আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহারা মাতৃভূমির যাত্রা শুরু, কর্তাব্যক্তি শেখ ফাহিম

ঢাকা: বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করেছে ভারতের সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে চালু করেছে নতুন কোম্পানি ‘সাহারা মাতৃভূমি উন্নয়ন সংস্থা। ’ এ কোম্পানিটি এ দেশের টাউনশিপ, নতুন ঢাকা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, পর্যটন, তথ্য প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন করবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সম্ভাব্য স্পন্সরও হতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এ কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য।

তার বাবা শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বড় বোনের মেজ ছেলে। আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রূপসীবাংলা হোটেলে এ কোম্পানির মোড়ক উন্মোচিত হয় মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন ও ধ্রুপদী নৃত্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। কোম্পানির চেয়ারম্যান সুব্রত রায় সাহারা এ সময় শেখ ফজলে হোসেন ফাহিমের হাতে বিজনেস কার্ড তুলে দেন। এরপর শুরু হয় সুব্রত রায়ের বাঙালি দর্শনের বক্তৃতা। তিনি বর্ণনা করতে থাকেন কেনো তিনি বাংলাদেশে এলেন, কি টানে এলেন, কি দেখলেন এবং কি ভাবছেন।

সুব্রত রায় বক্তৃতা শুরুর আগে মাইকে বাজতে থাকে ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে...’ গানটি। পরে দেখানো হয় সাহারা ইন্ডিয়ার গত ৩২ বছরের কার্যক্রম। দেখানো হয় কোম্পানিটি কি করে ৭৮ সালে মাত্র ৪৩ ডলার দিয়ে শুরু করে এখন ভারতের সেরা ১০টি কোম্পানির মধ্যে স্থান পেয়েছে। বর্তমানে যার মোট সম্পত্তির পরিমান ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সুব্রত রায় বলেন, ‘আমার পূর্ব পুরুষ এই বাংলার।

আমার মায়ের বাড়ি বিক্রমপুরে। আমার মায়ের বর্তমান বয়স ৯৯ বছর। আমি তাকে নিয়ে আসতে পারিনি। বলে এসেছি, এখানে আসছি। তিনি শুনে খুশি হয়েছেন।

আমার এক মামা বলেছেন, বিক্রমপুর গিয়ে একটি গাছের পাতা নিয়ে যেতে। এই মাটির সঙ্গে রয়েছে আমার এবং আমার পরিবারের আবেগের সম্পর্ক। ভারতের বাইরে একমাত্র আমার নাড়ির টান বাংলাদেশের জন্য। আমি পূর্ব পুরুষের ভূমির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাই। চাই সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে’- বলতে থাকেন সুব্রত সাহারা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আসার সুযোগ আগে আমার হয়নি। তবে বাঙালি হিসেবে আমার নিজের ভীষণ গর্ব হতো, ভালো লাগতো। এবার বাংলাদেশে আসার সুযোগ হলো। ’ সুব্রত রায় বলেন, ‘এখানে এতো আদর, আপ্যায়ন, আন্তরিকতা, সম্মান, শ্রদ্ধা- সবকিছু আমাকে দারুন অভিভূত করেছে। এমন গ্রহণ করার অভ্যাস আমাদের ভারতীয়দের মধ্যে নেই।

আমি আমার সঙ্গীদের বলেছি, এইসব ভদ্রতাবোধ শিখতে আমাদের বাংলাদেশে আসতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘এখানকার সবাই বাংলায় কথা বলেন। মাতৃভাষা দিবস পালন হয়। আমরা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারি না। আপনারা পারেন।

কোন বিদেশি ভাষার ব্যবহার ছাড়াই পারেন। আপনাদের টপ টু বটম কারো মধ্যে কোন অহংবোধ দেখলাম না। সবার আবেগের উচ্ছ্বাসটা সম্মানের। বাঙালি হিসেবে সারাজীবনই সম্মানবোধ করেছি। এখানে এসে বাঙালির মর্মটা বুঝেছি।

