লাগাতর হরতাল আর জ্বালাও পোড়াও পর মানুষ যখন দিশেহারা তখনই সরকার কঠোর হলো। বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা করে দিল। আর অমনি কুপোকাত। বোরকা টেকনিকের পর এবার নমনীয়। তাই মানুষ এখন স্বস্তিতে রয়েছে।
এখনই সরকারবিরোধী লাগাতার বা কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ অন্তত ছয়টি কারণে আন্দোলন আপাতত শিথিল রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। তবে আগামী ১০ জুনের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে সরকারকে বেঁধে দেয়া আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর আন্দোলনের কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে আরও কিছুদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের। এই ইস্যুতে মে মাসের শেষদিকে পাঁচদিন হরতাল শেষে মাঝখানে বিরতি দিয়ে আবারও হরতাল কর্মসূচিতে যাবার আগাম সিদ্ধান্ত ঠিক করে রাখা হয়।
এমনকি হরতাল শেষে অবরোধ ও অনশনসহ আরও বড় কর্মসূচি দেয়ারও চিন্তা-ভাবনা ছিল। কিন্তু হরতালে সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলের শীর্ষ নেতাদের জড়ানোর কারণে থমকে দাঁড়ায় বিএনপি। মামলায় বিএনপি ও জোট নেতাদের জামিন দেয়া এবং বিচারিক আদালতে তাদের আত্মসমর্পণ প্রশ্নে সৃষ্ট পরিস্থিতি দলটিকে আরও চিন্তিত করে তোলে।
বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, ইলিয়াস আলীর ইস্যুতে আরও হরতাল বা এর চেয়ে বড় কর্মসূচি দেয়া হলে বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপিসহ ১৮ দলের অন্য শীর্ষ নেতাদেরও মামলায় আটকে ফেলা হতে পারে। এভাবে একের পর এক মামলায় শুধু বিএনপিকেই নয়, ১৮ দলীয় জোটকেই নেতৃত্বহারা করে ফেলতে পারে সরকার বা প্রশাসন।
এই অবস্থায় আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার মতো লোকও থাকবে না। এই আশঙ্কায় কঠোর কর্মসূচির পথ থেকে আপাতত সরে এসেছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এসব মামলার নেপথ্যে সরকারের বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট ভাঙ্গারও ষড়যন্ত্র রয়েছে। সরকার মনে করছে, মামলা দিয়ে বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে আটক রাখতে পারলে বিরোধী দল আর আন্দোলন করতে পারবে না। এমনকি আগামী নির্বাচনে বিএনপি বা জোটের উল্লেখযোগ্য নেতারা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য হন সেজন্য দ্রুত বিচার আইনে তাদের সাজা দেয়ারও ষড়যন্ত্র করছে সরকার।
ফখরুলের দাবি, সরকারের এসব ষড়যন্ত্র সফল হবে না। এভাবে মামলা দিয়ে ও হয়রানি করে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে না।
সূত্রমতে, বিএনপি আশঙ্কা করছে এখনই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করা হলে বিরোধী জোটের যেসব নেতার আগামী নির্বাচনে জয়লাভের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে তাদের বেশিরভাগকেই সরকার মামলার জটে আটকে দিতে পারে। এর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের আন্দোলনকে দুর্বল করা, বিএনপি ও জোটে ভাঙ্গন সৃষ্টির চেষ্টা করা এবং আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না রাখার কৌশল নিতে পারে সরকার। এখনই কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা থেকে বিএনপির সরে আসার এটিও একটি কারণ বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।
বিএনপির মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি উপেক্ষা করতে, সরকার বিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন সংগঠিত হতে না দিতে এবং বিরোধী জোটকে অপ্রস্তুত রেখে আগাম নির্বাচনের আয়োজন করার কৌশল নিলেও নিতে পারে ক্ষমতাসীন দল। যেন সেই ধরনের কোনো ক্ষেত্র প্রস্তুত না হয় সেজন্যও এখনই লাগাতার আন্দোলনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপি ও ১৮ দল।
এদিকে, হরতালের সময় বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাসমূহকে ভিন্ন দৃষ্টিতেও দেখছেন বিএনপির হাই কমান্ড। তাদের সন্দেহ, বিরোধী দলের কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে অন্য কোনো উত্সাহী পক্ষও এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। কোনো সুযোগ সন্ধানী মহল যেন এই ধরনের সুযোগ নিয়ে এখনই সামগ্রিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে সে লক্ষেও লাগাতার বা কঠোর আন্দোলনে এখনই না যাবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি ও ১৮ দল নেতারা।
সুত্র:
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।