আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাত্র ৩ সেকেন্ড!

যেদিকে তাকাই দেখি বিরান সমভূমি। একেই বোধহয় বলে ধু ধু প্রান্তর। কোন গাছ নেই, ঘর নেই, একটা মানুষ নেই। কিচ্ছু নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু ধুধু প্রান্তর।

আর আমি সেই প্রান্তরের মাঝখানে পড়ে আছি। তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে মাটি ভিজে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। উঠে দাঁড়ানোর মত শক্তি আমার শরীরে নেই। ক্লান্তি আর অবসাদে আমার শরীর ভেঙ্গে পড়তে চায়।

বৃষ্টির ছাঁটে ভাল মত তাকাতেও পারছি না। চেষ্টা করেছি পশুর মত চারপায়ে হেঁটে যাবার। পিছলিয়ে সামনে চলে যাচ্ছি। দাঁড়াতে গিয়ে টাল সামলাতে পারি নি, হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেছি। এবার নখ গিয়ে মাটি খামছে খামছে কোনমতে ক্রলিং করে সামনে এগুনোর চেষ্টা করি আমি।

মাটিতে ঘাসের শুকনো শিকড় বাকড় অনুভব করি। আমার নখে মাটি ঢুকে যায়। আমি পরোয়া করি না। চারদিকে যতই তাকাই, ততই শূন্যতা। হঠাৎ চোখে পড়ে অনেক দূরের বড় রাস্তাটা।

এ জায়গাটা থেকে রাস্তাটা বেশ উঁচুতে। আমি এতদূর থেকেও অনুভব করতে পারি রাস্তার পিচঢালা প্রসস্থতা। রাস্তায় ৮/১০টা ছায়ামূর্তি দেখা যায়। ওদের বয়স ৮ থেকে ১০ বছর। হাতে বই খাতা, মাথায় দুই ঝুঁটি, পরনে স্কুল ইউনিফর্ম।

যদিও কালো ছায়ামূর্তি তবুও আমি সব বুঝতে পারি। ওরা দৌড়ে দৌড়ে স্কুলে চলে যায়। আমি মাথা উঁচু করে ওদের দেখার চেষ্টা করি, হয়ত ডাকারও। ওরা চলে গেলে আমি আবার চেষ্টা করি মাটি খামছে খামছে চলার। হঠাৎ আমি অনুভব করি খুব কাছেই একটা ছোট্ট ঘর, এতক্ষণ আমি দেখি নি এটা।

একটা উইয়ের ঢিবি (বৃষ্টিতে ভিজে ওটাও পিচ্ছিল হয়ে আছে) ঐ ঘরটা আড়াল করে রেখেছে। একটা সবুজ কলাপাতার অংশ উঁকি দিচ্ছে। পুরো প্রান্তরে ঐটুকুই মাত্র সবুজ। ভাংগা ঘরের একাংশও দেখা যাচ্ছে। ঘরটা যেন পরম মমতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি টের পাই, ঐ ঘরের ভেতরের একজনকে। কোনমতে যদি ঘরের কাছে আমি পৌঁছুতে পারি আমি, সে আমাকে টেনে নেবে শুশ্রুষা করার জন্য। তেষ্টায় আমার গলা শুকিয়ে যেতে থাকে। সে আমাকে এক গ্লাস পানি দেবে বলে যেন হাত বাড়িয়ে আছে। যদিও আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।

আমি প্রাণপণে চেষ্টা করি উঠে দাঁড়াতে। পড়ে যাই পিছলিয়ে। ক্লান্ত শরীরে কোন জোর পাই না। মাটি খামছে চলার চেষ্টা করি। ঐ ঘরটাতে আমার পৌঁছুতেই হবে।

কিন্তু আমি যতই আগানোর চেষ্টা করি, ঘরটা থেকে আমার দূরত্ব বেড়ে যায়। অনেকটা সাবের ভাইয়ের লেখা ‘’মানুষ যেখানে যায় না’’ বইটার বটগাছের মত। কি অদ্ভুত স্বপ্ন, তাই না? মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যত বড় স্বপ্নই দেখুন না কেন, সবই নাকি ঘটে মাত্র ৩ সেকেন্ডে। ১৩ এপ্রিল, ২০১২ ৩০ চৈত্র, ১৪১৮ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.