আপনাদেরকে একটা কথা বলি। কথাটা আমার মনের খুবি গোপন আর সুপ্ত এক ইচ্ছের কথা। যে কথাটা আমি আজো কখনও কাউকেউই বলিনি। আসলে বলতে পারিনি। কিছুটা লজ্জায় বা কিছুটা হীনমন্যতায়।
আমি পারতপক্ষে একজন আত্নকেন্দ্রিক মানুষ। যাকে বলে ইন্ট্রোভার্ট। দূর ছাই! আত্নকেন্দ্রিক আবার ইন্ট্রোভার্টের বাংলা তো? নাকি সেটা সেলফিসের বাংলা? জানিনা , যেটাই হোক লিখে ফেলি । এই ভাষা জ্ঞান হলো আরেক সমস্যা আর আরেক সমস্যা বানান। যাও বা একটু খাতা কলমে বাংলা বানানগুলো লিখতে পারি কিবোর্ডে সেসব টাইপ করা সেতো আরো দূরহ ব্যাপার।
যা বলছিলাম , আমি খুব মুখচোরা আর লাজুক টাইপ । মনের কথা তেমন প্রকাশ করতে পারিনা। এ কারনেই নিজের মাঝেই নিজেই গুমরে মরি। বা অনেক কথা শুনিয়ে যায় যখন কেউ বিনা অপরাধেও। সেটাও মেনে নেই।
তাই বলে মিনমিনে স্বভাব আমার, মোটেই নয়। আসলে আমি পারিনা ঠিক মত গুছিয়ে বলতে আমি যা ঠিকঠিক বলতে চাই।
আচ্ছা অনেক ঘেনঘেন করেছি এবার আসল কথায় আসি। ছেলেবেলা হতেই যারা কবিতা লেখে বা গল্প লেখে তাদের প্রতি আমার বিশেষ দূর্বলতা। ঠিক ধরেছেন, আমি কবি ও লেখক যারা, তাদের কথাই বলছি।
কি সুন্দরভাবে তারা গুছিয়ে গাছিয়ে লিখে ফেলে মানুষের মনের কথা! ঠিক যেন এক একজনের বুকের ভেতর ঢুকে গিয়ে অর্ন্তআত্মা দেখতে পায় তারা। আর কবিদের কথা? কি আর বলবো! তারা তো সাক্ষাৎ এক এক জন দেবতা! কোথা থেকে তারা পায় এত শব্দ ভান্ডার আর কিভাবেই বা লিখে ফেলে ছন্দ, চরণ মিলানো সব কবিতা!
মায়ের বই এর আলমারীতে যত রবীন্দ্র, নজরুল আর শরৎচন্দ্র ছিলো সেসব আমি স্কুলের গন্ডি পেরুবার আগেই শেষ করে ফেলেছিলাম। কত দুপুর চোখের জলে বুক ভিজিয়েছি অরক্ষনীয়া , পরিণীতা আর ঐযে কি গল্পটা, ছাই নামটাও ভুলে গেলাম। রবীন্দ্রনাথের ঐ গল্পটা যেখানে ভাইকে বাঁচাতে পাষন্ড স্বামী তার কিশোরী বঁধুকে তুলে দেয় আইনের হাতে! অভিমানিনী বঁধু অকপট কাঁধে তুলে নেয় এই অন্যায়। হ্যা মনে পড়ে গেলো।
শাস্তি। গল্পটার নাম শাস্তি । যাক এত সব প্রিয় গল্পের নাম বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে । এসব পড়ে পড়ে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছি এক সময় গল্পের নায়ক নায়িকাদের দুঃখে।
স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই সেসবের পাট চুকিয়ে আমাকে শ্বসুর বাড়ী ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
এক গাঁদা লোকজন, সদা ও সর্বদা ভ্রুকুটিমুখী শ্বাসুড়ী , ননদিনী রায় বাঘিনীদের মাঝে পড়ে আমি যখন দিশাহারা তখনি আবিষ্কার করলাম আমার শ্বসুরের এক বিশাল রত্ন-ভান্ডার। তার নিজস্ব লাইব্রেরী।
