আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরাপদ আশ্রয়্স্থল ও তুলনাহীন এক সম্পর্কের নাম মাঃ বিশ্ব মা দিবসে সকল মায়ের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

সামুতে অর্থহীন অশুদ্ধ বাংলা ও বাংলিশ শব্দ পরিহার করি আজ ১৩ মে, সমগ্র বিশ্বব্যাপী উদ্যযাপিত হবে বিশ্ব ‘মা দিবস। ’ এই দিনে পৃথিবীর সব সন্তান তার মা'কে গভীরভাবে স্মরণ করবে; সঙ্গ দেবে। যে যে অবস্থানেই থাকুক মায়ের অবস্থান আর অস্তিত্বের প্রতি ব্যাকুল শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এই শ্রদ্ধা নিবেদনে থাকবে একেক দেশের সংস্কৃতি একেক রকম কৃষ্টি আর ধরন। বাঙালী মায়েদের জন্যও থাকবে তাদের প্রিয় সন্তানের অনিঃশেষ অন্তর নিংড়ানো ভালবাসা।

আনন্দ-আবেগ-ভালবাসায় বিশ্ব মা দিবসটি পৃথিবীর সব দেশেই সিক্ত হবে আর সন্তানের শ্রদ্ধায় ভরে উঠবে বন্ধুর মতো মায়ের প্রসন্ন করতল। শরীয়তের দৃষ্টিতে মা দিবস, বাবা দিবস পালন করা জায়েজ কি না জায়েজ সে বিতর্কে না গিয়ে শুধু মাত্র মা"য়ের কল্যাণের জন্য এই দিনে তাদের জন্য প্রর্থনা করুন। কারণ সন্তানের দো'য়া পিতা মাতার হক। শৈশব থেকে কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন, পৌঢ়ত্বের সিঁড়ি পেরিয়ে এসেও সন্তানের কাছে মায়ের মতো কোলে সৃজিত সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাবে না পৃথিবীর কোন প্রান্তেই। মা মানেই একটা গোছানো মোছানো সংসারের প্রতিচ্ছবি।

যে কোন প্রয়োজনে, যে কোন মুহূর্তে যেন মা-ই সন্তানের কাছে জাগতিক জীবনে সবচেয়ে বিশাল এক ভরসাস্থল। আদর, স্নেহের এক অফুরন্ত সমুদ্র যেন মা। আর তাই মাকে ঘিরেই পৃথিবীর সব ভাষায়ই রচিত হয়েছে এমন সব হৃদয়স্পর্শী, ক্ল্যাসিক কবিতা, উপন্যাস, গল্প, চলচ্চিত্র, নাটক যা আর অন্য কাউকে নিয়ে হয়নি। পৃথিবীর সব ভাষার সঙ্গীতেই মাকে নিয়ে বন্দনার শেষ নেই। মা'এই একটি শব্দের অরণ্যে যে সবুজের বিশালত্ব, সেই বিশালত্বের প্রতিটি ছত্রে পল্লবিত হয়ে আছে মায়ের যতো শান্তির নিগূঢ় বার্তা।

আকাশ, পাহাড়, নদী, নিসর্গ, চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্রের কাছেই যাওয়া হোক না কেন। সেখানেও অতি আবেগ আর আকুলতার তুলিতে অঙ্কিত হয়ে আছে মা'য়ের প্রিয় মুখচ্ছবিটিই। তুলনাহীন এক সম্পর্কের নাম হলো মা। তাই পৃথিবী সৃষ্টির পর মানুষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মাকে দেয়া হয়েছে এমন এক আসন। যে আসনটি সন্তানের কাছে স্বর্গীয় সুখের সাথে তুলনীয়।

শৈশবের মায়ের কোল, মাতৃশাসন, মাতৃস্নেহ সবকিছুতেই যে রয়েছে এক অতুলনীয় প্রতিবিম্ব, যা আর কিছুতে নেই। সন্তানের যে কোন প্রয়োজনে মা-ই হয়ে ওঠেন সব থেকে বড় অবলম্বন। অজান্তেই যেন সন্তানের বিশেষ মুহূর্তে মায়ের মুখটিই সবার আগে মনে পড়ে। মা সন্তানের জীবনে এমন এক অস্তিত্ব ধারণ করে আছে। বাস্তবিক অর্থে তাই সন্তান জীবনের প্রতিটি স্তবকে এসে নিবিড়ভাবে অনুভব হয় মায়ের উপস্থিতি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে মাকে।

মা-কে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। উপাখ্যানের সীমা-পরিসীমা নেই। সৃষ্টির সূচনা থেকেই মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে নাড়ীর সম্পর্ক সৃষ্টিকর্তা রচনা করে দিয়েছেন। তার আর অন্য কোন দৃশ্যপট নেই। সন্তানের কাছে তাই মা হলো আনন্দ-বেদনার সর্বশেষ অংশীদার।

