আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাত্র ২ বছরে বুশ ক্রিকেট থেকে অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট দলে

মন্দটাই মনে রাখে মানুষ। ভালোটা হাড়গোড়ের সঙ্গে মাটিতে মিশে যায় নিউ সাউথ ওয়েলসের বাউরালে জন্মানো এই ক্রিকেটারের শৈশব কেটেছে বাড়ির পেছনের বারান্দায় একটা স্টাম্প দিয়ে ছোট্ট একটা গলফ বলকে ক্রমাগত পিটিয়ে গিয়ে। ক্রিকেট রুপকথার অংশ হয়ে যাওয়া এই ঘটনা জানেন সবাই, আমরা কেবল জানিনা কোন দৈবশক্তির যোগে এই অমানবিক মনসংযোগের ক্ষমতা তিনি করায়ত্ত করেছিলেন। যিনি প্রায়শই দ্য ডন নামে অভিহিত, যার পুরা নাম স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান ছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। ডন ব্র্যাডম্যানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বলে অভিহিত করা হয়।

টেস্ট ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়কে বড় ধরণের যে কোন খেলাধুলার সব থেকে বড় অর্জন বলে অভিহিত করা হয়। তরুণ ব্র্যাডম্যানের ক্রিকেট স্টাম্প আর গলফ বল দিয়ে একা একা অনুশীলন করার গল্প অস্ট্রেলিয়ান রূপকথার অংশ হয়ে গিয়েছে। ব্র্যাডম্যান অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে মাত্র ২ বছরে বুশ ক্রিকেট থেকে অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট দলে ঢুকে পড়েন। ১৯ বছর বয়েসে ফার্স্টক্লাস অভিষেকের পর নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে ব্যাট হাতে ম্যাচের পর ম্যাচ পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন 'বাউরালের বিস্ময়-বালক', অবশেষে সুযোগ এলো জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার। ডাক পেলেন ২৮-২৯ মৌসুমের সফরকারী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের দলে।

ব্রিসবেনের সে টেস্টে অস্ট্রেলিয়া পরাজিত হলো ৬৭৫ রানে। ডন করলেন দু ইনিংসে ১৮ এবং ১। SiR Don Bradman বাদ পড়লেন দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে- সেই প্রথম এবং সেই শেষ। তৃতীয় টেস্টের দলে ডাক পেয়ে করলেন ৭৯ এবং ১১২। ২২তম জন্মদিনের আগেই ব্র্যাডম্যান রান করার অনেক রেকর্ড করে ফেলেন, যার অনেকগুলো এখনো টিকে রয়েছে।

শুরু হলো ব্রাডম্যান যুগ। ব্রাডম্যান মানে নিষ্ঠুর, ব্রাডম্যান মানে নির্দয়, ব্রাডম্যান ছিলেন- খুনী। এ সময়ে অস্ট্রেলিয়াসহ সারা বিশ্বে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল যা গ্রেট ডিপ্রেশন নামে পরিচিত। এই কঠিন সময়েই তিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়া আদর্শ হিসেবে আবির্ভূত হন। ভদ্রলোক কিন্তু ক্রিকেটটা সত্যিই মন্দ খেলতেন না।

২৩৪ ফার্স্টক্লাস ম্যাচে ৯৫.১৪ গড়ে ২৮০৬৭ রান এবং ৫২ টেস্ট ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৬৯৯৬ রান। গড় মাত্র (!!) ৯৯.৯৪। সেবার ৩৬-৩৭ মৌসুমে এশেজ সিরিজের সময় এডিলেডে এক রাত্রিতে বসে অধিনায়ক ডন কিংবদন্তী স্পিনার বিল ও'রিলি এবং নেভিল কার্ডাসের সাথে সারা সন্ধ্যা আলোচনা করে কাটালেন কি করে বেঁধে রাখবেন ওয়ালী হ্যামন্ডকে সেই পরিকল্পনায়। রাত এগারোটায় বাড়ি ফেরবার সময় নাকি 'সামান্য কাজ আছে' বলে গাড়ি থেকে নেমে খানিক ঘুরে এলেন হাসপাতাল। পরদিন ঘোষিত হলো ব্রাডম্যানের শিশুর মৃত্যুসংবাদ।

