কী নিয়ে লিখবো বুঝতে পারছি না। পত্র-পত্রিকা দেখে তো মনে হচ্ছে এখন গালিগালাজের সিজন চলছে। দারুণ রকমের অশ্লীল কিছু গালি সাপ্লাই দিতে পারলে, পাঠক না হোক সাংসদরা সেটা লুফে নেবে। আর যদি সেই সাংসদ, গালির সরবরাহক হিসেবে হেলাল হাফিজের মতো আমার নাম কিংবা এ পত্রিকার নামটা উচ্চারণ করেন তবে তো কথাই নেই, রাতারাতি স্টার হয়ে যাব। পত্রিকার কাটতিও বেড়ে যাবে।
বড় আশা নিয়ে গেলাম একজন গালিবিশারদের কাছে। বেশ কিছু গালির নমুনা দেখালেন। বেশিরভাগই, হয় মা এবং বোনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা ব্যক্ত করা কথাবার্তা। আর নয়তো তাদের এক মহৎ পেশার কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা। এগুলোই আছে শীর্ষ দশে।
এছাড়াও আছে কিছু পশু-প্রাণীর নাম কিংবা সেসব পশুর সন্তান বলা। বেশ হƒষ্টচিত্তে ফেরত এলাম। কালকে একটা লেখা লিখবো ‘শীর্ষ গালিগালাজ সমগ্র’। এর থেকে একটা গালিও যদি কোনো সাংসদের মনে ধরে, তবে আর আমাকে পায় কে?
লেখার আগে পুনরায় আরেকবার চোখ বুলালাম পত্রিকার পাতায়। ইতোমধ্যে কেউ লিখে দেয়নি তো? চোখ কপালে উঠলো।
অন্য কেউ আমার আইডিয়া চুরি করেনি সত্য, তবে ‘গালিগালাজে’ নতুনত্বের আগমন ঘটেছে। একেবারে নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। আগে ছিল মা এবং বোনকে নিয়ে গালিগালাজ। এখন শুরু হয়েছে পুত্র-কন্যাকে নিয়ে। তাও আবার অবৈধ সম্পর্ক তৈরির ইচ্ছা সম্বলিত না।
রীতিমত বৈধ, বিবাহিত সম্পর্ক নিয়ে। যুক্ত হয়েছে শুধু ‘ধর্ম’। আইডিয়াটা বেশ ইউনিক, যা বলা হচ্ছে সবই সত্য কিন্তু গালির ঢংয়ে। ‘দারুণ হিট’ ফর্মুলা।
শুরুটা সংসদ নেত্রী করেছেন।
নিজের পুত্রের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে নাকি অনেকে রটনা তৈরির চেষ্টা করছেন। তারই উত্তর দিতে গিয়ে তিনি জানালেন তার পুত্র ইহুদী নয় খ্রিস্টান বিয়ে করেছে। কথা প্রসঙ্গে কেন যেন তিনি ড. কামাল হোসেনের কন্যার বিয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। এ মুহূর্তে তিনি বিরোধী শিবিরে যোগ দিতে পারেন চিন্তা করে হয়তো। বোঝানোর চেষ্টা করলেন খ্রিস্টান বিয়ে খুব একটা বড় গালি না, বরং বড় গালি হচ্ছে ইহুদী বিয়ে করা।
যা করেছেন ড. কামাল হোসেনের কন্যা। ব্যাখ্যা দিলেনÑ ‘আহলে কিতাব’ অর্থাৎ আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে এমন সব ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বিয়ে সম্পর্কে এই বক্তব্য আছে। সেক্ষেত্রে ‘ইহুদী’ ও ‘আহলে কিতাব’ তা বোধহয় তার মনে ছিল না।
তবে এ ফর্মুলা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এখন গালিগালাজ দিতে চাইলে বলা যেতে পারে, ‘তুই ইহুদীর বর’ কিংবা ‘তুই হিন্দুর বউ’ ইত্যাদি।
গল্পের এক্সটেনশানও করা যেতে পারে। উত্তর পুরুষ কিংবা পূর্ব পুরুষ যেদিকে যেতে মন চায়। ‘তোর দাদা ছিল বৌদ্ধ’ কিংবা ‘তোর নাতনী অগ্নি উপাসককে বিয়ে করবে’। কাজটা আরও কিছুদিন পরে থেকে শুরু হবে ভেবেছিলাম। ভুল ভাঙতে সময় লাগলো না।
‘খালেদা জিয়া’কে নিয়ে এমন গল্প শুরু করে দিলেন জনৈক সাংসদ। এবং আরও আনন্দের ব্যাপার সেকাজে পুরো সরকারি দল টেবিলচাপড়ে তাকে উৎসাহও দিলেন। পত্রিকায় যে ব্যাপারটা ফলাও করে ছাপা হবে, তা কি আর অজানা? ঠিক তাই হলো। সাংসদ হিট, গালি হিট, পত্রিকাও হিট।
