মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!
শিক্ষকের লাশ
----- ড: রমিত আজাদ
নিকষ কালো অন্ধকারে সংবাদ ভেসে এলো,
মৃত্তিকা আর মহাকালের অংশ হয়ে গিয়েছেন একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক।
সেই দুটো পুরনো পান্জাবী অদল-বদল করে পড়ে,
যিনি প্রতিদিন স্কুলে আসতেন,
মধুর স্নেহে, পরম মমতায় যিনি
কচি-কচি মুখগুলোকে শেখাতেন অ আ ক খ,
'মোদের গর্ব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা',
পড়াতে পড়াতে যার চোখে ভেসে উঠত মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি,
খালি পায়ে, পুরনো লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেন্জী গায়ে দিয়ে,
কি দোর্দন্ড প্রতাপে হাতের অস্ত্রটি চালিয়ে ঘায়েল করতেন
ভারী বুট আর জ্বলজ্বলে ইউনিফর্ম পরিহিত সুপ্রশিক্ষিত শত্রুসেনাকে।
এক একটি সফল অপারেশনের পর কেমন উল্লাসে চিৎকার করে বলতেন,
"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি"।
'দেশ মানে জনতা, দেশ মানে মানুষ, ঐ ছোট্ট শিশুগুলো,
ওদের যখন শিখিয়ে দেব, পড়িয়ে দেব,
তখনই তো গড়ে উঠবে সুশিক্ষিত জাতি!'
এমনই তো ভাবনা ছিল তার,
তাই নিজের হাতে স্বাধীন করা দেশে তিনি শিক্ষক হলেন।
শিশুরা গর্বিত হলো বীরের সান্নিধ্য পেয়ে,
বীরের শিষ্য, বীরই তো হবে।
সেই বীরেরা আজ কোথায় আছে জানিনা,
কখনো কখনো মনে হয়,
আমরা সবাই হয়ে উঠেছি এক একটি ফ্রাংকেনস্টাইন।
রাত্রির দীর্ঘ সাধনা শেষে এখনো আসেনি ভোর,
আর আমাদের দানবীয় নিষ্পেষণে তিনি হারিয়ে গেলেন,
যেমন করে প্রতিদিন হারিয়ে যায় নাম-কূলহীন কীট-পতঙ্গেরা।
আমাদের লজ্জ্বা নেই, বোধ নেই, বিবেক নেই,
তাই আমাদের শিক্ষকদের
অর্থ নেই, সম্মান নেই, জীবনের কোন মূল্য নেই,
নেই নেই নেই, এই এতো নেই এর ভীড়ে, তিনিও আর নেই,
বিলুপ্ত বিবেক স্থান দিল না তাকে বিপন্ন সমাজের মাঝে,
কেবল যেই মাটিকে পবিত্র মনে করে
তিনি একদিন তাকে রক্ষা করেছিলেন,
সেই মাটি আজ পরম যত্নে তাকে ঠাঁই দিয়েছে আপন বুকে।
(আজিজুর রহমান। প্রধান শিক্ষক, চর বাটিয়ানি রেজিস্টার্ড
বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামালপুর।
১৫ই মে, ২০১২ তারিখে শিক্ষকদের বেঁচে থাকার অধিকার
নিয়ে দাবি জানাতে গেলে শাহবাগে পুলিশী হামলায় আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে রাতে বাড়ি নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
১৯৭১ সালে এই দেশ স্বাধীন করতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন! স্যার ক্ষমা করবেন।
আমরা মানুষ হতে পারিনি। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।