এক ও শূণ্যের মাঝামাঝি । সত্তর বছর বয়স্ক একজন বৃদ্ধ, রিক্সায় যাত্রী নিয়ে জীবনের অমানবিক সংগ্রাম’কে আমাদের সামনে তুলে ধরছে । ঠিক এমন একটা ছবি পুরো ফেইসবুক জুড়ে সবাই শেয়ার করেছে, কেউ খুব আবেগে আপ্লুত হয়ে মন্তব্য করেছে, হাজার হাজার লাইক এবং রি-শেয়ারিং এ ছবিটা পুরো ফেইসবুক জুড়ে ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল । অথচ কেউ সেই সত্তর বছর বৃদ্ধ রিকসাওয়ালা’র জীবন সংগ্রহে একটু সাহস দেয়নি হয়ত খুঁজে বেরিয়েছি কিন্তু পায়নি কিংবা বৃদ্ধ জীবনের কাছে পরাজয় বরণ করে মৃত্যু’কে কাছে টেনে নিয়েছেন । আমাদের অনেক কিছু’ই করা উচিত ছিল হয়ত’বা করাও যেত সেই বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার জন্য ।
পারি নি ।
ঠিক একই রকম দৃশ্য চোখে পড়লো চট্টগ্রামের আলকরণ এলাকায় । প্রায় সত্তর উর্ধ্ব এক বৃদ্ধ প্রচণ্ড গরমে ঘামে ভিজে ধীরে ধীরে একজন যাত্রী’কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সেই ছবি’র মতো সত্তর বছর উর্ধ্ব একজন রিক্সাওয়ালা । যার নাম এমদাদ মিয়া পিতা-কালা মিয়া নিবাস-গ্রাম: ঢোংরা, ইউনিয়ন-খানখানাবাদ, থানা- বাঁশখালি, জেলা: চট্টগ্রাম । ।
স্ত্রীসহ তিনি তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক । বিষয় সম্পত্তি বলতে শুধু মাত্র বসত ভিটা । তাঁর দুই পুত্র নুর মিয়া এবং জাবেদ মিয়া বেশ ভালো অবস্থানেই আছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে ঈদগাঁ’তে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেশ ভালো ভাবে বেঁচে আছে । কিন্তু জন্মদাতা এবং যার গর্ভে জন্ম সেই মা’কে তারা রাখে না, এমন কি ভালো মন্দ খোঁজ খবরও নেয় না । ছোট পুত্র ইউনুস মিয়া মারা গিয়েছে বেশ ক’বছর হলো ।
ইউনুস মিয়া’র মৃত্যু পর তার স্ত্রী দুই কন্যা সন্তানকে এমদাদ মিয়া কাছে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায় । সত্তর বছরের বৃদ্ধ এমদাদ মিয়া, তার একমাত্র স্ত্রী, বিবাহযোগ্য কন্যা এবং মৃত পুত্রের দুই কন্যাসন্তান মোট পাঁচ জন মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য বাঁশখালী ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে রিকসা চালাতে পাড়ি জামান । ইসহাকে’র পুলের পাশের রিকসা গ্যারেজ হতে প্রতিদিন সকাল ৯টায় রিক্সা নিয়ে বের হন, সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত ১০-১৫ টাকা’র অল্প অল্প ভাড়া মারেন । কারণ তিনি খুব বেশী শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন না সত্তর বছরের এই বৃদ্ধ শরীর নিয়ে কতটুকু পরিশ্রম করতে পারবেন ? এবং তার একটি চোখও ক্ষীণ দৃষ্টি’র সন্ধ্যার পর তিনি খুব ভালো দেখতে পারেন না । বিদ্যুৎ না থাকলে সন্ধ্যার পর অল্প আলোয় তিনি স্বাভাবিক কাজ কর্মও করতে পারেন না, এক চোখ দিয়ে দেখার মতো আলো না হলে তাকে বসেই থাকতে হয় পর্যাপ্ত আলোর জন্য ।
সত্তর বছরের এই ভঙ্গুর শরীর নিয়ে অমানবিক পরিশ্রমে সারাদিন রিকসা চালিয়ে খাওয়া দাওয়া করে প্রতিদিন জমা করেন কখনও ৭০ টাকা আবার কখনও ৮০ টাকা । এভাবে ৩০০ কিংবা ৫০০ টাকা জমা হলে সেগুলো পাঠিয়ে দেন গ্রামে, বাঁশখালি । আর গ্রামে তার স্ত্রী এবং বিবাহযোগ্য কন্যা মানুষের বাড়ি’তে কাজ করে কোন ভাবে ক্ষুধা মিটিয়ে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন । সত্তর বছরের বৃদ্ধ এমদাদ মিয়া ক্ষুধা নিবারণের জন্য কোথাও চুরি করছেন না, কারো পকেট মারছেন না, দুনীতি কিংবা কারো ক্ষতি করে তিনি পাঁচ জন মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন না । তিনি সত্তর বছরের শরীর নিয়ে পরিশ্রম করে, কষ্ট সাধ্য রিকসা চালিয়ে পাঁচ জন মানুষের মুখের খাবার জোগাড় করছেন ।
