আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুভিখোর ব্লগার ইন্টারভিউঃ ব্লগার দূর্যোধন

I always tell the truth. Even whn I lie. মুভিখোর ব্লগার ইন্টারভিউ এর এটা দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বে অংশগ্রহন করেছিলেন ব্লগার মাষ্টার । এবারের পর্বে কাটগড়ায় ব্লগার দূর্যোধন পরিচিতিঃ ব্লগার দূর্যোধন। সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগিং শুরু করে প্রায় বছর চারেক আগে। নিন্দুক এবং দূর্মুখ।

লেখক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ বারাক ওবামা এবং মমতা ব্যানার্জীর ঈর্ষার পাত্র। বুদ্ধিমত্তায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ারপারসনদের সম্মিলিত হোয়াইট ম্যাটারের সমান। সৌন্দর্য্যে ক্যাটরিনা এবং সানি লিওনের যোগফলের তিনগুন। ওজন পপি ও টেলিসামাদের যোগফলের অর্ধেক। প্রধান শক্তি ইউনুস সাহেবের শক্তি দই।

প্রিয় কৌতুকাভিনেতা আনিসুল হক। অবসরে খটের উপর বসে থাকে। অন্যান্য সময় ঘুমায়। এখন পর্যন্ত দেশি অভিনেত্রী হিসেবে পছন্দ ইমন,প্রিয় ভ্রমন স্থান কুসুম শিকদার। গালি দেয় সবাইকে।

নিন্দুক বলে কথা। ব্লগ নেমঃ দূর্যোধন মূল নামঃ কমু না ( এক জবান ) ব্যক্তিগত ব্লগঃ দূর্যোধন ব্লগ ফেসবুকঃ দূর্যোধন দূর্যোধন !!!!! ইন্টারভিউ শুরু !!!!!! আমিঃ দিন-কাল কেমন যায় ? দূর্যোধনঃ চালে-ডালে মিশিয়ে চলে যায়। খিচুড়ি!! আমিঃ বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে ? দূর্যোধনঃ আপাততঃ পরিবার ও চাকরী । কিছুটা ব্যাবসা। আমিঃ ব্লগ নিকটা ঠিক দূর্যোধন কেন ? দূর্যোধনঃ দূর্যোধন মহাভারতের একটা ক্যারেক্টার,সেটা মোটামুটি সবাই জানেন।

সেই আদলেই এই নিকটা নেয়া হয়েছে। সবাই দূর্যোধনকে ভিলেন বলেই জানে। কিন্তু একই সাথে সবাই মনে রাখেনা যে -ইতিহাস সর্বদা বিজয়ীদের দ্বারাই লেখা হয়। দূর্যোধন কি আদতেই খারাপ ব্যক্তি ছিলো? না। সে বীর ছিলো,নিজের পরিবারের জন্য অন্তপ্রান ছিলো।

আরো অনেক গুন থাকা সত্ত্বেও তাকেই ভিলেন বানিয়ে দেয়া হয়েছে,যেটা আমার কাছে অন্যায্য মনে হয়। এমনকি তাকে হারানোর জন্য ছলচাতুরির সাহায্য নিয়েই যুদ্ধে পরাস্ত করা সম্ভব হয়েছে,তারপরও চাতুরীর প্রশ্রয় নেয়া যুধিষ্ঠিরেরা নায়ক। আমি সেই ধরনের নায়ক হতে চাইনি। দোষে গুনে মিশিয়ে মানুষ বলেই আমি এই নিকে। অন্যের লেখা ইতিহাসে শুদ্ধ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চাই নি বলি তথাকথিত ভিলেন নিক নিয়েছি।

আমিঃ রাজনীতি না ফিল্ম কোনটা নিয়ে ভেবে আনন্দ পান ? দূর্যোধনঃ রাজনীতি। ফিল্মটা উপভোগ করি,কারন আমাদের দেশে এখনো ফিল্মের সাহায্যে জনমত গড়ে তোলার অবস্থা নেই। সুতরাং রাজনীতি নিয়ে এই মূহুর্তে চিন্তাই বেটার। আমিঃ লেখালেখির ব্যাপারে ব্লগ ও ফেসবুক কতটা গুরুত্ত্বপুর্ন আপনার কাছে ? দূর্যোধনঃ ব্লগ আর ফেসবুক বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম উপায়,নিজের মত প্রকাশেরও। আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে খুব সহজে কম্যুনিকেট করতে পারবেন,ব্লগের মাধ্যমে আপনি আপনার চিন্তা ধারা ছড়াতে পারবেন (ফেসবুকেও)।

