১.
প্রায়শই আমরা অত্যন্ত গর্বভরে বলিয়া থাকি যে, ইহা ৯০% মুসলমানের দেশ ও এই জাহানের অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম জুমহুরিয়াত। বাত সহি। ইহা বড়াই করিবারও বিষয়ই বটে, কোনো দেশে ‘হোমোজিনিটি’ কায়েম করিতে পারাটাও একটি কামাল কর্ম। কিন্তু, এই যে আমরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করিলাম, তাহা কি রূপে হইলো? বিলাতি সাহেবদের আমল ছাড়িয়া দিলাম, ১৯৫১ এর আদমশুমারিতেও এই দেশে হিন্দু-মুসলমানের গণনা ছিলো প্রতি একশ’তে ৩৫ ভাগ : ৬৫ ভাগ, মোটের উপর এই প্রকারের। ১৯৭১ এর পর এক হিসাবে পাইতেছি ২৫%:৭৫%।
’৯০ এর দশকে তাহা দাড়াইলো ১০%:৯০%। আর পিছলি শুমারিতে এই প্রথম হিন্দুদিগের শতকরা সংখ্যাটি দ্বি-অঙ্ক থেকে এক-অঙ্কে আসিয়া ঠেকিয়াছে। সকল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর যোগ লইয়া ১০ ভাগ, বাদ বাকি আমরা। অদূরভবিষ্যতে আমারা ১০০% ভাগে পরিণত হইব আশা রাখিতেছি! এই যে দেশে হিন্দুর সংখ্যা কমিতে লাগিলো, ইহার একটি রাজনৈতিক কারণ হইলো ইহাদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা। মনে করা হইয়া থাকে, বাংলাদেশের হিন্দুদিগের ভোট হয় যাইবে আওয়ামী লীগে অথবা যাইবে বাম রাজনৈতিক পাত্রে।
কারণ দেখা গিয়াছে যে, বামপন্থি রাজনীতির একটা গ্রহণযোগ্যতা বাঙ্গালী হিন্দুর ভেতর বাঙ্গালী মুসলমানের হইতে অধিক রহিয়াছে। এই কথাটির পক্ষে উদাহরণ হইল পশ্চিমবঙ্গ। সেইখানে বামফ্রন্ট সরকার দীর্ঘ ৩০ বছর রাজ করিয়াছে এবং অদ্যবধি প্রধান বিরোধীদল হিসাবে জারি আছে একটি হিন্দু-প্রধান জনগোষ্ঠীর মধ্যে। ফলে এইদেশের ডানপন্থি শক্তিগুলো, সে পাকিস্তান জামানায়ই হোক বা বাংলাদেশ আমলে, চেষ্টা করিয়াছে ইহাদেরকে নানা প্রকার ভয়-ভীতি দেখাইয়া হয় ভোট নিজেদের দিকে টানিতে বা নিদেনপক্ষে ভোট দেওয়া হইতে নিবারণ করিতে। ইহারই বাইপ্রোডাক্ট হইলো হিন্দু জনগোষ্ঠীর এইদেশকে স্বদেশ হিসেবে না পাইয়া ভারত চলিয়া যাওয়া।
হিন্দুদিগের সংখ্যার অধঃগতি আর এদেশে বামপন্থার অধঃপতনের ভেতর কোনো সম্পর্ক সত্যই আছে কি না তাহারও গবেষণা হইতে পারে। তাহার সহিত তালাশ হওয়া জরুরী বহুল আলোচিত ও বিখ্যাত ‘বাঙালী মুসলমানের মন’-এ যে একটি অদ্ভূত কম্যুনিস্ট-ভীতি ও বিতৃষ্ণা রহিয়াছে সে মামলাতেও।
