আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামীণ ব্যাংক বিল সংসদে

গত ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর রোববার ‘গ্রামীণ ব্যাংক বিল-২০১৩’ সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এ সংস্থার অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে আইনভঙ্গের জন্য শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে এ প্রস্তাবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামরিক শাসনামলে নেয়া বিভিন্ন অধ্যাদেশ পরিবর্তন ও বাতিলের  কাজ শুরু করে। এরই আওতায় ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ বতিল করে নতুন আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে।


গ্রামীণ ব্যাংকের সেবামূলক কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং সরকার ও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থার মালিকানা বহাল রেখে ঋণ গ্রহীতা সদস্যদের শেয়ার মালিকানা অর্জনের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আইনের এই সংধশোধন বলে অর্থমন্ত্রী বলেছেন।
তবে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে আসছেন এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলছেন, সরকার ব্যাংকটি ‘ধ্বংসের’ ষড়যন্ত্র করছে।
আগে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল সরকারকে আর্থিক প্রতিবেদন দিত। বিলটি আইনে পরিণত হলে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেও আর্থিক প্রতিবেদন দিতে হবে তাদের।


এর মধ্য দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে বলেও ইউনূসের অভিযোগ।
সংশোধনের প্রস্তাবে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৩৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায় সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশই রাখা হয়েছে। ৭৫ শতাংশ থাকছে গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের কাছে। সরকার সময় সময় পরিশোধিত শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করতে পারবে।


আরো বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনধিক ৬০ বছর পর‌্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন। ব্যাংকের বাছাই করা তিন থেকে পাঁচ জনের প্যানেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনক্রমে নিযুক্ত হবেন। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ হবে তিন বছর।
বয়সের কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে সরকারের সঙ্গে নোবেলজয়ী ইউনূসের তিক্ত সম্পর্ক চলছে।
১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হওয়ার পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

২০০৬ সালে তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে শান্তিতে অবদানের জন্য জন্য নোবেল পুরস্কার পান।  
অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের মার্চে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে হেরে ইউনূস পদত্যাগ করেন।
নতুন আইনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সরকারের নিয়োগ করা তিন জন এবং ঋণ গ্রহীতা অংশীদারদের দ্বারা নির্বাচিত নয় ব্যক্তির পরিচালক হওয়ার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই বোর্ডের পরিচালক হলেও তার ভোটাধিকার থাকবে না।


গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে আগে ১ বছর কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত খসড়ায় তা ১ বছর ও ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া এ সংস্থার নাম কেউ বিজ্ঞাপনে বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল অধ্যাদেশে। আইন হলে এই সাজা হবে ১ বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা।
২০১০ এর ডিসেম্বরে নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে।

এরপর দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় একটি কমিশন গঠন করে সরকার। সম্প্রতি কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়, যাতে ব্যাংকের বর্তমান কাঠামো বদলে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করেছে।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.