আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বামীর ছিল "খাসিলত" খারাপ.............

আমি খুবি সাধারণ পেন্সিলে আঁকা সহজ স্বপ্ন আমার । স্বপ্ন দেখতে ভুল হলে ইরেজার দিয়ে সহজে মুছে ফেলা যায় । আমার স্বপ্ন । আজকে একটা গল্প বলি আপনাদেরঃ চঞ্চলা, চপলা মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় মাত্র ১৩ বছর বয়সে, দেখতে কিন্তু আর দশটা বাঙালি মেয়ের চাইতে ঢের সুন্দরি সে। যেমন লম্বা, তেমন ফর্সা, চোখ দুটি যেন নীলদিঘির গভীরতার পূর্ণ, পড়াশোনায়ও ভাল যেমন তেমনি খেলাধুলায়।

কখনও কোন কিছুতে হার মানেনি সে। এত কিছু হলে কী হবে, গরিবের মেয়ে তো, পাছে মানুষের ললুপ দৃষ্টি পরে তাই বাবা তার আগেই এতটুকু মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল। স্বামীর ছিল "খাসিলত" খারাপ। বিয়ের পর কিছুদিন মজা ফুরিয়ে যেতেই শুরু হল মানসিক অত্যাচার। সেই অত্যাচার গড়িয়ে শরীরে নামল।

ছোটখাট বিষয় নিয়ে সমস্যা হলেই হাত তুলত। মেয়েটির স্বামীর বন্ধুরাও তার স্বামীকে বলত "এরে তুই এত্ত সুন্দর বউ থুইয়া ঐ কালা বেটীর লগে কথা কস ক্যা?? তর যদি না ভালা লাগে আমারে দিয়া দে" মেয়েটির পেট এ তখন প্রথম বাচ্চা। এইসময় শুরু হল বাজারের মেয়ে নিয়ে রাত কাটানো। বউ বিছানার পাশে মেঝেতে শোয় আর স্বামী বেশ্যা নিয়ে বিছানায় ফুর্তি করে। প্রতিবাদ করতে গেলেই বেদম প্রহার।

ভয়ে চুপ করে থাকে পাছে যদি তার পেটের বাচ্চার কোন ক্ষতি করে বসে এই নরপশুটা!! এভাবেই দিন চলে যায়। শাশুরিকে বলেও কোন লাভ হয়না। সেও ছলে ছুতোয় তার দোষ খুজে ছেলের কানে ভরে আর শুরু হয় নিত্যদিনের রুটিন করা মারধোর। দুইবেলা ভাত খাবার মতই মারও খেয়ে যেত সে। কোথাও আশ্রয় পায়না মেয়েটি।

যথাসময়ে তার একটি ছেলে হয়। ভাগ্যিস ছেলেই হয়েছিল। মেয়ে হলে হয়ত ঐ মেয়ের সাথেই তাকে জ্যান্ত কবর দিত। একদিন মেয়েটি সহ্য করতে না পেরে স্বামীর মদ, গাঞ্জা খাওয়া নিয়ে কথা বলে উঠে আর যথারীতি শুরু হয় শারীরিক অত্যাচার। পাড়ার মানুষেরা এগিয়ে আসে মেয়েটিকে ঐ স্বামী আর শাশুড়ির কাছ থেকে বাঁচাতে।

কোনভাবে প্রান নিয়ে বুকে ২ বছরের ছেলেটিকে নিয়ে পালিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে সে। এতটুকু শোনার পর আমার প্রশ্ন ছিল "তাহলে দিদি আপনি এরপরে আবার কেন ঐ স্বামীর ঘরে ফিরতে গেলেন?" সে বলল, কই যামু ভাই ? গরীব মানুষ, ছেলেটারে নিয়ে একা কই কার কাছে যামু? সমাজের ডরে বাপেও আমারে বুঝায়া সুঝায়া হেরতন পাঠায় দিল" এরপর ৩ বছর পর তার আরেকটি ছেলে হয়। এদিকে তার স্বামীর লিভারে সমস্যা দেখা দিয়েছে, অতিরিক্ত মদ্যপান আর গাজাসেবন এর কারনে। কিছুদিন পর লোকটি মারা গেল। তখন মেয়েটা ৪ আর ১ বছরের দুই ছেলে নিয়ে চলে আসল তার বাবার বাড়ী।

এরপর আর পিছে ফেরে দেখেনি সে। গত ৯ বছর যাবত হাসপাতালে সিস্টার এর কাজ করে দুই ছেলেকে বড় করেছে। বড়টির বয়স এখন ১৪, ছোটোটির ১০, বিয়ে থাও করেননি শুধু ছেলে দুটিকে মানুষ করার জন্য। এখন তার বয়স ৩০ চলে। আমি তাকে বললাম, "বিয়ে কি আর করবেন না দিদি?" সে বলল, "বিয়ে করলে যদি এই স্বামী আগের চেয়েও খারাপ হয়? যদি আমার পোলাগুলারে ভালা না পায়, আমার তো একুলো যাবে ওকুলও যাবে।

তয় আপা, রাতের বেলা যখন ঘুমাই, আমার বালিশ পুরা ভিজ্জা যায়...অনেক কষ্ট আমার... " আমারও চোখে পানি আসি আসি করছিল তাও বললাম, "আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করেন যে ১০ বছর আগে আপনার স্বামী থাকাকালীন যে জীবন ছিল এখন সেখান থেকে উঠে আসতে পেরেছেন। আজকে আপনার স্বামী থাকলে হয়ত আপনি বেঁচে থাকতেন না, হয়ত আপনার ছেলেদুটো মানুষ হত না। কাজেই মন খারাপ করেন না" এর বেশি কিছু বলতে পারলাম না। আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক অসহায়। হাসপাতালের দিদিই বলুন আর বড় প্রফেসরই বলুন, মুল গঠনে খুব একটা পার্থক্য নেই।

এক বুক মায়া নিয়ে তারা স্বামীর সংসার করার স্বপ্ন দেখে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই স্বপ্ন জ্যান্ত কবর দিয়ে দেয় কিছু স্বামী নামক পাষণ্ডের দল। আর বউ গুলো কেউ সমাজ হারানোর ভয়, কেউ নিজ ও নিজের সম্মান, কেউ প্রতিপত্তি আবার কেউ জীবন হারানোর ভয়ে চুপ করে থাকে। আর আমি নিশ্চুপ হয়ে দেখি। বড় কষ্ট হয় আমার, বড় মায়া লাগে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৭৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।