’ বাংলাদেশের নতুন কোম্পানি সাহারা মাতৃভূমি উন্নয়ন কর্পোরেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফাহিম ভাই শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি আমাদের নিয়ে এসেছেন। তিনি এখানে কোম্পানির পরিচালক ও মেন্টর হিসেবে কাজ করবেন। ’ তিনি বলেন, ‘আজ কাজী নজরুলের জন্মদিন। কিন্তু তার সম্পর্কে বলার কোনো যোগ্যতা আমার নেই।

ছাত্র হিসেবে আমি খুবই মাঝারি মানের ছিলাম। তিন বার পরীক্ষায় ফেলও করেছি। ’ ঢাকায় বিনিয়োগ প্রস্তাব হিসেবে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ছয়মাস আগে আমার সঙ্গীরা ঢাকায় এসেছিলেন। তারা গিয়ে বললেন, বিমানবন্দর থেকে চার কিলোমিটার যেতে ২ ঘণ্টা লেগেছে। সেই সময়ই আমরা নতুন ঢাকা গড়ার পরিকল্পনা নেই।

একই সঙ্গে পুরনো ঢাকাকেও নতুন করে গড়ার প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠাই। ’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রথম কারণ হলো- এটি একটি প্রগতিশীল দেশ। অর্থনীতির গতি আছে এ অঞ্চলের সবার চেয়ে ভালো। ভারতসহ প্রতিবেশীরা যখন জিডিপি অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে- তখন বাংলাদেশ বছরের পর বছর এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আবেগ তো আছেই।

ভারতের পরে বাংলাদেশই আমার আবেগের স্থল। ’ সুব্রত রায় সাহারা বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে এক লাখ একর গ্রিন ফিল্ড চেয়েছি। যেখানে কিছু নেই। যেখান থেকে কাউকে সরাতে হবে না। এই জায়গার উন্নয়ন করব আমরা।

অবকাঠামো গড়ে তুলব আমরা। এখানে সরকারের এক কানাকড়িও বিনিয়োগ দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অনেক জমি উদ্ধার করা সম্ভব। ’ সাহারা বলেন, ‘ভারতে বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি জমি আছে।

আমরা সকলের জন্য বাড়ি বানাই। যেখানে ধনীদের জন্য আছে আম্বি সিটি, মধ্যবিত্তদের জন্য ১২৭টি টাউনশিপ ও নিম্নবিত্তদের জন্য বানাচ্ছি অ্যাফোর্টেবল সিটি। ভারতে বর্তমানে এ রকম ৪০০ সিটি আছে সাহারার। ’ ঢাকার নগরায়ন সম্পর্কে সুব্রত রায় সাহারা বলেন, ‘এখানে আমরা লাইফ স্টাইল তৈরি করব। এজন্য ১০০ থেকে ৩০০ একর পর্যন্ত আমাদের এক একটি প্রকল্প থাকবে।

এর নিচে নামা হবে না। আমারা কোয়ালিটিতে ছাড় দেবো না। সাহারার একটি মান আছে- যা ৩২ বছরে গড়ে উঠেছে। এতে কোন ছাড় নেই। ’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কোম্পানিগুলো আমাদের প্রতিদ্বন্দী নয়, সহযোগী।

আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আধাআধি বিনিয়োগ করতে চায়। আমি বলেছি দেখা যাবে। ’ সাহারা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কেবল ব্যবসা করার জন্য আসিনি।

আবেগের টানে এসেছি। ব্যবসাতো হবেই। ’ তিনি বলেন, ‘সবার কথা শুনেছি। এখানে কি কি খাতে বিনিয়োগ করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করেছি। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত করিনি।

’ সুব্রত রায় বলেন, ‘এখানে শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য সেবার অবস্থাও ভালো না। পর্যটনের দিকে দেশটির অনেক আগেই নজর দেওয়ার দরকার ছিল। সুন্দরবনের অদূরে নদীর ওপর একটি পর্যটন শহর গড়ে তুলতে চাই, যা হবে বিশ্বের ৫টি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রের একটি। সারা পৃথিবী এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়বে।

