আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -ভাইয়া জানলাটা একটু খুলে দিবেন ?
কথাটা বলেই মেয়েটি একটু লজ্জা পেল । ভাব খানা এমন যে কি একটা কথা বলে ফেলেছে ! এখন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে !
আমি মনে মনে বললাম
কি বল সুন্দরী ! কেবল বাসের জানালা কেন তোমার জন্য সব কিছু খুলে দিতে পারি !
আমি খুব আস্তে করে নিজের নাকটা কাধের কাছে নিয়ে এলাম । বোঝার চেষ্টা করলাম গা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে কিনা ?
নাহ । বের হচ্ছে না । আমি যখন জানলাটা খুলতে যাবো আমার শরীরটা মোটামুটি মেয়েটার কাছাকাছি চলে যাবে ।
যদি গা থেকে গন্ধ বের হয় তাহলে আর মান সম্মান কিছু থাকবে না ।
আমি জানলাটা খুলে দিলাম । এক ঝাক বাতাস তখনই মেয়েটার চুল উড়িয়ে নিয়ে গেল । চুল সামলাতে সামলাতে মেয়েটা যখন থ্যাঙ্কিউ বলল তখন আমি আবার সিটে বসে পড়েছি ।
মনটা আনন্দে ভরে উঠল ।
মনে হল এমন মধুর করে ধন্যবাদ জীবনে আমাকে আর কেউ দেয় নি ।
সত্যি বলতে হবে আজ আমার ভাগ্যটা এতো ভাল হবে আশা করি নি । সব দিক দিয়েই যেন আজকের দিনটা আমার ।
সকাল বেলা যখন গাবতলী এসে পৌছালাম তখন নয়টার বাস ছাড়ি ছাড়ি করছে । একেবারে শেষ মুহুর্তে গাড়িতে উঠলাম ।
বলতে গেলে আমি উঠলাম আর বাস ছেড়ে দিল ।
এই বাসটা মিস হলে পাক্কা দেড় ঘন্টা বাস টার্মিনালে বসে থাকতে হত ।
তার উপরে আবার সিটও পেতাম না যদি না বাসের সুপারভাইজার আমার পরিচিত হত ।
সুপার ভাইজারের নাম মানিক । ভাইয়ার সাথে এক সময় স্কুলে পড়েছে ।
সেই সুবাদে আমাকে চেনে । ঐ মানিক মামাই আমাকে টিকিট যোগার করে দিল ।
যদিও সিট টা একটু পিছনে জি টু । তবুও তো হল । বাসে উঠেই মনটা ভাল হয়ে গেল ।
একদম প্রথম সারির এ ফোর সিটে একটা মেয়ে বসে আছে । পোষাক আষাক সব কিছুতেই ফার্ষ্ট ক্লাস ।
এটা আমার আরেকটা ভাগ্য বলতে হবে । কারন আমি যে গাড়িতে যাতায়াত করি সেই গাড়িতে তো নয়ই ঐ সময় কার অন্য কোন গাড়ীতে আমার বয়সী কোন মেয়ে সে দিন গাড়ীতে চড়বে না , এমন মেয়ে ভাগ্য আমার ।
বিষয়টা আর একটু পরিস্কার করি ।
আমাদের জেলা থেকে ঢাকায় আসার জন্য মোটামুটি পাঁচটা ভাল কোম্পানী আর তিনটা মধ্যম মানের কোম্পানীর বাস চলে । মনে করুন আমি সকাল নয়টার গাড়িতে টিকিট করেছি ।
থিওড়ি অনুযায়ী নয়টার সময় আরো বাকী যে সাতটা কোম্পানীর বাস ছাড়বে একটা তেও আমার বয়সী কোন মেয়ে উঠবে না ।
আর আমি যে বাসটাতে চড়বো তাতে আমার বয়সী কেন কোন বয়সী কোন মেয়ে উঠবে না ।
তাহলে বুঝুন কি অবস্থা ! আর আজ শয়ং আমার বয়সী জলজ্যান্ত একটা মেয়ে আমি যে বাসে যাত্রা করছি তার প্রথম সিটে বসে আছে ।
ভাগ্য ভাল বলবো না কেন বলুন !
তৃতীয় আর সব থেকে বড় সৌভাগ্যের ঘটনা ঘটল নবীনগর পার হয়ে । নবীনগর থেকে দুজন যাত্রী ওঠার কথা ছিল । কিন্তু তারা বাস ফেল করল । সময় মত পৌছাতে পারল না ।
বাস তাদের রেখেই রওনা দিয়ে দিল ।
আর আমি আগেই বলেছি বাসের সুপারভাইজার আমার পরিচিত । মানিক মামা কি করল ? যে যাত্রী দুটো বাস মিস করেছিল তাদের একটা সিটে আমাকে বসিয়ে দিল ।
আর বসাবিতো একদম ঐ মেয়েটার পাশে !!
