কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার খোকসা জানিপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ইভা পারভিন। সে গতকাল আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে শ্বশুরবাড়ি গেছে।
বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির নিবন্ধনসূত্রে জানা যায়, ইভার জন্ম ১৫ নভেম্বর ১৯৯৭। সেই অনুযায়ী বয়স ১৫ চলছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়ে দেওয়া নিষেধ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে খোকসা উপজেলার মোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আয়ুব আলী বিশ্বাসের ছেলে তানজীর আহম্মেদ বিশ্বাসের (২৫) সঙ্গে বিয়ে হয় খোকসা পৌরসভার মাঠপাড়া এলাকার আমিরুল ইসলামের মেয়ে ইভার। বয়স গোপন রেখে এ বিয়ে দেওয়া হয়।
খোকসা পৌরসভার মাঠপাড়া এলাকার দায়িত্বে থাকা বিয়ে নিবন্ধনকারী কাজী আনিসুর রহমান বলেন, ‘তিন মাস আগে ওই বিয়ে হয়। তিনি ওই সময় বাইরে থাকায় লোকমান হোসেন নামের একজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। লোকমান ওই বিয়ে নিবন্ধন করেছেন।
’ যোগাযোগ করা হলে লোকমান বলেন, ‘বিয়ের দিন মেয়ের নিকটাত্মীয় পৌর কাউন্সিলর আমানত আলী মেয়ের জন্মসনদ দেখিয়েছিলেন। ওই সনদে ১৮ বছর পূর্ণ ছিল। ’ আমানত আলী দাবি করেন, ‘ইভা দশম শ্রেণীতে পড়ে। ’ ইভার বয়স ১৮ বছর হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘বিয়ে হয়নি, আপনি এসে দেখে যান। ’ তবে খোকসা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আহমেদ তাঁতারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানামতে, ইভা পারভীনের নামে কোনো জন্মসনদ পৌরসভা থেকে দেওয়া হয়নি।
’ গতকাল মাঠপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভার বাড়ির সামনে বিশাল বিয়ের গেট। বাড়ির পাশে খোলা মাঠে হেলিপ্যাড করা হয়েছে। এর চারপাশে পুলিশি পাহারা।
বেলা দুইটার দিকে হেলিকপ্টারে করে বর আসেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা নানা আনুষ্ঠানিকতার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বর-কনেকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি আকাশে ওড়ে।
সেখানে দুবার চক্কর দিয়ে এক কিলোমিটার দূরে চেয়ারম্যানের ইটভাটায় তৈরি করা হেলিপ্যাডে অবতরণ করে হেলিকপ্টারটি।
বর তানজীরের বাবা চেয়ারম্যান আয়ুব আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে ও মেয়ে পরস্পরকে পছন্দ করে। তাই শুধু আনুষ্ঠানিকতা হলো, বিয়ে হয়নি। ’
খোকসার ইউএনও মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, ‘উভয় পরিবার থেকে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে শুনলাম, মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।
তাই দাওয়াত খেতে যাইনি। ’ তিনি বলেন, ‘উভয় পরিবারেই জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাঁরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ না করে কীভাবে এমনটি করলেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না। ’ ইউএনও জানান, গতকাল শুক্রবার পুলিশসহ তিনি উভয় পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন। উভয় পরিবারের অভিভাবক বিয়ে হয়নি বলে জানান।
যত দিন মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হবে, তত দিন কোনো বিয়ে হবে না বলে একটি লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন। কাজি বিয়ে নিবন্ধন করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃপ্রথম আলো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।