এই দুইটাই এখন অফস্ট্রিম মিডিয়া হিসেবে তরুন সহ অনেকেরই ভরসা। খেয়াল করুন,প্রিন্ট মিডিয়াতে আপনার লেখা কোনো বিষয় সহজে ছাপাতে গেলে সম্পাদকের হাত পা ধরার অবস্থা হতে পারে। আবার মতাদর্শ ভেদে আপনার লেখাকে টেবিল থেকেই কাট করে দেয়া হতে পারে। সরকারের খড়গ হস্ত থাকার কারনে মিডিয়া জোর গলায় কিছু না-ও বলতে পারে। কিন্তু এসব কিছুর ভয় বা অসুবিধা আপনি ফেসবুক বা ব্লগে পাবেন না।

এখানে আপনি পাঠকের সাথে ডিরেক্ট কনট্যাক্টে যেতে পারেন,সাথে সাথে ফিড ব্যাকও পাবেন। একজন সাধারন মানুষের কাতার থেকে উঠে আসা বক্তার জন্য সঠিক মাধ্যম হিসেবে ব্লগ আর ফেসবুকের এই মুহুর্তে বিকল্প নেই। আমিঃ ফিল্ম নির্মান করবার ইচ্ছা বা অভিজ্ঞতা আছে কি ? দূর্যোধনঃ ফিল্ম নির্মান করার ইচ্ছা আছে তবে ব্যস্ততার কারনে সেই ইচ্ছার কতটুকু বাস্তব হবে,তা বলা যায়না। আপনাকে কথা প্রসংগেই বলেছি,নোকিয়া এন ৮ দিয়ে শর্ট ফিল্ম তৈরির আইডিয়াটা দেখেই চিন্তা করলাম,আমিও নিশ্চয়ই পারি। সেই উদ্দেশ্যেই বেশ কিছুর ফুটেজ কালেক্ট করেছি।

এডিটিং করার সময় পাচ্ছিনা,এই যা। আমিঃ সর্বোপরি ফিল্ম বিষয়ক আপনার ভাবনাটা খোলাশা করুন ? দূর্যোধনঃ ফিল্ম জিনিসটা আমার কাছে দুই রকম হতে পারে। চানাচুর মুভি,আরেকটা সিরিয়াস ধাচের। চানাচুর মুভি হবে সেই ধাচের-এলাম ,দেখলাম,তালির পাশাপাশি খানিকক্ষন বগলটাও বাজালাম,এবং হল থেকে বের হয়ে ভুলে গেলাম। সিরিয়াস বলতে সেই ধরনের মুভি-যা হল থেকে বের হবার পরও আমার মাথায় খেলা করবে,এটা কেন হলো,এমন হলে কি হতো,কেন এমনটা ঘটা উচিত ছিল-এই জাতীয়।

দুই ধরনের ফিল্মেরই দরকার আছে। যখন রিলাক্সিং মুডে থাকবেন তখন একটা চানাচুর মুভি দেখবেন(তবে এতে গাঁজার পরিমান কম হতে হবে)। এই ধরনের ফিল্ম জাস্ট ইন্ডাস্ট্রির ইকোনমিকাল হেলথ বিল্ড আপ করার জন্য দরকার। কিন্তু ফিল্মটা যখন একটি জাতিকে কোনো স্ট্রং মেসেজ দেয়ার জন্য তৈরি করা হবে,তখন সেটা অবশ্যই সিরিয়াস হতে হবে (আঁতেল বলছিনা)। সেই সিরিয়াস ফিল্মটাও এমন প্যাটার্নেই আসবে,যেটা সবাই মাথায় গেথে নেবে,মেসেজ নিয়ে চিন্তা করবে।

