পথচারীদের নিরাপত্তায় গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়
পথচারীর নিরাপত্তায় হাইকোর্টের নির্দেশনার পরবর্তীতে ঢাকার অনেক স্থানেই জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন করা হয়েছে। কিন্তু এ জেব্রা ক্রসিংগুলো পরিকল্পিত নয়। জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন করলেও তার পূর্বে গাড়ি থামানোর জন্য কোন ব্যবস্থা নেই, যে কারণে পথচারী জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে চাইলেও সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফুটপাতে মোটর সাইকেল ওঠা এবং গাড়ী পার্কিং বন্ধ হয়নি। পথচারীদের নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য প্রশস্ত ফুটপাত, ২০০ মিটার পর পর জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন, পথচারীদের জন্য বিশেষ সিগন্যাল বাতি ও সাইনবোর্ড স্থাপন করার বিধান থাকলেও সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
পথচারীদের নিরাপত্তায় বিদ্যমান বিভিন্ন আইন ও আদালতের নির্দেশনার পরও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ বিষয়ে উদাসীন। আজ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে (৩য় তলা) পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত “হাইকোর্টের রুল জারির প্রেক্ষিতে পথচারীদের নিরাপত্তায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পবা-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসেন. নগর পরিবহন পরিকল্পনা বিশ্লেষক মারুফ রহমান।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সহসম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রবন্ধে বলেন, ঢাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় একজন পথচারী আহত বা নিহত হয়। নগরে সংগঠিত মোট দূর্ঘটনার ৮৬ শতাংশই পথচারী।
পর্যবেক্ষনে প্রাপ্ত অবকাঠামোগত সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, জেব্রা ক্রসিং থাকলেও অনেক স্থানেই পারাপারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, কোন জেব্রা ক্রসিং এর শুরু অথবা শেষে গর্ত বা ড্রেন রয়েছে, ক্রসিংগুলো উঁচু নিচু অর্থাৎ সমান্তরাল নয়, জেব্রা ক্রসিং এ অসম্পূর্ণ রেইজ ওয়াকওয়ে (উচু হাঁটাপথ), যা শুধুমাত্র শাহবাগে রয়েছে এবং অনেক স্থানে জেব্রা ক্রসিং এর পূর্বে গাড়ী থামানোর জন্য দাগ নেই। এছাড়া জনবহুল স্থানে স্বচ্ছন্দে পারাপার হওয়ার জন্য জেব্রা ক্রসিং নেই এবং অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও ইন্টার সেকশনে জেব্রা ক্রসিং নেই।
মারুফ রহমান বলেন, ঢাকা শহরের ফুটপাত দখল করে রাখার জন্য অভিযোগ বরাবর হকারদের দিকেই থাকে। অথচ ঢাকা শহরের কয়েকটি স্থান ব্যতীত অধিকাংশ স্থানের ফুটপাত দখল করে রাখে প্রাইভেট গাড়ী, হোন্ডা, দোকানের মালপত্র এবং সাইন বোর্ড। এছাড়া কোথাও কোথাও ফুটপাতগুলো ভেঙ্গে দোকান ও বাড়ীতে গাড়ী প্রবেশের জন্য নিজেদের মতো রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
যা পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ফুটপাতগুলোর কোনটাই বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগী, প্রতিবন্ধী, হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী নয়, অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজগুলো খাড়াভাবে নেমে গেছে। এছাড়া ভাঙ্গা, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমস্যাতো বরাবরই রয়েছে।
আবু নাসের খান বলেন, ঢাকা শহরের পথচারীদের নিরাপদ পারাপারে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা গাড়ী। গাড়ীগুলো পথচারীদের পথ চলার অধিকারকে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত করছে।
গাড়ী চালকরা জেব্রা ক্রসিং দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে, কোন চালকই জেব্রা ক্রসিং-র পূর্বের দাগ মানছে না, প্রতিনিয়ত পথচারীদের অধিকার লঙ্ঘন করলেও গাড়ী চালকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বাস, ট্রাক, মিনিবাসগুলো বেপরোয়া চালনার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত করছে পথচারীদের। এছাড়া ধানমন্ডি, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই চলে উচ্চশব্দের ব্যবহারের পাশাপাশি গাড়ীর বেপরোয়া গতি প্রতিযোগিতা। আর এ প্রতিযোগিতার কারণে পথচারীরা আতংকিত, কখনো কখনো দূর্ঘটনার শিকার হয় পথচারী। পথচারীদের জন্য সিটি কর্পোরেশন, মোটরযান আইন ১৯৮৩ এবং মেট্রোপলিটন আইনে বিভিন্ন বিধান রয়েছে।
কিন্তু এ বিধানগুলো গাড়ী চালকরা মান্য করে না, অনেকেই এই আইন সম্পর্কে জানে না। ট্রাফিক বিভাগের লোকবলের সীমাবদ্ধতার কারণে পথচারীদের নিরাপত্তায় এই আইনের প্রয়োগ খুবই সীমিত।
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরের জন্য প্রণীত স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপিতে) পথচারীদের অগ্রাধিকার প্রদানের কথা বলা থাকলেও, পথচারীদের কোন অগ্রাধিকার প্রদান করা হয় না। গাড়ীর কারণে পথচারীরা আহত বা নিহত হলেও পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য জেব্রা ক্রসিং, সাইনের মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সড়ক পারাপারের জন্য মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের ঘটনাও ঘটেছে। সম্মেলন থেকে বক্তারা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন, পথচারীদের নিরাপত্তায় বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন এবং পথচারীদের নিরাপত্তায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবী জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।