকান্ডে জড়িত হতে ইন্ধন দিচ্ছে। এমনকি সা¤প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতাতেও মদদ দিচ্ছে তারা।
আমরা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি। আমাদের এক ইঞ্চি ভূমিও প্রতিবেশীদের ওপর হস্তক্ষেপের কাজে ব্যবহার করতে দেবো না।
কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও বা বন্ধুরাষ্ট্র চায়, আমরা যেন সীমান্ত খুলে দিই। তারা এও বলছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে পারে সে ব্যবস্থাও যেন আমরা করি।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, বিএনপি নেতা
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দিতে পারে না সরকার।
তবে মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
অবিলম্বে সরকারের উচিৎ উচ্চতম কূটনৈতিক পর্যায়ে এই বিষয়টির নিষ্পত্তি করে ফেলা। ঘটনার দিনই আমাদের দেশের কেউ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি সামলে নিলে ভালো হতো। এ বিষয়ে দেরি হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে একপর্যায়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়ে যেতে পারে।
রবার্ট ব্লেক, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ একাই এ সমস্যা মোকাবেল করবে না।
এ ধরনের পরিস্থিতি যে গোটা দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র তা উপলব্ধি করছে। তবু যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করার জন্য জাতিসংঘ হাই কমিশন ও অন্যদের অনুমতি দেবে।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক, শাবিপ্রবি
বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গারা যখন আমাদের দেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসছে, আমরা অমানুষের মতো বলছি, এই দেশে তোমাদের স্থান নেই, তোমরা ফিরে যাও। আমার দেশ এ রকম অমানবিক, এ রকম নিষ্ঠুর নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না।
একাত্তর সালে আশ্রয়হীন হয়ে যখন আমার মা তাঁর অসহায় সন্তানদের নিয়ে নৌকায় ভেসে বেড়াচ্ছিলেন, তখন একজন হতদরিদ্র মানুষ আশ্রয় দেওয়ার জন্য ছুটে এসেছিল।
সেই ভয়ংকর বিপদে আশ্রয় পেয়েছিলাম বলে আমরা প্রাণে বেঁচেছি। আমি সেই কথাটি এক মুহূর্তের জন্য ভুলি না। আমি জীবনে কখনো মানুষের ওপর বিশ্বাস হারাইনি। আমি জানি, এই পৃথিবীটা এত সুন্দর, কারণ, মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যাবে না।
তাহলে আমাদের সরকার কেমন করে এত নিষ্ঠুর হয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে? আমরা কেমন করে এত সহজে ১৯৭১-কে ভুলে গেলাম?
ফারুক চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব
অন্যান্য সমস্যা বাদ দিলেও তারা বাংলাদেশের ওপর একটি দুঃসহ অর্থনৈতিক ও পরিবেশজনিত প্রতিকূলতার সৃষ্টি করছে।
অতএব অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই মনে করছে যে নতুন করে এই সমস্যা কিছুতেই আবার সৃষ্টি হতে দেওয়া যায় না। শুধু তা-ই নয়, তা রোহিঙ্গাদের জন্য মঙ্গলকর নয় মোটেও। বাংলাদেশ সমস্যাসংকুল দেশ। তার মাঝে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই সমস্যাটিকে আমাদের নিজের করে নেওয়ার কোনো অবকাশই নেই।
খোমেনি ইহসান, ব্লগার
আমাদের দুটি কাজ করতে হবে: ১. আরাকানেই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ অধিবাস নিশ্চিত করতে হবে এবং ২.রোহিঙ্গা এথনিক ক্লিনজিংয়ে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এই জন্য আমাদেরকে দুনিয়া জুড়ে আওয়াজ তুলতে হবে যেন এই দুটি কাজ বাস্তবায়িত হওয়া অনিবার্য হয়।
এমএইচ কাউসার, সংবাদকর্মী
