সামু কি ছিল, আর কি হয়ে গেল !
প্রতি জোড় বছরগুলোতে এই সময়ে মনটা ভাল থাকে, রেগুলার ফুটবল সিজন শেষ হয়ে যাওয়ার পর ৩ মাস রিপ্লে দেখতে হয় না। এবার যেরকম ইউরো ২০১২ শুরু হচ্ছে ৮ জুন থেকে, যেটাকে আমি বিশ্বকাপের চেয়েও বড় টুর্নামেন্ট হিসেবে মনে করি। নো অফেন্স টু আর্জেন্টিনা অর ব্রাজিল, আসলে বিশ্বকাপের বিশ্বায়নের জন্য এশিয়া বা নর্থ আমেরিকা থেকে কোটা পুরন করার মত দলের খেলা দেখা লাগে না ইউরোতে, বরং যে ১৬টা দেশ খেলে সবাই গ্লোবাল ফুটবলে বেশ ভাল দল।
এবারে স্বাগতিক দল দুইটা একটূ খারাপ পড়ে গেছে, বাছাইপর্ব খেলে আসতে হলে হয়ত শুধু ইউক্রেন কোয়ালিফাই করত, পোল্যান্ড না। তবে উয়েফার উচিত যৌথ স্বাগতিক তত্ব বাদ দিয়ে দেয়া পরের বার থেকে, ইউরো আয়োজনের জন্য ৬-৮টা স্টেডিয়ামই যথেস্ট।
এই ভুমিকা পর্ব এবারই শেষ লিখলাম, এবারের ইউরোর ফেভারিট টীমগুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রিভিউ দেয়ার ইচ্ছা আছে যতদুর পারি। প্রথম পর্ব শুরু করছি জার্মানী দিয়ে। জার্মানী আমার ঠিক প্রিয় টিম না হলেও একটু পক্ষপাতিত্ব করলাম গত বিশ্বকাপে তাদের দুর্দান্ত ম্যাচপ্লে দেখে। জোয়াকিম লোউ যেহেতু এবারো সাথে আছে, বিশ্বকাপের মত বা এর চেয়েও ভাল খেলা দেখার আশা করতেই পারি।
এদের প্রভিশনাল টিমটা দেখে নেয়া যাক।
এদের ইউজুয়াল ফর্মেশন হল ৪-২-৩-১, তবে সময় বুঝে ৪-১-৩-২ হয়েও যেতে পারে।
গোলকিপিং
প্রথম চয়েস নিঃসন্দেহে ম্যানুয়েল নয়্যার, শুধু জার্মানীরই না, পুরো বিশ্বেরই অন্যতম সেরা গোলকীপার সে। ব্যাকআপ হিসেবে টিম ওয়াইজও বেশ ভাল, ব্রেমেনের কীপার, যদিও ইন্টারন্যাশনাল এস্কপেরিয়েন্স কম। নয়্যার ফিট থাকলে সেটার দরকারও নাই অবশ্য। বাকি যে দুজন – রন রবার্ট জিলার আর আন্দ্রে স্টেগান থেকে একজন মুল ২৩ জনের একাদশে ঢুকবে, পুরো টুর্নামেন্টে বেঞ্চ ছাড়া খেলার জায়গা হবে না যেই হোক।
সেন্ট্রালডিফেন্স
সেন্ট্রাল ডিফেন্সের ২টা পজিশনের জন্য প্রাথমিক চয়েস মার্তেসেকার, বায়ার্নের ব্যাডস্টাবার আর ডর্টমুন্ডের ম্যাটস হামেলস। আর্সেনালের মার্তেসেকার তো পুরা একটা টাওয়ার, লং বলে খেলা টীম এর সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে না। এর খারাপ দিকও আছে, যেদিন খারাপ খেলে সেদিন ভয়াবহ খারাপ খেলে। শালকের বেনেডিক্ট হোয়েডেসও যথেস্টই ভাল ব্যাকআপ। সেন্ট্রাল ডিফেন্সের এই পজিশনে জার্মানীর চিন্তা না করলেও চলবে, জোয়াকিম লো কিভাবে সিঙ্ক্রোনাইজ করে নিবে তার উপরই নির্ভর করছে পারফর্মেন্স।
উইং ব্যাক
প্রথমেই নাম আসবে ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম, রাইট ব্যাক, ডিফেন্সিভলী আর অ্যাটাকিংলি সম্ভবত বিশ্বের সেরা রাইট ব্যাক। লেফটের পজিশনটাই জার্মানীর একমাত্র দুর্বল দিক – এখানে খেলতে পারে জেরোম বোয়াটেং বা ডর্টমুন্ডের মার্সেল। এদের অবস্থা খারাপ হলে সেন্ট্রালের ব্যাডস্টাবারও মোটামুটি ব্যাকআপ। লেফট ব্যাকের এই তিনজন হয়ত এভারেজের চেয়ে ভাল, তবে জার্মানীর স্ট্যান্ডার্ডের না।
সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড
চোখ বন্ধ করে এখানে যে দুইজন খেলবে তারা হল রিয়েল মাদ্রিদের স্যামি খেদিরা আর বায়ার্ন মিউনিখের বাস্তিয়ার সোয়েনস্টেইগার।