সিরিয়াস মুভিগুলো যদি আঁতেল মার্কা পুরষ্কার বানানোর জন্য তৈরি হয়,তবে সেটা কোনো কাজেরই নয়। আমিঃ বাংলা ছবিয়াল ইন্ড্রাসি সম্নধে আপনার ধারনা কিরুপ? দূর্যোধনঃ ছবিয়ালদের সম্পর্কে এই মূহুর্তে আমার ভিউ-নেগেটিভ। এর কারনটাও ছবিয়ালদের বোঝা উচিত। প্যানপ্যানানি ধাঁচের পারিবারিক সংগিতের পর সবার মৃত্যু,নায়কের নিজের পরিচয়ের জন্য খোজ,তার মাঝেই নায়িকার সাথে ধাক্কা টক্করের পর হালকা নেচে কুঁদে আবার প্রতিশোদের নেশায় চৌধুরিদের পটল তোলানো-এই জাতীয় ছবি থেকে তারা ভিন্ন কিছুর চিন্তায় অন্য ধাঁচের ছবি তৈরি করা শুরু করেছিলো(ব্যাচেলর)। পাবলিকও নতুন পেয়ে কিছু তালি বাজালো,ছবিয়ালরাও নিজেদের গুরু মনে করে স্ক্রিপ্ট বিহীন লম্বা নাটক বানিয়ে তা সিনেমা নামে চালানো শুরু করলো,যেন সবাই সেটাই খাবে।

পৃথিবীর আর কোনো দেশে স্ক্রিপ্ট ছাড়া ক্যামেরা রোল অন করে সিনেমা বানায় কিনা জানিনা,কিন্তু এখানে 'তুমি খাইসো,গেসসো,মারসো ক্যান' জাতীয় অভিনেতাদের নিজেদের ইনস্ট্যান্ট যা মাথায় আসে-তাই টাইপ ডায়ালগ দিয়ে সিনেমা বানানো হলো। এগুলোকে সিনেমা বলা যায়না। ভিন্ন কিছু করা মানেই গুপ্তকেশ তুলতে রেজরের পরিবর্তে কোদাল ব্যবহার না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে,হয়েছেও তাই। শক্তিমান কোনো অভিনেতা উঠিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে কি?হলিঊডে স্ক্রিপ্ট্রাইটারদের টাকা দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখানো হয়,এখানে 'ন্যাচারাল অভিনয়' দেখানোর চেষ্টায় সিকোয়েন্স ঠিক রেখে ক্যামেরার সামনে যা-ইচ্ছা-তাই বলার রীতি চালু করা হয়েছে।

গুটিকয়েক নির্মাতা নামের মানুষ আর সুন্দর মুখের তথাকথিত স্টার বানানো সম্ভব হলেও এতে যে আমাদের সিনেমা শিল্পের কতটা ক্ষতি হয়েছে,তা ধারনা করা কঠিন না। সুতরাং,তাদের স্টাইলটা আমার কাছে এখন নেগেটিভ। আমিঃ শাকিব তথা সমগ্র বর্তমান বাংলা ব্যানিজিক ফিল্ম বিষয়ক আপনার দৃষ্টকোন? দূর্যোধনঃ শাকিব খান বাংলাদেশের এই মুহুর্তে সেরা তারকা। তার গেট আপ ,কথা বার্তা তারকা সুলভ না হলেও আমাদের হাতে আর কোনো অপশন এখন নেই। আপনি শাকিব কে দিয়ে অশ্লীল ছবি বানিয়েছেন,এখন শ্লীলও বানানো সম্ভব হচ্ছে।

মোদ্দা কথা,কে কিভাবে ব্যবহার করছে,সেটাই দেখার বিষয়। শাকিব চাড়া মানুষ কেন উঠে আসছেনা,তার কয়েকটা কারনের মাঝে একটা হলো শাকিবের স্বাচ্ছাচারিতা ও প্রযোজকদের জিম্মি করে রাখার প্রবনতা। আমি যতদূর জানি(এই মুহুর্তে রেফারেন্স দিতে চাচ্ছিনা),নতুন কোনো স্টারের উত্থান শাকিব মেনে নেবেনা,তার কথা ছাড়া অন্য নায়িকাও কাস্ট করা যাবেনা। এটা চলচ্চিত্রের জন্য ভালো না। অন্যদিকে শাকিব খান আবার পরিচিত মুখ,তাকে ছাড়া নতুন কাউকে নিয়ে প্রযোজকরা বিনিয়োগ করতেও আগ্রহী না।