যাহাই হোক, একপ্রকারের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ অতি সম্প্রতী যেন মাথা চাড়া দিয়া উঠিয়াছে। ইহারা যাহকে বলে ‘পিউরিটারিয়ান’, কোনো ভিন্নমত মানিতে নারাজ। ইহাদের সর্দার হইয়াছেন এক সাবেক নাস্তিক কিন্তু বর্তমানে মাওলানার ভেকধারী কবি।
তিনি ফ্যাসিবাদ কী, মুক্তিযুদ্ধ কী, মানবাধিকার কী, গণহত্যা কী, এসলাম কী এই সকল বিষয়ে নব নব সব এলেম তাহার শিষ্যদিগকে দিতেছেন। তাহারই অংশ হিসাবে ধর্মীয় ভিন্নমতাবলম্বী যে সকল লোক ব্লগে বা ফেইসবুকে সংশয়বাদী লেখা-জোখা করিতেছে, তাহাদের গ্রেফতার শুরু হইয়াছে। কেননা, যেহেতু সেই মৌলোভি কবি, ‘আমারদ্বেষ’ পত্রিকা ও হেফাযতে এসলামের নজরে উহারা মুসলমান নামধারী (সকলে নহে) হইলেও প্রকৃতপ্রস্তাবে মুরতাদ, তাই উহারা থাকিলে হয়ত রাষ্ট্রের ১০০% খতনা সম্পন্ন হইবেনা, একটা গোল বাঁধিবে। তাই খাঁটি মুসলমানি রাষ্ট্রের স্বার্থে উহাদেরকে জল্লাদখানায় প্রেরণই উপযুক্ত হইবে। আওয়ামী লীগ আবার ভাবিয়া বসিলো, এই সাথে যদি কিছু রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীও কাটা পড়ে তো সোনায় সোহাগা।
একটি গল্প শুনিয়াছিলাম। একদা এক রাজা স্বপ্নে দেখিলেন পরদিন এক কুদরতি বারাসাত হইবে। যাহারা উহাতে ভিজিবে তাহারা সকলেই পাগল হইয়া যাইবে। রাজা এক ফঁন্দি আটিলেন। তিনি কাওকে এই দিব্য-স্বপ্নের কথা কহিবেন না।
দেশে তিনি একলাই সুস্থ থাকিবেন, তাহা হইলে প্রজাদিগের উপর ছড়ি ঘুরাইতে আরও সুবিধা হইবে। পরদিন রীতিমত বর্ষা শুরু হইলো। সকলেই বিকারগ্রস্থ হইল, শুধু রাজা বাদে। কিন্তু, রাজাকেই পাগলাগারদে ঢুকানো হইল, কারণ রাজ্যময় অপ্রকৃতস্থদের নিকট রাজার স্বাভাবিক কাজ-কর্মই অস্বাভাবিক ঠেকিতে লাগিল। আমাদেরও সেই হতভাগ্য রাজার মতন দশা হইতেছে কিনা বুঝিয়া দেখা দরকার।
দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে রাজনৈতি-অর্থনৈতিক-সামাজিক অধিকারের বাহিরে রাখিয়া তাহাদেরকে কেবলই অন্ধকারের দিকে ঠেলিয়া দেতেছি। আমরা শহরের ঝলমলে আলোতে বসিয়া সাহিত্য ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা করিতেছি। কিন্তু, প্রদীপের চারিপাশে যে আঁধারের চাষ আমরা হইতে দিতেছি, তাহা আখেরে বাতির আলোকেই না গিলিয়া খায়।
২.
