ইউল্যাব এর ঘটনায় দেখলাম ফেসবুক ব্লগে মানুষ ভালোই প্রতিক্রিয়া দেখালো। যে যার অবস্থানে থেকে নিজেরমতো করে নিন্দা জানিয়েছে। আশা জাগানিয়া। মানুষজন অন্তত আত্মতুষ্টির ঢেকুর তুলতে পারবে এই ভেবে যে যাক দায়মুক্ত হয়া গেল!!! কীবোর্ডের দুটো বাটনতো চেপেছি।
যাই হোক।
অপেক্ষায় আছি নানান মুনির নানা মত দেখার জন্য। এটাতো নিশ্চিত যে, সবশেষে বিচার মানী তালগাছ আমার ভেবে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজতো, সব দোষ মেয়েটার ঘাড়েই চাপানোর চেষ্টা করা হবে। অতিব অযৌক্তিক কিছু বিষয় ও উঠে আসবে। ভেকধারী সুশীলরা মিন মিনিয়ে বলবে, এতো রাতে মেয়ে মানুষ কি করছিল ওখানে, নিশ্চই খারাপ মেয়ে মানুষ; কাঠমোল্লা জাতীয় ধর্ম ব্যবসায়ীরা মুখে নাউজুবিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহর ফেনা তুলে বলবে যৌন উত্তেজক পোশাক পরাছিল নির্ঘাত নইলে কি এমনটি হয় - চাই হল বোরকা, বুঝলেন বোরকা, বোরকার উপর আবার কোন ওষুধ আছে নাকি; অত্যুৎসাহীরা এমনও বলতে পারে, রাস্তায় বের হইছে পায়জামা টাইট করে বাধে নাই ক্যান? টাইট করে বাঁধলে আবার হাত ঢুকায় ক্যামনে? সব দোষ ঐ মাইয়ার ইচ্ছা করেই পায়জামা লুজ রাখছে যাতে পোলারা হাত ঢুকাইতে পারে।
আসলে কি বিষয়গুলো এমন।
যতই শ্লীল পোশাক বা বোরকা পরানো হোক ইভ টিজিং কি কমবে? অবশ্যই না, অন্তত পোশাক নিয়ন্ত্রন দিয়ে না। পোশাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা হল এমন, আমার হাগু চেপেছে আমি টয়লেটে যাবো কিন্তু আমাকে যেতে দেয়া হবে না। না গিয়ে যদি অভ্যাস করতে পারি তাইলে আর হাগু চাপবে না ভবিষ্যতে। অত্যন্ত হাস্যকর।
তাহলে সমস্যার মূলে কি? বা এর সমাধানই বা কি? আসলে সমস্যার মূল নির্ধারণ বা সমাধান নিয়ে আলোচনার ব্যপ্তি অনেক বিশাল।
সংক্ষেপে বলতে গেলে এই সমস্যার মূল তৈরি আমাদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই। চিড়িয়াখানায় আমরা যেমন পশু দেখে আকর্ষিত হই, বানরকে ঢিল ছুড়ে মেরে আনন্দ লাভ করি তেমনি আমাদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় মেয়েদেরকে পশু বানিয়ে রাখা হয়েছে। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে, ছোটবেলায় থেকে সামাজিকীকরণটা আমাদের এমন ভাবে হয় যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অদম্য কৌতূহল বাসনা চেপে আমরা বড় হই। যার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ইভ টিজিং এর মাধ্যমে। এক বিকৃত সুখবোধ থেকে শুরু হয় ইভ টিজিং।
একটা উদাহরণ দিলে পরিস্কার হয়ে যাবে, যে ছেলেটার তার শিক্ষা জীবনে সুযোগ হয়নি মেয়েদের সাথে মেশার তার কাছে কিন্তু তখন আর মেয়েরা মেয়ে থাকে না, মেয়েরা হয়ে যায় এক নিষিদ্ধ আকর্ষণ, একে যতভাবে চিপা যাবে ততোই রস আস্বাদন করা যাবে - যেমন, আমাদের স্কুল কলেজ গুলোর দিকে যদি দেখেন, এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো হয় বয়েজ নয় গার্লস। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পরে ছোটবেলা থেকে আমাদের সমাজ হয়ে ওঠে এক লৈঙ্গিক, বাকি যারা আছে তারা সব পশু, তাই বাকিদের সাথে আচরণও হয় পশুর মতো। আর এরি বলী আমাদের মেয়েরা। তাই বলা যায়, যতদিন না আমাদের সমাজের সর্বত্র কো এডুকেশন চালু না হবে, যতদিন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যথাযথ যৌন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত না হবে, সমাজে সুস্থ যৌন স্বাধীনতা দেয়া না হবে ততদিন সমাজে ইভ টিজিং থাকবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।