রিস্কি জব। শাকিব অন্তত কাহিনীর দিকে মনোযোগী হলে সেই একাই বাংলা সিনেমাকে অনেকদূর টেনে নিয়ে যেতে পারে,কারন সে অভিনয়টা জানে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো দেখলে তার সদিচ্ছার প্রমান পাওয়া যায়না। বানিজ্যিক ছবির দিক দিয়ে সেই ভরসা,সবাই জানে। কিন্তু যেটা বললাম,সেই একই রকমের কাহিনী আর মেকিং,একই সেটে তিন চারটা ছবি,একই নায়িকা নিয়ে একই ধাঁচের কাহিনী দিয়ে ভিন্ন নামের বানিজ্যিক ছবি বানানো দেখতে দেখতে দর্শক টায়ার্ড।

এক্ষেত্রে শাকিবের নিজ থেকেই রেস্পন্সিবল হওয়া উচিত। উদাহরন দেই,আমির খান আর শাহ্রুখ আর সালমান। তিনজনই ২০০০ সাল পর্যন্ত একই ধরনের ছবি করেছে,তারপর থেকেই তাদের ছবি গুলোতে ভ্যারিয়েশন এসেছে। সেখান থেকেই বলিউডের উত্থান। এখন সেখানে প্রচুর বানিজ্যিক মসলা ছবি(চানাচুর) বানানো হয়,কিন্তু মানুষ বোর হয়না।

বাংলাদেশের বানিজ্যিক ছবির মেকাররা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। শাকিবকে তারা নতুন ধাঁচের ছবি তৈরিতে আগ্রহী করতে পারেন। লালটিপের মত নাটক আর ইমনের মত কাঁচা অভনেতা দিয়ে বানিজ্যিক ছবি হয়না,সেখানে শাকিবের সারা বাংলাদেশের অডিয়েন্সে একটা ওয়াইড এক্সেপ্টিবিলিটি আছে,সেখানে সুস্থ(!) ধারার ছবি নির্মানে ইমনের ভাত নেই। আমিঃ ঠিক কোন বিষয়টার উপর প্রচুর ফিল্ম হওয়া দরকার বলে আপনার মনে হয়? দূর্যোধনঃ এই ক্ষেত্রে কোনো বিধি আরোপ করাটা মনে হয় না দরকার আছে,তবে মানুষ হলে গিয়ে বিনোদন করে ছবি দেখবে এবং তার পয়সা উসুল হবে,এই ধরনের ছবিই বেশি বেশি হওয়া উচিত। এটা ইন্ডাস্ট্রির অর্থনৈতিক স্ন্যবাস্থ্যের জন্যও ভালো এলিট চিন্তাবিদদের খোরাকি সিনেমা না হয় পরে হবে! আমিঃ বর্তমান কলকাতায় যেমন হচ্ছে,এমন হলেই কি বাংলা মিডিয়া সাটিস্ফাই হবে বলে মনে করেন ? দূর্যোধনঃ মিডিয়াকে স্যাটিস্ফাই করা খুব টাফ,আবার খুব সহজও।

আপনার বগলে দুয়েকটা মিডিয়া থাকলে কাঁচা বিষ্ঠা বানিয়েও খুব বাহবা পাবেন ( লালটিপ)। সুতরাং বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়াতে আপনি কখনোই সঠিক এবং আনবায়াসড রিভিউ পাবেন না। কলকাতাতে এখন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে,সেটা বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের ছাড়া আর কার কাছে পজেটিভ রেটিং প্চ্ছা,তা জানিনা। প্রচুর পরিমানে সেক্সের ব্যবহারেই ছবি আধুনিক হয়ে যায়না। সেক্সের ব্যবহারটা প্রাসংগিক হতে হয় ।

আমার কাছে কলকাতার ছবিগুলো জাস্ট হাইপ মেকিং ছাড়া এর বেশি কিছু মনে হচ্ছেনা। গান্ডু নামের ছবিটি দেখেছি,অখাদ্য। এলিট চিন্তাবিদরা আহা উহু করে চোখের জল মনে হয় শেষ করেছেন। আমি জানি,আমার মত আরো অনেকেই এই ছবির জন্য ইউরিনারি ব্লাডারের জল বিয়োগ করবেনা। খুব বেশি অপ্রাসংগিকভাবে সাহসী সিন আনলেই ছবির জগত চেঞ্জ হয়ে যাবে না,তথাকথিত বোদ্ধাদের পর্নের বিকল্প জগত চেঞ্জ হলেও হতে পারে।