জননেত্রী শেখ হাসিনাও অবশেষে সাচ্চা মুসলিমা’র মতন ঘোমটা টানিয়া বসিলেন। তিনিও উষ্মা প্রকাশ করিলেন ‘শাহবাগীদের ধৃষ্টতা’ দেখিয়া।
তিনিও মত দিলেন, “শাহবাগ বন্ধ করিয়া দেওয়াই কর্তব্য, কারণ উহারা মায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগাটিকে পর্যন্ত নির্দলীয় করিয়া ছাড়িতেছে!” দেশনেত্রী বেগম জিয়া আর লে. জে. হু. মু. এরশাদ তো আগে হইতেই এই দাবী জানাইয়া আসিয়াছিলেন। অবশেষে শাহবাগকে কেন্দ্র করিয়া জাতীয় রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব ঐক্যমত্য কায়েম হইল। ভালোই হইল। বোম্বাই সিনেমার মতন নাদান বয়সে হারাইয়া যওয়া একই পিতার ঔরসে ও একই মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া তিন ভাই-বোনের যেন মিলন ঘটিল! তৌহিদী জনতা তাহাতে হাতে তালি না দিয়া আর পারিল না। কিন্তু, তাহারা ইহা বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছে না, লংমার্চ করা যে ভুজঙ্গ তাহারা দুগ্ধ-কদলী দিয়া পুষিতেছেন তাহা বাবুরাম সাপুড়ের ‘করে নাকো ফোঁস-ফাঁস, মারে নাকো ঢুঁস-ঢাঁস’ কিসিমের নহে, বরং ইহাদের আশীতে বিষ রহিয়াছে।
তামাশার বাত হইল, বাঙলার অবিসংবাদিত যে রাজনৈতিক বেশ্যাকে তোষামোদকারীরা ‘পল্লীবন্ধু’ বলিয়া ডাকে, তাহার জন্য খদ্দের ঠিক করিতে পটলা দালালরূপে শাপলা চত্বরে ঘুরঘুর করিতে দেখা গেলো গলিত সাবেক-কম্যুনিস্ট-লাশ কাজী জাফর আহমদকে। ইনার চরিতামৃত হইতে বাস্তবিকই আমাদিগের অনেক কিছু তালিম লইবার ও হুঁশিয়ার হইবার রহিয়াছে।
৩.
স্বভূমির এই যে বর্তমান দুঃখ-দুর্দশা তাহার সিংহভাগ দায়িত্ব অবশ্যই বর্তমান শাসকশ্রেণীর উপরই বর্তায়বে। এই শাসকশ্রেণী মূলত দ্বিধাবিভক্ত। মোটা দাগে, একভাগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ী আর একদল ধর্মব্যবসায়ী।
ইহারাই বাঙলার মানুষের এইদুইটি যে প্রবল মূল্যবোধ রহিয়াছে, তাহা পুঁজি করিয়া পালাক্রমে হুকুমত করিয়া থাকে। ইহাদের মূল উদ্দেশ্য প্রজাপালন ও হিতকরণ নহে, বরং লুটপাটের মাধ্যমে ‘পুঁজি আরোহন’ করা। তাহাদের মধ্যে যে বাহাস তাহা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের তরিকা কী হইবে তাহা লইয়া নহে, লুট করা মাল-ছামানের দখল ও হিস্যা লইয়া। আমাদিগের সামনে যে সংকটটি বর্তমানে হাজির হইয়াছে তাহার মূলে এই যে, শাসকশ্রেণীর স্বাধীনতার চেতনা ব্যবসায়ী যে ভাগটি হালে গদিনশীন, তাহারা অপর অংশটির আগামীবারে মসনদে চড়িয়া পুঁজি গোছাইবার যে ঐতিহ্যগত রীতি তাহা ঠেকাইতে বে-লাগাম ভাবে চেষ্টা করিতেছে। এই কোশেস যে ধর্মব্যবসায়ী উপদলটিও নিজেদের মতন করিয়া পূর্বে করে নাই তাহা স্বয়ং গোয়েবলসও বলিতে লজ্জা পাইবেন।
যাহাই হোক, এইরূপে অসুরদিগের দুই মজহাবের মধ্যে বহুকাল ধরিয়াই হানাহানি চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু, আশু সংকটের দোষের বেশির ভাগটা বর্তমান সরকারকেই লইতে হইবে, কারণ তাহারই নামদার। তাহাদের ভুলে যদি অসুস্থ কোনো শক্তি, তাহা উর্দিধারী শিবির হইতেই হোক আর জোব্বার লেবাসেই হোক, জনগণকে পিছাইয়া দিতে রাজদণ্ড করায়ত্ত্ব করে, তবে দায়-দায়িত্ব ক্ষমতাবানদিগেরই নিতে হইবে অধিক পরিমানে। তাহার পর ভাগ পড়িবে বিরোধী পালের পাতে। কারণ, শাহবাগের গণজাগরণ না হইলে হেফাজতীরাও মাঠে নামিবার ছুঁতা পাইতো না, আর লীগ যদি ভোট ও জোটের রাজনীতি করিতে যাইয়া কসাই কাদেরের বরাবর প্রাপ্য তাহাকে প্রদানে গলদ না করিতো, তাহা হইলে শাহবাগও হয়ত এইসময়ে ঘটিতো না।
অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী দল যদি সিংহাসনে বসিতে চার্চিলের ন্যায় শয়তানের সহিতও দোস্তি করিবার নিয়াত লইয়া শাসকশ্রেণীর সর্বনিকৃষ্ট উপাংশ জামায়াতের কোলে চড়িয়া না বসিত, তাহা হইলে উহারাও (এসলাম ব্যবসায়ী ধনতান্ত্রীক) এত বুলান্দ হইত না।
৪.
