বাংলাদেশের চিকিত্সা সেবায় শিল্পকলার তাত্বিক ও ব্যবহারিক গুরুত্বের স্বরূপ নির্ণয় বাংলাদেশে শিল্পকলার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার বয়স এখন প্রায় ছয় দশক অতিক্রান্ত। এই সময়ের মাঝে এখানে শিল্পকলার একটি মোটামুটি শক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিভূমি গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশের বিশ্বদ্যিালয়ে উচ্চতর শ্রেণীতে চারুকলার পঠন-পাঠন প্রবর্তিত হয়েছে বেশ অনেকদিন। একটি দেশের শিল্পকলার জন্য ষাট বত্সর খুব বেশী সময় না হলেও একথা নিদ্বির্ধায় বলা যায় যে, গত ছয় দশক ধরে প্রশিক্ষণ, চর্চা এবং দেশী ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ইত্যকার কর্মকান্ডের মাধ্যমে এখানে একটি শৈল্পিক পরিবেশ গড়ে উঠার পঠভূমি তৈরি হয়ছে। কিন্তু শিল্পকলা এখন পর্যন্ত ব্যাপক জনসাধারণের দূরের বস্তু হয়েই আছে ।
সামাজিক সাংস্কৃতিক চেতনার অনগ্রসরতার কারনে শিল্প সম্পর্কে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ বিভ্রান্ত। শিল্প যেন এক ভিন্ন জগতের ব্যাপার, সমাজের মূল স্রোতধারার সাথে এর আপাত সম্পর্ক যেন ক্ষীণ ও অস্পষ্ট। অথচ, শিল্পকলা কোন ভূঁইফোর গজিয়ে ওঠা ব্যাপার নয়। মানব সমাজের ইতিহাসের সাথে কলাশিল্পের সম্পর্ক প্রায় অবিচ্ছেদ্য। সভ্যতার উষালগ্নেই আমরা দেখেছি শিল্পকলা গুহামানবদের জীবন-সংগ্রামের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছে।
প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে শিল্পকলা ছিলো পারলৌকিক সাফল্যের চাবিকাঠি। মধ্যযুগীয় ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থায় শিল্পকলা ধর্মীয় প্রচারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় ঐতিহ্যে ইহলৌকিক নির্বাণ লাভের প্রয়োজনে ধর্মীয় কর্মকান্ডের অঙ্গ হয়েছে শিল্পকলা। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে যুগে যুগে বিভিন্ন প্রয়োজনে ও পরিস্থিতিতে মানুষের সমাজের রূপ যেমন পাল্টেছে, সভ্যতার অঙ্গ হিসেবে শিল্পকলাও স্বাভাবিক নিয়মে নিজস্ব চরিত্র আর বৈশিষ্ট্য পেয়েছে। মানব প্রকৃতির আদিম প্রবৃত্তিগুলির খুব একটা পরিবর্তন না হলেও পরিবর্তিত সমাজে শিল্প ও শিল্পবোধ সম্পর্কে মানুষের ধ্যান-ধারণা চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
শিল্প সম্পর্কে সনাতনী ধ্যান-ধারণাও বদলে গেছে অনেক।
আধুনিক কালে শিল্পের রসাস্বাদন আর গুণাগুন বিচারের ক্ষেত্রে সমাজের সাথে এক জটিল সম্পর্ক তৈরী করেছে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নকামী দেশগুলিতে, যেখানে শিক্ষার মান অনেকক্ষেত্রে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বিপরীত ভাবে বলতে গেলে উন্নত ও অগ্রসরমান দেশগুলোতে শিল্পকলা বিগত পাঁচশত বছর ধরে বিকশিত হয়েছে তার নিজস্ব শিল্পান্দোলনের মধ্যে দিয়ে; যা ছিলো উক্ত দেশ-কালের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাজ জীবনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের হাতিয়ার। বর্তমানেও এই উন্নত ও অগ্রসরমান দেশগুলোতে শিল্পকলা তার বহুমাত্রিক স্বরূপ নির্মাণে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
যার ফলশ্রুতে শিল্পকলা তার নন্দনতত্ত্ব নিয়ে শুধুমাত্র সামাজের সংখ্যালঘিষ্ঠের কাছেই নেই বরং ব্যাপক জনসাধারণের কাছে এখন তা নিত্য প্রাসংগিক।
এ প্রসঙ্গেই আমরা উন্নত ও অগ্রসরমান দেশগুলোতে চিকিত্সা সেবায় শিল্পকলার বহু প্রচলিত তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ভূমিকার কথা আলোচনা করতে পারি, যেখানে শিল্পকলা মানুষের মৌলিক প্রয়োজনে অপরিহার্য এক গুরুত্ব বহন করে চলেছে তার সুকুমার নান্দনিকতায়।
যেহেতু বাংলাদেশ একটি অনুন্নত ও উন্নয়কামী দেশ এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক চেতনার অনগ্রসরতার কারণে শিল্প সম্পর্কে যেহেতু আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ বিভ্রান্ত এবং সামাজের মূল স্রোতধারার সাথে শিল্পকলার আপাত সম্পর্ক যেহেতু ক্ষীণ ও অস্পষ্ট, সুতরাং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শিল্পকলা ও শিল্পবোধ সম্পর্কে মানুষের ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে, আমাদের মৌলিক প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য খাতের চিকিত্সা সেবায় শিল্পকলার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গুরুত্বের স্বরূপ নির্ণয় অপরিহার্য। যার প্রায়োগিকতায় বাংলাদেশের মত একটি উন্নায়নকামী দেশে, যেখানে শিল্পকলা ব্যাপক জনসাধারণের নিকট “দূরের বস্তু”, সেখানে শিল্পকলা তার বহুমাত্রিকতা নির্মাণে নিত্য প্রাসঙ্গিকতায় অধিষ্ঠিত হবে নিঃসন্দেহে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।