একেবারেই অচেনা নতুণ এই বাড়িটায় এই একটা মানুষকেউ আমার অতি আপন মনে হয়েছিলো। কাজেই তার সস্নেহ প্রশ্রয়েই লাইব্রেরীর চাবিখানাই ভাড়ারঘরের চাবীর আগে আমার আঁচলে উঠলো। আর হঠাৎ আমার সুকঠিন দিন গুলো বদলে যেতে শুরু করলো।
আবার আমার দুপুর গুলো কেঁটে যেতে লাগলো কবিতাদের সাথে, নিত্য নতুন জ্ঞান বিজ্ঞান আর ইতিহাসের পাতায়, ছবিতে, গানে আর গল্প উপন্যাসে। রঙধনু আলোয় রঙ্গীন আবার আমার সব দুপুরবেলার অলস প্রহরগুলো।
মাঝে মাঝে ভাবি আমার উচ্চ-শিক্ষিত শ্বাসুড়ী, ননদ তারা কেনো তাদের বাড়ীর একমাত্র বউকে আর কলেজে যাবার অনুমতি দিলোনা? আর আমার অতি বিনয়ী, মাত্বভক্ত স্বামীরও অনীহা যে তাতে সেও কি আর বুঝতে আমার বাকী আছে?
সেও আমারই মত আরেক মুখচোরা আর লাজুক একজন মানুষ। অতি বিনয়ীও বটে। আমারই মতন অনায়াসে মেনে নিতে পারে মুখবুজে সকল কষ্ট ও দুঃখগুলোকে।
উফ! কথা কম বলি বটে কিন্তু লিখতে গেলে নিজের সাথে নিজেই লিখে লিখে যে কত কথাই না বলে ফেলি! বলতে গিয়েছিলাম এক কথা বলে ফেললাম শখানেক লাইন। যা বলছিলাম, আমার খুব লেখক হতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে কবিও। অনেক কবিতা লিখেছি। ডায়েরীর পাতা ভরে।
কখনও কাউকেই পড়েও শুনাইনি। এমনকি আমার প্রিয়তম স্বামীকেও না। আগেই বলেছি আমি একটু মুখচোরা আর লাজুক প্রকৃতির। কাউকে পড়ে শুনাতে গেলে আমি নির্ঘাৎ দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো ।
গত বছর আমার শ্বসুরের মৃত্যুর পর এই লাইব্রেরীটা পাকাপাকি ভাবেই এখন আমার ।
কিভাবে যেন এক অলিখিত চুক্তি হয়ে গেছে এ বাড়িতে আমার সাথে এই লাইব্রেরীটার। আসলে বিশ্বসংসারে আমার মত অকর্মা কে আর আছে যে সারাক্ষন এখানে পড়ে থাকবে? হঠাৎ একদিন দুপুরে অনেকদিন হতেই শ্বসুরের পড়ে থাকা ল্যাপটপটায় ব্রাউজ করতে গিয়ে সন্ধান পেলাম বাংলা এই সাইটির। মনে হলো এইতো সুযোগ। দুধের স্বাধ নাহয় ঘোলেই মিটুক।
এখানে আমি লিখবো।
কেউ পড়ুক আর নাইবা পড়ুক। চুপিচুপি বলে রাখি, সকলের অজান্তে সকলের চোখ ফাকি দিয়ে কত গল্প কবিতাই যে পত্রিকা অফিসে পাঠিয়েছি আমি। সে সব আমার যে দিন ভেসে গেছে, কত সাধ আনন্দ দুঃখ কষ্ট ও ভালোবাসায় লেখা গল্প কবিতা। কখনও কেউ তা ছাঁপায়নি। আরে বাবা লেখালিখি কি এতই সোজা যে আমি যাতা লিখে দিলেই তারা সেসব ছেপে দেবে?
যে যা বলে বলুক, যে যা ভাবে ভাবুক, আমি লেখক হবোই।
লিখতেই থাকবো। এই সামহ্য়্যার ইন ব্লগের পাতাও যদি প্রথম পাতায় সেসব কোনোদিনও না ছাপে তবুও। আমি লিখে যাবোই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।