সুখ চাহি নাই মহারাজ—জয়! জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ। ক্ষুদ্র সুখে ভরে নাকো ক্ষত্রিয়ের ক্ষুধা কুরুপতি! দীপ্তজ্বালা অগ্নিঢালা সুধা জয়রস, ঈর্ষাসিন্ধুমন্থনসঞ্জাত,সদ্য করিয়াছি পান—সুখী নহি তাত, অদ্য আমি জয়ী। মধ্য পঞ্চাশের জগাই হাঁটুর উপর লুঙ্গি তুলে ঘ্যাঁশ ঘ্যাঁশ করে চুলকাতে চুলকাতে রমিজকে বললো, “রমিজ্জা, দুগা মুরি দে রে বাপ, খিদায় তো জান যায়। ”
গামছায় বাধা মুড়ির গিট খুলতে খুলতে রমিজ বলে, “রঙ তামশা দেইখা পেট ভরলো না জগাইদা? দেহো না কী সোন্দর মিসিল বাইর হইসে! তোমার তিন কুড়ি বয়সে দেখসো নাহি এমন তর জিনিস?"
“গাঁও-গেরামের মাইনসের কি আর এই সবে পোশায়? হারাটা জীবন তো চৈত সংক্রান্তিরেই মাইনা আইসি। ঢাহা আইসা দেহি নতুন জিনিস”, এক মুঠো মুড়ি মুখে চালান করে জগাই বলে।
“হ দাদা, তিন দিন আগে ঢাহা আইলাম কামের সন্ধানে। কামের কাম তো কিসুই হইলো না, তয় ঢাহার মাইনসের রঙ্গলীলা দেখতে খারাপ লাগতেসে না, কী কও?”
“কী জানি! আমাগো বাপ ঠাকুরদা গো আমল থেইকা তো চৈত সংক্রান্তির পালা পার্বনই দেইখা আইসি, মাইনা আইসি। ঢাহার সাহেব পোলাপাইন গো দেহি নতুন ইস্টাইল, চৈত সংক্রান্তির খবর নাই, বৈশাখের পয়লা দিন লইয়া ফালাফালি”, জগাই মুড়ি চিবাতে চিবাতে বলে।
“ঠিকই কইসো জগাদা, কুট্টি কাল থেইকা তো হেই রহমই দেইখা আইসি, চৈত সংক্রান্তির কত্ত রহম যে কীর্তিকলাপ! তোমগো আর আমগো বাপ দাদা থন দেইখা আইতাসি, ফুর্তিফার্তা করতাসি। কী জানি কী! সাহেবগো পয়লা বৈশাখ, আর আমগো চৈত সংক্রান্তি।
”
ঠিক এই সময় একদল ছেলেমেয়েকে একটু দূরেই সপাত সপাত শব্দ করে পান্তা ইলিশ খেতে দেখলো জগাই আর রমিজ। তাদের মাথায় রঙবেরঙের টোপর পড়া। হা করে ওরা ছেলেমেয়েদের পান্তা ইলিশ খাওয়া দেখছিলো। হঠাৎ খুব কাছ থেকেই “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গান সহযোগে ব্যানার, ফেস্টুন, বাঘ-সিংহের কাগুজে নকশা আর মুখোশে সয়লাব হয়ে একটা শোভাযাত্রা জগাইদের ঠিক পাশ দিয়েই চলে যেতে দেখা গেলো। জগাই ও রমিজ চমকে উঠে দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রাটিকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে তফাতে দাঁড়ালো।
স্থানটি ছিল ঢাকার রমনা পার্কের আশেপাশে কোথাও। দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের এক তারিখ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।