আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ও আমার আব্বু রে!!

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself. ভেবেছিলাম বাবা-দিবস নিয়ে কিছু বলবোনা, কিছু করবোনা। আমার মেয়েরা গতকালেই কাগজে ছবি এঁকে ওদের বাবাকে কুরিয়ার করে দিয়েছে ঢাকায়। আজকে সকাল থেকে অস্থির, ওদের বাবা কি কুরিয়ার পেয়েছে? আমাকে বারবার ফোন করে জিজ্ঞেস করে-আম্মু তুমি ঠিকমত কুরিয়ার করেছ তো? দুপুরে যখন বাসায় খেতে এলাম, ছোটমেয়ে জাইবা আমাকে জিজ্ঞেস করলো-আম্মু তোমার আব্বুকে ফাদার্স-ডে তে উইশ করবে না? আমি বল্লাম-না মা, আমি তো উইশ করিনি। আমাকে জাইবা বল্লো-ঠিক আছে আমি তোমাকে একটা কার্ড বানিয়ে দিবো, তুমি তোমার আব্বুকে ঐ কার্ডটা দিয়ে সার্প্রাইজ দিয়ো। আমাদের ছোটবেলাটা ছিল আম্মু-ময়।

আব্বু প্রায়ই শহরের বাইরে, দেশের বাইরে আসা-যাওয়া করতেন ব্যাবসার কাজে। জানি আব্বু আছেন, ভয় পেতাম আব্বুকে, কিন্তু আব্বুর সাথে মনের যোগাযোগ ছিলোনা একেবারেই যতটা ছিল আম্মুর সাথে। প্রথম টের পেলাম বিয়ের পরে, আব্বু কী। বাবা-মার কাছ থেকে অনেক দূরে গিয়ে টের পেলাম তাঁরা কী ছিলেন। বেশি করে টের পেলাম আব্বুকে।

বলতে গেলে তখনই শুরু হলো আব্বুর সাথে মনের যোগাযোগ। একটা সময় ছিলো আম্মুকে অনেক কথা বলতাম, যেটা আব্বুকে না-বলা থেকে যেত। আমার বিয়ের পরেই শুরু হলো উল্টো ব্যাপার। অনেক কিছু নির্দ্বিধায় বলে ফেলতাম আব্বুকে, যেসব আম্মুকে বলার কথা ভাবতামই না, যদি আম্মু টেনশন করে!! কখনও হিসেব করিনি জীবন থেকে কী চেয়েছি আর কী পেয়েছি। হারানোর পাল্লাটা যখন মাত্রাতিরিক্ত ভারী হয়ে গেলো, হতাশায় কাঁদার জন্যে তখন কিন্তু এই আব্বুকেই খুঁজে নিয়েছিলাম।

কোথায় গেলো তখন এতবছরের দূরত্ব, ঢাকা থেকে দিন-নেই, রাত-নেই আব্বুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতাম-আব্বু এখন কী করবো? অনেক ধমক শুনতে হয়েছে। শুনেছি জীবনের কোন পর্যায়ে আব্বুর কথা না-শুনে কোন ভুলটা করেছি, সেই ভুলের মাশুল কিভাবে দিতে হচ্ছে তার বিবরণ। তখন মনে হয়েছে এই ধমকটুকু শোনার জন্যে হলেও আমার আব্বুকে ফোন করা দরকার। কত অসহায় একটা অনুভূতির মধ্যে মনে হতো-আমার চিন্তার কিছু নেই, আব্বু তো আছে!! আব্বুর সাথে প্রতিদিন কোনও না কোনও ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া করি। কিন্তু সকালের খাওয়ার টেবিলে কিংবা অফিসের কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া করি, ভাগ্যিস আমার আব্বুটা এমন!! জীবনের অর্ধেক কিংবা তারও বেশি পার করে আমি আব্বুকে বুঝতে পারি।

আব্বুর চোখ দিয়ে অনেক কিছু দেখতে পারি। স্বভাবসুলভ ঝগড়া এখনও করি, কিন্তু মনে মনে টের পাই, আসলেই আব্বু ঠিক। আমার আব্বু যেন “আমার” আব্বু হিসেবেই পার্ফেক্ট। আমি হ্যাপি ফাদার্স ডে উইশ করতে পারলামনা আমার আব্বুকে, কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আমার আব্বুকে সবসময় আমার পাশে রাখার জন্যে। আমি সবসময়ই স্বার্থপরের মত এমন করে নিয়েই যাবো, আর ঝগড়া করেই যাবো, তবু যেন আমার আব্বু ঠিক এমন করেই আমাকে খেয়াল করে, সে ধমক দিয়েই হোক আর স্পয়েল করেই হোক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।