"স্যার ডন খেলার চেয়ে বড়"- অস্ট্রেলিয়ান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মেঞ্জিস এই উক্তি করে ভুল করেননি ; কি বলেন ?? ডনের ক্লান্তি বলতে কিছু নেই, তিনি নিরাবেগ। অন্য 'ভালো' ব্যাটসম্যানেরা যেখানে ৫০ রান করলেই আত্নতুষ্টিতে ভোগে সেখানে স্যার ডন ১৫০ এর আগে নাকি ব্যাটই তুলতেন না। প্রতি ৩ ইনিংসে ১টি করে সেঞ্চুরি, ১২টি ডাবল সেঞ্চুরি, ২টি ট্রিপল সেঞ্চুরি - কেবল পরিসংখ্যানই যথেষ্ট স্যার ডনের গ্রেটনেস বোঝাতে। (ভালো কথা,এহেন স্যার ডনের টেস্ট ক্যারিয়ারে ছয়ের মার ক'টি বলুনতো ? মাত্র ৬ টি !!)। জ্যাক ফিংগল্টন অযথাই বলেননি,"যে কোনো বল,এমনকি ওয়াইড বল পর্যন্ত ফস্কালেই ডনকে আঊট দিতে হবে।

"!!! স্যার ডনের কথা বলতে হলে বলতেই হয় 'বডিলাইন সিরিজের' কথা। ১৯৩০ এর সিরিজে ৭ ইনিংসে স্যার ডন রান তুললেন ৯৭৪। Ashes ফিরিয়ে আনতে ডগলাস জার্ডিনের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড হ্যারল্ড লারউডের গতির সাহায্যে আশ্রয় নিলো 'বডিলাইন' নামক অপকৌশলের। ক্রিকেট ইতিহাস এর তুল্য বিতর্কিত কিছু আর দেখেনি কখনো...। কল্পনা করুন, লারউডের রানআপের প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে সাথে এমসিসি'র ৩৩ হাজার ক্ষুদ্ধ দর্শক চ্যাঁচাচ্ছে- "বাস্টার্ড ! বাস্টার্ড !"।

স্যার ডনকে এই অপকৌশলে দমাতে পেরেছিলেন বটে জার্ডিন, এই সিরিজে তার রানের গড় ছিলো মাত্র ৫৬.১৪ !! ডনের ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে ছায়া ফেলতে এলো ২য় বিশ্বযুদ্ধ। প্রলয়ঙ্করী এই যুদ্ধ কি আরো অনেক কিছুর সাথে নিয়ে গেছে ডনের যাদু ?? সবার মতই এই সংশয় নিয়ে ৪৬-৪৭ এর সিরিজে ব্যাট করতে নামলেন ডন। ২৮ রানে ভোসের বলে স্লিপে আইকিন যা নিলেন , ডন বলেন তা ছিলো বাম্প ক্যাচ- যদি ও ইংরেজদের দাবি আম্পায়ার বোরউইকের এই ভুল সিদ্ধান্তেই ডন করেছিলেন ১৮৭- যা তার আত্ববিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়ে ইংরেজদের পোড়ালো ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে ও । অন্য অনেক কিছুর মতই টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত শুণ্যটিও স্যার ডনের। ৪৮ এর ওভালে শেষ টেস্টে নরম্যান ইয়ার্ডলির নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নামার সময় ব্যাটিং গড় ১০০ করতে স্যার ডনের প্রয়োজন ছিলো মাত্র ৪ রানের, এরিক হলিস নামের অখ্যাত এক লেগ স্পিনার তাকে পোড়ালেন হতাশায়।

জীবনে একবার মাত্র হিট আউট হয়েছিলেন স্যার ডন,যা হয়েছিলেন লালা অমরনাথের বলে (যার পুত্র মহিন্দর অমরনাথ ছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রথম বিদেশী কোচ। )। ডন জীবনে একবার-ই স্টাম্পড হয়েছিলেন; মজার ব্যাপার হচ্ছে উইকেট ভেঙ্গেছিলেন এক বাঙ্গালী- যার নাম ছিলো প্রবীর মিত্র !! ১৯৪৯ সালে স্যার ডন অর্জন করলেন সম্মানসুচক 'নাইটহুড' ৯২ বছর বয়সে জীবনের সেঞ্চুরি পুরোবার আগেই ব্রাডম্যান মারা গেলেন ২৫ ফেব্রুয়ারী,২০০১। । ২য় বিশ্বযুদ্ধটা না হতো; কোন সীমায় পৌছতেন তবে স্যার ডন ?? জানা নেই, কেবল এটুকু জানি - ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়কার who's whoতে স্যার ডন সম্বন্ধে লেখা হয়েছিলো ২১ লাইন, যা হিটলারের চেয়ে মাত্র ৮ লাইন কম এবং স্টালিনের চেয়ে ১৭ লাইন বেশী !!!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.