আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফারিয়ার গল্প: একদিন ঠিকই বলবে ভালবাসি

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ফারিয়ার কথা আকাশের কথা দুজনের কথা খুব জোরে বাতাস হচ্ছে । অল্প অল্প মেঘ ডাকছে । আকাশ খুব বিরক্ত মুখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । একটা রিক্সাও যদি পাওয়া যায় ! মনে মনে নিজের উপরই বিরক্ত হয় ! ওর আগেই বোঝা উচিত্‍ ছিল । এই সময়ে রিক্সা সিএনজি কিচ্ছু পাওয়া যায় না ।

গাড়ি না নিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে । একটা সিএনজি থামল । আকাশ কথা বলতে যাবে ফারিয়া পিছন থেকে ওর হাত চেপে ধরল । বলল -সিএনজিতে যাবো না । -কেন ? -যাবো না ।

যাবো না । যাবো না । আকাশ বুঝতে পারে না এই ছেলেমানুষীর মানে কি ? আকাশ বলল -এরকম ছেলেমানুষী কেন করছ ? ফারিয়া মুখ কেমন করল । -ছেলেমানুষী কোথায় করলাম ? আর আমি কি ছেলে নাকি ? বল মেয়েমানুষী ! আকাশ কিছু বলতে গিয়ে হেসে ফেলল । সিএনজিটাকে ছেড়ে দিয়ে বলল -এখন বাসায় যাবা কিভাবে ? -বাসায় যাবো না ।

-কোথায় যাবে ? -কোথাও যাবো না । তোমার সাথে থাকবো । -আকাশের অবস্থা দেখেছ ? মেঘ ডাকছে । যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । ফারিয়া আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল ।

বলল -কই ? আমিতো দেখছি আকাশের অবস্থা তো ভাল । শুধু একটু বিরক্ত । আকাশ সত্যি ভেবে পায় না এই মেয়েটা নিয়ে কি করবে । বলল -যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । বাসায় যেতে হবে না ? ড্রাইভার কে ফোন করে আসতে বলি ? ফারিয়া বাচ্চা মেয়ের মত চিৎ‍কার করে বলল -না না না ।

আমি যাবো না । যাবো না । ফারিয়া এতো জোরে বলেছিল যে আসেপাশে কিছু লোকজন ওদের দিকে ফিরে তাকাল । -আচ্ছা ঠিক আছে । চল তোমার যা ইচ্ছা কর ।

আমি কিছু বলব না । যদি বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধাও না তখন দেখ ? -কি দেখাবা ? ফারিয়া খুব জোরে হাসতে লাগল । আমার জ্বর আসলেতো আমি খুব খুশি হব । -কেন ? খুশি হওয়ার কি আছে ? -আমার জ্বর আসলে তুমি সারা দিন আমার কাছে থাকবে । আমার আসেপাশে থাকবে ।

আকাশ একটু রাগ করল । বলল -এই সব কি ধরনের কথা বার্তা ? এরকম কথাবার্তা আমার একদম পছন্দ না । আকাশের রাগ করাটা ফারিয়ার খুব ভাল লাগে । ও একটু হাসল । বলল -আমিতো জাস্ট ফান করলাম ।

-এরকম ফান আমার পছন্দ না । -আচ্ছা কান ধরছি । আর বলব না । এখন চল না একটু হাটি । দেখো না কি সুন্দর ওয়েদায় ! চল না প্লিজ ।

ফারিয়া আকাশের হাত ধরে পান্থপথের দিকে নিয়ে গেল । এই দিকটায় একটা পার্ক আছে । পান্থ কুঞ্জ নাম । দুজন পান্থকুঞ্জের মধ্য দিয়ে হাটতে লাগল । ফারিয়া আকাশের হাত ধরে হাটছে ।

ওর আজকে খুব ভাল লাগছে । আজ সকাল থেকে ওর সব ইচ্ছা কেমন পুরন হয়ে যাচ্ছে । সকালবেলা ঘুম থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত প্রত্যেকটা ঘটনা ওকে অসম্ভব আনন্দ দিচ্ছে । এখন বৃষ্টিটা নামে তাহলে ওর আনন্দের সীমা থাকবে না । বিয়ের পর এই প্রথম ওরা এক সাথে বের হল মুভি দেখতে ।

