ধন্যবাদ । শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে চার বছর পর এটা লেখা খুবই বেদনাদায়ক যে, এ এমন এক সরকার যা পরিচালিত হয়েছে দাম্ভিকতা, খেয়াল-খুশি এবং প্রতিহিংসার ভিত্তিতে। রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এ সরকার নষ্ট করেছে এবং বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতার দ্বারা বাংলাদেশ এবং এর রাজনীতিকে বদলে দেয়ার সম্ভবনারও অপচয় করা হয়েছে। যা আওয়ামী লীগ জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা বলেছিল, জনগণ তাদের ভোট দিলে তারা তা করবে।
জনগণ তাদের ভোট দিয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। পরিবর্তনের রাজনীতির পরিবর্তে তারা ফিরিয়ে নিয়ে আসে পুরানো রাজনীতি। যার ভিত্তি দাম্ভিকতা, প্রতিহিংসা এবং খেয়াল। যে অহঙ্কারের সঙ্গে পদ্মার ঋণচুক্তি বাতিল করা হয়েছে, যেভাবে খেয়াল-খুশি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত সাড়ে চার বছর যে আচরণ করা হয়েছে এবং যেভাবে গ্রামীণ ব্যাংক ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে- তা ওই তিনটি বৈশিষ্ট্যেরই প্রমাণ। আমরা বারবার লিখেছি যে, বিশ্বব্যাংক এবং পদ্মা ব্রিজের মধ্যে একজন মাত্র লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে।
নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের বক্তব্য জাতীয় গর্বের সঙ্গে একধরনের সস্তা খেলা। শেয়ার মার্কেট এবং শেয়ার কেলেঙ্কারির পর এটা হতে পারে জনগণের আবেগের সঙ্গে সবচেয়ে বড় প্রতারণা। এটা সত্য শুধু গার্মেন্ট সেক্টর থেকেই বছরে বাংলাদেশ ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আয় করে। রেমিটেন্সের অর্থও পদ্মা সেতুতে কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু এ অর্থ গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তা, রেলওয়ে, টেলিকমিউনিকেশন, এনার্জি ও শিল্প খাতে ব্যয় করা উচিত।
অর্থ যোগানের অভাবে এসব খাতে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। প্রবাদতুল্য উটপাখিরাই কেবল বলতে পারে, প্রায় শূন্য সুদে ওইসব ঋণ প্রয়োজন নেই। জনগণের স্বার্থবিরোধী এই কাজের জন্য একদিন এই সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার সংসদীয় দলকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে তা করা হয়েছিল। এ ধরনের এক মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনী এসেছে কোন ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই।
জনগণকে আক্ষরিক গলাধাক্কা দিয়ে তিন বছরের রাজপথের আন্দোলনে অসংখ্য হরতালে আসা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা শুধুমাত্র নেতার ইচ্ছায় পরিবর্তন হয়ে গেল। কোন বিতর্ক হলো না, কোন আলোচনাও নয়, কোন প্রশ্নও নয়। সার্বভৌম ব্যক্তি বললেন এবং সংসদ তাই করলো। বোকা বিরোধী দল তা চিন্তাবিহীন সংসদ বয়কটের মাধ্যমে তা আরও সহজ করে তুললো। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাড়ে চার বছরে যে ব্যবহার করা হয়েছে এবং যেভাবে গ্রামীণ ব্যাংক ভেঙে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে অন্য কোন কিছুই সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ন চরিত্র এতটা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে না।
গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে ভালভাবে জানার পরও অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হাস্যকরভাবে এ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছেন। - মাহফুজ আনাম, ডেইলি স্টার ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।