এ ধরনের হাইপ মেকিং সিনেমা কলকাতার মিডিয়া ছাড়া কেউ খায় বলে মনে হয় না। আর পর্নের সুড়সুড়ি দিয়ে তো আপনি ব্যবসা করতেই পারেন,সেক্ষেত্রে এটা যেকোনো দেশেই সম্ভব। সুতরাং এটা আহামরি কিছু না। বাংলাদেশে এ ধরনের ছবি প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। আমিঃ নিছক আনন্দ প্রদান নাকি গভীর কিছু ধারন করে স্যাটায়ার মুভি রিভিউগুলো ? দূর্যোধনঃ পাঠকের আনন্দের পাশাপাশি আমার টার্গেট থাকে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি একটা স্ট্রং মেসেজ পাঠানোর,''তোমার ছবির এই অংশগুলো হাস্যকর,এই ভুল দয়া করে ঠিক করে নিও''।

কিন্তু পাগলে শোনেনা ধর্মের কাহিনী,বাংলাদেশের সিনেমা নির্মাতারা আজকাল মনেই রাখতে চান না,ব্লগ এখন এমন স্ট্রং একটা মিডিয়া -যেখানে প্রিন্ট মিডিয়ার মত কাউকে তুষ্ট করে টিপাটিপি বানিয়ে পার পাওয়া যাবে। প্রিন্টের মাধ্যমে বানানো সুনামের কথা প্রচার যতটুকু হবে,তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি স্থানে অখাদ্য সিনেমার কাহিনী ফেসবুক আর ব্লগের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাবে। আমিঃ সেক্সুয়াল ইঙ্গিত ছাড়া কি স্যাটায়ার রিভিউ লেখা সম্ভব না? দূর্যোধনঃ অসম্ভব কেন হবে?কিন্তু প্রাসংগিক হলে ব্যবহার করাটাই উচিত। (প্রশ্নের প্রেক্ষাপট জানার আগ্রহ জানালাম) আমিঃ তীব্র সমালোচনা নাকি মুখর শ্লোগান ! কোনটায় বিশ্বাসী ? দূর্যোধনঃ দূর্যোধন দুর্মুখ। সমালোচনা শব্দটা খুব বেশী হালকা হয়ে গেলো।

এর চেয়েও তীব্র কিছু থাকলে সেটাও ব্যবহারই করতাম। এবং প্রাসংগিকভাবেই যুক্তির মাধ্যমে সমালোচনা করাটা পছন্দ করি। মুখের উপরেই। আমিঃ বাংলা সিনেমার বর্তমান ক্রমবিবর্তন নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট? দূর্যোধনঃ ক্রমবিবর্তন বলতে আপনি যদি ক্রমাগত উন্নতি বা অবনতি বোঝান,তবে বলবো-এই মুহূর্তে কোনো বিবর্তনই হচ্ছে না। সেই আগের 'ঢিসুমাইক' 'নেড়ে চেড়ে ছেড়ে দে' এসব থেকে এখনো বের হতে পারি নি আমরা।

একটা সময় বাংলা ছবি চূড়ান্ত মানসম্মত হতো (দহন দ্রষ্টব্য),তারপর অনেকদিন বানিজ্যিক ধারার স্থিতাবস্থায় ছিলো। (আলমগীর,ইলিয়াস কাঞ্চন,সালমান যুগ),তারপর দিকবিজয়ী আলেকজান্ডার বো-মনের ময়ুরী-নাসরিন-ডিপজলের কল্যানে দেশি পর্নের সুবিশাল কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হয়। সেখান থেকে উত্থানের নামে মনপুরা,ব্যাচেলর জাতীয় লম্বা নাটক হলে আসতে থাকে। স্বাভাবতই লম্বা নাটকে মানুষ অশ্লীলতা দূরের ট্যাবলেট খুজে পাওয়ায় ফারুকী-ইমপ্রেস গ্রুপ আরো ছবি নির্মানে আগ্রহী হয়। এবং সিনেমা নির্মানের নামে তারা স্ক্রিপ্ট বিহীন নাটক তৈরী করতে থাকে।

