অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার : বৈধ ও সুশৃংখলভাবে যৌন ক্ষুধা নিবারণ, মানব বংশধারা রক্ষা, বৃদ্ধকালীন নিরাপত্তা লাভের জন্য ইসলামে বৈবাহিক জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। ইমাম আবু হানিফা (রঃ) সহ বিজ্ঞ ইমামদের মতে বিবাহে আবদ্ধ না হয়ে নির্জনে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়ার চেয়ে বৈবাহিক জীবন যাপন অর্থাৎ সংসারে আবদ্ধ থেকে আল্লাহর ইবাদত করা উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর একটি দল নিজেদের খাসি করে ফেলে বিবাহ না করে আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি চাইলে রাসূল (সঃ) তাদের নিষেধ করেন এবং বলেছেন, আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থেকে আল্লাহর ইবাদাত করছি। বৈরাগ্য ইসলামে নেই। আর্থিক শারীরিক সক্ষমতাসহ যদি ব্যাভিচারে লিপ্তের আশংকা থাকে তার উপর বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
নবী (সঃ) বলেছেন, বিবাহ আমার সুন্নাত যে আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ থাকবে সে আমার দলভুক্ত নয়।
বিবাহ সংগঠনের জন্য কতিপয় আবশ্যকীয় বিষয় রয়েছে। মুসলমান নারী বা পুরুষের জন্য মূর্তিপূজক অগ্নিপূজক, চন্দ্র-সূর্য পূজারী, দেব-দেবীর পূজারী কোন মুশরিক বা কাফিরকে বিবাহ করা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২২১নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন- ‘‘তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। মুসলিম দাসী মুশরিক নারী থেকে উত্তম যদিও মুশরিক নারীর রূপ সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে।
মুসলিম নারী কোন মুশরিক পুরুষের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হবে না সে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে। মুসলিম দাস মুশরিক থেকে উত্তম যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। ’’ অপরদিকে মুসলিম কোন নারীর জন্য আহলে কিতাব কোন পুরুষকে বিবাহ বৈধ নয়। তাফসীরে মারেফুল কোরআনে ওয়াল মুহছানাতু মিনাল্লাজিনা ঊতুল কিতাব এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে এ যুগের আহলে কিতাবগণ উক্ত আয়াতের আওতায় পড়ে না বিধায় মুসলিম পুরুষের জন্যও আহলে কিতাব নারীকে বিবাহ বৈধ নয়। বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য জ্ঞান সম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম দু'জন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দু'জন নারী স্বাক্ষী হিসেবে বর কনের সরাসরি প্রস্তাব বা উকিলের মাধ্যমে প্রদত্ত প্রস্তাব সমর্থন একসাথে স্বাক্ষীগণ শ্রবণ করবে।
পাত্র-পাত্রী পরস্পর মুহরিম অর্থাৎ যাদেরকে বিবাহ করা হারাম তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। পাত্র পাত্রীর কতিপয় দিক সমতা থাকতে হবে, যেমন বংশীয় সমতা (আরবের জন্য প্রযোজ্য), পেশাগত সমতা, ইসলাম গ্রহণের দিক থেকে সমতা যেমন- যার পিতা বা সে নিজে ইসলাম গ্রহণ করেছে, সে ব্যক্তির সঙ্গে ঐ ব্যক্তির সমতা হবে না যার পিতার পূর্ব পুরুষ থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছে। স্ত্রীর ভরণ পোষণ ও বাসস্থান প্রদানে সক্ষম ব্যক্তি বিশাল ধনীর মেয়ের সমতা হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আল্লাহ ভীরুতা। তাই দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী পাপাচারে লিপ্ত পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সমতা হবে না।
বর কনে ও অভিভাবক সম্মত থাকলে সমতার ক্ষেত্রে কিছুটা কম বেশি হলে বিবাহ অবৈধ হবে না। তবে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অবশ্যই মোহরানা প্রদান করতে হবে।
