আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ফারিয়ার কথা
আকাশের কথা
আকাশ বরাবরই একটু ঘুমাতে পছন্দ করে । বিয়ের পর যেন অভ্যাসটা যেন আরো একটু বৃদ্ধি পেয়েছে । আগে তো অফিস যাবার সময় সকাল সকাল উঠতে হত । বসের ভয় ছিল । কিন্তু এখন সেই ভয় টা একটু কম ।
কারন অফিসের বসের ভাতিজির সাথেই ওর বিয়ে হয়েছে । বসর ভয় একটু কম ।
অফিসে আকাশের সুনাম ছিল ছিল বরাবরই । একে বারে ভাল ছেলে বলতে যা বোঝায় আকাশ সে রকমই একজন ছেলে । সবার সাথেই আন্তরিক সে কিন্তু ফালতু প্যাচাল কারো সাথেই না ।
আর কাজ কর্মে ছিল খুব সিনসিয়র । অফিসের সবাই আকাশকে পছন্দ কর । মহিলা কলিগদের মধ্যে আকাশকে নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় । বিশেষ করে অবিবাহিত কলিগরা আকাশকে নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখাতো ।
ঠিক এমন সময় বসের ভাতিজি অফিসে জয়েন করল ।
ফারিয়া । দেখতে শুনতে দারুন । অবিবাহিত । একে তো বসের ভাতিজি তার উপর সুন্দরী । অফিসের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ফারিয়ার দিকে ঘুরে গেল ।
এভাবেই দিন চলছিল । ফারিয়ার সাথেও ওর আন্তরিক সম্পর্ক ছিল । কিন্তু এর বেশি কিছু না । আকাশ কোন দিন মেয়েদের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায় না । এর অবশ্য কারন ছিল ।
তারপর একদিন হঠাত্ অফিসের বস আকাশ কে ডেকে ফারিয়ার সাথে বিয়ে প্রস্তাব দেয় । ও খানিকটা অবাক হল । এতো ছেলে থাকতে ও কেন ? খুব আন্তরিক ভাবেই সে প্রস্তাফটা না করে দিল । খবরটা শুনে অফিসের সবাই খুব অবাকই হয়েছিল । বলছিল এরকম সোনার হরিণ কেউ মিস করে ? কিন্তু তারা যদি জানত !
আকাশ তার সারা টা জীবন দিয়ে কেবল একটা মেয়েকেই ভালবেসেছে ।
অন্য কোন মেয়ের প্রতি তাই ও কথনও আগ্রহ দেখাই নি । একজনকে মনের ভিতর রেখে অন্যজনকে কাছে টানা কিছুতেই সম্ভব না । মাঝে আকাশের মা খুব জোড়াজুড়ি করত বিয়ের জন্য । বলত বিয়ের পর বউয়ের উপর মায়া এমনিতেই জন্ম নেই । তুই এমনিতেই তাকে ভালবাসতে শুরু করবি ।
উত্তরে আকাশ বলত আমি সে চান্স কেন নেব । যদি ভালবাসা জন্ম না নেয় ! তাহলে আর একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে কি লাভ । ঠিক একই কথা গুলো সে ফারিয়াকেও বলছিল । কিন্তু তারপরও যখন ফারিয়া ওকে বিয়ে করতে চাইল বেশ জোর দিয়েই চাইল তখন আকাশ কেন জানি রাজি হয়ে গেল ।
তাছাড়া বিয়ে না করার ব্যাপারে মানুষ জন অন্য ইঙ্গিত দেওয়া শুরু করেছিল ।
তাই বিয়েতে আর অমত করেনি । আর ফারিয়ার চোখে কি যেন একটা ছিল , আকাশ সেটা উপেক্ষা করতে পারে নি । তারপর ওদের বিয়েটা হয়ে যায় । তারপর থেকে সবকিছু ভালই চলছে বলতে হবে ।
“ঘুম ভাল হয়েছে” ? ফারিয়া ধুমায়িত চা নিয়ে হাজির ।
আকাশ আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলল “হুম” । এই মেয়েটা কি যেন বুঝে যায় ওর কখন কি দরকার । ঘুম ভেঙ্গেই প্রতিদিন গরম চা নিয়ে হাজির হয় । একটু অপেক্ষা করতে হয় না । মনে হয় যেন ও ঠিক জানতো এখনই আকাশের ঘুম ভাঙ্গবে আর এখনই ওর চা দরকার ।
আর কেবল চা ই না ওর প্রত্যেকটা জিনিস যখন যেটা দরকার ঠিক তখনই ফারিয়া ওটা নিয়ে হাজির হয় ।
সপ্তাহ খানেক আগে আকাশ লক্ষ্য করল ফারিয়া অফিস যাচ্ছে না । খাওয়ার টেবিলে কথাটা জিঞ্জেস করল ।
“অফিস যাচ্ছ না কেন তুমি” ?