প্রথমে কিছুক্ষন মনে হল বুঝি স্বপ্ন দেখছি ! আমি যে গাড়িতে উঠি সে গাড়ি সুদ্ধ কোথাও মেয়ে থাকে আর সেই আমার পাশের সিটেই যদি মেয়ে তাও অন্যন্য সুন্দরী মেয়ে বসে তাহলে কি বিশ্বাস হতে চায় ।
দুতিন হাতে চিমটিও কেটে দেখলাম স্বপ্ন দেখছি কি না !
-ভাইয়া আপনার কাছে কি পানি আছে ? সরি আমি পানি কিনতে ভুলে গেছি ।
আরে বলে কি ? আমি থাকতে সুন্দরী , তুমি কিনবে পানি ? তা কি করে হয় !
আমি আমার পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম ।
আহা ! মেয়েটা কি সুন্দর করেই না পানি খেল ! আসলে সুন্দর মানুষের সব কিছুই সুন্দর । পানির বোতল ফেরত্ দিতে দিতে মেয়েটা বলল
-আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি , তাই না ?
-না না কি যে বলেন ! কষ্ট কিসের !
মেয়েটা আবার সেই ভূবন ভোলানো হাসি দিল ।
আজ আমার দিনটা সার্থক হয়ে গেল ।
মানিক মামা টিকিট চেক করতে আসল একটু পরেই । আমার পাশে বসা মেয়েটির টিকিট নিতে নিতে বলল
-তো নাদিরা , কোন সমস্যা হচ্ছে না তো ?
-না মাকিন ভাই কোন সমস্যা হচ্ছে না ।
তারপর আমাকে দেখিয়ে বলল
-এই ভাইয়াটা আছে না ! ইনি খুব হেল্পফুল ।
মানিক মামা দেখলাম আমার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল । তারপর নাদিরাকে বলল
-এ কে জানো ?
-কে ?
-এ হচ্ছে রানার ভাই ? ঢাকায় পড়াশুনা করে ।
এবার দেখলাম নাদিরা আমার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ।
পাঠকদের বলে রাখি রানা আমার বড় ভাইয়ের নাম ।
আমাদের এলাকায় মোটামুটি বিখ্যাত একজন মানুষ ।
যা হোক মানিক মামা চলে যাবার পর নাদিরা বলল
-আপনি রানা ভাইয়ার ভাই ? আপনার নাম অপু তাই না ?
ওরে বাব্বাহ ! এই মেয়ে দেখি আমাকে চিনে ? ভাইয়ার সুবাধে আমাকে চিনে ।
নাদিরা !
হঠাৎ নাম টা কেন যেন একটু পরিচিত মনে হল । কিন্তু ঠিক মনে পড়ল না । এই জন্য আপনাকে কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল ।
আপনার চেহারার সাথে আপনার চেহারা আশ্চার্য মিল । নাদিরার সাথে পুরো রাস্তায় কথা হতে লাগল ।
আমি খানিকটা অবাক হলাম এই দেখে যে নাদিরা নিজেই আমার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে দেখে !
এইটাই আমার অস্বস্তির কারন হয়ে দাড়াল । ফেরিতে নেমে নাদিরা নিজেই আমাকে ক্যান্টিনে নিয়ে গেল । চা নাস্তা খাওয়ালো ।
শেষে বিলটাও আমাকে দিতে দিল না । আমি সত্যিই খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না । নাদিরাকে বাসে তুলে দিয়ে আমি ফেরির এক ধারে আসলাম হাওয়া খাওয়ার জন্য তখন দেখলাম মানিক মামাকে আমার কাছে আসতে ।
-মামা আর কতক্ষন ?
-এই তো আর দশমিনিট । তা ভাগনে ঐ মেয়ের কাছ থেকে একটু সাবধান ।
-কেন মামা ?
-তুমি ওকে চিনতে পারো নি ?
-কই না তো মামা ?
-আরে এতো সেই বিখ্যাত নাদিরা । আমাদের এলাকার খুব কম ছেলেই আছে যাকে এই মেয়ে নাকাকি চুবানি খাওয়াই নি । তোমার ভাইয়ের সাথেও তো নাদিরার রিলেশন ছিল ।
ঠিক তখনই আমার মনে পড়ল ! নাদিরা কে নিয়ে মার সাথে ভাইয়ার প্রায় ঝগড়া হত ।
মা বলত প্রেম করবি ভাল মেয়ে দেখে কর নাদিরার মত এমন একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে কেন প্রেম করবি ।
আমি বুঝলাম যে কেন নাদিরা নামটা আমার এতো পরিচিত মনে হচ্ছিল ।
সব কথা মনে আসবার পর আমার মনটা অস্বস্তিতে ভরে গেল । সব কিছু ঠিক থাকলে নাদিরা এতো দিনে আমার ভাবি হযে যেত !
আর আমি কি এর সাথেই লাইন মারার চেষ্টায় ছিল । এখন কেমনে ঐ মেয়ের সামনে যাই !
এতো ক্ষনপর মনে হচ্ছে আজ ভাগ্যটা এতো ভাল না হলেই বরং ভাল হত !
কি লজ্জা !
কি অস্বস্তিকর ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।