আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুমন রহমান লিখিত “কানার হাটবাজার”-এর সমালোচনামূলক পাঠ

“কানার হাটবাজার”- সুমন রহমানের নগর, জনসংস্কৃতি ও গণমাধ্যম পঠন বিষয়ক বই। এতে ছয়টি অধ্যায় স্থান পেয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে তিনি নাগরিক আতঙ্ক, তারুণ্য ও মৃত্যু নিয়ে এবং পরের তিন অধ্যায়ে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও আর্ট নিয়ে আলোচনা পেড়েছেন। সুমন রহমানের মতে, নাগরিক আতঙ্ক, তারুণ্য এবং মৃত্যু গণমাধ্যমে যেভাবে পরিবেশিত এবং উৎপাদিত হচ্ছে- সেটা শহরের জনসংস্কৃতির অংশ। আর এই তিনটি বিষয়ের মধ্য দিয়েই মানুষ তার আতœপরিচয় নির্মাণ করে থাকে।

টিভি সম্পর্কে তিনি বলেন, টেলিভিশন তার বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন- রিয়্যালিটি শো, টক শো, আইডল প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালী মধ্যবিত্তের আতœপরিচয়কে বদলে দিচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে সুমন রহমানের ক্রিটিক হচ্ছে- সত্তরের দশকে সিনেমার অডিয়েন্স ছিল শহরাগত নি¤œবর্গের মানুষ। এরপর দর্শক ধরে রাখতে গিয়ে সিনেমা তার ফ্যান্টাসির মাত্রা যত বাড়িয়েছে, ততই দর্শক হল বিমুখ হয়েছে। আর্ট সম্পর্কে সুমন রহমান বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সঙ্গীত হয়ে উঠেছে ঢাকাই নি¤œবর্গের আতœপরিচয় বিকাশের জায়গা। সুমন রহমানের বইয়ের নামকরণ নিয়ে যেমন আমার প্রশ্ন আছে তেমনি তার বিশ্লেষণ পদ্ধতি এবং বিশ্লেষণ নিয়েও অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে।

সুমন রহমান তার বইয়ের “কানার হাটবাজার” শব্দটি ধার নিয়েছেন সাধক মনমোহনের কাছ থেকে। একথা সুমন রহমান নিজেও স্বীকার করেছেন। আমার প্রশ্নটি হচ্ছে “হাটবাজার” শব্দটি শুদ্ধ না ভূল তা নিয়ে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বাংলা ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ী শব্দটি ভূল। কারণ সমার্থক শব্দযোগে কোন শব্দ গঠিত হলে তার মাঝে হাইফেন (-) থাকবে।

পৃষ্ঠা- ৫৬। সেদিক দিয়ে আমি বলতে চাই “হাটবাজার” শব্দটি ভূল। এরকম আরো অনেক ভুল রয়েছে বই জুড়ে। সুমন রহমানের বিশ্লেষণ পদ্ধতি নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেছেন- গণমাধ্যমে উৎপাদিত বিভিন্ন টেক্সটকে চিহ্নতত্ত্বীয় পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তারপর জাতিতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের সাথে এর সমন্বয় করা হয়েছে।

কিন্তু বিশ্লেষণের বেশকিছু জায়গায় সুমন রহমান কোন পদ্ধতির ধার ধারেন নি। এক্ষেত্রে আমি “বুড়ো হামড়া তুঁত” লেখাটির কথা বলবো। এখানে সুমন রহমান তাঁর মনগড়া একটা ঘটনা বিশ্লেষণ করেছেন। সংবাদের সংবাদমূল্য নিয়ে বার্তাপ্রধানের সঙ্গে সাংবাদিকের ফাইট দেওয়ার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি কবি মুস্তফা আনোয়ারের মৃত্যুকে অযথা টেনে এনেছেন। “ক তে ক্রসফায়ার”-এ সুমন রহমান বলছেন, একটি হত্যাকান্ড ঘটার পরে যে সংবাদটি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয় তা একটি মিথ্যার প্যাকেজ।

কিন্তু কেন প্রচারমাধ্যমগুলো এভাবে উপস্থাপন করছে সে ব্যাপারে সুমন রহমান পুরোপুরি চুপ। আমার মতে, তিনি এখানে মার্ক ফিশম্যানের “আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি”র আলোচনা নিয়ে আসতে পারতেন। কারণ এই আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই রিপোর্টাররা শুধু কয়েকটা উৎস থেকে সংবাদগুলো ধার করেন। এজন্য ক্রসফায়ার সম্পর্কিত সংবাদে র‌্যাবের বক্তব্যই বেশি থাকে। কিন্তু সে আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না তিনি।

সুমন রহমান বইয়ের ৬৮ পৃষ্ঠায় একটা পরিসংখ্যান দিয়েছেন- “ঢাকা শহরের অর্ধেক লোক বস্তিতে থাকে”। এবছরের ৬-এপ্রিল বিবিসি বাংলার দেওয়া তথ্যমতে ঢাকা শহরে মোট বস্তিবাসীর সংখ্যা ৪০ লাখ, যেখানে ঢাকা শহরের মোট অধিবাসী ১ কোটি ৪৫ লাখ। সেখানে তিনি নির্দ্বিধায় কিভাবে বলতে পারেন অর্ধেক লোক বস্তিতে থাকে। সুমন রহমানের লেখায় কোন রেফারেন্স নেই। মূলত তিনি রচনাকে সুখপাঠ্য করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চেয়েছেন।

সুমন রহমান আর্টের নি¤œবর্গীয়পনা বোঝানোর জন্য বলেছেন, “গানের বাজার ধরার জন্য গরিবের হাটের মধ্যে এসে নেচে-নেচে গান গাইতে হচ্ছে তিশমাদের”। তাঁর এই কথার সূত্র ধরে বলা যায়-সুমন রহমান ব্যবসাটা ভালই বোঝেন। তিশমা বা মমতাজ ভাল করেই জানেন, তাদের গানের অডিয়েন্স নি¤œবর্গের মানুষ। আর সুমন রহমানও জানেন তাঁর এই বইয়ের পাঠক আর যাই হোক নি¤œবর্গের মানুষ নয়; তাই তিনি বাজার ধরার জন্যই বইয়ের আকার, মূল্য সবকিছুই নির্ধারণ করেছেন ধনীক শ্রেণির কথা মাথায় রেখে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.