ইসলাম সন্তানের ওপর পিতা অপেক্ষা মাতার অধিকার বেশি রেখেছে। কেননা নবজাত শিশুর লালন-পালনের জন্য মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কষ্ট অপরিহার্য। ইসলাম মা হিসেবে নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে এবং মুসলিম পরিবারে সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ও কর্তৃত্বের স্থান দিয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল। ইসলাম মাকে মহিমান্বিত করে প্রকৃতপক্ষে নারী জাতির মর্যাদাকেই সমুন্নত করেছে। মাতৃত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্মানজনক মর্যাদা।

সন্তানের সার্বক্ষণিক মঙ্গল কামনায় মায়েরা অনেক ত্যাগ করেন, যথাসম্ভব দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেন। সন্তানকে সুস্থ ও সৎমানুষ রূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়েদের আজীবন সাধনাকে অম্লান করতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণীতে ঘোষিত হয়েছে, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। ’ (আহমাদ, নাসাঈ) মায়ের গর্ভকালীন কষ্টের কথা আল্লাহ তাআলা ব্যক্ত করেছেন, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি, তার মা তাকে কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। ’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৪) । মুসলিম পরিবারে সন্তানের মা সব সদস্যের কাছ থেকে সম্মানজনক মর্যাদা ও সদাচরণ পাওয়ার দাবিদার।

সন্তান জন্মের সূচনাপর্ব থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়। তাই মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিনয়, সদাচরণ এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের বাণী পবিত্র কোরআনে যথাযথ ও সুবাচনিক ভঙ্গিতে বিধৃত হয়েছে। وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا (36 আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তাঁর শরিক করবে না এবং পিতামাতার প্রতি উত্তম ব্যবহার করবে। ’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৩৬) সন্তানের গোটা জীবনই হচ্ছে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের সময়, এমনকি মায়ের মৃত্যুর পরও সন্তানের এ দায়িত্ব কখনো শেষ হয় না। মানব সন্তানেরা মায়ের ত্যাগের কথা বেমালুম ভুলে সত্য স্বীকার করতে চায় না বলেই বিশ্বজুড়ে গৃহে বা বৃদ্ধাশ্রমে মায়ের প্রতি বঞ্চনা, অবহেলা আর অবজ্ঞার বার্তা শোনা যায়।

প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে মায়ের প্রতি অসদাচরণ ও অবহেলা করে বহু সন্তান বিপথগামী বা ভর্ৎসনার পাত্রও হয়েছে। তাই প্রত্যেক সন্তানসন্ততির অপরিহার্য কর্তব্য সব সময় মাতাপিতার প্রতি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাশীল হওয়া, তাঁদের মান্যগণ্য করা, তাঁদের সঙ্গে বিনম্র ও সদয় আচরণ করা, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, বার্ধক্যে উপনীত হলে যথাসাধ্য সেবা-শুশ্রূষা, প্রয়োজনবোধে তাঁদের ভরণপোষণ প্রদান করা এবং যত দূর সম্ভব তাঁদের জীবন আরামদায়ক করা। মা-বাবার ইন্তেকালের পর ছেলেমেয়েদের সমীচীন হবে তাঁদের ক্ষমা ও কল্যাণের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা এবং তাঁদের কোনো অঙ্গীকার থাকলে যথাশিগগির তা পূরণ করা। হৃদয়ের সবটা জুড়েই আছে প্রিয় মা। হৃদস্পন্দনের প্রতিটি স্পন্দনে যে শব্দের অনুরণনটা গাঢ় আবেগ আর আকুলতা নিয়ে গুঞ্জরিত হয় সে শব্দটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর।

সব থেকে কাছের এবং সবচেয়ে প্রিয় আশ্রয়স্থল আর এক বিশাল ছায়ার নাম হলো মা। যার গহনে সন্তানের জন্যে রয়েছে এমন এক ধনসম্পদ, মণিরত্নরাজি যা আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি এই মা-এর সঙ্গে কোন কিছুরই তুলনা হয় না। মা মানেই অন্য এক জগত। অন্য এক জীবন।

যে জীবনে মায়ের কোন বিকল্প নেই। জন্ম থেকে জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে মায়ের অবস্থান সন্তানের কাছে অসীম মূল্যবান। পারিবারিক জীবনে একজন মায়ের যে ভূমিকা তা আর অন্য কোন সম্পর্কের মধ্যে রচিত হয়নি। পৃথিবীর সব দেশে, সব জায়গায় সন্তানের কাছে অত্যন্ত কাছের মানুষটি হলেন মা। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই সন্তান দেখে ফেলে মায়ের প্রিয়, মানবিক দরদভরা মুখটি।

যে মুখের ক্যানভাসে আঁকা হয়ে আছে সন্তানের জন্য রাজ্যের যত কল্যাণকর শুভ কামনা, দোয়া, আশীর্বাদ, ভালবাসা। মঙ্গলকামনাসহ পৃথিবীর যাবতীয় ভালো লাগাটাও যেন মা সন্তানের জন্যেই তুলে রাখেন পরম যত্নে। তাই বিশ্ব মা দিবসে সকল মায়ের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সুখে থাকো ভালো থাকো পৃথিবীর সকল মা। আর যে যেখানে আছো সেখান থেকে আশির্বাদ করো তোমার সন্তানদের জন্য যেন থাকে তারা দুধে ভাতে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.