বিরোধী নেত্রী যদিও রাশ টানবার একটা চেষ্টা নিয়েছেন, গালি দিতে বারণ করেছেন, তবে বোঝা যাচ্ছে না কতটা কার্যকরী হবে।
নব্বই দিনের ঝামেলা যেহেতু মিটে গেছে ফলে যেকোনো সময় আবার হয়তো ‘সংসদ বর্জন’ আসছে। সেক্ষেত্রে গালিগালাজে ভাটা পড়বে কিনা সেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি। এতো কষ্ট করে জোগাড় করা আমার ‘গালি সমগ্র’র কোনো ব্যবহার না হলে, বেজায় কষ্ট পাবো। আওয়ামী শিবিরে এ মুহূর্তে যেমন অন্তর্কলহের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, আমি বোধ হয় এখনও আশাবাদী হতে পারি। বিরোধী দল না থাকলে কি হবে, সরকারি দল নিজেদের ভেতর দুই গ্র“প করে, নতুন শুরু হওয়া এ ‘ট্র্যাডিশান’ বজায় রাখবে।
আমাকে হয়তো একেবারে নিরাশ করবে না।
হেফাজত গ্র“প এদিক দিয়ে বেশ গরিব। তাদের ভাঁড়ারে কেবল একটাই গালিÑ ‘নাস্তিক’। কখনও কখনও একটু ব্যাখ্যা করে বোঝায়, ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ কিংবা ‘ইসলামকে কটাক্ষকারী’। ব্যাস ওই পর্যন্ত।
ইদানীং শুরু হয়েছে অভিশাপ দেওয়ার কালচার। ‘আল্লাহ্র গজব’ কিংবা ‘আল্লাহ্র বিচার’Ñ এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী পরাজয়কে ‘সেলিব্রেট’ করছে। গায়ের ঝাল মেটাচ্ছে। ‘ট্র্যাডিশান’টা মন্দ না। অন্তত জ্বালাও-পোড়াও ছেড়ে, মুখের কথায় ফেরত এসেছে।
বলা হয়েছিল অধিবেশনটা ‘বাজেট অধিবেশন’। সেখানে বাজেট নিয়ে আলোচনার কারো তেমন ইচ্ছে আছে বলে মনে হচ্ছে না। আমাদেরও তেমন আপত্তি নেই। বাজেট আলোচনার চেয়ে বরং এ ‘গালি শো’ ভালোই লাগছে। ‘কে জেতে’ এমন একটা উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করে আছি।
দুপক্ষই হয়তো আগামী নির্বাচনে কিছু বিশিষ্ট গালিবাজকে নমিনেশান দেবেন। নমিনেশান পেপারে, নিজের যোগ্যতার ঘরে তারা লিখবেন, তিনি কবে, কাকে, কত জঘন্য গালি দিয়ে কুপোকাত করেছেন।
এ গালিগালাজের মৌসুমে সুযোগ বুঝে দুদক প্রধানও নেমে পড়েছেন। তিনি কাকে গালি দেবেন বুঝতে না পেয়ে নিজেকেই একটা গালি দিয়েছেন। ‘টুথলেস টাইগার’।
কিছু আলোচনা হলো ঠিকই তবে বেশ দায়সারা গোছের। আসলে আমাদের ‘টেস্ট’ এতোটাই তীক্ষè হয়ে গেছে যে, এসব গালিতে আজকাল মন ভরে না। একে তো কথাটায় নতুনত্ব নেই তার ওপর কিছু যৌনতা কিংবা ধর্মের ব্যবহার না থাকলে যেকোনো গালিই আজকাল কেমন যেন পানসে লাগে। ‘যৌনাঙ্গবিহীন বাঘ’ কিংবা ‘ইহুদী বাঘ’Ñ এমন বললে হয়তো মার্কেট পেত।
কেন যেন মনে হচ্ছে এ গালিগালাজ আমরা বেশ ‘এনজয়’ করছি।
রাজনীতিবিদদের কাছে কোনো কিছুর প্রত্যাশা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। সেটা বোধহয় ফেরত আসতে শুরু করেছে। কিছু না হোক তারা আমাদের মনোরঞ্জনের দিকে মনোযোগী হয়েছেন। তাদের এ নতুন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি অচিরেই তারা আরও উন্নত গালিগালাজ নিয়ে হাজির হবেন।
‘শীর্ষ দশ’ গালির খোঁজে আর কাউকে কোনো গালিবিশারদের কাছে যেতে হবে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।