এই রকম একজন সংগ্রামী মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত বলে আমাদের মনুষ্য বিবেক আমাদের’কে বারবার নাড়া দিচ্ছে, সত্তর বছর বয়স্ক এমদাদ দাদু’র কাঁধে হাত রেখে বলতে চাইছি নবীন প্রজন্মের তার শিক্ষিত শক্ত সামর্থ্য নাতি নাতনীরা তার পাশে আছে ।
আমরা কিছু বিষয় সব সময় বিশ্বাস করি । বৃদ্ধ এমদাদ মিয়া, তার স্ত্রী, কন্যা ও নাতনীদের দায় দায়িত্ব নেওয়া’র কথা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের । বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং শিক্ষা দেওয়ার দায় দায়িত্ব নিবে কারণ এমদাদ মিয়া দীর্ঘ জীবন দশায় এখনও রাষ্ট্রকে অর্থ দিয়ে যাচ্ছে । অথচ বাংলাদেশ সেই অর্থ দিয়ে এই বৃদ্ধ বয়সে এমদাদ মিয়াকে কোন খাবার, চিকিৎসা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করছে না ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র করছে না দেখে আমরাও কি সত্তর বছরের বৃদ্ধ এমদাদ মিয়া’কে এই বয়সে রিকসা চালিয়ে পাঁচ জন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সংগ্রামে একা ফেলে দিবো ? কখনও না । আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরা অল্প অল্প সামর্থ্য নিয়ে সত্তর বছরের এমদাদ মিয়ার পাশে দাঁড়াই তাহলে এমদাদ মিয়াসহ তার স্ত্রী, কন্যা ও দুই নাতনির জীবন অনেক বেশী স্বাভাবিক হয়ে যাবে, অন্তত স্বাভাবিক খেয়ে পড়ে বাঁচতে তো পারবে । পশু’র জন্য মন কাঁদলে অবশ্যই মানুষের জন্য মানুষের মন কাঁদবে এবং এগিয়ে আসবে । আমরা জানি অবশ্যই আমরা আসবে, বাংলাদেশের মানুষ আসবে ।
সত্তর বছরের এমদাদ মিয়া’র জন্য আমরা কি করতে পারি ।
এই প্রশ্নের উত্তরে যদি বলেন, ওনার পরিবারের সব সদস্যদের জন্য একটি করে কীটনাশকযুক্ত মশারী দিয়ে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে ভবিষৎ সময় নিরাপদ করতে পারি । আবার কেউ কেউ বলতে পারেন, এক বছর সুদের বিনিময়ে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে ওনাকে স্বনির্ভর করা যেতে পারে । আবার কেউ কেউ পরামর্শ দিতে পারে, ওনাকে এক মাসের খাবার রসদ এবং কাপড় দিয়ে ওনাকে সহযোগিতা করতে পারি । আমরা সাময়িক কোন সমাধান করে এমদাদ মিয়া’কে নিয়ে শো ডাউন কিংবা ধান্ধাবাজী করতে চাই না আর বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর সাথে নির্লজ্জ ফটোসেশন করে বিরাট মহৎ মানুষ সাজতেও চাই না । এমদাদ মিয়া এবং তার স্ত্রী, কন্যা ও নাতনির নিশ্চিত স্থায়ী আয়ের উৎস করে দিতে চাই ।
যে আয় হতে পাঁচ জন মানুষ খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবে এবং তার দুই নাতনিকে স্কুলে পাঠাতে পারবে এবং আয় হতে সঞ্চয় করে তার বিবাহ যোগ্য কন্যাকে সমাজের সহযোগিতায় বিয়ে দিতে পারবে । এমন ব্যবস্থা আমরা করতে চাই । এমদাদ মিয়ার সমস্যা’র স্থায়ী সমাধান স্বরূপ এমন একটি কর্মসংস্থান করে দিতে চাই যে, সত্তর বছরের বৃদ্ধ এমদাদ মিয়া মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী, কন্যা এবং নাতনিরা সেই কর্মসংস্থানকে চলমান রাখতে পারবে । সেই লক্ষ্যে সত্তর বছরের বৃদ্ধ এমদাদ মিয়া’কে একটি ভ্যান যাতে করে তিনি স্থায়ী গ্রামের বাজারে পান সুপাড়ি, মুড়ি, কলা, ঘরে বানানো খাবার ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যসহ গৃহপালিত হাঁস মুরগীর ডিম বিক্রি করতে পারবেন এবং বাড়িতে পালনের জন্য কয়েক জোড়া হাঁস ও মুরগী ।
