আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিনব চাকরীর অফার, নাকি নতুন ধান্দা !(?)

মাস দুয়েক আগে আমার এক পরিচিত বন্ধু হঠাত ফোন করে বললো দোস্ত , কপাল মনে হয় ফিরলো । আমি বললাম কেন ,কোন ব্যাংকে কি চাকরী পেয়ে গেছিস নাকি? উল্লেখ্য আমার সেই বন্ধুটি এমবিএ করে ব্যাংকের জন্য খুব চেস্টা করছিল এবং একটি প্রথম সারির রিয়েল এস্টেট কোম্পানির এ্যাকউন্ট ডিভিশনে চাকরি করে। যাই হোক সে উত্তর দিল আরে রাখ তোর ব্যাংক, আমি সিংগাপুরে চাকরি পাইছি। আমি বললাম বলিস কি? কিভাবে? কবে কি করলি? কিছুই জানাইলি না? সে হেসে বলল, এই তো আসলে জানানোর সুযোগ পাইনি। যাই হোক সপ্তাহ খানেক পরে, তার সাথে হটাত রাস্তায় দেখা।

আমি বললাম কিরে তোর ফ্লাইট কবে। সে কিছুটা নিরুতসাহী ভংগিতে উত্তর দিলো ,আরে বাদ দে ওসব, বিদেশ যাবনা আমি। পরে চাপাচাপিতে সে যেটা বলল, তার বর্ননা এরকম- সে এরকম কোথাও আবেদন করেছে বলে তার মনে পরে না। কিন্তু হঠাত তার মোবাইলে ম্যাসেজ আসে, সরাসরি সিংগাপুরে 'এক্যাউন্ট অফিসার' হিসাবে চাকরীর অফারের কথা বলে , ইমেইল চেক করে হট নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলে। পরে সে মেইল চেক করে দেখে সরাসরি অফার লেটার দেয়া কানাডার একটি কোম্পানির নামে।

যেখানে কম্পানীর ওয়েব সাইটের ঠিকানা দেয়া আছে। একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এবং কিছু ডেটলাইন দিয়ে উল্লেখ করা হয় মে মাসে হোটেল রেডিসনে বাছাইকৃতদের নিয়ে কনফারেন্স করা হবে এবং তার পরের মাসেই ফ্লাইট। তো আমার ঐ বন্ধুটি কৌতুহলী হয়ে ফোন দিলে , চট্টগ্রামের ভাষায় একজন কথা বলে , এবং জানায় তাদের অফিস চট্টগ্রামে। আমার যোগ্যতা আছে কিনা সেটা না জেনেই অফার লেটার কিভাবে দিলেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অফার লেটার পাঠানো হয়েছে, তাই আপনি যেতে চাইলে আমরা পরে সব কিছু চেক করে দেখবো আপনি উপযুক্ত কিনা।

এখন যদি যেতে চান তাহলে প্যাচাল বাদ দিয়ে আমি যা বলি সেটা করেন, কথা মত কাজ করলে পরে সব এমনিই বিুঝতে পারবেন। পরে আমার ঐ বন্ধুকে ঢাকার একটি মেডিকেল সেন্টারের ঠিকানা দিয়ে বলা হয় ঐদিনই সন্ধার মধ্যে হাজির হয়ে ৫০০০ টাকা জমা দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট নিতে বলা হয়। যাই হোক ঐ লোকের সাথে কথা বলে এবং নানা কিছু চিন্তাকরে আমার বন্ধুটি আর আগায়নি এ বিষয়ে। পরে সন্ধার সময় ঐ নাম্বার থেকে আবার ফোন আসে , সে মেডিকেলে গেছে কিনা জানতে চায়। আমার বন্ধু জানায় সে যাবে না , কারন সে বিদেশে চাকুরিতে আগ্রহী নয়।

কিন্তু এর পরও নিয়মিত বিরতীতে তার মোবাইলে একই ধরনের ম্যাসেজ এবং ইমেইলে অফার লেটার আসতে থাকে। আমার পরিচিত আরও কয়েকজন একই রকম অফার লেটার পাচ্ছে শুনেছি( আমার কপাল খারাপ , আমি এখনও পাইনি। যাইহোক তাদের একজনের অফার লেটার এখানে সচেতনতার জন্য আপলোড করলাম। বিগত কয়েক বছর ধরেই শহরে রাস্তাঘাটে ,দেয়ালে, বাসে চাকুরীর লিফলেট তো আমরা দেখছি। এ নিয়ে মিডিয়াতে অনেক প্রতিবেদন এসেছে এবং দেখা গেছে এর অধিকাংশই ভুয়া এবং প্রতারনার কৌশল।

কিন্তু ইমেইলে চাকরীর অফার,এই বিষয়টির সত্যটা এখনও যাচাই করা যায়নি। তাই জনসচেতনতার জন্য সবাইকে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলব। এখানে আমি সরাসরি উপসংহার টানতে পারছি না , কারন একটা পর্যায়ের পর এ বিষয়ে আর তথ্য যোগাড় করা যায়নি। তবে এখানে , আমার বন্ধুর বিবেচ্য বিষয়গুলো ছিল- ১। কোন প্রকার আবেদন ,যাচাই-বাছাই,পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি 'অফার লেটার' বিষয়টি ঠিক প্রচলিত প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসযোগ্য নয়।

২। 'এ্যকাউন্টে অফিসার' , 'ইন্জিনিয়ার' ইত্যাদি পর্যায়ে বিদেশে লোক নেয়ার মত বিশ্বাসযোগ্য এজেন্ট/রিক্রটিং প্রতিষ্ঠানের সংশিল্ষটতা না থাকা। উল্লেখ্য ঢাকার কোন ঠিকানা এরা ব্যবহার করে না এরা , চিটাগং অথবা সিলেটের ঠিকানা দেয়া থাকে অফার লেটারে। ৩। ফোনে যোগাযোগ করা ব্যাক্তিদের যথেস্ট শিক্ষিত বা স্মার্ট মনে হয়নি যারা 'ইন্জিনিয়ার' কিংবা 'এ্যকাউন্টে অফিসার' দের মত শিক্ষিত লোকদের বাছা্ই করবে।

বরং আদম বেপারীর চেলাদের মত কথা বার্তা। ৪। কোন প্রকার সময় সুযোগ না দিয়ে নির্দিস্ট মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষার জন্য প্রোরচিত করা। এক্ষেত্রে, ফিশিং ইমেইল এর বিষয়টা আমরা অনেকেই জানি,যেখানে বড় এমাউন্টের লটারী পাওয়ার, অথবা ডোনেশনের কথা বলে ক্রেডিট কার্ড/ব্যাংক ইনফো চুরি করে। ৫।

না বলে দেয়ার পরেও দিনের পর দিন অফার মেইল/ম্যাসেজ পাওয়া। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো সবকিছু বুঝে সাবধানে আগানোর, কারন চারিদিকে ফিশিং ইমেইল, জ্বিনের বাদশা, থ্যাংকু বোনাসের কথা বলে চলছে প্রতারনা। দিনে দিনে আবিস্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন প্রতারনার কৌশল আর বোকা, লোভী মানুষ পা দিচ্ছে সেই ফাদে। অতএব সাবধানতাই একমা্ত্র অবলম্বন যেটা আপনাকে নিরাপদ রাখতে পারে  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।