আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অধ্যাপক ক্লিনটন বি. সিলি, আপনার সর্বশেষ স্বপ্নটি পূর্ণ হোক, পূর্ণ হোক ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

মার্কিন অধ্যাপক ক্লিনটন বি. সিলি বাংলাদেশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর এই স্বপ্ন পূর্ণ হোক। পূর্ণ হোক ... এবং আসুন, আমরা তাঁর সম্বন্ধে কিছু কথা জানি।

মার্কিন অধ্যাপক ক্লিনটন বুথ সিলির জন্ম ১৯৪১ সালের ২১ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার রেডউড সিটিতে । পরে স্যাক্রামেনটো শহরে কেটেছে শৈশব। স্কুল ও কলেজের পড়াশোনা ও দুটি শহরেই । জীববিজ্ঞান নিয়ে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মার্কিন শান্তি মিশনের সদস্য হিসেবে ১৯৬৩ সালে পূর্ববাংলায় আসেন ।

কর্মক্ষেত্র ছিল বরিশাল। তখনই বাংলা ভাষা সংস্কৃতি ও সাহিত্য কে নিবিড়ভাবে জানার সুযোগ হয় । ভালো লাগছে প্রতন্ত শহরটির রোদজল। নদী কীর্তনখোলা। দীঘি মাধবপাশা ।

টলটলে তার জল ঝলমলে রোদ। অক্টোবরের শীতে পরিযায়ী পাখিরা সব আসে ...আহা। এমন দেশে যদি আমার জন্ম হত। তখনও তিনি জানতেন না যে অনেক অনেক বছর পর তিনি স্থায়ীভাবে বাংলায় বসবাস করার অনুমতি প্রার্থনা করবেন। মনে হল, বাংলার বাইরে জায়গা হল প্ল্যানেট।

বাংলাকে প্ল্যানেট আর্থ মনে হয় না। মনে হয় ধরনী ... লামচরি বরিশাল শহরের কাছেই। একদিন লামচরি গেলেন। আরজ আলী মাতুব্বর নামে এক মাঝবয়েসি লোকের সঙ্গে পরিচয়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিস্মিত হয়ে গেলেন।

বিশ্বপ্রকৃতি সম্বন্ধে এমন মহৎ উপলিব্ধ-অথচ পূর্ব বাংলায় এঁকে কেউই চেনেনা! (তখনও তিনি জানতেন না যে এ শহরেই জন্মেছেন বাস করতেন সভ্যতার শ্রেষ্ঠ এক দার্শনিক কবি। ) তবে রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন। তাই ভাবলেন, মনোরম প্রকৃতি ও মননশীলতা কি একমাত্র বাংলায়ই লভ্য? বরিশাল জিলা স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। (অনেককেই বলতে শুনি আমার বাবার শিক্ষক ছিলেন ক্লিনটন বি. সিলি। ) ছাত্ররা শ্রদ্ধাশীল আর শ্যামল।

উষ্ণ। মায়েরা মমতাময়ী। প্রায়শ রেঁধে এটা-ওটা পাঠান। ভালো লাগে কলাপাতা মোড়ানো কইমাছ। ক্লিনটন বি. সিলি দীর্ঘদিন বাস করেন বরিশালে।

বাস করতে করতে বাঙালি হয়ে যেতে থাকেন। কখন যে বাংলা শিখে ফেললেন। বরিশালের বাংলা। তিনিও বলতে পারেন এখন, ও মনু খেলা কর, আয়। লামচরির আরজ আলী মাতুব্বর প্রায়ই আসেন।

স্কুল ছুটির পর দুজনের কথা হয়। ক্লিনটন বি. সিলির কেন যেন মনে হল একদিন বাংলার মানুষের অগ্রসর অংশটি এঁকে বাংলার সক্রেটিস জ্ঞান করবে । ২ তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেলেন। যুক্ত হলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয় ভাষা ও সভ্যতায় বিভাগে । লক্ষ করুন, ক্লিনটন বি. সিলি ছিলেন বায়োলজির ছাত্র! তাঁর মনোভাবে পরিবর্তনের কারণ কি বাংলা? বাংলার মানুষ? অধিকাংশ চিনার কাছে বাংলাদেশ হল কেবলই বন্যা-প্লাবনের দেশ! দূর থেকে দেখার কু-ফল? আচ্ছা, বাংলা আর বাংলাদেশ কি কেবলই বন্যাপ্লাবনের দেশ! ৩ এরপর ঘটল আশ্চর্য এক ঘটনা।

মার্কিন অঙ্গরাজ্য আইওয়া। সেখানে পৃথিবীর নানাদেশের কবি লেখকগন কর্মশালায় প্রতি বছর একত্রিত হন। এ তথ্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বইয়ে পড়ে থাকবেন। সেখানেই ক্লিনটন বি. সিলির সঙ্গে বাঙালি কবি ও সাংবাদিক জ্যোর্তিময় দত্তের পরিচয়। তাঁর কাছেই শুনলেন জীবনানন্দের কথা ।

কি বললেন? জীবনানন্দ বরিশালের? হ্যাঁ। বরিশালের। জ্যোর্তিময় দত্ত মৃদু হেসে বললেন। বলেন কী! আমি তো ও শহরেই ছিলাম দীর্ঘকাল। কখনও নামও শুনিনি।

ক্লিনটন বি. সিলির কন্ঠে উষ্মা। স্বাভাবিক। কেন? ক্লিনটন বি. সিলি কিঞ্চিৎ বিস্মিত। জীবনানন্দকে নির্জনতার কবি বলা হয়। জ্যোর্তিময় দত্ত বললেন।

