গতানুগতিকতার বাইরে এক ধরনের শাস্তির খবর পড়লাম। শাস্তি যে পেয়েছে, তার আলোকচিত্রও ছিল খবরের সঙ্গে। আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি পদ্মা নদীর পাড়ে। স্থান : দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। তারিখ : ২২ অক্টোবর ২০১০ খ্রিস্টাব্দ, রাত্রি সাড়ে বারো ঘটিকা।
বাগেরহাট থেকে ঢাকায় আসছিল একটা ট্রাক।
সেই ট্রাকে পণ্য হিসেবে ছিল মাছ। ট্রাকটি ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্টে সিরিয়ালের জন্য দাঁড়ায়। হাতেম মিয়া নামের স্থানীয় এক যুবক ওই ট্রাককে টার্গেট করে। শোলার তৈরি মাছের বাক্স সে চাকু দিয়ে কেটে ফেলে।
হস্তগত করে এক কেজি ওজনের একটি মাছ। ৫ টন বইতে পারে ওই ট্রাক। মাত্তর এক কেজি ওজনের একখানা পুঁচকে রুই মাছ চুরি করাই কাল হয়ে দাঁড়াল হাতেমের। অভিনব শাস্তি পেতে হলো। হাত সাফাইয়ে সে জাদুকরদের মতো পাকা নয়।
হলে এত লানত পোহাতে হতো না। বেইজ্জতি থেকে আলগোছেই বেঁচে যেতে পারত। ওই যে বলে না, চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা! ধরা খেয়ে গেল। হাতেম হাতেনাতেই ধরা খেয়ে পড়ল বিপাকে।
ট্রাকের হেলপার তার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে।
টের পেয়ে সে তার ওস্তাদকে (ড্রাইভার) জানায়। ট্রাক চালক ও আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে গণপিটুনি দেয়। সেটাই নিয়ম। না, এই ব্যাপারে কোনো অভিনবত্ব নেই। এমন গণধোলাইয়ের ঘটনা আকছারই ঘটছে সোনার বাংলায়।
চোর-ডাকাত-ছ্যাঁচ্চড়ে ভরে গেছে দেশ। দুর্নীতিবাজেও। এই তো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট বলেছে, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে গেছে। গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ছিল ১৩ নম্বরে। এবার দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় র্যাঙ্ক উপরে উঠে ১২ হয়েছে।
সাব্বাস দুর্নীতবাজদের গণধোলাই খেতে হয় না। কী আরাম। হারামের কাজ তারা মহানন্দে করে চলেছে। মহাজোট সরকারের সুবর্ণ আমল এভাবেই হয়ে উঠছে সুখময়।
হাতেমকে বেদম মারপিট তো করা হলোই।
অনেকে আচ্ছাসে পিটিয়ে হাতের সুখ করে নিয়েছে। ফেরি আসতে যে দেরি, সেই তকলিফ তারা ভুলে থাকতে পেরেছে এর ফলে। তাকে আরও একটা শাস্তি দেয়া হলো। সেটা হচ্ছে, চুরি করা রুইমাছটি দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে ৩০ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার ফতোয়া। মাছের লেজ কামড়ে ধরে হতভাগা হাতেমকে তাই করতে হয়।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বলেছেন, সে মাদকাসক্ত। ঘটনার সময় উপস্থিত সবার অনুরোধে এই অভিনব শাস্তি দেয়া হয়।
এই ঘটনায় খতরনাক কিছু টিপস পেয়েছি আমরা। সমাজের নানা অপরাধের অভিনব শাস্তি কি কি হতে পারে, তা বাতলানোর জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ওই যে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মতো সংস্থা আছে না! এক ধরনের প্যাকেজ আর কি! তারা খেটেখুটে প্রতিবেদন দিল।
এই কলামে জায়গা কম। মাত্র পাঁচটা সুপারিশ উল্লেখ করা হলো—
টেন্ডারবাজির শাস্তি : ধৃত মাস্তানদের পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি, হাতে হাতকড়া পরিয়ে টেন্ডার বক্সের সঙ্গে বেঁধে দুই দিন দুই রাত রেখে দেয়া। কিংবা সাপের মতো বক্সে বন্দি রাখা যায়। জনগণ যাতে তাদের আরামে দেখতে পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।
ফল ও মাছে ফরমালিন যারা দেয় : প্রকাশ্যে তাদের সেসব ফল ও মাছ ভক্ষণ করতে বাধ্য করা।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ফল ও মাছ খাওয়াতে হবে। অন্য কোনো খাদ্য দুই দিন নিষিদ্ধ। এই শাস্তি প্রদান পর্ব সম্পাদনের জন্য কাঁচাবাজারই স্পট হিসেবে উত্তম। চাইলে কোনো প্রাইভেট টিভি চ্যানেল এই ঘটনা সরাসরি সম্প্রচারও করতে পারে।
সরকারি খাল ও জমি যারা গায়ের জোরে দখল করে : খালের পচা ও দূষিত পানিতে দিনভর চুবিয়ে তাদের শিক্ষা দেয়া যেতে পারে।
তৃষ্ণা পেলে মনুষ্যবর্জ্যে ভরপুর ওই পানিই খেতে দেয়া হবে। এটাও করতে হবে আমজনতার উপস্থিতিতে। এই শাস্তির ভিডিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রায়শ স্থানীয় ডিশ লাইনের মাধ্যমে সেটা প্রচার করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে যত অনুষ্ঠান হবে, সেখানে এই ভিডিওর প্রচার বাধ্যতামূলক করা বাঞ্ছনীয়।
প্রাইভেট চ্যানেলে বিটিভির খবর প্রচার যেমন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেই মডেলে আরকি!
ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারী : ফাইল আটকে রেখে বা অন্যবিধ অবৈধ উপায়ে যারা টু পাইস কামাতে সিদ্ধহস্ত, থোড়াই কেয়ার ভাব যাদের, এই প্রেসক্রিপশন তাদের জন্য। নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় রাখতে হবে তাদের। সুনিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে তার/তাদের বাড়ি-ঘর ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। বমাল ধরতে পারলে তো কোনো কথাই নেই। খাদ্যের পরিবর্তে তাদের কাগজপত্র খেতে দিতে হবে।
ঘুষের টাকার ডামি টুকরা করে দেয়া যায়। কম্পিউটার প্রিন্টারের শ্বেতশুভ্র কাগজ নয়, দিতে হবে টোকাইরা যেসব কাগজপত্র কুড়িয়ে বাড়িয়ে ভাঙারির দোকানে বেচে, সেসব ধুলোমলিন কাগজ।
ইভটিজিংয়ে খ্যাতিমান বখাটে : স্কুল বা কলেজের নিকটবর্তী কোনো গাছের সঙ্গে তাকে/তাদের পিছমোড়া করে বাঁধতে হবে। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা লাইন ধরে গিয়ে তাদের চোখে-মুখে থুতু ছিটাবে। দুই দিন দুইবেলা চলবে এই কার্যক্রম।
ব্যাপক মাইকিং করতে হবে আগে। দু’দিন খাওন-দাওন বন্ধ। শুধু পানি। ডোবা-নালার অবিশুদ্ধ পানি। মাথা ন্যাড়া করে তাতে ঘোল ঢেলে দিতে হবে।
দুই কানের লতি সামান্য কেটে স্থায়ী একটা চিহ্নও রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ওদের বুকে থাকবে পোস্টার—তাতে লেখা থাকবে—আমি শয়তান, প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে আমার—য় একটা লাত্থি অন্তত দিন।
হাসান হাফিজ
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।