আইটি সিটি করার কথা ভাবছি। আমরা ভারতে একটি শিক্ষামূলক স্যাটেলাইট কিছুদিনের মধ্যেই মহাকাশে পাঠাবো। এখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করে কোয়ালিটি টিচাররা পাঠদান করবেন। এ স্যাটেলাইটে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজও যুক্ত হবে। ভাবছি বাংলাদেশকেও ওই স্যাটেলাইটে যোগ করা যায় কিনা।

’ তিনি বলেন, ‘আইটিতে বাঙালিরা ভালো করেন- কারণ বাঙালির মস্তিস্ক ভালো। ’ সূব্রত রায় বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। এখানকার মিডিয়াও একটা বোকামি করে ৮০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা বলছে। আসলে বিষয়টা হলো টাইমস অব ইন্ডিয়া আমার কাছে বাংলাদেশের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চায়, আমি তাদের বলেছিলাম ৮০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে। সেখানে এটাতো বিনিয়োগ নয়।

অথচ এখানকার মিডিয়া লিখল ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ। আমরা প্রাথমিকভাবে ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চাই। এরপর বিনিয়োগে আরো অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী আসতে থাকবে। আমরা দ্রুতগতিতে কাজ করতে চাই। কিন্তু সব কিছু এখন সরকার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে।

’ তিনি বলেন, ‘এখানে জমির দাম অত্যন্ত বেশি। এ ক্ষেত্রে হাউজিং লোন সহজ করতে হবে। ভারতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম সুদে লোন দেওয়া হয়। এজন্য সেখানে ৩০ বছর বয়সের মানুষও বাড়ি করতে পারে। বাড়ির সঙ্গে মানুষের আবেগের সম্পর্ক রয়েছে।

’ সুব্রত রায় বলেন, ‘আমরা মানুষের আবেগের কথা আবেগ দিয়ে ভাবি। আবেগ দিয়ে উন্নয়নের কথা ভাবি। ভারতে কালো টাকা হাউজিংয়ে আসার সুযোগ থাকায় এখন আর কালো টাকা নেই। এখানকার অর্থনীতি শক্ত করতেও তাই করা উচিত। ’ তিনি বলেন, ‘যখন আপনি কারো কাছে বাড়ি বিক্রি করবেন, তখন তার কাছে সব সুবিধা তুলে ধরবেন।

’ তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল কাজ বুঝি। কাজ করতে জানি। আর বুঝি কোয়ালিটি। আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমরা বুঝি ঢাকা উত্তর-দক্ষিণে বড় হয়েছে।

এটাকে পূর্ব -পশ্চিমেও বড় করা দরকার। ’ সাহারা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৩২ বছরে ভারতে এ কোম্পানির নামে কোনো দুর্নাম নেই। শুধু খুঁত ধরতে চাইলে আমরা কাজ করার আগ্রহ হারাবো। আমাদের আবেগকে থামিয়ে দেবেন না। ’ তিনি বলেন, ‘এখানে ব্যবহৃত সব কাঁচামাল এদেশ থেকেই সংগ্রহ করা হবে।

কেবলমাত্র ইলেক্ট্রিক যে ইক্যুইপমেন্ট এখানে হয় না , তা বাইরের থেকে আনা হবে। ’ সাহারার শহর তৈরির কাজে অংশ নেবে বিশ্বখ্যাত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান টার্নার গ্রুপ। এছাড়া লোকাল কোম্পানিও কাজ করতে পারে। সুব্রত সাহারা বলেন, বেশিরভাগ পরিবেশবাদী শুধু শুধুই ঝামেলা করেন, তারা সমাধান দেন না। শুধু ঝগড়া করেন।

তাই সুন্দরবনে পর্যটন সিটিতে তারা বাধা দিলেও সমস্যা হবে না। কারণ তারা অনেকেই তো দোকান খুলে বসে আছেন। ভারতেও তারা অনেক সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। ’ ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সম্ভাব্য টাইটেল স্পন্সর হতে যাচ্ছে সাহারা মাতৃভূমি’, বললেন সুব্রত রায় সাহারা। View this link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.