ও। আচ্ছা, আপনি কি বরিশালের লামচরির আরজ আলী মাতুব্বর নামে কাউকে চেনেন? না। মনোরম প্রকৃতি ও মননশীলতা কি একমাত্র বাংলায়ই লভ্য? কি বললেন! এ্যাঁ। মার্কিন অধ্যাপক ক্লিনটন বুথ সিলি। একজন মার্কিন বাঙালি; এঁর মতো করে বাংলাকে জানার সুযোগ হলে ভিনদেশি অনেকেই বাঙালি হয়ে যেত! করি মানা কাম ছাড়েনা মদনে, মদনে, আমি প্রেম রসিকও হব কেমনে? সম্প্রতি আমি এক ইউরোপীয় পন্ডিতকে আমার ঘরে বসে বাংলার শ্বাশত কল্যাণী অপরুপা মহিমা বোঝাতে সম্পূর্নরুপে ব্যর্থ হয়েছি।

ইংরেজি বলছিলাম বলে। আমার কানেও কেমন যেন বেসুরো ঠেকল। আসলে লালনের গান হাসনের গানের অনুবাদ হয় না। স্ব-উদ্যোগ্যে কেউ বাংলা শিখে যদি বাংলায় বসবাস করে তো ... ক্লিনটন বি. সিলি ১৯৬৯ সালে পূর্ব বাংলায় ফেরেন। এবার কলকাতায় গেলেন।

জীবনানন্দ সম্বন্ধে আরও জানলেন। বিশেষ করে জীবনানন্দের “আট বছর আগে একদিন। ’ পাঠ করে রীতিমতো স্তব্দ হয়ে গেলেন ক্লিনটন বি. সিলি। মাথায় ঘুরছে: '‌বিপন্ন বিস্ময়' ...‌বিপন্ন বিস্ময়'‌ ... বিপন্ন বিস্ময়' জীবনানন্দের জীবন ও কবিতার ওপর গভীর গবেষনায় নিমগ্ন হলেন। লিখলেন ধ্রুপদী গ্রন্থ “আ পোয়েট অ্যাপার্ট।

” বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাস "রাতভর বৃষ্টি" অনেকেই পড়েছেন। অশ্লীলতার দায়ে বইটি নিষিদ্ধ হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করলেন। ৪ অধ্যাপক ক্লিনটন বুথ সিলি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইচকনসিন এ বাস করছেন। মন উতলা।

হায়, শাহ্ আবদুল করিম চিরবিদায় নিলেন। আমি থাকতে পারলাম না। শুনছি লালনের আখড়ায় দিনদিন বিদেশিদের ভিড় বাড়ছে। একবার যেতে হয়। এই শীতে রংপুরে পিঠে উৎসব।

আহ্, মিস করলাম। কলকাতার তিলোত্তমা মজুমদার ভালো লিখছে। বাংলা ব্লগে জীবনানন্দ নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে নতুন প্রজন্ম হবে না কেন। তিনি হলেন বাংলার মনোরম প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার। একদিন যদি আমি কোনো দূর বিদেশের সমুদ্রের জলে ফেনার মতন ভাসি শীত রাতে — আসি নাকো তোমাদের মাঝে ফিরে আর — লিচুর পাতার ‘পরে বহুদিন সাঁঝে যেই পথে আসা-যাওয়া করিয়াছি, — একদিন নক্ষত্রের তলে কয়েকটা নাটাফল তুলে নিয়ে আনারসী শাড়ির আচঁলে ফিঙার মতন তুমি লঘু চোখে চলে যাও জীবনের কাজে, এই শুধু… বেজির পায়ের শব্দ পাতার উপড়ে যদি বাজে সারারাত… ডানার অস্পষ্ট ছায়া বাদুড়ের ক্লান্ত হয়ে চলে যদি সে পাতার ‘পরে, — শেষ রাতে পৃথিবীর অন্ধকারে শীতে তোমার ক্ষীরের মতো মৃদু দেহ — ধূসর চিবুক, বাম হাত চালতা গাছের পাশে খোড়ো ঘরে স্নিগ্ধ হয়ে ঘুমায় নিভৃতে, তবুও তোমার ঘুম ভেঙে যাবে একদিন চুপে অকস্মাৎ তুমি যে কড়ির মালা দিয়েছিলে — সে হার ফিরাযে দিয়ে দিতে যখন কে এক ছায়া এসেছিল… দরজায় করেনি আঘাত।

বাংলার বাইরে পৃথিবী হল প্ল্যানেট। বাংলাকে প্ল্যানেট বলে মনে হয় না। মনে হয় ধরনী ...কেন মনে হয়? আমি বুঝেছি, পশ্চিম পাকিস্তানিরা কেন বুঝেনি ...পবিত্রতম মনোরম ভূমিতে রক্তপাত করতে নেই! ফ্রম হেয়ার টু ইটারনিটি ... ফ্রম হেয়ার টু ইটারনিটি ... ফ্রম হেয়ার টু ইটারনিটি ... আমি জানি কোথায় ... ৫ বাংলাদেশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন মার্কিন অধ্যাপক ক্লিনটন বুথ সিলি ; মার্কিন নাগরিকত্ব বিসর্জন দেবেন তিনি। তাঁর এই আকাঙ্খা পূর্ণ হোক। ৬ এই মার্কিন বাঙালি সম্বন্ধে আরও পড়ুন ... Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.