সত্তর বছরের এমদাদ মিয়ার স্বনির্ভরতা জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ : ২৫, ০০০ টাকা
কি কি কিনে দেওয়া হবে :
১. চার চাকা’র ভ্যান
২. প্রাথমিকভাবে বিক্রি করার মতো পান, সুপাড়ি, মুড়ি, কলা, ফল মূল ইত্যাদি ।
৩. ১০ জোড়া হাঁস ও মুরগি
এমদাদ মিয়ার জন্য প্রাপ্ত অর্থ :
এখনও শূন্য তবে সবার সহযোগিতায় ২৫, ০০০ টাকা হতে খুব বেশী দেরি হবে না ।
পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করছে :
১.পাবলিহা আলাভী (আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম) ফেইসবুক সমন্বয়ক
Email id:
ফেইসবুকে যোগাযোগ:https://www.facebook.com/alavi.pabliha
২.কায়সার (আইবিআইটি, চট্টগ্রাম) : ০১৯২২ ৫১৩৫৭১
৪.আসিফ খান (ইউআইটিএস, চট্টগ্রাম ) : ০১৬৭১ ৯১০৫০৪
৫.দীপু (ইউএসটিসি, চট্টগ্রাম ) : ০১৮১৩ ০০৫৯৫৪
৬.বাবর (সরকারী চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম ) : ০১৭৪৯ ৬০৪২১৫
৭.নুসরাত জাহান মিশু(আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম)
৮.প্রিন্স (ওয়েস্টার্ন মেরিনে চাকুরীরত) : ০১৭১১ ০১১৭৮১
আমরা কারা : আমাদের পরিচয় “বোইন ব্রাদার কমিউনিটি, চট্টগ্রাম” ।
আমাদের উদ্দেশ্য :
১. বাংলাদেশের সকল মানুষের দায় দায়িত্ব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কারণ জনমানুষ রাষ্ট্র’কে কড়ায় গণ্ডায় পয়সা দেয় । কিন্তু রাষ্ট্র সেই পয়সা নিয়েও জনমানুষের কোন দায় দায়িত্ব পালন করে না । তাই এর প্রতিরোধে আমাদের ভাষায় আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই ।
আমরা যদি বাংলাদেশের জনমানুষের পয়সা একত্রিত করে দরিদ্র মানুষকে স্বনির্ভর করতে পারি তাহলে রাষ্ট্র কেন পারবে না ১৬ কোটি মানুষের পয়সা নিয়ে তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে ?
২. আমরা মানুষ’কে সহানুভূতি, সহযোগিতা, দান কিংবা খয়রাত দিতে আসিনি । আমরা মানুষের দুঃখ, দুদর্শা এবং দারিদ্রতা নিয়ে ব্যবসা কিংবা নাম কামাতেও আসিনি । আমরা নবীন প্রজন্মকে বুঝাতে চাই যে, আমরা দশজন মিলে যদি একজন বিপদগ্রস্থ মানুষকে স্বাভাবিক জীবন দিতে পারি তাহলে সারা বাংলাদেশের নবীন প্রজন্মও পারবে । নবীন প্রজন্ম যদি বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে দারিদ্রতা বিক্রি করা এনজিও, বিভিন্ন সুশীল ধান্ধাবাজ সংগঠনগুলো সাধারণ মানুষের বিপদ নিয়ে ধান্ধাবাজীর সুযোগ পাবে না । নবীন প্রজন্মকে ভাবতে হবে এবং বুঝতে হবে তারা কিভাবে বিভিন্ন ধান্ধাবাজী’র সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে অজ্ঞতা এবং চিন্তা ভাবনা না করার কারণে ।
৩. সর্বোপরি নবীন প্রজন্মকে ভাবাতে চাই, যেকোন সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন । সাময়িক কোন সমাধান করে কোন সমস্যাকে নিমূল করা যায় না । বাংলাদেশের জনমানুষের সমস্যা নিমূল স্থায়ী সমাধানের দিকে চিন্তা করাকে আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে নিদের্শ করি ।
ফেইসবুকে আমাদের ঠিকানা : Click This Link
১৮ই ডিসেম্বর বর্মাছড়ি, খাগড়াছড়ি চট্টগ্রামে আমাদের উদ্যোগে শীত বস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে প্রতিবাদ :
* Click This Link
* Click This Link
বি : দ্র: এটা কোন এনজিও কিংবা ফাউন্ডেশন কিংবা সুশীল এলিট কতৃক পরিচালিত কার্যক্রম নয় সম্পূর্ণ ভাই ব্রাদার সিস্টারদের ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো কার্যক্রম ।
মূল লেখার লিংক : Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।