বর্তমানে দেশে বাম ও ডানপন্থিদের ভেতর যতগুলি র্যাডিকাল বাহিনী রহিয়াছে, কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রীক হেফাজতে এসলাম তাহাদের মধ্যে দলে ভারীই কেবল নহে, বরং সর্বাপেক্ষা সংগঠিত ও প্রভাবশালী রূপে যে অন্তত সাময়িক ভাবে হইলেও আত্মপ্রকাশ করিয়াছে, তাহা আর অস্বীকার করিবার উপায় নায়। মুশকিল হইয়াছে, ফরহাদ মযহার যেমনটি মনে করিয়া থাকেন, ইহারা তেমনটি ইনকিলাবী নহে। বরং, গোঁড়া রক্ষণশীল ও পশ্চাদপদ, অর্থাৎ প্রতিবিপ্লবী। কিন্তু, ইহাদেরকে এখন আর উপেক্ষা করিবারও উপায় নাই।
তাহা হইলেও, ইহারাই যে দেশের প্রধান সমস্যা তাহা মনে করি না। কারণ তাহাদের ১৩ দফা পড়িয়া তাহাদের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকে পর্যন্ত দস্তুরমতন ঘামিয়া গিয়াছেন। অতয়েব, উহাদের ১৩ দফাই উহাদের রাজনৈতিক পরাজয়ের জন্য যথেষ্ট হইতে পারিরে। বরং ইহারা মুসিবতের উপসর্গ বৈ নহে। মহর্ষি আব্দুর রাজ্জাক তাঁহার ‘Bangladesh: State of the Nation’ শীর্ষক ভাষণে ১৯৮০ সালেই বলিয়াছিলেন যে, জনসংখ্যা সমস্যা (তখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের যুগসন্ধিক্ষণ চলিতেছে) দেশের বৃহত্তম সমস্যা নহে।
সমস্যা যদি কিছু থাকিয়া থাকে তাহা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তাহার ইনসাফভিত্তিক বাটোয়ারার অনুপস্থিতির মাঝে। দুনিয়াবী উন্নয়ন হইলে জনসংখ্যা আপনাই কমিয়া আসিবে। এই কিছুদিন আগেই পণ্ডিত সলিমুল্লাহ খানও একই নসিহত করিয়া তাঁহার ‘মানবাধিকার ও মৃত্যুদণ্ড বিষয়ক অধিকন্তু’ প্রবন্ধে দেখাইয়াছেন যে, পশ্চিমাদের প্রেস্ক্রিপ্সন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড রোধের বটিকা খাইলেই আমাদের সমাজে আদমীর হক কায়েম হইয়া যাইবে না, বরং শোষণমুক্ত সমাজ ও অর্থনৈতিক বাড়-বাড়ন্ত হইলেই কেবল মানবাধীকার খতরা-মুক্ত হইবে। একই সুরে বলা যায়, হেফাজতের উত্থানে ভীত হইয়া আমারা যদি আবার প্রতীচ্য এর দেখানো ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ কৌশল গ্রহণ করিয়া বসি, তাহা হইলে সকলই বরবাদ হইবে। বরং, আপাতত ইহাদেরকে যুক্তিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমে মোকাবিলা করিয়া নিষ্ক্রয় করিতে হইবে।