বাংলাদেশ সরকারের সীমান্ত খুলে দেয়ার মত ভুল করা মোটেও উচিত হবে না। সীমান্তে বাংলাদেশ পানি আর খাবার মজুদ করে সীমান্তে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহ করতে পারে যাতে খাবারের অভাবে এদের মৃত্যু না হয়। তাছাড়া সীমান্তে যতটুকু সম্ভব এদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এবং বহির্বিশ্বের সামনে রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতন-নিষ্পেষনের কথা তুলে ধরে জনমত তৈরী করা ও মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্ট করে বাংলাদেশের সমস্যা নিরসনে অবদান রাখতে পারে।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি পুর্ন সমর্থন জানাচ্ছি।
কেএম নাজমুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
যারা মারা পরছে, সবাই মানুষ, এটা কখনই মেনে নেওয়া যায়না একদল মানুষ আরেকদল মানুষ কে মারছে শুধু ভিন্ন ধর্মের বলে। ইসলাম এবং বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির ধর্ম। এইযে মারামারি এটার জন্য ধর্ম দায়ী নয়, দায়ী হোল কিছু লোভী আর স্বার্থান্বেষী মানুষ, যারা ধর্মের নামে মানুষ মারছে। তাই সবাইকে বলছি ছবি পোস্ট করে ইসলাম কিম্বা বৌদ্ধ ধর্মের মানুষকে দোষী না করে, লোভী আর স্বার্থান্বেষী মানুষ যারা ধর্মের নামে মানুষ মারছে তাদের দোষী করুন, আর দয়া করে রক্তাক্ত ও বিকৃত মৃতদেহের ছবি ফেসবুক এ পোস্ট করবেন না, যা ওই মৃত মানুষকেই অপমানের সামিল।
শেখ সিরাজুম মুনিরা নিরা, সংবাদকর্মী
রাত সাড়ে আটটার দিকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আজ আটক হওয়া ৭১ জন রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করা হয়েছে। এই মূহুর্তে নৌকায় ৭১টি মানুষ ভাসছে না, ভাসছে মানবতা।
জুয়েল ওসমান
আমরা বাঙ্গালীরা কি বিপদের কথা সহজেই ভুলে যাই???
সন ভিন্ন ১৯৭১ এবং ২০১২, কিন্তু দৃশ্য একই..... কিছু মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে... ১৯৭১ এ ভারত বাংলাদেশের অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় দিল... কিন্তু ২০১২ তে বাংলাদেশ? অসহায় রোহিঙ্গাগুলোকে আশ্রয় দিল না.... আমরা এত তারাতারি এই রকম একটা বিপদের কথা ভুলে গেলাম??
আমার ধারনা, আর কেউ না হোক অন্তত আজ থেকে ৪০ বছর আগে যারা প্রান বাঁচানোর জন্য ভারতের দিকে ছুটেছিলেন তারা উপলদ্ধি করতে পারবেন রোহিঙ্গাদের বর্তমান বিপদের ভয়াবহতা.....
ফুয়াদ হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
"রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে বাধ্য নই" - ডা. দীপু মনি।
'৭১ এ আমাদের আশ্রয় দিতে ইন্ডিয়া বাধ্য ছিলনা। '৮৮-র বন্যায় রিলিফ পাঠাতে কেউ বাধ্য ছিলনা।
'৯০-এর ঘুর্ণিঝড়ের পরেও রিলিফ পাঠাতে কেউ বাধ্য ছিলনা। আমাদের অবৈধ শ্রমিক আর অভিবাসীদের বৈধ করতেও কেউ বাধ্য নয়। তবুও আমরা এজন্য দেন-দরবার কক্ষনো বন্ধ করিনা। মানবিকতার বাধ্য-বাধকতা এখন আর সীমান্ত মানেনা। একথা জীর্ন-পুরাতন মন্ত্রীরা না জানুক, আধুনিক-স্মার্ট মন্ত্রী ডা. দীপু মনির তো না জানার বা না মানার কথা নয়!!
ওমি রহমান পিয়াল, ব্লগার
আমাদের অবশ্যই একটা দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ তৈরি করা দরকার যাতে আসাম থেকে অবশিষ্ট সব বাঙালী এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাবতীয় বাঙালকে সীমান্তজুড়ে পুশব্যাক করায় উৎসাহিত করা যায়।
আমরা অবশ্যই তাদের বুকে টেনে নিবো, তবে সুন্নতে খতনা পরীক্ষা কইরা...
শফিক মোহাম্মদ, সংবাদকর্মী
যে সব রোহিঙ্গারা বৃষ্টিতে ভিজে দিনের পর দিন না খেয়ে নৌকায় দিন কাটাচ্ছেন, তাদেঁর দেখে অবচেতনে ভাবছি আমরা ভুলে গেছি যশোর রোড ১৯৭১ এর কথা!!!!!!!!!!!!!!!!!!। ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জনের পর কি, বাঙ্গালীরা সবাই ভারতে থেকে গেছে ? কেউ কি বাংলাদেশে ফিরে আসেনি?
কথা শেষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।