চোখের দেখা , মনের কল্পনাঃ আমার লেখা সকালে HANDSOME HUNK হয়ে ভাব নিয়ে SHOW OFF করার মানসিকতা নিয়ে নয় ............ বিশ্বাস করুন বা নাই করুন , এবার আমি প্রথমবারের মত বৈশাখী উৎসবে যোগ দিয়েছি প্রাণের টানে ।
গতকালই ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে আজ সকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেছে । কিছু না ভেবেই কালরাতে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ যাবই । কাউকে নিয়ে নয় – একা ।
আসল কথা আমার চেনা এমন কেউ নেই যাকে নিয়ে যাওয়া যায় , তাই একা যাওয়া ঠিক করলাম ।
সকাল ৫টা ২৯ মিনিটে উঠেই স্নান সেরে ৪ বছর আগের একটা পাঞ্জাবী গায়ে চাপিয়েই ছুটলাম শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ।
পবিত্রতা কি জিনিস ? কেমন করে আসে ? প্রশ্ন অনেকের । আমি আমার আজকের অবস্থা অনুযায়ী উত্তর দিচ্ছি – ভাল কিছু করা , ভাল কিছুর সাথে একাত্মতা প্রকাশের যে সদিচ্ছা , যেই ডাক প্রাণের ডাক সেই ডাকে সাড়া দেয়ার নাম পবিত্রতা ।
রাগ সঙ্গীত দিয়ে শুরু হল আয়োজন । মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম !! সকালের রোদবিহীন , মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে যেন এ সুর মিলে যায় ।
এ সুর শিল্পীর কণ্ঠ থেকে সোজা শ্রোতার অন্তরে প্রবেশ করে । তারপরেই শুরু হল সেতার নিয়ে সুরের যাদু । সেতারের তার গুণীর আঙুলের স্পর্শে জীবন পেল । শ্রোতা দর্শকের করতালি যে মেকী নয় সেটা ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছিলো ।
সকালে সঙ্গীত , নৃত্য পরিবেশন করতে আসা ছোট ছোট শিশুগুলো ছিল সজীবতার প্রতীক ।
সবাই রঙিন , চোখে মুখে আশ্চর্য দ্যুতি !! বেশীরভাগ সময় ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম ।
এরপরই শুরু হল রবীন্দ্র বন্দনা । “এসো হে বৈশাখ” নিজের অজান্তেই আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে শিল্পীদের সাথে সাথে ...... । এরপর চলতে থাকলো কবিগুরুর একের পর এক সৃষ্টির মূর্ছনা । মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম ।
আরও ছিল কবিতা পাঠ ।
এর পরেই শুরু হল শিশু – কিশোরদের চমৎকার পরিবেশনা । বেশ লেগেছে ওদের এই কচি মনের নির্ভেজাল প্রচেষ্টা ।
এরই মাঝে বাইরে বিভিন্ন আনন্দমিছিলের তোড়জোড় । সবার আগে যে মিছিল টা বের হল সেটাতে ভিড়ে গেলাম ।
আমি কোন নির্দিষ্ট মিছিলে ছিলাম না , রাস্তায় যখন যেটা দেখেছি সেটাতেই মিশে গেছি । মিছিলগুলো ছোট কিন্তু প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা ।
রোদ তাতিয়ে উঠেছে । কিন্তু সূর্যতাপে বিরক্তি ছাপিয়ে আর একটা কথা মনে এল । - অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা ।
সকালের পবিত্র ভাবটা যেন উদ্দীপ্ত করে দিতেই এই সূর্যের তেজ ।
মনে মনে বললাম – এতো সবে শুরু । পবিত্রতার ছোঁয়া লেগেছে মাত্র ! একে পূর্ণতা দিতে পড়ে রয়েছে সারাটি বছর । কাজে কর্মে , মা-বাবার মুখে আমার সফলতার আনন্দে আসা একটুকরো হাসি , ছোট ছোট সদিচ্ছা – এসবের মাধ্যমেই পূর্ণতা পাবে পবিত্রতা ।
আমি যাত্রা শুরু করলাম সেই পূর্ণতার পথে ............
বিঃদ্রঃ - আজকের এই নির্ভেজাল , খাঁটি আনন্দ পাওয়া হতনা যদি আমার বন্ধু এবং বড় ভাই “পাহাড়ি নদী” ( ব্লগের নাম ) আমার গতকালের লেখাটা দুজনকে পড়তে না বলতেন ।
সেই দুজন আমাদের শহরের । দুজনের ফেবু প্রোফাইলে ঢুঁ মারতেই একজনের ওয়ালে আজকের অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারলাম। অন্তরের আবেদনে সাড়া না দিয়ে পারলাম না । চলে গেলাম আজকে । গিয়েছিলাম একা – বন্ধু-বান্ধববিহীন ।
আর নিয়ে এলাম অচেনা অজানা কতগুলো প্রাণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে । একবারও মনে হয়নি আমি একা ।
“পাহাড়ি নদী” কে অশেষ শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।