আর শেষ বিচারে, ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতী করিতে পারিলে ইহাদের জোরের জায়গাগুলি এমনিতেই ভাঙ্গিয়া যাইবে। কারণ, যদি ইহাদের বড় অংশ সত্যই কৃষকশ্রেণী হইতে আসিয়া থাকে তবে বলিতে হইবে, ইহাদের মাঝে শ্রমিক শ্রেণীর লোক কিছুপরিমাণে কম রহিয়াছেন। অর্থাৎ, কৃষক হইতে মজদুর যখন শহুরে শ্রমিক হইতেছেন, তখনই তাঁহাদের একটা সামাজিক উত্তরণ সাধিত হইতেছে; তাঁহাদের মাঝে ধর্মান্ধতা, পশ্চাতমুখীতা, আর কুসংস্কার কমিতেছে। আর এইগুলিই হইলো হেফাজতীদের মতন দলের আসল শক্তির জায়গা। তাই যত দ্রুত সম্ভব অর্থনৈতিক, সামাজিক, ও রাজনৈতিক সাম্য ও অগ্রগতী হাসিলের মাধ্যমেই সম্ভন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে নির্মূল করা, অন্যথা নহে।
৫.
সেদিন রাস্তা দিয়া যাইতে যাইতে দেখিলাম, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালক সমিতির বার্ষিক সভা ও ভোট হইতেছে। চারিদিক পোস্টারে-পোস্টারে ছাহিয়া গিয়াছে। লক্ষ্য করিলাম, বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবরের পাশা-পাশি প্রায় সকল পোস্টার-লিফলেটেই বড়-বড় অক্ষরে লিখিত, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। দেখিয়া ভালোই লাগিল, একটা পুলকও জাগিলো। কিন্তু, এই বাক্যের সত্যকারের মর্মার্থ কি ঐ শ্রমিকদিগ জানেন? তাহারা কি আসলেই নিজেদের জন্য একত্রিত হইতে পারিবেন? নাকি মজলিস করিবেন অন্যদের স্বার্থে? তাহা না হইলে আওয়ামী শ্রমিক লীগ ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের মিছিল এত লম্বা হয় কি প্রকারে? গ্রামের কৃষককুলই বা কি রূপে জিকিরের সহিত দেলোয়ার সাঈদীর মাহফিলে যোগ দেয়? ইহাদের মাঝে প্রগতিশীলদের তেমন চোখে পড়িবার মতন কাজ আজ হাতে গোনা যাইবে হয়ত।
ফলে ইহারা সহজেই পথভ্রষ্ট হইতেছে। যদি ইহাদেরকে আমারা কায়েমি-স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর করতল হইতে আজাদ করিতে না পারি, ইহাদের মাঝে শ্রেণীচেতনা না জাগাইতে পারি, তাহা হইলে ভবিষ্যতেও বাকস্বাধীনতার উপর আঘাত আসিতে বাধ্য। কারণ, এই সংখ্যাগুরু মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ লইয়া, ইহাদেরকেই ভুল বুঝাইতে ও ইহাদের ভোট পাইতেই আজ বাকস্বাধীনতাকে রুদ্ধ করা হইতেছে। ইহারা সচেতন হইয়া যে দিন দাবি তুলিবে, ‘ভাঁওতা চাহি না, ন্যায্য অধিকার চাহি’, সেইদিন সরকার ও অপরাপর রাজনৈতিক দল ‘ম্যাকার্থিয়ান’ কায়দায় অন্তর্জালের প্রথাবিরোধীদের লিস্টি বানাইবার এরাদা না করিয়া কাওমকে ভাত-কাপড় জোগাইতে অধিক ব্যস্ত থাকিবে।
০৮/০৪/১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।