'কিছু মাতাল হাওয়ার দল... শুনে ঝড়ো সময়ের গান... এখানেই শুরু হোক রোজকার রূপকথা... / কিছু বিষাদ হোক পাখি... নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে কাঁচ পোকা সারি সারি... নির্বান নির্বান ডেকে যায়...' এড়িয়ে যান প্লিজ। একটা মানুষই তো মারা যাচ্ছে। এমন বেশি কিছু না।
একটু মনে করিয়ে দেই।
ক্রসফায়ারে কিন্তু জলজ্যান্ত মানুষই মারা যায়।
আপনার আমার মতোই কোন মানুষ। যার দুটো চোখ আছে। দুটো হাত আছে। দুটো পা আছে।
মাথার ভেতর একটা মস্তিষ্ক আছে।
এরকম উন্নত মস্তিষ্ক আর কোন প্রাণির নেই।
তার বুকের ভেতর একটা হার্ট আছে। প্রতি মুহুর্তে হার্ট-টা পাম্প করছে। রক্ত পৌছে দিচ্ছে দেহের প্রতিটা কোষকে।
প্রতিটা কোষে আবার চলছে আরো জটিল সব কর্মকান্ড।
ক্রসফায়ারে যারা মারা যায় তাদের কিন্তু একটা পরিবারও আছে। সেই পরিবারে হয়তো তার খুব বুড়ো একটা মা আছে। তার হয়তো খুব ফুটফুটে দুটি শিশু আছে। একটা স্ত্রী আছে।
তারা হয়তো সারাদিন অনেক অপেক্ষায় থাকে তাদের সন্তানের, তাদের বাবার, তাদের স্বামীর।
কিন্তু... একটা গুলি শেষ করে দেয় সব।
প্রকৃতি যে মানুষটাকে তার সব কিছু দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে একটা গুলি এসে সেই মানুষটাকে মুহুর্তে লাশ বানিয়ে দিয়ে যায়।
কোন দুর্ঘটনায় মানুষটা মারা গেলে সমস্যা ছিলো না।
কোন দুষ্কৃতিকারীর গুলিতে মারা গেলে সমস্যা ছিলো না।
মানুষটা মারা যায় এদেশের "আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী"র গুলিতে।
ধরুন কাল সকালে আমি বাসা থেকে বের হলাম। "ক্রসফায়ার"এর কবলে পড়ে মারা গেলাম। আমার ভাবতে ভয় হয় আমার পরিবারের তখন কী হবে। আমার মা-র কী হবে। আমার বাবার কী হবে।
আমার ছোট্ট বোনটার কী হবে।
কিংবা ধরুন আমার বাবা অফিসে যাবার জন্য বের হলেন। ক্রসফায়ারে পড়ে বিকেলে ফিরলেন লাশ হয়ে।
আমি তখন কোথায় যাবো? আমার মা-র, আমার বোনের তখন কী হবে?
আমি ভাবি না। ভাবতে চাইও না।
যে মানুষগুলো ক্রসফায়ারে পড়ে মারা যায় আমি হলফ করে বলে দিতে পারি তাদের পরিবারের কেউও এরকম কিছু ভাবেনি। কিংবা ভাবলেও পরক্ষণেই শিউরে উঠতো তারা।
কিন্তু সত্যটা হচ্ছে - মানুষগুলো "ক্রসফায়ারে" মারা যাচ্ছে। তাদের পরিবারগুলোকে খুব নির্মম একটা সত্য হজম করতে হচ্ছে।
যে মানুষটাকে হত্যা করা হলো তার সন্তানরা কোনদিন কারো কাছে বিচার চাইতে পারবে না।
এক অসহায় আক্রোশ নিয়ে তারা পিতা হারানোর কষ্টটা বয়ে বেড়াবে সারা জীবন। তবু কাউকে বলতে পারবে না - "আমার বাবাকে এরা হত্যা করেছে। আমি বিচার চাই। "
রাষ্ট্র নিজেই যখন খুনী তখন বিচার করবে কে!
আমার খুব অবাক লাগে যখন দেখি রাষ্ট্র নিজেই একটা খুনী বাহিনী সৃষ্টি করে ফেলতে পারে। এই বাহিনীকে খুন করার জন্য নিয়মিত খাবার দেয়া হয়, পুষ্টি দেয়া হয়।
যখন যাকে ইচ্ছা হত্যা করতে পারে এরা। এই বাহীনিকে কোন কিছুর জন্য জবাবদীহি করতে হয় না কারো কাছে। কেবল খুন করার পর একটা অদ্ভুত গল্প শুনিয়ে দিলেই হয়।
হ্যাঁ। এরা খুন করার পর খুব উৎকট একটা রসিকতা করে সেটা নিয়ে।
মুখস্ত গল্পটা শুনিয়ে দেয় সবাইকে। একটা পাগলও বিশ্বাস করবে না যে গল্পটা। কেউ বিশ্বাস করেও না।
পত্রিকায় "ক্রসফায়ার" কিংবা "বন্দুকযুদ্ধ" শব্দটাকে তাই ইনভার্টেড কমার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
সবাই সবকিছু জানে।
সবাই বুঝে এটা অন্যায়। এটা বানানো গল্প। সবাই বুঝে এটা হত্যা। কিন্তু তারপরেও থামছে না এই হত্যাযজ্ঞ। প্রতিদিন ক্রসফায়ারে হত্যার খবর পাওয়া যায় পত্রিকায়।
এখন ক্রসফায়ারের খবরগুলো পাওয়া যায় ভেতরের পাতায়। মানুষকে ধরে ধরে এই রাষ্ট্র হত্যা করছে - এই ভয়াবহ খবরটা আমাদের কাছে অনেক স্বাভাবিক। আমরা খবরটা দেখে পাতা উল্টিয়ে যাই। পরদিন একই রকম আরেকটা খবর দেখার অপেক্ষায় থাকি।
রাতে আপনার রুমে এসে আপনাকে গলা টিপে মেরে ফেলা আর রাস্তায় গুলি করে মেরে ফেলার মধ্যে কি আসলে কোন পার্থক্য আছে? মোটেও না।
একটা মানুষ অপরাধ করেছে, তার বিচার করো। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে যাও। কেনো তাকে ধরেই গুলি করে মেরে ফেলতে হবে?
আমাদের মাথামোটারা কী এটা বুঝেন না যে র্যাব নামক এই বাহীনিটা আমাদের বিচার ব্যবস্তার ব্যার্থতার প্রতীক ছাড়া আর কিছুই না? যে বিচার ব্যাবস্থা একটা অপরাধের বিচার করতে পারে না। জন্ম দেয় আরেকটা হত্যার!
সব শেষে খুব পরিচিত একটা খবর শেয়ার করি - র্যাবের গুলিতে পান্থপথে যুবক নিহত
খবরটা এড়িয়ে গেছেন। তাই না?
শুনুন, এই যুবকটা আপনিও হতে পারতেন।
কিংবা আগামী কাল এই যুবকটা আপনি হতে পারেন।
** রিলেটেড পোস্টঃ নরসিংদীতে র্যাবের বন্দুক যুদ্ধের পোস্টমর্টেম - ক্রস ফায়ার ওর সিক্স মার্ডার! - সহজ পৃথিবী
একইসাথে ব্যাক্তিগত ব্লগেও প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।