“না মা, আমি ওকে ফেলে দেব না। ওর কথা চিন্তা করে আমার স্বামী আমাকে আবার নিতে পারে। মাত্রতো কটা দিন। ”
“যদি না নেয়?”
“একজনের অপরাধতো আমি আরেক জনের উপর দিতে পারি না। তাছাড়া ওতো আমার অবৈধ নয়।
ওকে বুকে নিয়ে বাঁচব। । ও-ই হবে আমার সারা জীবনের অহংকার। ”
“বাঁচতে পারবি না। অনেক কষ্ট হবে।
”
“তুমি দেখ মা, ও একদিন ফিরে আসবেই। আবার আমরা নতুন বাসা নেব। এবার আর তোমাদের সাথে থাকব না। ওর যেখানে পছন্দ সেখানে থাকব। ”
বৃষ্টি গার্মেন্টসে চাকরি করে।
এখন কাজ করতে অসুবিধা হয়। তাই, মা প্রতিদিন ওর সাথে খিটমিট করে। সন্তান ফেলে দিতে বলে। কিন্তু বৃষ্টি আশাবাদী আবার তার স্বামী ফিরে আসবে। সন্তান ফেলে দিলে হয়তো আর ফিরে আসবে না।
কেরানীগঞ্জের আমিন পাড়ায় বাস করে বৃষ্টির পরিবার। চার বোন ও তার মা। বৃষ্টি সবার বড়। নয় বছরের সময় বৃষ্টির বাবা মারা যায়। দুলকি তখন মায়ের পেটে।
অভাব এই পরিবারটির উপর ছোবল মারে। গ্রাস করতে চায় চারটি নিরহ প্রাণিকে। আট মাস গর্ভাবস্থায় বৃষ্টির মা গার্মেন্টসে কাজ শুরু করে। পরের বছর থেকে বৃষ্টিও তার মায়ের সাথে কাজে যোগ দেয়। তবু সংসারের হাল ঘোরে না।
দুলকি এবং ফুলকিকে রেখে বর্ষা যখন কাজে আসা শুরু করে তখন সংসারের গতি একটু ঘোরে। এদিকে বৃষ্টি ভেসে চলে বর্ষা বসন্তের ধারায়। ঝুলে থাকা ওড়না কখন যেন চেপে বসছে বুকে । খিট খিটে চেহারাটাও যেন কেমন রসালো হয়ে উঠছে। মহাজন বেটাও ওর দিকে নির্লজের মত তাকায়।
আজে-বাজে কথা বলে। বৃষ্টির ভালোলাগে না। বেটা বুড়ো ক্ষাটাস তিনটে বিয়ে করছে । চার পাঁচটা ছেলে পুলে।
বৃষ্টি দুই দিন কাজে যায়নি।
মহাজনের ছেলে বাসায় আসে। ছেলেটাও ধুর্ত সহজেই বৃষ্টির মন জয় করে ফেলে। বৃষ্টি আবার কাজে যেতে শুরু করে। বাদলের সাথে বৃষ্টির ভালো ভাব হয়ে ওঠে। বাদল এখন প্রায়ই ওদের বাসায় আসে।
ছোট বাসা তার পরও একদিন থেকে যায়। বাদল সরাসরি বৃষ্টির মার কাছে প্রস্তাব দেয়। বৃষ্টির মা রাজী হয়। নীরবে ওদের বিয়ে হয়ে যায়। মহাজন তার ছেলেকে তাড়িয়ে দেয়।
বাদল বৃষ্টিদের এখানেই থাকে। ছয় মাস খুব ধুমধামে চলে। একদিন বাদল চলে যায়। সে যাওয়াই আর ফেরার হয়ে ওঠে না। বৃষ্টি অনেক আশা নিয়ে আজও বসে আছে।
আকাশ পানে তাকিয়ে কেবল বাদলের কথাই ভাবছে। আকাশের মেঘগুলো আপন ইচ্ছায় ঘোরা ফেরা করছে। বৃষ্টি সে জলকণায় মিশে যেতে চায়। বাদল ওকে বলছিল, আমরা নতুন বাসা নেব। তোমাকে আর কাজ করতে দেব না।
বৃষ্টির হাতে পায়ে পানি আসে। ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয় সারা শরীর। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃষ্টি প্রসব করে একটা ফুটফুটে পুত্র সন্তান। বৃষ্টি তার সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
একদিন ওর হাত ধরে স্বামীর ঘরে যাবে। স্বামী তাকে আর ফিরে দেবে না। আর ছেড়ে যাবে না। তারপর বৃষ্টি চোখ বোজে। সে চোখ আর খোলে না।
বৃষ্টি আর পৃথিবী দেখে না। সন্তানের চিৎকার ওর কানে পৌঁছায় না। স্বামীর ঘরের স্বপ্ন ওর প্রাণে নীরবে ঘুমিয়ে যায়। স্বামী এসে ছেলেটাকে নিয়ে যায়। ফেলে যায় বৃষ্টির ঘরে ফেরার কয়েক ফোঁট অশ্র“।
২১ আগস্ট ২০১২ ইং
নিজ বাড়ি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।