ভাল কথা বলুন সুইডেনে সামার শুরু হচ্ছিল মাত্র আর আমরা ইউনিভার্সিটি থেকে পেয়ে গেলাম ৫ দিনের ছুটি। পরিকল্পনা করা হয়ে গেল ৫ বন্ধুর, গাড়ীতে করে ইউরোপ এর কিছুটা ঘুরে দেখিনা কেন? যেই ভাবা সেই কাজ, গুগল ম্যাপ ঘেঁটে বের করে ফেললাম ৫ টি পাশাপাশি দেশঃ ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং লুক্সেমবার্গ।
সমস্যা হল ৫ জনের মধ্যে শুধু একজনই ড্রাইভ করতে পারে, তবু সে রাজি হয়ে গেল। সাব এর একটা সিডান গাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম স্টকহোম থেকে সুইডেনের সবচেয়ে দক্ষিণের শহর মালমোর দিকে। প্রকৃতি যে এত ছবির মত সুন্দর হতে পারে তা যেন নতুন করে উপলব্ধি করলাম সবাই।
নির্জন হাইওয়ে তে দ্রুতবেগে চলছি আর চার পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করছি, দুই পাশে সবুজ নির্জন প্রান্তর, মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম, ঘোড়ার রেঞ্চ, ঠিক যেন ওয়েস্টার্ন মুভির জগতে চলে এলাম।
চলতে চলতে ডেনমার্কের বর্ডারে চলে এলাম। এখানে সমুদ্রের পানির নিচ দিয়ে গড়া একটা দীর্ঘ সেতু পার হলেই ডেনমার্ক পৌঁছে যাব।
কোপেনহেগেন, ডেনমার্কের রাজধানী সত্যিই দেখার মত একটা শহর। ছিম ছাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বড় বড় দলান নতুন নতুন গাড়ি বড় বড় রাস্তা সবকিছুই চোখ জুড়ানো।
শহরের অনেকটাই ঘুরে দেখলাম। মিউজিয়াম টা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না, কি নেই সেখানে, এত রিচ কালেকশন! আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন যেখানে হল সেই বেলা সেন্টারে আরও কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম জার্মানির উদ্দেশ্যে।
ইন্টার-কান্ট্রি হাইওয়ে তে কি কারনে যেন একটা বিশাল যানজট লেগে গেল। এতে কিছুটা মজা হয়েছে বৈকি। গাড়ি থেকে নেমে বিশাল হাইওয়েতে হাঁটাহাঁটি করছি।
অনেকেই নেমে এসেছে গাড়ি থেকে, আর বেশ কিছু সুন্দরী তরুনীও নেমে এসেছিল। এদের যে লজ্জা শরমের বালাই নেই তা আগে জানলেও এই প্রথম উপলব্ধি করলাম! হিসু পেয়েছে বলে আমাদের চোখের সামনেই রাস্তার পাশে বসে আমাদের দিকে পিছন না ফিরেই হিসু করল অনেক তরুনী। দৃশ্যটা উপভোগ্য হয়েছে বৈকি । এর আগে এমন লাইভ কিছু দেখা হয়নি ।
জ্যাম ছাড়ার পর একটানে জার্মানী চলে এলাম।
২২০ কিমি/ঘন্টা স্পীডে গাড়ি ছুটানোর যে কি থ্রীল তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
সুইডেনের চেয়ে খুব একটা নতুন ধরনের দেশ মনে হলনা জার্মানীকে। বাড়ি ঘরের গঠন প্রনালী একটু আলাদা এই আরকি। হাম্বুর্গ, বার্লিন, হ্যামিলন বেশ কয়েকটা শহর দেখে চোখ মন সবই জুড়ালাম।
বন্ধুর বাসায় রাত কাটিয়ে পরদিন রওনা হলাম নেদারল্যান্ড এর উদ্দেশ্যে।
বাহ, নেদারল্যান্ড! ঠিক যেন ছবির মত সুন্দর! এক গ্রামে ঢুকেছিলাম, যেন বাস্তবে নয় হাতে আঁকা ছবির ভেতর স্বপ্নের মাধ্যমে চলে এসেছি!
আর আমস্টারডার্ম শহরের কথা আর নতুন করে কিই বা বলব? তবে এই দেশের মানুষগুলো তেমন ভালনা। অন্য যেকোন দেশের মানুষের তুলনায় এরা একটু স্বার্থপর আর গোঁয়াড়। শুধু নিজের অভিজ্ঞতায় এই কথাটা বলিনি বরং বহু লোকের কাছেও পরে একই কথা শুনেছিলাম। আমস্টার্ডামই মনে হয় একমাত্র শহর যেখানে আইনগত বৈধ ভাবে গাঁজা নিয়ে ঘুরাফেরা বা সেবন করা যায়।
এর পর বেলজিয়াম।
কাঁচের শহর ব্রাসেলস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাজধানী। অদ্ভুৎ সুন্দর এক শহর। যারা বাংলাদেশ বা আমেরিকা থাকেন তারা ভাবেন ইউরোপেও আকাশস্পর্শী দালান আছে।
আসলে ইয়োরোপ এর ধনী দেশগুলো কম জনবসতিপূর্ণ বলে ফাঁকা জায়গা অনেক, তাই উঁচু দালানও নেই। কিন্তু বেলজিয়ামে এসে দেখলাম ভিন্ন জিনিস।
সুন্দর সুন্দর উঁচু দালান গুলো আসলেই মনোমুগ্ধকর। আর হাজার বছরের পুরোনো ইমারত দেখে অভিভূত না হয়ে পারলাম না। তবে ব্রাসেলস এর পথে ঘাটে পতিতাবৃত্তি দেখা যায়। সুন্দর লাইটিং এর ঘর বানিয়ে জানালায় বসে খরিদ্দার আকর্ষন করে এরা।
সবশেষে লুক্সেমবার্গ।
ছোট্ট শহর এর মত দেশটার পার কেপিটা ইনকাম সব দেশের চাইতে বেশী। বেশ সুন্দর গুছিয়ে নিয়েছে ওরা নিজের দেশটাকে। চমৎকার।
এরপর আবার জার্মানী হয়ে ফিরে এলাম গন্তব্য সুইডেনে এ। বেশ আনন্দদায়ক ছিল ভ্রমণটা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।