শোয়েনি যদি ফুল ফিট থাকে আর পুরো মাঠে খেলার স্বাধীনতা পায়, তাহলে এই জার্মান টীমের মেইন ইঞ্জিন সে (ফ্র্যাঙ্কলি, ব্যালাককেও মিস করি নাই বিশ্বকাপে শোয়েনির খেলা দেখে)। লারস আর সভেন, দুই জমজ বেন্ডার ভাইও চালায়ে নিতে পারবে, কিংবা টনি ক্রুস একটি নিচে নেমে চাল ব্যাকআপ দিতে পারবে যদি কখনো খেদিরা বা শোয়েনির কেউ খেলতে না পারে।
রাইট আর লেফট উইঙ্গার
লেফট উইঙ্গার হিসেবে পোডোলস্কি প্রথম চয়েস, লেভারকুশেনের আন্দ্রে স্কার্লও দুর্দান্ত প্লেয়ার একজন। বেস্ট ইলেভেনের রাইট উইঙ্গার পজিশনে বেশ ফাইট হবে মারিও গোজে আর থমাস মুলারের মধ্যে। জার্মান ফর্মেশনে উইঙ্গারদেরকে ইনসাইড স্ট্রাইকারের রোল নিতে হয় ম্যাচের মধ্যে অনেকবার, তাই গোলস্কোরিং রেকর্ড একটা দেখার বিষয়।
লীগ আর ইন্টারন্যাশনাল রেকর্ড দেখলে মনেহয় মুলারই খেলবে, আর মারিও গোজে থাকবে সুপার সাব যেহেতু অ্যাটাকিং এর যেকোন পজিশনেই খেলতে পারে।
সেন্ট্রাল অ্যাটকিং মিডফিল্ড
এখানেও আল্টিমেট চয়েস মেসুত ওজিল, আর ওজিল না খেললে টনি ক্রুস অন্য যেকোন দলেই বেস্ট ইলেভেনে খেলার মত প্লেয়ার। জার্মান মিডফিল্ড আর নামগুলো এবার এতটাই দুর্দান্ত, স্পেনের পরেই বেস্ট মিডফিল্ড এদের কোন সন্দেহ নাই। তবে এক হিসেবে স্পেনের চেয়েও ভাল কারন প্রায় সবাই নিয়মিত গোল করতে পারে।
স্ট্রাইকার
একমাত্র এই পজিশনের জন্য মারিও গোমেজ, লীগে যেরকম হালি হালি গোল দেয় বলে কয়ে আর সন্দেহ থাকা উচিত না।
ব্যাকআপ হিসেবে মিরোস্লাভ ক্লোজ (হ্যা এবার ব্যাকআপ!) আর কাকাউ। ফর্মেশন চেঞ্জ করে ২ স্ট্রাইকার খেলালে গোমেজের সাথে থমাস মুলার খেলবে, তবে গোমেজ আর ক্লোজ একসাথে খেলবে না মনেহয়।
যারা থাকলে ভাল হত
রাইট ব্যাকের ব্যাকআপ হিসেবে আর্নে ফ্রিডরিখ, মিডফিল্ডে সাইমন রোফেস আর মার্কো মারিন, আর স্ট্রাইকারে কিসলিং। চেলসি এবার একটা দাগা খেল মনেহয়, এত ঢাক ঢোল পিটীয়ে মারিনকে মাত্রই কিনছিল নেক্সট সিজনের জন্য!
ইউরো ২০১২ প্রেডিকশন
সোজা ভাষায় গ্রুপ অফ ডেথে পড়ছে জার্মানী, গ্রুপ বি তে আরও সাথে আছে নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল আর ডেনমার্ক। গ্রুপ পর্ব পার করতে পারলে এরা ফাইনালে খেলার মত টিম, গ্রুপেই যা ফাইট হবে আরকি।
তবে জার্মানীর সবচেয়ে স্ট্রং দিক হল শোলডার রান, যেভাবে অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙ্গে থ্রু বল পিক করে ফ্রন্ট প্লেয়াররা, প্রতিপক্ষের হাই ডিফেন্স লাইন (যেমন স্পেন, ইংল্যান্ড) হলে জার্মানীর সামর্থ আছে এক ম্যাচে একাধিক গোল করার।
পোডলস্কি আর মুলার থাকাতে কাউন্টার অ্যাটাকেও দুর্দান্ত এরা।
পার্সোনালী জার্মান টিম নিয়ে আমি এবার ব্যাপক আশাবাদী। এবার যদি ইউরো না জিতে তাহলে পরের বার বিশ্বকাপ জিততে পারে এই টিম। সাপোর্ট টিম চেঞ্জ করে ফেলব না কি ..... দেখি
ফাইনাল প্রেডিকশন টাইম - জার্মানীর এই টিম থেকে প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট কে হবে? আমার বাজি, হয় শোয়েনি না হয় ওজিল।
এডিট - সামুর নয়া বাগ মনেহয়, পোস্ট আর্কাইভে আমার নতুন পোস্টগুলা দেখাচ্ছে না। তাই এখানেই লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।
ইউরো ২০১২ প্রিভিউ পর্ব ২ - নেদারল্যান্ডস
বোনাস ছবি পোস্ট - ইউরো ২০১২ এর সব অফিসিয়াল জার্সি
পর্ব ৩-৪-৫-৬ ও আছে বা আসছে, কোন কারনে আমার পোস্ট আর্কাইভে না দেখালে আমার প্রোফাইলে দেখে নিবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।