আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছিন্নপত্র, পূর্ণ পট

রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র পড়াটা এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। আমি এই চিঠিগুলো পড়েছি টেবিলে বসে, বৃষ্টির দুপুরে গায়ের ওপর কাঁথা টেনে চৌকিতে শুয়ে, নৌকায় বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা দিয়ে ভাসতে ভাসতে এবং দূরপাল্লার বিমানে আঁটসাঁট আসনে বসে, পাশের যাত্রীর নাসিকা গর্জন শুনতে শুনতে। অনেকবার পড়া হয়ে গেলে আমার মনে হয়েছে, এই চিঠিগুলো চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ার নয়, এগুলো ঘরকুনো বাঙালির জন্য তিনি লেখেননি। একটি চিঠিতে তিনি যে বলেছেন ভারতীয়দের চরিত্রের দুটি দিক আছে—গৃহী এবং সন্ন্যাসী। সেই সন্ন্যাসীর জন্য তিনি এসব লিখেছেন।

এগুলো পড়তে হয় কোনো দীর্ঘ যাত্রায়, যখন পথের দাবির কাছে গৃহস্থ তাঁর যুক্তি-তর্ক-বিবাদ-হিসাব-নিকাশ সব তুলে দিয়ে নিজের সঙ্গেই সময় কাটান। ছিন্নপত্র-এর বেশির ভাগ চিঠি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন তাঁর অল্প বয়সী ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে, কিন্তু এগুলো আসলে তিনি লিখেছেন নিজেকেই। চিঠিগুলোতে তাই আছে নিজের দিকে ফিরে তাকানোর একটা প্রয়াস, তাঁর অনাবিল বাঙালিয়ানার এবং স্বদেশিয়ানার উদ্যাপন, প্রকৃতির অনাকীর্ণ পরিসরে তাঁর সৃষ্টিসত্তার পরিপূর্ণ আত্মপ্রকাশ। একই সঙ্গে চিঠিগুলোতে আছে ইংরেজের ‘ভালো’ খাতায় নাম ওঠা ঠাকুর পরিবারের এক অতিথিপরায়ণ সন্তান, প্রতিবাদী এবং উত্তর-ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির এক যুবকের পাশাপাশি অবস্থান। চিঠিগুলোর কোনো কোনোটিতে দেখা যায় কেজো এক মানুষের দিনযাপনের বর্ণনা।

এই বর্ণনায় হঠাৎ দেখা মেলে তীব্র নানা অন্তর্দৃষ্টির, এপিফ্যানির, অথবা সূক্ষ্ম কৌতুক-রসের। নিজেকে নিয়ে তিনি ঠাট্টা করেছেন। যেসব মুখোশ তাঁকে পরতে হতো জীবনের নানা প্রয়োজনে, সেগুলো টেনে ফেলে দিয়ে নিজের মুখটাকে তিনি দেখেছেন আপন আয়নায়; এবং জগৎকেও দেখতে দিয়েছেন সেই মুখশ্রী। ছিন্নপত্র, তার স্থিরকেন্দ্রিক এপিফ্যানিগুলো সত্ত্বেও, এক অন্তহীন ভেসে চলার বর্ণনা। সে চলায় ছন্দ আছে, স্বাচ্ছন্দ্য আছে, কিন্তু কোথাও গিয়ে পৌঁছাতে হবে, সে রকম কোনো উদ্বেগ নেই।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।