বিবাহের পর যখন সন্তান জন্ম নিবে তখন পিতা-মাতার উপর কিছু দায়িত্ব ইসলাম নির্ধারণ করে দেয়। যেমন সন্তান জন্মের সাথে সাথে ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন পরিষ্কার করে তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামাত প্রদানের মাধ্যমে তাওহীদের বাণী তাকে শুনাতে হবে। সন্তানের সুন্দর নাম রাখতে হবে।
সাত দিনের সময় মাথার চুল কামিয়ে সে পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য ছদকা করে দিবে। সন্তানের আকিকা দিবে। আকিকা ইত্যাদি সুন্নাত। স্ত্রী-সন্তানের ভরণ পোষন গৃহকর্তার উপর অবশ্য কর্তব্য। এ ব্যয়ের জন্য সে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষাদান করা ফরয। সন্তান কথা বলা শুরু করলে, তখন থেকে তাকে নামাজের রীতি নিয়ম শিখিয়ে সাত বছরের সময় নামাজের নির্দেশ দিবে। দশ বছরের সময় কড়াকড়ি আরোপ করে হলেও তাকে নামাজে অভ্যস্ত করে তুলবে। ইসলামী অন্যান্য বিধি-বিধান পালনে অভ্যাসও তার মধ্যে গড়ে তুলবে। সাবালক হওয়ার পর ইসলামী বিধিবিধান ত্যাগ করলে এ জন্যে সে গুণাহগার হবে।
পরকালে এ জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করার ধারণা দিতে হবে। উপযুক্ত বয়স হলেই তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধের ব্যবস্থা করবে।
বর্তমানে সরকার সম্প্রতি বিয়েতে ধর্মীয় পরিচয় বাদ দিয়ে অর্থাৎ পাত্র-পাত্রী প্রত্যেকে নিজ ধর্মে থেকে বিবাহে আবদ্ধ হওয়া বৈধ করে আইন পাস করেছে। সন্তান আঠার বছর বয়স হলে তার ইচ্ছানুযায়ী পিতার ধর্ম বা মাতার ধর্ম গ্রহণ করবে বা ধর্মহীন থাকবে। আইনমন্ত্রীর এপিএস আকছির এম চৌধুরীকে এ জাতীয় বিয়ে রেজিস্ট্রি করার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে।
আবেদন পেলে প্রতিজেলায় রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। অপরদিকে কোন ব্যক্তির পুত্র সন্তান না থেকে শুধু কন্যা থাকলে সব সম্পত্তি কন্যা পাবে বলে আইন করেছে। উল্লেখিত আইন দু'টি সরাসরি কোরআন বিরোধী, ইসলামে মুশরিক মুসলিম বিয়ে বৈধ না হওয়ায় তাদের মধ্যে মিলন বৈধ হবে না। সন্তান জন্ম নিলে তা জারজ হিসেবে গণ্য হবে। নাবালক হওয়া থেকে আঠার বছর পর্যন্ত নামাজ রোজা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত বাদ যাওয়ায় সন্তান গুণাহগার হবে।
আঠার বছর পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে তার পক্ষে ধর্ম পালন সম্ভব হবে না সে স্বাভাবিকভাবে নাস্তিকে পরিণত হবে। বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কথাটা বাদ দিয়েছে। এরপর নারী-পুরুষ সম্পত্তিতে সমান ভাগ পাওয়ার উদ্যোগ নেয়। তখন ওলামা-মাশায়েখদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করলে ইসলাম বিরোধী কোন আইন করা হবে না মর্মে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তারপরও বিশেষ বিবাহ আইন এবং কন্যা সন্তানের সম্পূর্ণ সম্পত্তি প্রাপ্তির আইন করা হল।
গ্রাম্য মাতববরদের সালিশকে আলেমদের ফতোয়া বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, নাটক সিনেমায় আলেমদের কুরুচিপূর্ণ ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে মানুষের মন থেকে ইসলাম ও আলেমদের ঘৃণিত করার চেষ্টা চলছে। এ কারণে আলেমগণ প্রতিবাদ করছে। এ প্রতিবাদ কোন রাজনৈতিক কারণে নয় বরং সম্পূর্ণ ঈমানী চেতনা দীপ্ত। যুগে যুগেই আলেমগণ এ ধরনের প্রতিবাদ করে আসছেন। আলেমদের এ প্রতিবাদ তাদের দায়িত্ব ও দ্বীনী কর্তব্য।
আশা করি আলেমদের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে সরকার ইসলাম বিরোধী আইনগুলো প্রত্যাহার করে নিবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।