আজ একটা গল্প শুনাব। ঠিক যেন শেষ বিকাল এর মত অনেকেই হয়ত জানেন না বাংলাদেশের যুদ্ধ কে ঘিরে ১৯৭১ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার মত একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টা আমি ও ঠিক জানতাম না। কিন্তু কিছুদিন আগে এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। আশা করি আপনারা ও অনেক কিছু জানতে পারবেন-
রাশিয়া তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানত, বিশ্বের যেখানেই সংঘাত বা যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দেয়, সেখানে স্বার্থ জড়িত থাকলে আমেরিকা সব সময় বিমানবাহী জাহাজসহ তার নৌবহর পাঠিয়ে দিয়ে থাকে।
ওই অভিজ্ঞতার আলোকে নভেম্বরের শেষদিক থেকে ডিসেম্বর-এর ১৩ তারিখ পর্যন্ত রাশিয়া ষষ্ঠ নৌবহর, রুশীয় ভাষায় “শেসতাই ফ্লোত” এর ২১ টি রণপোত ভারত মহাসাগরে পাঠিয়ে দেয় । ইতিমধ্যে সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য রাশিয়া একটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।
এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনী আগে থাকতেই তাদের বিমানবাহী জাহাজ “INS Vikrant” ও অন্যান্য জাহাজের সাহায্যে বঙ্গোপসাগরে ন্যাভাল ব্লকেড দিয়ে রেখেছিল। “টাস্কফোর্স ৭৪” বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা দেওয়ার পর একদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সব জাহজ ধ্বংশ করে দেওয়া হয় অন্যদিকে ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা এমনভাবে ব্লকেড দেয় যাতে সপ্তম নৌবহরের কোন জাহাজ ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজের সাথে সংঘর্ষ ছাড়া এদেশের কাছাকাছি আসতে না পারে।
রাশিয়ার শেস্তাই ফ্লোত নৌবহরের একটি মাইনসুইপার জাহাজ, একটি ডেস্ট্রয়ার, একটি ব্যাটল ট্যাংক ক্যারিয়ার জাহাজ ও একটি সাবমেরিন আগে থেকেই ভারত মহাসাগরে অবস্থান করছিল ।
৫ ডিসেম্বর আরও একটি মাইনসুইপার জাহাজ ও একটি ডেস্ট্রয়ার ভারত মহাসাগরে পৌছায়। ৭ ডিসেম্বর ভ্লাদিভস্তক থেকে ১ টি নিউক্লিয়ার বোমাবাহী মিসাইল সহ ব্যাটলক্রুজার, ও একটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রওনা দেয়। ১০ ডিসেম্বর সপ্তম নৌবহরের বঙ্গোপসাগরে অফিসিয়াল যাত্রা শুরুর পর ১৩ ডিসেম্বর রাশিয়া ঘোষনা দেয় সপ্তম নৌবহরকে ঠেকাতে তারা আরও একটি নিউক্লিয়ার বোমাবাহী মিসাইলসহ ব্যাটলক্রুজার, একটি নিউক্লিয়ার গাইডেড মিজাইল সাবমেরিন, একটি নিউক্লিয়ার এ্যাটাক সাবমেরিন এবং একটি ডেস্ট্রয়ার।
মার্কিন সপ্তম নৌবহর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মধ্যবর্তী মালাক্কা প্রণালী পেরিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছিল, তখনই মার্কিনিদের গোয়েন্দা উপগ্রহের ক্যামেরায় বঙ্গোপসাগরে আগে থেকে মোতায়েন করা শেসতাইফ্লোতের উপস্থিতি ধরা পড়ল। সপ্তম নৌবহরের গতিবেগ ২৪ ঘণ্টার জন্য নিশ্চল করে রাখা হলো।
২৪ ঘণ্টা চিন্তা-ভাবনা করার পর একান্ত মুখরক্ষার নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিহিকণ্ঠে ঘোষণা করল, সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশ থেকে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করতেই বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু ঐ সময় আমেরিকান নাগরিক এদেশে ছিল ৬০-৭০ জন যারা বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও এদেশে রয়ে গিয়েছিল ।
সপ্তম নৌবহরের "টাস্কফোর্স ৭৪" পাঠিয়েও আমেরিকা উভয় সংকটে পরে। ৩য় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা তো ছিলই। ১৬ পাকিস্তানী বাহিনীর আত্নসমর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভে রনাঙ্গনে আমেরিকা একা হয়ে পড়ে।
যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তানের যোগদানের কোন সুযোগ ছিল না। ভারতীয় বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীও টাস্কফোর্স ৭৪ এর বিরুদ্ধে তাদের পূর্ণ শক্তি লাগাতে পারতো। এর উপর শোনা যায় প্রথম থেকেই একটি সোভিয়েত নিউক্লিয়ার এ্যাটাক সাবমেরিন এন্টারপ্রাইজের পিছে আসছে। পরবর্তীতে আনক্লাসিফইড ডকুমেন্ট থেকে জানা যায় প্রথমে আমেরিকার শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা থাকলেও পরবর্তীতে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।