এটাকেও আমি একধরনের পতন ভাবি। সাম্প্রতিক সময়ে খোঁজ দ্যা সার্চের মাধ্যমে অনন্ত জলিল সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মানোন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছে,প্রয়াত তারেক মাসুদ অবশ্য বাংলা সিনেমাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। কেউ বলে দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো,কেউ বলে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। সুতরাং,বাংলা সিনেমার ক্রম বিবর্তন নিয়ে বলার এখনি হয়তো সময় হয়নি। আমিঃ হুমায়ূন আহমেদের "ঘেঁটুপুত্র কমলা"কে কিভাবে নিচ্ছেন?? দূর্যোধনঃ পজেটিভ।

ডিটেইলসে প্রয়োজনে পরে বলবো। আমিঃ প্রচন্ড সমালোচনা বা বাধার মুখে কি স্যাটায়ার বন্ধ হতে পারে ? দূর্যোধনঃ যেহেতু এখন পর্যন্ত এনোনিমাস ,সুতরাং প্রচন্ড বাধার মুখেও বন্ধ হবেনা। নিশ্চয়ই মহাভারতে দুর্যোধনের উক্তিটি মনে আছে,''বিনা যুদ্ধে নাহি দিব ছাড়,সুচাগ্র মেদিনীর অধিকার'' ! আমিঃ অনেকগুলো স্যাটায়ার পেলাম কিন্তু একটা বাংলা ফিল্মের পজেটিভ কেন পেলাম না ? দূর্যোধনঃ এই প্রশ্নটা আগেও অনেকেই করেছেন। আবারো উত্তর দেই। স্যাটায়ার পোস্টে প্রশংসা করার কোনো অবকাশ নেই।

স্যাটায়ার পোস্ট মানেই আপনি হাসবেন,কিন্তু কেউ একজন ক্ষুব্ধ হবে!সেই হাস্যরসের মাঝেই একটা খোচা মেরে বক্তব্য পৌঁছে দেয়া হবে। চিরাচরিত রিভিউগুলোর সাথে আমার রিভিউগুলোর পার্থক্য এখানেই,পুরোপুরি স্যাটায়ারে,পুরোপুরি নেগেটিভ খোঁচাখুঁচির মাধ্যমে পজিটিভ কিছু করতে বলার আহবান জানানো। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন,যেসব মুভি অডিয়েন্সে(মিডিয়ায় না কিন্তু) ভালো বলে সমাদৃত হয়েছে (সেই অডিয়েন্সে আমাকেও গুনবেন),সেগুলোর কোনো রিভিউ আসেনি। আমি সব বাংলা ছবিকেই খারাপ বলে রিভিউ করছিনা,যেগুলো আমার কাছে খুবই খারাপ মনে হয়েছে,শুধু সেগুলোরই করছি। পজেটিভ রিভিউ যদি প্রয়োজন মনে করি,কোনো একসময় আসতেও পারে,তবে সেটা নিশ্চয়ই স্যাটায়ারে হবে না।

আমিঃ সম্প্রতি লালটিপ এর উপরে আপনার করা স্যাটায়ার রিভিউ নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোচনায় এসেছে, আলোচ্য বিষয়টাকে আপনি কিভাবে গ্রহন করেছেন? দূর্যোধনঃ পুরোপুরি পজিটিভ। রেকর্ড পরিমান দ্রুততায় পোস্টটি ছড়িয়ে পড়েছিল এবং স্টিকি না হওয়া পোস্ট গুলোর মাঝে এটাই যেকোনো প্ল্যাটফরমে এখনো সর্বাধিকবার পঠিত কোনো পোস্ট ( হিট জেনারেট/অটো রিফ্রেশারদের বাদ দিন)। জানা গেছে যে পরিচালক ভদ্রলোক আসলেই লস করেছেন। সিনেমার দর্শক হিসেবে তার লসের জন্য খারাপ লাগছে,তবে একই সাথে খুশী যে উনি এমন একটি বাজে ফিল্ম দর্শকদের গেলানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আরেকটি জিনিস যেটা আমাকে আশান্বিত করেছে,তা হলো বিকল্প মিডিয়া হিসেবে ব্লগকে মানুষ কিভাবে গ্রহন করছে এবং তার শক্তির একটা প্রমান পাওয়া গেলো।

