আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। গ্রামীণ টেলিকমের যে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ গ্রামীণফোনে রয়েছে তা সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একইভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী অন্য সব প্রতিষ্ঠানও সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রগুলো থেকে বলা হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকে তিনি বরাবরই এসব আশঙ্কা করে আসছিলেন।
গ্রামীণফোন দেশের সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র লাভজনক মোবাইলফোন অপারেটর। যেটি গত বছরে তার শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ২০৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী ৫৪টি প্রতিষ্ঠানে ‘স্বচ্ছতা’ নিশ্চিত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত ও সুপারিশ করার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, চার থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি থাকলেও বাকি প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমতি নেই। অর্থমন্ত্রী এও বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের ুদ্র ঋণের সাথে যেমন কোনো সম্পর্ক নেই, তেমনি গ্রামীণ জনপদে এগুলোর কোনো কার্যক্রম নেই।
গ্রামীণ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক গত রাতে বলেছেন, এটি হলো গ্রামীণ ব্যাংককে করায়ত্ত করে সরকারের লুটপাট চালানোর লক্ষণ। ড. ইউনূস গড়েছেন। এখন সরকারের রোষে পড়ে এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হবে।
গ্রামীণ টেলিকমের বিনিয়োগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অনেক টাকা দেখে সরকার লোভ সামলাতে পারছে না। তাই এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সবার আগেই তাদের নজর পড়েছে।
এ বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আশরাফুল হাসান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গ্রামীণ টেলিকমের অন্য একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গ্রামীণ টেলিকম একটা আলাদা প্রতিষ্ঠান। এর সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা নেই। এর মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নন, তিনি এর চেয়ারম্যান মাত্র।
তিনি আরো জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কিছুই বলা হয়নি, জানানো হয়নি এমন কি এসব বিষয়ে কোনো আলাপও হয়নি।
১৯৯৬ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গ্রামীণফোন লাইসেন্স পায়। পরের বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গ্রামীণফোন উদ্বোধন করা হয়। ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর গ্রামীণফোন বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ১৫ বছরের অপারেশন শেষে তাদের গ্রাহকসংখ্যা সাড়ে তিন কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব মতে, বর্তমানে দেশে মোবাইলফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি।
সেবা দিচ্ছে গ্রামীণসহ ছয়টি মোবাইলফোন অপারেটর।
১৯৯৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নরওয়ের টেলিনর মোবাইল কমিউনিকশন্সের সাথে বাংলাদেশে মোবাইলফোনের ব্যবসা শুরু করে গ্রামীণ টেলিকম। ড. ইউনূসের ভাষ্য অনুযায়ী গ্রামীণ মানুষের যোগাযোগ চাহিদা মেটানো এবং গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য তিনি তথ্যপ্রযুক্তির এ সেবাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।
বিভিন্ন সময় তার বক্তব্য অনুযায়ী নরওয়ে সরকারের সাথে তাদের অলিখিত চুক্তি ছিল পর্যায়ক্রমে গ্রামীণফোনের সব শেয়ার গ্রামীণ টেলিকমের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে টেলিনরের তরফে এ বক্তব্য বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে।
গ্রামীণফোনের মালিকানার মধ্যে বর্তমানে টেলিনরের শেয়ার রয়েছে ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। গ্রামীণ টেলিকমের রয়েছে ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ এবং সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনের শেয়ার ১০ শতাংশ।
সূত্র মতে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। এ জন্য তারা ধীরে-সুস্থে এগোচ্ছে। পরিচালনা পর্ষদে যে ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধি সদস্য যারা রয়েছেন, তাদেরও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, গত বছরের মার্চ মাসে ব্যাংকটি থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেয়ার পর মে মাসে তিনি আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেও এখনো সেখানে যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গরিবি কমানোর ভেতর দিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল পুরস্কার জয় করেছিলেন।
সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বর মাসে নরওয়ের একটি টেলিভিশন চ্যানেল ইউনূসের ুদ্রঋণের ফাঁদে দরিদ্র আটকা পড়ছে এবং তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকা গ্রামীণ কল্যাণ ফান্ড সরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলে। ওই অভিযোগকে উপলক্ষ করে সরকারের রোষে পড়েন ড. ইউনূস।
নরওয়ে সরকার তদন্ত করে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছিল, তহবিল স্থানান্তরের যে অভিযোগ উঠেছে সেটির নিষ্পত্তি হয়েছে দশক খানেক আগে।
তারপরও সরকার দমেনি। গত বছরের ২ মার্চ ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে নোটিশ জারি করে সরকার। ড. ইউনূস ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন আদালতে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত দ্য ইকোনমিস্টের মতে, এতে সুবিচার পাননি তিনি।
ত বছরের মে মাসের ১৩ তারিখ বাধ্য হয়ে তিনি সরে দাঁড়ান।
তার স্থলাভিষিক্ত হন নূরজাহান বেগম। বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভার রয়েছে সাবেক জেনারেল ম্যানেজার মো: শাহজাহানের ওপর। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।