বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময় থেকে পরীক্ষা পেছানোটা ছাত্রছাত্রীদের সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকেরা দেখতে চান যৌক্তিক কিছু কারণ, শিক্ষার্থীরাও দেখিয়ে দেন। আসুন, দেখে নিই তথাকথিত যৌক্তিক কারণ হিসেবে দেখানোর মতো আরও কিছু আইডিয়া|
প্রেমিকার মন রক্ষার্থে
স্যার, লজ্জার মাথা খেয়ে বলছি, আপনি জেনে খুশি হবেন, কিছুদিন হলো প্রেমে পড়েছি। এটাই আমার প্রথম প্রেম। বোঝেন তো, কত ঝামেলা।
অভিজ্ঞতা কম, এর ওপর আজ তার এটা করে দাও তো কালকে সেখানে নিয়ে যাও। কত কাজ! মোটামুটি দৌড়ের ওপর কাটছে সময়গুলো। এই সময় পরীক্ষার রুটিন বিনা মেঘে বজ্রপাতের চেয়েও ভয়ংকর। আমার এই সুখের সময়টুকু পরীক্ষার চাপে যেন তছনছ না হয়ে যায়, তাই আমার একান্ত অনুরোধ, দয়া করে পরীক্ষা পেছান।
নোট সংগ্রহের সময় দরকার
স্যার, আপনারা তো পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিলেন, ছাত্রদের কষ্ট কি আর বুঝবেন? আমাদের একমাত্র অন্ধের যষ্ঠি বিশিষ্ট নোট-লেখক সোহাগ মিয়া লোডশেডিংয়ের জ্বালায় সব নোট লিখে শেষ করতে পারেনি।
বিকল্প নোট-লেখক মাহতাব ব্রেকআপের কারণে নোট লেখা ছেড়ে দিয়েছে। এখন নোট ছাড়া কি আমাদের এক মুহূর্ত চলে? তা ছাড়া ছাত্রজীবনে নোটের গুরুত্ব আপনিও জানেন। নোটগুলো তৈরির কিছু সময়ের জন্য পরীক্ষা পেছানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বিভিন্ন প্রকার খেলা দেখা
স্যার, সমাজ আমাদের ভালো থাকতে দিল না। আগে তো খালি বিশ্বকাপ দেখেই সুখে থাকতাম, এখন তো স্যার সেই দিন নাই।
বিপিএল, এশিয়া কাপ, আইপিএল লেগেই আছে; তার ওপর রাত জেগে দেখতে হয় স্প্যানিশ লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। কোনো খেলা দেখা যে বাদ দেব, সে উপায় নাই। না দেখলে সম্মান নিয়ে টানাটানি। আর কিছুদিন পর এই মৌসুমের খেলাগুলো শেষ হয়ে যাবে। তাই মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিতের আবেদন জানাচ্ছি।
যত দোষ ফেসবুক ঘোষ
স্যার, এই মার্ক জাকারবার্গ লোকটা খুব খারাপ। কী একখ্যান জিনিস বানাইছে ফেসবুক আর আমরাও খুলেছি সেখানে অ্যাকাউন্ট। এখন সমাজে নিজের নেটওয়ার্ক বানাতে হলে দৈনিক সাত ঘণ্টা করে ফেসবুকে বসে থাকতে হয়। আমরা জানি, এই ফেসবুক পড়াশোনার ক্ষতিতে যত নষ্টের গোড়া, কিন্তু ফেসবুকে স্ট্যাটাস না থাকলে স্যার লোকে বলে খেত। এমতাবস্থায় পরীক্ষা পিছিয়ে আমাদের কিছু পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিন।
কথা দিচ্ছি, পরীক্ষার সময়টুকু আমাদের অ্যাকাউন্ট থাকবে ডি-অ্যাক্টিভ।
পড়াশোনার ভীষণ চাপ
স্যার, কী বলব, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসের চোটে পড়ার সময় পাই না; তার ওপর শুনলাম, এইবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের চেয়ে নাকি সিলেবাস বড়। এ ছাড়া প্রথম সারির কোনো ছাত্রছাত্রী এখন পর্যন্ত লাইব্রেরির সব বই শেষ করতে পারেনি। পড়াশোনার কতটা চাপ এইবার! আমাদের কী অবস্থা তাহলে বোঝেন। তবে আমাদের কথা না হয় না ভাবলেন, অন্তত ভালো স্টুডেন্টদের কথা ভেবে পরীক্ষা পেছানো অত্যাবশ্যক।
অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি
স্যার, নষ্ট ছাত্ররাজনীতির পাল্লায় পড়ে এই সেমিস্টারে প্রায় এক মাস অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি কাটালাম। তবে স্যার, ছুটি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও তা পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করা হয়েছে। মনের সুখে ঘুরে বেড়িয়ে নানা আমোদ-ফুর্তিতে কেটে গেছে সময়। সেই সঙ্গে মাথা থেকে পড়াশোনা নামক বস্তুটাও চলে গেছে। এখন পরীক্ষার রুটিন হাতে পেয়ে আমরা সবাই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
মানসিকভাবে যাতে আমরা সুস্থ হতে পারি, সে জন্য পরীক্ষাটা পেছানো খুবই জরুরি।
মুভি দেখার জন্য সময়
স্যার, আপনি ক্লাসে উপদেশ দিয়েছেন, জীবনে উন্নতি করতে হলে ইংরেজি শেখার বিকল্প নাই। আর আমরা জানি, ইংরেজি শেখার জন্য ইংরেজি সিনেমা দেখারও বিকল্প নাই। এদিকে স্যার, একগাদা সিনেমা না দেখার ফলে জমে আছে। এগুলো না দেখে পরীক্ষার পড়ায় মন বসানো খুবই কষ্টকর।
স্যার, আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, ইংরেজি শেখার সুবিধার্থে সিনেমাগুলো দেখে শেষ করার সময় পর্যন্ত পরীক্ষাটা স্থগিত করা হোক।
সামুতে সময় দেয়ার জন্য
স্যার, বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ, স্যামহোয়ার ইন ব্লগ-এ এখন সবথেকে বেশি সময় দিতে হয়। কেননা সেখানে সাম্প্রতি ঘটে যাওয়া খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানা যায়, কৌতুক, রাজনীতি, ১৮+ বিভিন্ন ধরনে লেখায় কমেন্ট করতে রাত ৪টা পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়। আপনি তো জানেন যে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এসবরে বিকল্প নাই। সুতরাং পরীক্ষাটা পেছানো খুবই জরুরি।
নেতা এখন জেলে
স্যার, এতক্ষণ বহুত আইডিয়া শুনলেন, এবার ধানাই-পানাই বাদ দিয়ে সোজাসাপ্টা কথা বলি।
আমাদের চোখের মণি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপ্রিয় নেতা সামসু ভাই এখন জেলে। সামনের মাসে তিনি ছাড়া পাবেন। বয়সে তিনি বড় হলেও সংগত কারণে আমাদের সঙ্গে এইবার পরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁকে ছাড়া পরীক্ষা দেওয়া আমাদের পক্ষে একদিকে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল, অন্যদিকে
ভবিষ্যৎ এই নেতার সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়াটা গৌরবের।
স্যার, তাই তিনি ছাড়া না পাওয়ার আগে পরীক্ষা দেওয়ার কোনো প্রকার সম্ভাবনাই নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।