“ভাল লাগে না” ।
“কেন” ? আকাশ বেশ অবাক হল ।
“সারা দিন বাসায় কি কর” ?
“রান্না শিখি । মাঝে মাঝে মনে হয় কেন যে আরো আগে রান্নাটা শিখি নি” ?
“রান্না করার কি দরকার ? বুয়া আছে না” ?
“তুমি খেতে অনেক পছন্দ কর না তাই রান্না শিখি । তোমাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে পারলে আমার খুব ভাল লাগবে” ।
আকাশ অবাক হয়ে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল । এমবিয়ে করা এই মেয়ে কি বলছে ?
কিন্তু অফিস যাবার সময় আকাশের কেন জানি অদ্ভুদ ভাল লাগার অনুভুতিতে ছেয়ে রইল ওর মনটা ।
ফারিয়ার মত একটা মেয়ে ওর জন্য এমনটা করছে । ভাবতেই ভাল লাগছে ।
নাস্তার টেবিলে আকাশের কেন জানি মনে হল ফারিয়া কিছু বলতে চায় ।
“পরোটা তুমি বানিয়েছে” ?
ফারিয়া মাথা ঝাকাল ।
“ভাল হয়েছে ।
বুয়া পরোটা বানালে তো মনে হয় তেলের পুকুর থেকে ডুবিয়ে এনেছে । খেতে ভাল লাগছে” ।
আকাশ লক্ষ্য করল এই টুকু কথায় ফারিয়ার চোখের পানি চলে এসেছে । আশ্চর্য ।
“কিছু বলতে চাও” ।
ফারিয়া আবার মাথা ঝাকাল ।
“বল” ।
“তোমার আজ বিকেলে কোন কাজ নেই তো” ?
“না কাজ আর কি ? ছুটির দিনে তো টিভি দেখা ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না” ।
ফারিয়া খানিকটা সময় নিল । তারপর বলল “বসুন্ধারা সিটিতে একটা সুন্দর ছবি চলছে ।
তোমাকে না বলেই আমি টিকিট কেটে ফেলেছি । যাবে আমার সাথে” ?
“আরে এতো সংকোচ করে কেন বলছ” ? আকাশ হাসল । “যাওয়া যাবে । সমস্যা কি” !
“সত্যি” ?
“ হুম” ।
“আর একটা কথা” !
“বল” ।
“ গাড়ি নিয়ে যাবো না রিক্সা করে যাবো” ।
“রিক্সা নিয়ে কেন” ?
“এমনি । বল যাবে” ?
“আচ্ছা বাবা রিক্সা নিয়েই যাবো । কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এসি কার থাকতে তুমি রিক্সা করে কেন যাবা” ?
“এখন বলব না । এখন বললে তুমি হাসবা ।
যখন যাবো এখন বলব” !
আকাশ হাসল । ও খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে ফারিয়া কেন রিক্সা করে যেতে চাচ্ছে । এই মেয়েটা এতো ছেলে মানুষ ! আবেগ প্রকাশের কি ছেলেমানুষী না চেষ্টা ! আরো কত কিছুই না ও করে । তার মধ্যে সব থেকে যেটা না বললেই নয় সেটা হল ফারিয়া কথনও অন্য গ্লাসে পানি খায় না । আকাশ যে গ্লাসটাতে পানি খাবে ফারিয়া বেছে বেছে ও গ্লাসটাতেই পানি খাবে ।
প্রথম প্রথম খ্যাল করলেও সিওর হবার জন্য আকাশ সেদিন একটা পরীক্ষা করল ।
দুজন রাতের খাবার খেতে বসেছে । দুজনের সামনেই দুটো পানির গ্লাস । আকাশ গ্লাসে একটু চুমুক দিয়ে গ্লাসটা এমন একটা দুরুত্বে রাখল যেন গ্লাসটা নিতে হলে ফারিয়াকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে হবে । ওর যখন পানি খাবার দরকার হল ও চট করে উঠে গেল ।
এমন একটা ভাব যে কোন আইটেম হয়তো আনতে ভুলে গেছে । তারপর পানির গ্লাসটা নিল খুব স্বাভাবিক ভাবেই । যেন এটাই ওর গ্লাস । কিন্তু ওর হাতের কাছের আর একটা গ্লাস ছিল । ইচ্ছা করলেই ও নিতে পারতো ।
আকাশের কেন জানি একটা আনন্দ আনন্দ অনুভব হয় । তাহলে কি মার কথাটাই ঠিক । স্ত্রীর প্রতি আপনাআপনি ভালবাসা সৃষ্টি হয় ! ফারিয়ার প্রতিকি ও দুর্বল হতে শুরু করেছে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।