যেখানে এমন অখাদ্য ছবির, দুঃখিত, নাটকের পজেটিভ রিভিউ দিয়ে দিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ার অতিবড়-বিচক্ষন-বোদ্ধারা দর্শকদের গাঁটের টাকা হলে ফেলে আসতে প্ররোচিত করছিলেন,সেখানে ব্লগ প্ল্যাটফরম থেকে সঠিক তথ্য তুলে ধরা সম্ভব হয়েছিল। উনি নিজেও বিষয়টি বুঝতে পেরেই হয়তো মামলার হুমকি দিয়ে পার হতে চাচ্ছিলেন। ফেসবুকে লালটিপের মত বাজে মুভির ভরাডুবি ঠেকাতে পরিচালকের পকেটে থাকা স্বয়ং হিচককেরা বেশ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন এই বলে যে,লালটিপ বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব জাতীয় আলোড়ন সৃস্টিকারী-এর ক্যামেরা স্বয়ং স্করসেসে চালিয়েছেন-কুসুমের মতো অভিনয় মধুবালাও করেন নি-মিউজিক স্বয়ং বিথোভেনের ঘোল খাওয়ানোর মতন ব্লা ব্লা ব্লা। শেষ পর্যন্ত যারাই তাদের কথা শুনে হলে গিয়েছেন,নিশ্চিতভাবেই প্রতারিত হয়েছেন,এবং নিশ্চিতভাবেই তার পরিচিতদের দেখতে মানাও করেছিলেন। যার প্রমান দেবেন হলটিকেট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত টাকার অংক যখন পরিচালক আপনাদের জানাবেন= লস!সেক্ষেত্রে পকেটে থাকা প্রিন্ট বিনোদন সাংবাদিকদের ক্ষোভের অনলে পুড়লেও আমি তাদের আবারো বলবো- ''লম্বা নাটক'' বানিয়ে ''সিনেমা'' নাম দিয়ে তা দেখতে মানুষকে হলে ঠেলা দর্শকদের প্রতারিত করার শামিল।

বাংলা সিনেমার ভালো চাইলে খারাপকে খারাপ বলুন,ভালো কে ভাল। অযথা ভুয়া ছবিকে আস্কারা দিয়ে দর্শকের টাকা মারার তাল ছাড়ূন। খারাপ কে ভালো বলে বলে মানুষকে আজ হলে আনতে পারবেন,তবে কাল সে 'আসলেই ভালো' ছবি দেখতে হলে আসবেনা-তা নিশ্চিত থাকতে পারেন। কারন ঠকে যাবার অভিজ্ঞতাটা আপনারা তাকেই ইতিমধ্যে প্রদান করেছেন। আমিঃ সেরা ব্লগার ? দূর্যোধনঃ সেরা ব্লগার দিপ মামা।

কোনো সমস্যা? আমিঃ সেরা বাংলা মুভি ? দূর্যোধনঃ সেরা বাংলা মুভি,এই মুহূর্তে ঠিক বলার মত কিছু নেই। আমিঃ মৃনাল না মানিক ? দূর্যোধনঃ উত্তর দিচ্ছিনা। আমিঃ রিমেক করলে কোনটা করবেন ? দূর্যোধনঃ রিমেক করলে গেরিলা। আরো অনেক কিছু নিয়ে আসার মত ছিলো। যাকে বলে আসল যুদ্ধের নৃসংশতা আর ভয়াবহতা দেখানোর ইচ্ছে ছিলো।

হয়তো কম বাজেটের কারনে সেই পরিচালক অনেক কিছুই মিস করেছেন। আমিঃ সেরা পরিচালক ? দূর্যোধনঃ আমার কাছে স্করসেসে। @@@@@@ সমাপ্ত @@@@@@@@@@ এখন শুরু লাইভ ইন্টার ভিউ। যে যেকোনো প্রশ্ন করে নাজেহাল করে ফেলুন দূর্যোধন কে । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.