আজ (১৬-৫-২০১২) দুপুরের পর টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে: মির্জা ফখরুলসহ ১৮ দলের ৩৪ নেতার জামিন নামঞ্জুর; কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ।
আমার অফিসের একজন কলিগ, আওয়ামী সমর্থক, ব্রেকিং নিউজ দেখে খুব হতাশ গলায় বললেন, আওয়ামীলীগ এইটা কী করতেছে? হাসিনারে তো এখনই থামানো দরকার, তা নাহলে দেশের অবস্থাতো বারোটা বাজিয়ে ফেলবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কারাগারে নেওয়ার পর, তখনও বিএনপি দেশব্যাপী হরতাল ঘোষণা করেনি। উত্তর বঙ্গের চার জেলায় হরতাল ঘোষিত হয়েছে মাত্র। একজন কলিগ, কোন দল সমর্থন করেন না, খুব বিপন্ন এবং ক্ষ্যাপাটে গলায় বললেন, সারা দেশব্যাপী হরতাল ঘোষণা করা উচিত; এখনও কেন ঘোষণা করতেছে না? অন্য এক কলিগ বলল, আরে হরতাল দেওয়া ঠিক না।
এতজন নেতাকে একসাথে ধরেছে; বিএনপি আর হরতাল দেওয়ার সাহস পাবে না। আগেরজন জোর গলায় বললেন, লিখে রাখেন এক ঘন্টার মধ্যে দেশব্যাপী হরতালের ঘোষণা আসবে; আসবেই।
রিক্সায় বাসায় ফিরছি। রিক্সাওয়ালা বললেন, স্যার আওয়ামীলীগের যদি দ্যাশের প্রতি মায়া থাকতো; তবে হ্যারা এই সব কাজ করতো না। হিসাব অনুযায়ী বিএনপি অনেক নরম সরম, দেশের কথা এট্টু হইলেও ভাবে।
সব মিলিয়ে আশে পাশের মানুষের মধ্যে কেমন একটা বিপন্ন ভাব লক্ষ্য করছি। এই সব মানুষ ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠছেন। দেশের এমন অবস্থা তারা কল্পনাও করেননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী দলের এতজন প্রথম সারির নেতাকে এক সাথে গ্রেফতারের ঘটনা আর ঘটেনি। আজকের এত বদলে যাওয়া সময়ে এমন ঘটনা আমাদের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের একেবারে ভেতরটা কাঁপিয়ে দিয়েছে।
এখন বিস্ফোরণের অপেক্ষা। একেতো চারিদিকে সীমাহীন নৈরাজ্য - দুর্নীতি, লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, গুম, খুন, সরকারি সন্ত্রাস, দলীয়করণ, বিপন্ন সার্বভৌমত্ব, বাকশালের কালো থাবা - সব মিলিয়ে এত বাজে সময় খুব কমই এসেছে আমাদের জাতীয় জীবনে।
বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনাবাহিনী এবং বিডিআরের কোমর ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে; শেয়ার বাজার লুটের মাধ্যমে মধ্যবিত্তদের জমানো টাকা প্রতারণা করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে; বিচার বিভাগকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করে ন্যায় বিচারের সম্ভাবনা নষ্ট করা হয়েছে। কুইক রেন্টালের নামে দেশের শক্তি সরবরাহ ব্যবস্থাকে একবারে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। একটি অপকর্ম ঢাকার জন্য, পাবলিকের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য ক্রমাগত একের পর এক অপকর্ম করা হচ্ছে।
বিদেশী দখলদার ছাড়া কোন দেশপ্রেমী সরকার দেশের মানুষের সাথে এমনটি করতে পারে না।
অলিতে গলিতে যেখানে মিছিল বা শ্লোগান সেখানেই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী (আসলে গুণ্ডাবাহিনী) বেপরোয়াভাবে লাঠিপেটা করছে মিছিলকারীদের। গতরাতে পুলিশের লাঠির আঘাতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শহীদ হয়েছেন। আমাদের মধ্যে মত বিরোধ আছে, গণতান্ত্রিক সমাজে তা থাকবেই। তাই বলে এমন অযোগ্য সরকার, জনগণের সমস্যা সমাধানের দিকে মনোযোগ না দিয়ে প্রতিবাদকারীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তা দেখে শংকিত না হয়ে পারা যায় না।
রাত দশটার এটিএন বাংলার খবর দেখছিলাম। আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের উপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা দেখে আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আব্বু এভাবে ওদেরকে মারছে কেন? আমি উত্তর দেই না; আসলে দিতে পারি না। ছেলে বারবার একই প্রশ্ন করে। তার চোখে মুখে বিস্ময় এবং আতংক। আমার মাথা হেঁট হয়ে আসে; অবোধ আক্রোশে আমি কথা হারিয়ে ফেলি।
আমি চ্যানেল বদলে দেই। আপাত নিরীহ এই আমিও ধীরে ধীরে প্রতিবাদী হয়ে উঠি। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আমাদের চোখের সামনে নিকষ অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। এই জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকারকে যে কোন মূল্যে থামাতে হবে। দলমত নির্বিশেষে এ এক গণদাবী আজ।
আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হই; এই জানোয়ারদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে বাঁচাই।
(আমাকে দল অন্ধ ভেবে গালি দেবেন না। আজ আওয়ামীলীগের জায়গায় বিএনপি এমনটা করলেও আমি একই লেখা লিখতাম। আমি দেশের পক্ষে, আমি রাজনীতি সচেতন; কোন দলের প্রতি অন্ধ নই। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।