নাস্তার টেবিলে যখন ফারিয়া বলেছিল রিক্সা করে যাবো আকাশ একটু অবাক হয়েছিল তবে আপত্তি করে নি । রিক্সায় আসার সময় ফারিয়া সারাটা সময় আকাশের হাত ধরে ছিল । এমন একটা ভাব যেন ওর ভয় করছে । হাত না ধরলে ও নিচে পরে যাবে । আর রিক্সায় ওর এতো কাছে বসতে পেরে ওর বুকের মধ্যে কেমন যে একটা শিহরন হচ্ছিল ও বলতে পরবে না ।

ওর বারবার মনে হচ্ছিল এমন করে সারাটা জীবন যদি রিক্সায় করে কাটিয়ে দেওয়া যেত ! ওর হাতে হাত রেখে । আকাশ নিজেও খানিকটা অবাক হচ্ছে যারিয়ার আচরন দেখে । মনে হচ্ছে ফারিয়া একটা টিন-এজড মেয়ে । নতুন প্রেমে পড়েছে । নতুন বয়ফ্রেন্ড কর নিয়ে ছেলে মানুষী করছে ।

অবশ্য আকাশ নিজেও এই ছেলেমানুষী টুকু উপভোগ করছে । সত্যি সত্যিই বৃষ্টি নেমে গেল । বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য আকাশ একটা ছাউনির দিকে হাটা দিতে দেখল যে ফারিয়া ওর সাথে নেই । অন্য মানুষ যেখানে বৃষ্টির হাত থেকে বাচার জন্য গাছ গাছালীর মধ্য চলে আসছে ফারিয়া তত খোলা আকাশে দিকে যাচ্ছে । আকাশ কে দারিয়ে থাকতে দেখে বলল - ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন ? - তোমাকে দেখছি ।

- কি দেখছো ? - আমার পাগল বৌ টাকে দেখছি । ফারিয়ার কেন জানি খুব ভাল লাগল কথাটা । আকাশ বিয়ের পর এই প্রথম ওকে বৌ বলে ডাকলো ! হঠাৎ ফারিয়ার কি যেন হল এই ঝুম বৃষ্টির মধ্য ফারিয়া দৌড়ে এসে আকাশ কে জড়িয়ে ধরল । ফারিয়ার মনে হল এমন সময় আর এমন সুযোগ হয়তো আর নাও আসতে পারে । পরে হয়তো সুযোগ আসবে কিন্তু এমন সময় আর পাবে না হয়ত !! ফারিয়া এতো জোরে আকাশকে জড়িয়ে ধরলো আকাশ বলল -আমি পালিয়ে যাচ্ছি না ।

-তোমাকে আমি পালাতে দিলে তো !! আকাশ আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ফারিয়া ওকে সে সুযোগ দিলো না । নিজের সমস্ত আবেগ দিয়ে আকাশের ঠোটে চুম খেল । ফারিয়ার আর কিছু মনে হচ্ছে না । কে দেখবে কে কি বলবে ওর এসব কিছুই ক্ষ্যাল নাই । শুধু মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে কেবল আকাশ আর ও আছে ।

আর কেউ নাই । ওদের দুজনের কেউ ই লক্ষ্য করলো না যে পান্থপথ সিগনালে দাড়িয়ে থাকা গাড়ির ভেতরের লোকজন গুলো কি অদ্ভুদ চোখে ওদের দিকে তকিয়ে আছে !! গাড়িতে বসে থাকা একটা বাচ্চা মেয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল -আম্মু ওরা কি দুষ্ট দেখ !! তুমি সেদি বলেছিলে না যে চু, খাওয়া ভাল না । দেখ না ওরা রাস্তার মধ্যে চুম খাচ্ছে!!! মেয়েটির মা মেয়ে কে একটা ধমক দিলেন । তারপর ড্রাইভার কে বললেন গাড়ি চালাতে । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।