কত মানুষ লাশ হয়ে যায়, বেডরুম থেকে রাস্তায়, খুব সস্তায়। আমরা চুপ করে থাকি। এ জনপদে একটা কুকুরের লাশ ,একটা বেওয়ারীশ কুকুরের মৃতদেহ যে মূল্য পায় বোধ করি দোপেয়ে মানুষগুলোর ঐ মূল্যটুকুও নেই। ভীষন অসহায় লাগে যখন ভাবী কিসের পানে এগিয়ে চলেছি আমরা। এ কেমন সমাজ যেখানে অহরহ হারিয়ে যাচ্ছে জ্বলজ্যান্ত মানুষ যারা খনিক আগেও হেঁটেছে, চলেছে, ফিরেছে, কথা বলেছি মায়ের সাথে, তাঁর আদরের ছোট্ট মেয়েটির সাথে কিংবা তাঁর স্ত্রীকে কোন ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে যা আর কোনদিন পূরন হবার নয়! আমরা কিভাবে সহ্য করি এই অন্তর্ধান।
কি রহস্য এর পেছনে। কারা করছে এসব? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা নির্বাক, সরকার নিশ্চুপ, জনতা ভাবলেষহীন। কাদের কাছে ফরিয়াদ জানাবে ঐ অসহায় পরিবারগুলো যারা এখন প্রিয়জনদের জীবিত ফিরে আসার বদলে তাদের লাশ ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন। দায়িত্বশিলদের আশ্বাস; এরপর ৪৮ ঘন্টা, ৪৮ দিন-মাসের বিরতি এরপর সবাই নীরব। অহর্নিশি কেবল কেঁদে চলেন বৃদ্ধা মা, শোকে নির্জীব পিতা, নবপরিণিতা স্ত্রী।
আর সময়ের দেয়ালে আঘাত আঘাতে থেমে যাওয়া প্রশ্নবান সেই ছোট্ট মেয়েটির,"বাবা কখন ফিরবে?বাবা কখন ফিরবে????" কি জবাব দেবে এই সমাজ সে প্রশ্নের, কোন সাহসে সে মায়ের চোখ মুছতে যাবার ধৃষ্টতা দেখাবে। হত্যা,গুম,খুন অপরাধেরই একটি প্রকারভেদ। এটা সমাজে থাকতে পারে। তার অর্থ কি এই দিন কয়েকের বিরতিতে একার পর এক মানুষগুলো সব হারিয়ে যাবে আর আইনের রাখালেরা দায়িত্ব এড়িয়ে বিবৃতি দিয়েই যাবেন। এই যদি হয় রাষ্ট্রের ধারনা তাহলে এমন রাষ্ট্র আমরা চাইনা।
তাহলে একে মানুষের দেশ নয়, হিংস্র আর মাংশাসী প্রানী সম্বলিত কোন বুনো জঙ্গল ঘোষনা করা হোক তখন আমরা আর বিচার চাইবো না। কিন্ত পরিবর্তনের ঘোষনা দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকার যদি একটি গুমের ঘটনারও জবাব দিতে না পারে তাহলে তাদের পদত্যাগ আমরা চাইতেই পারি।
জানি আমাদের লেখায় কারো কিছু আসবে যাবে না। আমাদের ক্ষীন কণ্ঠ এতো বড় কান অবধি পৌঁছবে না জানি। তারপরও অসহায় ক্রোধ নিবৃত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাই কলমের ঘায়ে কিংবা কি-বোর্ডের নির্বাক বোতামে।
আমরা আমাদের দায়িত্ব তুলে দিয়েছি একদল হায়েনার হাতে। এখন আমাদের কান্নার রোল কেবল তাদের বিনোদনের আর দশটা উপায়ের মতই একটা উপায়। তাদের আশ্বাস আমাদের মৃতদেহগুলোর প্রতি শ্লেষ মিশ্রিত করুনার হাসি। দোষ যে আমাদেরই। আমরাই এদের উপরে তুলেছি।
আর এখন এদের পা চাটতে আমাদের এত কিসের আপত্তি! আমি মেঘ আর তারমতো অনেক শিশুকে সান্ত্বনা দিতে চাইনা। তাদের বলতে চাই-তোমাদের মা-বাবা আর কোনদিন ফিরে আসবেন না। কেঁদে লাভ নেই। দুঃখ পেলে পাও তাতে আমাদের কিচ্ছু আসে যায় না। তোমার বাপ মরেছে আমার কি? স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র বা প্রধানমন্ত্রীর তাতে কি আসে যায়? এ সমাজের কি দায় পড়েছে তোমার পিতৃহত্যার প্রতিবিধান চায়? যাও, দূর হয়ে যাও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।