আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্বু হয়ে যাচ্ছি। (আব্‌জাব)

কত অজানারে!

১. তুমি থেকে আপনি মফস্বল এলাকায় লোকজন ছোটদের সম্মান করেনা। যেই বুঝতে পারবে আপনার বয়স কম অমনি পথের ভিখারীও তুমি-তামারী শুরু করবে। তো সেই অজমফস্বলে কীভাবে কীভাবে যেন একজন আমাকে আপনি বলে ফেলল। পড়ি তখন ক্লাস সিক্সে। গেছি বই কিনতে।

বিক্রেতা দাড়িওয়ালা হুজুর টাইপ। বলল, “আপনার কী বই লাগবে?” নরমালি আমি এই দোকান থেকে কিনি তিন গোয়েন্দার বই। অবশ্য সেদিন গেছি অন্য মিশনে। বেশ কিছুদিন আগে দোকানে একটা ইয়া মোটা মহাভারত দেখে গেছি। মহাভারতের গায়ে দারুণ সব ইলাস্ট্রেশন।

কিন্তু দাম অনেক। তার পর থেকেই টিফিনের টাকা, রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়ে, এর ওর কাছথেকে ধার করে, অনেক কষ্টে শ-তিনেক টাকা যোগাড় করে ফেলেছি। ভাগ্য মনে হয় প্রসন্ন। শুরুতেই জীবনের প্রথম ‘আপনি’ ডাক শুনে ফেললাম। তাই গলার স্বর একটু বড়দের মত করে বললাম, “মহাভারত!” মহাভারত শুনেই সেই দাড়িয়াল ভাইয়ের ভুরু গেল কুঁচকে।

বলল, “নাম কী?” আমি আমার খাঁটি বাংলা ডাকনাম বলে দিলাম। শুনে কিছুক্ষন অনিশ্চিত ভাবে চিন্তা ভাবনা করে সে জিজ্ঞেস করল, “ভাল নাম কী?” আমি বললাম, “মোঃ ‘অমুক-সমুক’ ইসলাম”। এইবার সেই ব্যাটা আপনি টাপনি ভুলে পুরা খেঁকিয়ে উঠলো, “মুসলমানের ছেলে হয়ে রামায়ন মহাভারত উদ্ধার করতে নেমেছ কেন বাপ? আরবী টারবী কিছু পারো?” আমি আমতা আমতা করে বলাম, “যাই এক হুজুরের কাছে শিখতে”। সে বলল “ঠিকাছে এখন যাও। তোমার কাছে মহাভারত বেচব না।

” মহাভারত কিনতে না পারলেও পরে বন্ধু মহলে দারুণ বার্কি নিয়েছি। ওদের তো আর কেউ ‘আপনি-আপনি’ করে না!! ২. ভাইয়া থেকে আঙ্কেল গেছি শাহবাগ। (মহৎ উদ্দেশ্যে) কিছু গোলাপ কিনতে। গোলাপ দিয়ে কি করলাম সে প্রশ্ন করা যাবে না। তো যাই হোক, এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গোলাপগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি।

দোকানের বিক্রেতা এক পুঁচকে। বলে, “আঙ্কেল কোনটা নিবেন? অ্যালবাম আছে আলবাম দেখে নেন” গোলাপগুলো পছন্দই হয়েছিল। কিন্তু এই ছ্যামড়ার মুখে ‘আঙ্কেল’ শুনে মেজাজটা গেল সপ্তমে চড়ে! বললাম, “ঐ! আমারে দেখে আঙ্কেল আঙ্কেল লাগে নাকি। যা (শালা) তোর কাছ থেকে ফুলই নেব না। ” তবে পিচ্চিকে ঝাড়ি দিলে কি হবে।

রাতে হলে নিজের রুমে ফিরে হঠাৎ করে নিজেকে বুড়ো বুড়ো মনে হতে লাগলো। এর আগেতো কেউ আঙ্কেল বলেনি। ৩. আব্বুউউ! গেছি বানিজ্যমেলায় ‘পরীদর্শনে’। আসলে আমার এক দোস্ত অনেকটা ধরেই নিয়ে এসেছে। তো, পরীদর্শনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এক মস্তো বড়ো হাঁড়িপাতিলের দোকানের সামনে।

পরীদর্শনে গেলে কেন হাড়িপাতিলের দোকানের সামনে দাঁড়াতে হবে সে প্রশ্ন করা যাবে না। জ্যাকেটের হুড মাথায় তুলে রেখেছি। এসব কাজে আবার ‘স্টেলথ’ একটা বড় ফ্যাক্টর। তো এমন সময়। পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর একটা আঞ্জেল দৌড়ে এসে “আব্বুউউউ” বলে জড়িয়ে ধরল আমার ডান পা।

আমার তখন আঞ্জেল দেখার অবস্থা নেই। কোনো সুদূর অতীতে হলিউডি কায়দার কোন দূর্ঘটনায় এহেন ঘটনার বীজ বপন করেছি কিনা, সেই হিসাব মাথার মধ্যে চলতে লাগলো তুমুল বেগে! কিন্তু সে সম্ভবনা তো শুন্যের চেয়েও কম। নাইলে কি আর স্টেলথ মুডে হাড়িপাতিলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি! যাই হোক, আঞ্জেল সাহেব ততক্ষণে আমার চেহারা দেখে ফেলেছে। খুব লজ্জা পেয়ে গেছে মনে হয়। একপা দুইপা করে মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে।

আঞ্জেলের মা কে দেখে মনে হচ্ছে সে লজ্জা পেয়েছে আরো বেশী। আমার দিকে লাজুক লাজুক তাকচ্ছে। তরুণী মা। বয়স আমার চেয়ে কম বা সমান হবে। রীতিমত ‘বড়োই সৌন্দর্য’।

আমি বুকের মধ্যে উত্তেজনা গোপন করতে করতে ভাবছি। কি দারুণই না হত, যদি এই মেলা থেকে রেডীমেড বৌ আর বাচ্চা সহ ফিরতাম বাসায়!! মেয়েটার দিকে ভদ্রতা সুলভ “ব্যাপার না” টাইপের হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছি। এমন সময় আমার মত জ্যাকেট পরা ‘অন্যকেউ’ এসে আমার সেই ক্ষণিকের আঞ্জেল কে কোলে আর বউকে ডান হাতে কেড়ে নিয়ে, চলে যেতে থাকলো দূরে...। বন্ধুটা কুনুইতে খোঁচা দিলো, “ঐ এই দিকে দেখ। জিনিস একখান!”


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।